Ajker Patrika

ফেসবুকে প্রাইভেসি লঙ্ঘনের ৮ বিলিয়ন ডলারের মামলায় গোপন মীমাংসা

অনলাইন ডেস্ক
মার্ক জাকারবার্গ। ছবি: এএফপি
মার্ক জাকারবার্গ। ছবি: এএফপি

ফেসবুক ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষায় ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে আট বিলিয়ন ডলারের একটি ক্ষতিপূরণ মামলায় গোপন সমঝোতায় পৌঁছেছেন মার্ক জাকারবার্গ ও মেটা প্ল্যাটফর্মের বর্তমান ও সাবেক পরিচালকেরা। যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়ারের চ্যান্সারি কোর্টের বিচারক ক্যাথলিন ম্যাককরমিকের কাছে আজ বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এ তথ্য জানিয়েছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তবে সমঝোতার নির্দিষ্ট শর্তাবলি আদালতে প্রকাশ করা হয়নি। বিচারকের সামনে বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরাও কোনো বক্তব্য দেননি। বিচারক ম্যাককরমিক যখন মামলার দ্বিতীয় দিনের শুনানির প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখনই হঠাৎ তিনি মামলাটি মুলতবি ঘোষণা করেন এবং উভয় পক্ষকে অভিনন্দন জানান।

বাদীপক্ষের আইনজীবী স্যাম ক্লসিক জানান, সমঝোতায় পৌঁছাতে তাঁদের সময় খুব বেশি লাগেনি।

এই মামলার অন্যতম বিবাদী ও মেটার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ধনকুবের বিনিয়োগকারী মার্ক অ্যান্ড্রিসেনের আজ আদালতে সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল। মামলার মূল অভিযুক্ত ছিলেন মেটার প্রধান নির্বাহী মার্ক জাকারবার্গ, পরিচালনা পর্ষদের সদস্য অ্যান্ড্রিসেন, প্রতিষ্ঠানটির সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা শেরিল স্যান্ডবার্গসহ ১১ জন সাবেক ও বর্তমান কর্মকর্তা।

মেটার শেয়ারহোল্ডারেরা দাবি করেন, এই ব্যক্তিরাই মূলত কোম্পানিকে শত শত কোটি ডলারের আইনি জরিমানা ও খরচের মুখে ফেলেছেন, তাই তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পদ থেকে এই অর্থ পরিশোধ করতে হবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, এগুলো ‘চরম পর্যায়ের দাবি’।

২০১৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ট্রেড কমিশন (এফটিসি) ফেসবুককে পাঁচ বিলিয়ন ডলার জরিমানা করে। কারণ, ২০১২ সালে ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষার বিষয়ে যে চুক্তি হয়েছিল, তা ফেসবুক মানেনি বলে অভিযোগ ওঠে।

তবে এই মামলার আসামিদের তালিকায় মেটা প্রতিষ্ঠানটিকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ২০২১ সালে ফেসবুকের নাম পরিবর্তন করে ‘মেটা’ করা হয়। কোম্পানির পক্ষ থেকে মামলার বিষয়ে কোনো মন্তব্য করা হয়নি এবং বিবাদীপক্ষের আইনজীবীরাও সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেননি।

ডিজিটাল কনটেন্ট প্রদানকারী সংস্থা ‘ডিজিটাল কনটেন্ট নেক্সট’-এর প্রধান জেসন কিন বলেন, ‘এই মীমাংসা হয়তো সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে কিছুটা স্বস্তি দেবে, তবে এটি জনস্বার্থে দায় নেওয়ার একটি সুযোগ হাতছাড়া করেছে।’

মামলার শুনানি চলতে থাকলে আগামী সোমবার সাক্ষ্য দেওয়ার কথা ছিল জাকারবার্গের এবং বুধবার স্যান্ডবার্গের। এ ছাড়া মামলার কার্যক্রমে সাবেক বোর্ড সদস্য পিটার থিল (প্যালান্টিয়ার টেকনোলজিসের সহপ্রতিষ্ঠাতা) ও রিড হেস্টিংস (নেটফ্লিক্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা) সাক্ষ্য দিতে পারতেন।

বাদীপক্ষ মামলায় অভিযোগ তোলে, মেটার পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা ২০১২ সালের এফটিসি চুক্তি কার্যকরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছেন এবং জাকারবার্গ ও স্যান্ডবার্গ ইচ্ছাকৃতভাবে ফেসবুককে একটি অবৈধ তথ্য আহরণকারী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছেন।

এই মামলার সূত্রপাত হয় ২০১৬ সালে। সে সময় মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্পের পক্ষে কাজ করা কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা নামে একটি ব্রিটিশ রাজনৈতিক পরামর্শদানকারী প্রতিষ্ঠান কোটি কোটি ফেসবুক ব্যবহারকারীর তথ্য সংগ্রহ করেছিল। এরপরই এফটিসি ফেসবুককে রেকর্ড পরিমাণ জরিমানা করে।

গতকাল বাদীপক্ষের একজন বিশেষজ্ঞ সাক্ষী আদালতে বলেন, ফেসবুকের প্রাইভেসি নীতিতে ‘স্পষ্ট ঘাটতি’ রয়েছে। তবে তিনি নিশ্চিত করে বলতে পারেননি, প্রতিষ্ঠানটি ২০১২ সালের এফটিসি চুক্তি লঙ্ঘন করেছে কি না।

ফেসবুক তাদের ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ২০১৯ সালের পর থেকে ব্যবহারকারীর গোপনীয়তা রক্ষায় বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

এদিকে প্রযুক্তি বিশ্লেষক জেসন কিন বলেন, ফেসবুক কেমব্রিজ অ্যানালিটিকা কেলেঙ্কারিকে কিছু ‘খারাপ ব্যক্তির’ করা কাজ বলে চালিয়ে দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটি ছিল পুরো ফেসবুকের নজরদারিভিত্তিক ব্যবসায়িক মডেলের ভেঙে পড়ার ইঙ্গিত, যা এখনো ঠিক হয়নি। তিনি আরও বলেন, ‘এই মামলার শুনানি অব্যাহত থাকলে আমরা হয়তো আদালতে ফেসবুকের আসল রূপটা দেখতাম, কিন্তু সেই সুযোগও চলে গেল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত