Ajker Patrika

ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের পর শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজারমূল্য বাড়ল ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার

অনলাইন ডেস্ক
ট্রাম্পের শুল্ক স্থগিতের পর শীর্ষ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর বাজারমূল্য বাড়ল ১.৫ ট্রিলিয়ন ডলার

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণায় নতুন শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখার সিদ্ধান্ত প্রযুক্তির বাজারে স্বস্তি ফিরিয়ে এনেছে। এর প্রভাবে মাত্র এক দিনেই শেয়ারবাজারে ব্যাপক উত্থান দেখা যায়। বিশেষভাবে লাভবান হয়েছে ‘ম্যাগনিফিসেন্ট সেভেন’ নামে পরিচিত সাতটি বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানি—এনভিডিয়া, অ্যাপল, টেসলা, মাইক্রোসফট, গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট, ফেসবুকের মূল প্রতিষ্ঠান মেটা ও অ্যামাজন। গত বুধবার এই সাত কোম্পানির শেয়ারের দর এক লাফে ৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ থেকে ২২ দশমিক ৬৯ শতাংশ পর্যন্ত বেড়ে যায়, ফলে এক দিনেই তাদের সম্মিলিত বাজারমূল্য ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়ে। এতে করে প্রযুক্তিনির্ভর নাসডাক সূচক ১২ শতাংশের বেশি বাড়ে।

বিশ্বব্যাপী শেয়ারবাজারে ধস নেমেছিল ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন পাল্টা শুল্কনীতির ঘোষণায়। গত ২ এপ্রিল হোয়াইট হাউস থেকে ঘোষিত নতুন এই শুল্কনীতিতে সব পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ সর্বজনীন শুল্কের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের ওপর বিভিন্ন মাত্রার পালটা শুল্ক (রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ) আরোপের কথা জানান ট্রাম্প। এর ফলে গত সপ্তাহেই এই সাত কোম্পানি মোট ২ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়েছিল।

শেয়ারবাজারে সাম্প্রতিক ধস এবং আমদানি শুল্ক বাড়ার প্রেক্ষাপটে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়েছিল, তাতে কিছুটা হলেও স্বস্তি এনে দিয়েছে ট্রাম্পের নতুন সিদ্ধান্ত। তবে ২০২৪ সালের শেষ দিক থেকে এখন পর্যন্ত এই সাত কোম্পানি মোট ৩ দশমিক ৪ ট্রিলিয়ন ডলার হারিয়েছে। তাই সাতটি কোম্পানির বাজারমূল্য ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার বাড়লেও আগের ক্ষতির তুলনায় তা এখনো অনেক কম।

তবে শুল্ক আরোপের এই বিরতি বিনিয়োগকারীদের আবারও এসব ব্যয়বহুল শেয়ার কেনার সুযোগ করে দেয়, যাদের মূল্যায়ন এমন উচ্চতায় পৌঁছেছিল, যা আকাশচুম্বী বলা যায়। কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) অবকাঠামো গড়ে তুলতে এসব কোম্পানি বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করছে।

রানিং পয়েন্ট ক্যাপিটালের প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা মাইকেল অ্যাশলি শুলম্যান বলেন, কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) ও প্রধান পরিচালন কর্মকর্তাদের (সিওও) একটু স্বস্তির নিশ্বাস নিতে দেবে এই বিরতি। সেই সঙ্গে তারা এআই সম্পর্কিত পরিকল্পনাগুলো আবার এগিয়ে নিতে পারেন, যেগুলো বাণিজ্যিক উত্তেজনার কারণে আগে স্থগিত হয়েছিল।’

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে যখন তাইওয়ান বা দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশ থেকে আসা এআই চিপ ও বিশেষায়িত হার্ডওয়্যার শুল্ক ঝুঁকির মুখে রয়েছে, তখন এই বিরতি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

শুল্ক আরোপের বিষয়টি শুধু শেয়ারবাজারে অস্থিরতা তৈরি করেনি, সেই সঙ্গে বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর এআই-চালিত টুল ও সেবার পেছনে ব্যবসায়িক খরচও কমিয়ে দিয়েছে। চলতি মাসের শেষ দিকে কোম্পানিগুলো ত্রৈমাসিক আয় প্রতিবেদন প্রকাশ করতে শুরু করলে বাজেট ও ব্যয় খাতগুলো গভীরভাবে খতিয়ে দেখবে ওয়াল স্ট্রিট।

গতকাল বুধবার গুগলের মূল প্রতিষ্ঠান অ্যালফাবেট জানিয়েছে, ২০২৫ সালে তারা ডেটা সেন্টার নির্মাণে প্রায় ৭৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে। একইভাবে মাইক্রোসফট বলেছে, তারা এরই মধ্যে এআই অবকাঠামো নির্মাণে কয়েক বিলিয়ন ডলার ব্যয়ের দিকে এগোচ্ছে।

মাইক্রোসফট জানায়, ‘স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে চাহিদার মাধ্যমে এই বিনিয়োগগুলো পরিচালিত হয়।

গতকাল বুধবার চীনের শুল্ক ১০৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তবে অন্যান্য দেশ থেকে আমদানির ওপর আরোপিত শুল্ক কিছুটা কমানো হবে এবং বেশ কিছু নতুন শুল্ক ৯০ দিনের জন্য স্থগিত রাখা হবে বলে জানিয়েছে তিনি। এই হঠাৎ সিদ্ধান্ত গত ২৪ ঘণ্টার মধ্যে দ্বিতীয়বারের শুল্ক নীতিতে নাটকীয় পরিবর্তন, যা বাজারে অস্থিরতা তৈরি করেছিল।

বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত টেক জায়ান্টদের শেয়ারদর বাড়াতে সহায়তা করলেও প্রযুক্তি খাতে পুরোপুরি আস্থা ফিরে আসতে আরও সময় লাগবে। বিনিয়োগকারীরা এখন অপেক্ষায় আছেন আসন্ন ত্রৈমাসিক আয় প্রতিবেদনগুলোর, যেখানে বোঝা যাবে ট্রাম্পের শুল্কনীতিগুলোর প্রভাব আসলে কতটুকু পড়েছে।

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত