Ajker Patrika

৬৫ কোটি ডলারের তহবিল সংগ্রহ করল মাস্কের নিউরালিংক

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০৩ জুন ২০২৫, ১০: ৪৩
এই কোম্পানির প্রথম সিস্টেমটির নাম ‘টেলিপ্যাথি’। ছবি: এওএল
এই কোম্পানির প্রথম সিস্টেমটির নাম ‘টেলিপ্যাথি’। ছবি: এওএল

মস্তিষ্কে চিপ স্থাপন করে ডিজিটাল ডিভাইস নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তিকে বাস্তবে রূপ দিতে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল ইলন মাস্কের নিউরালিংক। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ধাপে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিষ্ঠানটি ৬৫০ মিলিয়ন বা ৬৫ কোটি মার্কিন ডলারের একটি বিশাল তহবিল সংগ্রহ করেছে। এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, নতুন এই তহবিল নিউরালিংকের প্রযুক্তি আরও বেশি রোগীর কাছে পৌঁছে দিতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে এমন নতুন ডিভাইস তৈরির কাজেও এই অর্থ ব্যয় হবে, যা ‘জৈবিক ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মধ্যকার সংযোগ আরও গভীর করবে।’

নিউরালিংক একটি ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস (বিএসআই) তৈরি করছে, যা মস্তিষ্কের সংকেতকে বাইরের প্রযুক্তির জন্য বোঝার মতো কমান্ডে রূপান্তর করে।

এই কোম্পানির প্রথম সিস্টেমটির নাম ‘টেলিপ্যাথি’। এটি ৬৪টি অতি সূক্ষ্ম ‘থ্রেড’ দিয়ে গঠিত, যেগুলো সরাসরি মস্তিষ্কে স্থাপন করা হয়। প্রতিটি থ্রেড মানুষের চুলের চেয়েও পাতলা এবং এতে মোট ১ হাজার ২৪টি ইলেকট্রোড থাকে, যেগুলোর মাধ্যমে স্নায়বিক সংকেত রেকর্ড করা হয়।

প্রযুক্তিটির প্রাথমিক লক্ষ্য হলো গুরুতর পক্ষাঘাতগ্রস্ত রোগীদের কিছুটা স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেওয়া। নিউরালিংকের তথ্যমতে, গত সোমবার পর্যন্ত পাঁচজন রোগীর মস্তিষ্কে এই ডিভাইস স্থাপন করা হয়েছে এবং তাঁরা শুধু চিন্তার মাধ্যমে ডিজিটাল ও বাস্তব জগতের নানা যন্ত্র নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন।

বর্তমানে নিউরালিংক চারটি ভিন্ন ভিন্ন ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চালিয়ে যাচ্ছে টেলিপ্যাথি সিস্টেম ঘিরে।

বিএসআই বা ব্রেইন-কম্পিউটার ইন্টারফেস প্রযুক্তি একাডেমিক গবেষণায় বহু দশক ধরে আলোচনায় রয়েছে। নিউরালিংক ছাড়াও ‘সিনক্রন’, ‘প্যারাড্রোমিক্স’ ও ‘প্রিসিশন নিউরোসায়েন্স’-সহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নিজস্ব সিস্টেম নিয়ে কাজ করছে।

সোমবারই প্যারাড্রোমিক্স ঘোষণা দিয়েছে, তারা প্রথমবারের মতো একজন মানুষের দেহে সফলভাবে তাদের বিএসআই ইমপ্লান্ট করেছে।

নিউরালিংকের ভবিষ্যৎ প্রযুক্তি নিয়ে নির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা এখনো আসেনি। তবে মাস্ক বহুদিন ধরেই এই স্টার্টআপকে ঘিরে বড় বড় স্বপ্নের কথা বলে আসছে। এমনকি তিনি নিজেও এই ইমপ্লান্ট গ্রহণ করতে রাজি বলে জানিয়েছেন।

মাস্ক বারবার এমন এক প্রযুক্তির কথা তুলে ধরেছেন, যা অন্ধ ব্যক্তিদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে দিতে পারবে।

নিউরালিংক ইতিমধ্যে ‘ব্লাইন্ডসাইট’ নামের এক ডিভাইসের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ) থেকে ‘যুগান্তকারী ডিভাইস’ স্বীকৃতি পেয়েছে। এই স্বীকৃতি সাধারণত এমন ডিভাইসকে দেওয়া হয়, যেগুলোর মাধ্যমে জীবন-মরণ পরিস্থিতিতে থাকা রোগীদের উন্নত চিকিৎসার সম্ভাবনা তৈরি হয়।

গত সেপ্টেম্বর মাসে মাস্ক তাঁর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের এক পোস্টে বলেছিলেন, এমনকি যাদের দুই চোখই নেই বা অপটিক নার্ভ নষ্ট হয়ে গেছে, ‘ব্লাইন্ডসাইট’ এমন ব্যক্তিদেরও দেখার সক্ষমতা দিতে পারবে।

তবে নিউরালিংকের এসব প্রযুক্তি বাণিজ্যিকভাবে বাজারে আসতে এখনো অনেক পথ বাকি।

গত বুধবার ইলন মাস্ক ঘোষণা দেন, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ উপদেষ্টার পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন এবং টেসলা, স্পেসএক্স, এক্সএআই, নিউরালিংক এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে বেশি মনোযোগ দিতে চান।

নিউরালিংক জানিয়েছে, সর্বশেষ অর্থায়ন রাউন্ডে অংশ নিয়েছে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে রয়েছে—এআরকে ইনভেস্ট, ডিএফজে গ্রোথ, ফাউন্ডার্স ফান্ড, জি৪২, হিউম্যান ক্যাপিটাল, লাইটস্পিড, কাতার ইনভেস্টমেন্ট অথরিটি (কিউআইএ), সিকোইয়া ক্যাপিটাল, থ্রাইভ ক্যাপিটাল, ভ্যালোর ইকুইটি পার্টনারস এবং ভাই ক্যাপিটাল।

এদিকে সোমবার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক মরগান স্ট্যানলি নিউরালিংক ছাড়াও মাস্কের আরেক উদ্যোগ এক্সএআইের জন্য ৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ প্যাকেজ তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক এই কোম্পানির শেয়ার বিক্রির মাধ্যমে ৩০ কোটি ডলার সংগ্রহ করে ১১৩ বিলিয়ন ডলার মূল্যায়ন পাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স ও সিএনবিসি

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত