Ajker Patrika

ফেসবুক মডারেশনের কাজ নিয়ে আউটসোর্সিং কোম্পানির অনুশোচনা

ফেসবুক মডারেশনের কাজ নিয়ে আউটসোর্সিং কোম্পানির অনুশোচনা

ব্যবহারকারীদের পোস্ট মডারেশন বা যাচাই–বাছাই করার কাজ ফেসবুক আউটসোর্সিং কোম্পানিকে দিয়ে থাকে। কারণ শত শত কোটি ব্যবহারকারীর অজস্র পোস্ট নিজস্ব কর্মী দিয়ে যাচাই সম্ভব নয়। ফেসবুকের কাছ থেকে এমন কাজ নিয়ে পূর্ব আফ্রিকার একটি কোম্পানি এখন অনুশোচনায় রয়েছে বলে বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে।

কেনিয়া ভিত্তিক আউটসোর্সিং কোম্পানি ‘সামা’র সাবেক কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, তারা ফেসবুকের পোস্ট মডারেট করতে গিয়ে অনেক আপত্তিকর ‘গ্রাফিক কনটেন্ট’ দেখে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। কেউ কেউ কেনিয়ার আদালতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মামলাও করছেন। 

সামার প্রধান নির্বাহী ওয়েন্ডি গঞ্জালেস বলছেন, তারা এই ধরনের ক্ষতিকর কনটেন্ট মডারেশনের কাজ আর করবেন না। 

এই কোম্পানির সাবেক কর্মীরা তাদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বলেন, ২০১৯ সাল থেকে এই যাচাই–বাছাইয়ের কাজ শুরু করেন তাঁরা। একাজ করতে গিয়ে তাদেরকে শিরশ্ছেদ ও আত্মহত্যাসহ বিভিন্ন ধরনের বীভৎস ভিডিও দেখতে হয়েছে। 

সাবেক কর্মী ডেনিয়েল মাতাং বিবিসির প্রতিবেদককে বলেন, তিনি একজন ব্যক্তির শিরশ্ছেদের লাইভ ভিডিও দেখেছিলেন। তিনি সামা ও ফেসবুকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে জানান। সামা বলছে, কোম্পানির কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য একজন মনোবিদ সবসময় দায়িত্ব পালন করেন। 

গঞ্জালেজ বলেন, ফেসবুক মডারেশনের এই কোম্পানির ব্যবসার মাত্র ৪ শতাংশ। এই চুক্তি আগামী জানুয়ারি মাসে শেষ হবে। তিনি আরো বলেন, এই কাজের পেছনে এত ক্ষতি হবে জানলে তিনি কাজটিতে চুক্তিবদ্ধ হতেন না। তার কোম্পানির বড় শিক্ষা হয়ে গেছে। ক্ষতিকর কনটেন্ট নিয়ে তাঁরা আর কাজ করবেন না। 

সামার যাত্রা 
কেনিয়ার আউটসোর্সিং কোম্পানি সামা শুরু থেকেই প্রযুক্তিগত দক্ষতা বৃদ্ধি করে মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। ‘ডেটা অ্যানোটেশনের’ কাজ করে নাইরোবির বিভিন্ন অঞ্চলের নিম্নআয়ের মানুষ প্রতিদিন ৯ ডলার আয় করেন। ডেটা অ্যানোটেশন হল– গাড়ি চালানোর সময় ভিডিওতে পথচারী ও সড়কবাতির মতো বিভিন্ন বস্তুকে চিহ্নিত করা, যেটা পরে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রশিক্ষণের কাজে লাগবে। কর্মীরা বলছেন, এই আয় তাদের দারিদ্র্য থেকে বাঁচতে সাহায্য করেছে।  

গঞ্জালেজ বলেন, তাদের কোম্পানি ৬৫ হাজার মানুষকে দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়েছে। আফ্রিকার মানুষ ডিজিটাল অর্থনীতি ও এআই প্রযুক্তির বিকাশে ভূমিকা রাখতে পারছে। 
 
সামাতে মডারেটরদের বেতন প্রতি মাসে প্রায় ৬৩০ ডলার। কেনিয়ার অর্থনৈতিক মান অনুসারে নার্স, ফায়ারম্যান ও ব্যাংক অফিসারদের তুলনায় এটি একটি ভালো মজুরি। 

এআইয়ের প্রশিক্ষণ
চ্যাটজিপিটির উদ্ভাবনী কোম্পানি ওপেন এআইয়ের সঙ্গেও সামা কাজ করে। বিবিসির প্যানারোমা অনুষ্ঠানে আরেক সাবেক কর্মী রিচার্ড ম্যাথেঞ্জ জানান, তার কাজ ছিল বিশাল টেক্সট থেকে চ্যাটবটের শেখার বিষয়টি লক্ষ্য করা, যেন কোনো ক্ষতিকর কনটেন্ট না যায়। এই কাজের সময় অস্বাভাবিক কনটেন্টের সম্মুখীন হন। 

সামা বলেন, কেনিয়ার মানুষ এই কাজ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করলে কোম্পানি তা বন্ধ করে দেন। 

ওপেনএআইয়ের ডেটা অ্যানোটেশনের জন্য নিজস্ব ‘নৈতিক ও আচরণগত মানদ্বন্দ্ব’ রয়েছে। কেনিয়ার এনোটেশন কর্মী, গবেষক ও পুরো বিশ্বের জন্য যা চ্যালেঞ্জিং। 

গঞ্জালেজ বলেন, তারা ড্রাইভারের নিরাপত্তা, ড্রোন, ফল, ফসলের রোগ শনাক্তকরণের মত কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকতে চান। 

তিনি আরও বলেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশে আফ্রিকা প্রথম সারিতে থাকতে চায়। তারা কোনো পক্ষপাতিত্ব চাপিয়ে দিতে চান না। এই প্রযুক্তি বিকাশে বিশ্বের প্রতিটি জায়গার মানুষের অংশগ্রহণ জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত