Ajker Patrika

পুরোনো ল্যাপটপ ও ফোন থেকে স্বর্ণ সংগ্রহের সহজ পদ্ধতি উদ্ভাবন করলেন বিজ্ঞানীরা

অনলাইন ডেস্ক
পুরোনো ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের মতো যন্ত্রে সোনাসহ মূল্যবান ধাতু থাকে। ছবি: সংগৃহীত
পুরোনো ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের মতো যন্ত্রে সোনাসহ মূল্যবান ধাতু থাকে। ছবি: সংগৃহীত

পুরোনো ল্যাপটপ ও ফোনের বেশির ভাগ অংশের ঠাঁই হয় ভাগাড়ে। এর মধ্যে কিছু অংশ কেবল রিসাইকেল বা পুনর্ব্যবহার করা হয়। এর ফলে প্রতিবছর বাড়ছে প্রযুক্তিগত বর্জ্র। তবে অস্ট্রেলিয়ার ফ্লিন্ডার্স বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক জাস্টিন এম চকলার ও তাঁর সহকর্মীদের উদ্ভাবিত নতুন এক পদ্ধতি এই পরিস্থিতি বদলে দিতে পারে। পুরোনো ডিভাইস থেকে স্বর্ণ সংগ্রহের অভিনব পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তাঁরা।

২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী উৎপাদিত ইলেকট্রনিক বর্জ্যের (ই-ওয়েস্ট) পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ৬২ মিলিয়ন টনে, যা প্রায় ১৫ লাখের বেশি আবর্জনাবাহী ট্রাক পূর্ণ করতে পারে। ২০১০ সালের তুলনায় এটি ৮২ শতাংশ বেড়েছে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে এই পরিমাণ ৮২ মিলিয়ন টনে পৌঁছাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

এই ই-ওয়েস্টে পুরোনো ল্যাপটপ, মোবাইল ফোনের মতো যন্ত্র থাকে, যেগুলোর মধ্যে সোনাসহ মূল্যবান ধাতু থাকে। তবে এর এক-চতুর্থাংশেরও কম সঠিকভাবে সংগ্রহ ও পুনর্ব্যবহার করা হয়।

নেচার সাসটেইনেবিলিটি সাময়িকীতে প্রকাশিত নতুন এক গবেষণাপত্রে তাঁরা জানিয়েছেন, তাঁদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি শুধু ই-ওয়েস্ট থেকেই নয়, ছোট পরিসরে সোনার খনি (আর্তিজানাল মাইনিং) থেকেও নিরাপদ উপায়ে সোনা সংগ্রহে সাহায্য করতে পারে। এই পদ্ধতিটি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর পারদ ও সায়ানাইডের পরিবর্তে পরিবেশবান্ধব বিকল্প দিতে পারে।

যুগ যুগ ধরে মানুষের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে আসছে সোনা। মুদ্রা, অলংকার, শিল্পকলা থেকে শুরু করে আধুনিক ইলেকট্রনিকস, রাসায়নিক উৎপাদন ও মহাকাশ প্রযুক্তিতেও এর ব্যবহার অপরিহার্য। তবে এই সোনার চাহিদা মেটাতে পরিবেশের ওপর ব্যাপক চাপ পড়ছে।

বড় আকারের খনিগুলোতে সোনা আহরণে বিষাক্ত সায়ানাইড ব্যবহৃত হয়, যা বন্য প্রাণী ও পরিবেশের জন্য বিপজ্জনক। অন্যদিকে ছোট আকারের খনিগুলোতে ব্যাপক হারে ব্যবহৃত হয় পারদ—যা বিশ্বের সবচেয়ে বড় পারদ দূষণের উৎস। এই পারদ শুধু পরিবেশ নয়, খনিশ্রমিকদের স্বাস্থ্যের জন্যও অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

এসব কারণে চকলার ও তাঁর দল এক নতুন রাসায়নিক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে, যেখানে সোনাকে পানিতে দ্রবণীয় রূপে রূপান্তরিত করতে ব্যবহৃত হয় ট্রাইক্লোরোআইসোসায়ানিউরিক অ্যাসিড, যা সাধারণত পানির জীবাণুনাশক বা সুইমিং পুল পরিষ্কারে ব্যবহৃত হয়। এটি লবণপানির সঙ্গে সক্রিয় হলে সোনাকে দ্রবণীয় করে তোলে।

এরপর এই দ্রবণ থেকে সোনা সংগ্রহের জন্য তাঁরা তৈরি করেছেন এক বিশেষ পলিমার শোষক, যা তৈরি হয়েছে খনিজ সালফার থেকে। এটি পেট্রোলিয়ামশিল্পের একটি অপ্রয়োজনীয় উপজাত। এই পলিমার স্বল্প খরচে অনেক ধাতুর ভেতর থেকে আলাদাভাবে কেবল সোনাকে বাঁধতে সক্ষম।

এই পদ্ধতি তাঁরা বাস্তবে প্রয়োগ করেছেন পুরোনো কম্পিউটারের সার্কিট বোর্ড, খনিজ আকরিক ও বৈজ্ঞানিক বর্জ্যে। সর্বোপরি তাঁরা এমন একটি রিসাইক্লিং পদ্ধতিও তৈরি করেছেন, যার মাধ্যমে একই পলিমার ও রাসায়নিক বারবার ব্যবহার করা সম্ভব।

গবেষকেরা এমন এক রসায়নিক প্রক্রিয়া উদ্ভাবন করেছেন, যার মাধ্যমে আলো ব্যবহার করে পলিমার তৈরি করা যায় এবং এটি পুনর্ব্যবহারের জন্য আবার ভেঙে ফেলা যায়। এতে পুনরুদ্ধার করা সোনা ও মূল উপাদান আলাদা করে পুনরায় নতুন পলিমার তৈরি করা যায়—যা চক্রাকার অর্থনীতির একটি দুর্দান্ত উদাহরণ।

এই প্রযুক্তিকে বাস্তবায়নের পথে অনেক চ্যালেঞ্জ রয়েছে—বিশেষ করে বৃহৎ পরিসরে উৎপাদন, খরচ, পুনর্ব্যবহার ও শিল্পে গ্রহণযোগ্যতা নিশ্চিত করা। তবে প্রাথমিক ফলাফলগুলো উৎসাহব্যঞ্জক।

গবেষকদের দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য হচ্ছে, পারদ ও সায়ানাইড ব্যবহার ছাড়াই সোনা আহরণে একটি কার্যকর ও নিরাপদ পদ্ধতি তৈরি করা। এর মাধ্যমে তাঁরা ছোট পরিসরের খনিশ্রমিকদের জন্য একটি অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক ও পরিবেশবান্ধব বিকল্প ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চান।

অন্যদিকে ই-ওয়েস্ট থেকে সোনা আহরণে এই পদ্ধতি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হলে প্রাথমিকভাবে খনির ওপর নির্ভরতা কমবে এবং পরিবেশগত ক্ষতিও কমে যাবে।

তথ্যসূত্র: সায়েন্স অ্যালার্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

খালদূষণকারী কারখানা পেল পরিবেশবান্ধব পুরস্কার

ঢাকার সঙ্গে সম্পর্ক মেরামতে বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে ভারতের সংসদীয় কমিটির দীর্ঘ বৈঠক

ইস্পাহানে বাংকার বাস্টার মারেনি যুক্তরাষ্ট্র, অক্ষত ৬০ শতাংশ সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম

গোষ্ঠীস্বার্থে বহু মানুষের স্বপ্ন নষ্ট করেছে এই প্ল্যাটফর্ম: দায়িত্ব ছেড়ে উমামা ফাতেমার পোস্ট

অপারেশন রেড ওয়েডিং ও নার্নিয়া: ইরানের সেনা কর্মকর্তা ও পরমাণুবিজ্ঞানীদের হত্যায় ইসরায়েলি অভিযান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত