Ajker Patrika

ওয়েবসাইটের কুকিজ কী, নিরাপত্তা ঝুঁকি কেমন

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
কোনো ওয়েবসাইটের ‘অল অ্যাকসেপ্ট’ অপশন নির্বাচন করলে সব ধরনের কুকি সক্রিয় হয়। ছবি: গুগল
কোনো ওয়েবসাইটের ‘অল অ্যাকসেপ্ট’ অপশন নির্বাচন করলে সব ধরনের কুকি সক্রিয় হয়। ছবি: গুগল

অনলাইনে ওয়েবসাইটে প্রবেশ করলেই চোখে পড়ে এক বিরক্তিকর পপ-আপ। সেখানে লেখা থাকে ‘অল অ্যাকসেপ্ট’ না ‘অল রিজেক্ট’—কুকিজ গ্রহণ করবেন কি করবেন না। অনেকেই একে সামান্য অসুবিধা মনে করে এড়িয়ে যান। তবে এই ছোট ফাইলগুলোর প্রভাব আপনার অনলাইন গোপনীয়তার ওপর বড় ধরনের ছাপ ফেলতে পারে।

কুকিজ একদিকে যেমন লগইন তথ্য, শপিং কার্টে পণ্য সংরক্ষণ বা ভাষা অপশন মনে রাখার মতো সুবিধা দেয়, অন্যদিকে এগুলো বিজ্ঞাপনদাতা ও তৃতীয় পক্ষের কাছে আপনার অনলাইন অভ্যাসের বিস্তারিত তথ্য পৌঁছে দেয়।

তাই কুকিজ কীভাবে কাজ করে এবং এর ঝুঁকি কোথায়, তা জানা থাকলে আপনি নিজের অনলাইন গোপনীয়তা রক্ষা করার বুদ্ধিমত্তার সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন।

কুকি কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে

কুকিজ হচ্ছে ছোট ছোট ফাইল। বিভিন্ন ওয়েবসাইট এসব ফাইল আপনার ডিভাইসে সংরক্ষণ করে। এর মূল উদ্দেশ্য হলো আপনার ব্যবহার অভিজ্ঞতাকে সহজ ও ব্যক্তিগতকরণ করা। সাধারণভাবে কুকিজ চারটি ভাগে ভাগ করা যায়—

প্রয়োজনীয় কুকি (Essential cookies): ওয়েবসাইটে লগইন, শপিং কার্টের মতো মৌলিক ফিচার চালাতে ব্যবহৃত হয়। এগুলো ছাড়া সাইট কাজই করবে না, তাই প্রত্যাখ্যানযোগ্য নয়।

ফাংশনাল কুকি (Functional cookies): আপনার ভাষা বা অঞ্চল পছন্দের মতো সেটিংস মনে রাখে।

অ্যানালিটিকস কুকি (Analytics cookies): ব্যবহারকারীরা সাইটের কোন অংশে কীভাবে ঘোরাফেরা করছেন, সেই পরিসংখ্যান সংগ্রহ করে।

বিজ্ঞাপন কুকি (Advertising cookies): আপনি কোন সাইটে যান, কী দেখেন—এসব তথ্য সংগ্রহ করে আপনাকে লক্ষ্য করে বিজ্ঞাপন দেখায়।

কিছু কুকি ব্রাউজার বন্ধ করলেই মুছে যায়, আবার কিছু সপ্তাহ বা মাসব্যাপী আপনার ডিভাইসে থেকে যায়।

কুকি গ্রহণ না প্রত্যাখ্যান করবেন

কোনো ওয়েবসাইটের ‘অল অ্যাকসেপ্ট’ অপশন নির্বাচন করলে সব ধরনের কুকি সক্রিয় হয়। ফলে ওয়েবসাইট ব্যবহার সহজ হয় এবং আপনার পছন্দ অনুযায়ী কনটেন্ট পাওয়া যায়। তবে এতে তৃতীয় পক্ষ এবং বিজ্ঞাপনদাতারা আপনার অনলাইন কার্যকলাপ ঘনিষ্ঠভাবে ট্র্যাক করতে পারে।

অন্যদিকে, প্রয়োজনীয় কুকি বাদে সবকিছু প্রত্যাখ্যান করলে আপনার গোপনীয়তা বজায় থাকে, তবে অনেক সময় ওয়েবসাইট ঠিকভাবে কাজ না-ও করতে পারে বা ব্রাউজিং অভিজ্ঞতা কম সাবলীল হতে পারে।

২০১৮ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে চালু হওয়া জেনারেল ডেটা প্রোটেকশন রেগুলেশনের (জেডিপিআর) পর থেকেই কুকি নোটিশ দেখা আরও বেড়ে গেছে, কারণ এখন ওয়েবসাইটগুলোকে ব্যবহারকারীর সম্মতি নিতে বাধ্য করা হয়েছে।

সম্মতির ক্লান্তি ও নতুন বিকল্প

প্রতিটি ওয়েবসাইটেই কুকি পপ-আপ দেখতে দেখতে অনেক ব্যবহারকারী ‘কনসেন্ট ফ্যাটিগ’ বা সম্মতি ক্লান্তিতে ভোগেন। তাই অনেকেই না ভেবেই ‘অল অ্যাকসেপ্ট’ বেছে নেন।

এই সমস্যার সমাধানে একটি নতুন পদ্ধতি চালু হয়েছে—গ্লোবাল প্রাইভেসি কন্ট্রোল (জেপিসি)। এটি ব্রাউজার থেকেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে আপনার গোপনীয়তার পছন্দের সংকেত পাঠাতে পারে। তবে এখনো এর ব্যবহার সীমিত এবং বেশির ভাগ মানুষকে নিজে নিজেই কুকি সেটিংস সামলাতে হয়।

আপনি চাইলে আপনার ব্রাউজারের সেটিংস থেকে কুকি মুছে ফেলতে পারেন, সাইটভিত্তিক অনুমতি পর্যালোচনা করতে পারেন অথবা বিভিন্ন টুল ব্যবহার করে দেখতে পারেন, আপনার তথ্য কতটা ট্র্যাকিং চলছে।

সুবিধা বনাম গোপনীয়তা—সতর্ক ভারসাম্য জরুরি

কুকি নিজে ক্ষতিকর নয়, বরং এটি ওয়েব ব্রাউজিংকে অনেক সহজ করে তোলে। তবে এর গোপনে থাকা গোপনীয়তার ঝুঁকির দিকটা না দেখলেই নয়।

যখন প্রয়োজন তখন কুকি গ্রহণ করুন, তবে যেখানে সম্ভব সেখানে অপ্রয়োজনীয় কুকি প্রত্যাখ্যান করুন। একই সঙ্গে এমন টুল ও সেটিংস ব্যবহার করুন, যা আপনার তথ্যের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ায়।

সচেতন থাকলে আপনি গোপনীয়তা রক্ষা করতে পারবেন, আবার ওয়েবসাইট ব্রাউজিংয়ের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সুবিধাও হারাবেন না।

তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত