Ajker Patrika

১৫ বছরের কম বয়সীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধ করছে ডেনমার্ক

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
শিশুদের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে ডেনমার্ক এই উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত
শিশুদের ওপর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ক্ষতিকর প্রভাব এড়াতে ডেনমার্ক এই উদ্যোগ নিয়েছে। ছবি: সংগৃহীত

বিশ্বজুড়ে শিশুদের ওপর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ক্ষতিকর কনটেন্ট ও বাণিজ্যিক প্রলোভনের প্রভাব বাড়ছে। এ উদ্বেগের প্রেক্ষিতে এবার ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ডেনমার্ক। দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোনো সরকারের তরফ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারে কনিষ্ঠ বয়সীদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া পদক্ষেপগুলোর মধ্যে এটিকে সবচেয়ে ব্যাপক উদ্যোগ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

এ সংক্রান্ত দেশটির নতুন এক আইনে বলা হয়েছে, বিশেষ মূল্যায়নের পর অভিভাবকরা চাইলে ১৩ ও ১৪ বছর বয়সী সন্তানদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারের অনুমতি দিতে পারবেন। তবে এত বড় পরিসরের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে বড় প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে।

ডেনমার্কের ডিজিটালবিষয়ক মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, ‘শিশু ও তরুণদের ঘুম নষ্ট হচ্ছে, মানসিক শান্তি ও মনোযোগ কমে যাচ্ছে। তারা এমন এক ডিজিটাল সম্পর্কের চাপে পড়ছে, যেখানে সবসময় প্রাপ্তবয়স্কদের উপস্থিতি থাকে না। এই পরিস্থিতি একা কোনো অভিভাবক, শিক্ষক বা শিক্ষাবিদ ঠেকাতে পারবেন না।’

অনেক প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান তাদের প্ল্যাটফর্মে বয়সসীমা নির্ধারণ করে রেখেছে। তবুও প্রায়ই অপ্রাপ্তবয়স্করা সেই সীমাবদ্ধতা সহজেই এড়িয়ে যায় বলে স্বীকার করেন কর্মকর্তারা ও বিশেষজ্ঞরা।

ডেনমার্কের ডিজিটালবিষয়ক মন্ত্রী ক্যারোলিন স্টেজ জানান, ডেনমার্কে ১৩ বছরের নিচে থাকা ৯৪ শতাংশ শিশু ও ১০ বছরের নিচে থাকা অর্ধেকের বেশি শিশু ইতিমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রোফাইল খুলে ফেলেছে।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘শিশুরা অনলাইনে যে পরিমাণ সময় কাটায়, যে পরিমাণ সহিংসতা ও আত্মনাশের বিষয়বস্তু তারা দেখে, তা আমাদের সন্তানের জন্য ভয়াবহ ঝুঁকি তৈরি করছে।’

তিনি বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকেও তীব্র সমালোচনা করেন। তাঁর ভাষায়, ‘ওদের কাছে অগাধ অর্থ রয়েছে, কিন্তু তারা আমাদের সন্তানের সুরক্ষায় বিনিয়োগ করতে চায় না। এমনকি সমাজের সবার নিরাপত্তায়ও নয়।’

ক্যারোলিন স্টেজ আরও জানান, এই নিষেধাজ্ঞা তাৎক্ষণিকভাবে কার্যকর হচ্ছে না। এ বিষয়ে পার্লামেন্টে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যাঁরা একমত, তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকলেও আইনটি পাস হতে কয়েক মাস সময় লাগবে।

তিনি বলেন, ‘আমি আশ্বস্ত করতে পারি, ডেনমার্ক দ্রুত কাজ করবে। তবে আমরা তাড়াহুড়া করব না। নিশ্চিত করব নিয়ম যেন সঠিকভাবে প্রণয়ন হয় এবং বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর পালিয়ে যাওয়ার মতো কোনো ফাঁকফোকর না থাকে।’

মন্ত্রী আরও বলেন, বড় প্রযুক্তি কোম্পানির ব্যবসায়িক মডেল থেকে যে চাপ তৈরি হচ্ছে, তা অত্যন্ত ভয়াবহ।

তবে এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা বাস্তবে কীভাবে কার্যকর করা হবে তা নিয়ে ডেনমার্ক এখনো স্পষ্ট করে কিছু জানায়নি।

মন্ত্রী ক্যারোলিন স্টেজ জানান, ডেনমার্কের একটি জাতীয় ইলেকট্রনিক আইডি ব্যবস্থা আছে। ১৩ বছরের বেশি প্রায় সব নাগরিকেরই এই আইডি রয়েছে। সরকার এখন বয়স যাচাইয়ের জন্য আলাদা একটি অ্যাপ চালুর পরিকল্পনা করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের আরও কয়েকটি দেশও একই ধরনের অ্যাপ পরীক্ষা করছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে আমাদের অ্যাপ ব্যবহার করতে বাধ্য করতে পারব না। কিন্তু আমরা বাধ্য করতে পারব যেন তারা কার্যকর বয়স যাচাই ব্যবস্থা রাখে। যদি তারা তা না করে, তাহলে আমরা ইউরোপীয় কমিশনের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেব এবং প্রয়োজনে তাদের বৈশ্বিক আয়ের ৬ শতাংশ পর্যন্ত জরিমানা করা হবে।’

বিশ্বজুড়ে অনেক সরকারই এখন অনলাইনে ক্ষতিকর প্রভাব নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজছে, যাতে প্রযুক্তির ইতিবাচক দিক ক্ষুণ্ন না হয়। ডিজিটাল মন্ত্রী জানান, ডেনমার্কের এই উদ্যোগের লক্ষ্য শিশুদের ডিজিটাল দুনিয়া থেকে বাদ দেওয়া নয়, বরং ক্ষতিকর কনটেন্ট থেকে তাদের সুরক্ষা দেওয়া।

মন্ত্রী ক্যারোলিন স্টেজ বলেন, ‘আমরা বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বারবার সুযোগ দিয়েছি, যেন তারা তাদের প্ল্যাটফর্মে ঘটতে থাকা সমস্যাগুলোর সমাধান করে। কিন্তু তারা কিছুই করেনি। তাই এবার আমরা নিজেরাই নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেব যাতে আমাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ নিরাপদ থাকে।’

এর আগে গত ডিসেম্বরে অস্ট্রেলিয়া বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে শিশুদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিষিদ্ধ করে। দেশটির নতুন আইনের আওতায় টিকটক, ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট, রেডিট, এক্স (পূর্বের টুইটার) ও ইনস্টাগ্রামের মতো প্ল্যাটফর্মগুলো এখন বড় অঙ্কের জরিমানার মুখে পড়তে পারে। দেশটিতে এই প্ল্যাটফর্মগুলো ব্যবহারে সর্বনিম্ন বয়সসীমা ধরা হয়েছে ১৬ বছর। ১৬ বছরের নিচে শিশুদের অ্যাকাউন্ট দেখা গেলে প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ জরিমানা ধরা হয়েছে ৫ কোটি অস্ট্রেলীয় ডলার, যা প্রায় ২৫ মিলিয়ন পাউন্ড।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...