Ajker Patrika

অল্প সময়ের জন্য মাস্ককে হারালেন তিনি, কে এই সিলিকন ভ্যালির ‘ব্যাড বয়’

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
১৯৭৭ সালে ওরাকল প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন প্রযুক্তি খাতের ‘ব্যাড বয়’ হিসেবে। ছবি: সংগৃহীত
১৯৭৭ সালে ওরাকল প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন প্রযুক্তি খাতের ‘ব্যাড বয়’ হিসেবে। ছবি: সংগৃহীত

মার্কিন ম্যাগাজিন ‘ফরচুন’ ওরাকলের সহপ্রতিষ্ঠাতা ল্যারি এলিসনকে নিয়ে প্রতিবেদন করেছিল ২৫ বছর আগে। সেই প্রতিবেদনের শিরোনাম ছিল, ‘তিনি কি হতে যাচ্ছেন বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তি?’ একই সময়ে বিজনেস উইক ঘোষণা দিয়েছিল, ‘ল্যারি এলিসন আবারও কুল’—সিলিকন ভ্যালির ‘ব্যাড বয়’ বুঝি নিজের প্রতিশোধ নিচ্ছেন। সেই সময়ের প্রচ্ছদগুলো যেন আবার ফিরে এসেছে। কারণ, এখন ৮০ ছুঁই ছুঁই এই প্রযুক্তি উদ্যোক্তা আবারও খবরের শিরোনামে।

কোম্পানির সাম্প্রতিক ক্লাউড কম্পিউটিং চুক্তিগুলো শেয়ারবাজারে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে, যার ফলে ওরাকলের শেয়ারের মূল্য বেড়েছে ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর ফলে এলিসনের ব্যক্তিগত সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৪০০ বিলিয়ন বা ৪০ হাজার কোটি ডলারে, যা তাঁকে শুধু ইলন মাস্কের পেছনে বিশ্বের দ্বিতীয় শীর্ষ ধনী ব্যক্তিতে পরিণত করেছে।

গত বুধবার অল্প সময়ের জন্য ইলন মাস্ককে সরিয়ে বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তি খেতাব পান এলিসন। ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, সেদিন সকালে এলিসনের সম্পদ বেড়ে ৩৯ হাজার ৩০০ কোটি ডলারে পৌঁছায়। আর সময় মাস্কের সম্পদ ছিল ৩৮ হাজার ৫০০ কোটি ডলার। তবে দিনের লেনদেন শেষে ওরাকলের শেয়ারের দাম কিছুটা কমে যাওয়ায় বিশ্বের শীর্ষ ধনীর তালিকায় দ্বিতীয় নম্বরে চলে আসেন এলিসন।

এর মধ্যেই বৃহস্পতিবার আসে নতুন খবর—ওয়ার্নার ব্রাদার্স ডিসকভারি (Warner Bros. Discovery) অধিগ্রহণের পরিকল্পনা করছে এলিসনের পরিবার-নিয়ন্ত্রিত মিডিয়া জায়ান্ট প্যারামাউন্ট। এই চুক্তি হলে, হলিউড ও সংস্কৃতির নিয়ন্ত্রণ অনেকাংশেই চলে যেতে পারে এলিসনের হাতে।

এদিকে ব্লুমবার্গ বিলিয়নিয়ার্স ইনডেক্স অনুসারে, আজ মাস্কের মোট সম্পদের পরিমাণ ৪১ হাজার ৯০০ কোটি ডলার ও এলিসনের ৩৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার।

ধনকুবের থেকে মিডিয়া সম্রাট

ইয়ট, হাওয়াই দ্বীপ কেনা, কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রতি তাঁর সমর্থনের জন্য অনেকেই এলিসনকে চিনলেও, বাস্তবে তিনি প্রযুক্তির মঞ্চে ফিরে এসেছেন বেশ চুপিচুপি। প্যারামাউন্টে তাঁর পুত্র ডেভিড এলিসন কাজ করছেন সিবিএস নিউজের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি ডানপন্থী দিকে ঘোরাতে। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ওমবডসম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাম্প সমর্থক এবং হাডসন ইনস্টিটিউটের সাবেক প্রধান কেনেথ ওয়েইনস্টেইনকে। এ ছাড়া, জনপ্রিয় ডান ঘেঁষা সংবাদমাধ্যম দ্য ফ্রি প্রেসের বারি ওয়েইসকে সিবিএস নিউজের নেতৃত্বে আনার চিন্তাও চলছে।

টিকটকে হাত, এআইতে বিশাল বাজি

২০২২ সালে টিকটকের মার্কিন ডেটা নিয়ে নিরাপত্তা সংশয়ের কারণে ওরাকল যুক্তরাষ্ট্রে তাদের প্রযুক্তিগত পরিকাঠামো সরবরাহ শুরু করে। আজ ১৭ কোটির বেশি আমেরিকান টিকটক ব্যবহার করে।

প্রযুক্তি খাতে এলিসনের ছাপ বহু পুরোনো—১৯৭৭ সালে ওরাকল প্রতিষ্ঠা করার পর থেকে তিনি খ্যাতি অর্জন করেন প্রযুক্তি খাতের ‘ব্যাড বয়’ হিসেবে। এমনকি ২০১০ সালে তিনি নিজেই অভিনয় করেন আয়রন ম্যান ২ ছবিতে।

ওরাকলের কাজ বরাবরই ছিল জটিল—বিশাল তথ্যভান্ডার, অদৃশ্য তবে গুরুত্বপূর্ণ সিস্টেম। এআই প্রযুক্তি এলিসনের জন্য সুবর্ণ সুযোগ নিয়ে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে এলিসন নেতৃত্ব দিয়েছেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাবিষয়ক (এআই) এক নতুন যুগে প্রবেশে। হাজার হাজার কম্পিউটার একত্র করে এআই চালাতে সক্ষম করার প্রযুক্তি তৈরির পেছনেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা আছে।

ওরাকলের ক্লাউড চুক্তিগুলো তাদের শেয়ারের মূল্য বাড়িয়ে দেয় এবং চার গুণ বেশি রাজস্ব এনে দেয়—মোট ৪৫৫ বিলিয়ন বা ৪৫ হাজার ৫০০ ডলার।

ওপেনএআই, ইলন মাস্ক এবং ‘স্টারগেট’

তবে এক বড় ঝুঁকির বাজি ধরেছেন এলিসন। ওপেনএআইয়ের সঙ্গে পাঁচ বছরের কম্পিউটিং চুক্তি করেছেন তিনি; যার মূল্য ৩০০ বিলিয়ন বা ৩০ হাজার কোটি ডলার। এই ‘স্টারগেট’ প্রকল্প ওরাকল হয়ে উঠেছে ওপেনএআইয়ের প্রধান কম্পিউটিং সরবরাহকারী। এ ছাড়া মেটা এবং মাস্কের এক্সএআইয়ের মতো কোম্পানিগুলোকেও গ্রাহক হিসেবে পেয়েছে ওরাকল।

এদিকে একটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত এলিসন নিজে নিয়েছেন—নিজস্ব এআই চিপ তৈরি না করে এনভিডিয়ার ওপর নির্ভর করা। মাইক্রোসফট, আমাজন এবং গুগলের মতো প্রতিষ্ঠান যখন নিজেদের চিপ তৈরি করছে, তখন এলিসন এনভিডিয়ার চিপ কেনায় মনোনিবেশ করেন। এর সুফল তিনি পেয়েছেনও।

২০২৪ সালে এলিসন এক নৈশভোজে মাস্ক এবং এনভিডিয়ার প্রধান জেনসেন হুয়াংকে নিয়ে যান নিজস্ব রেস্তোরাঁ নোবুতে। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের টাকা নাও।’ ফলস্বরূপ, ওরাকল পায় আরও জিপিইউ, ওপেনএআইয়ের সঙ্গে চুক্তি এবং স্টারগেট প্রকল্প বাস্তবায়ন।

আগের ব্যর্থতা, বর্তমান সাফল্য

২০১৬ সালে ওরাকলের প্রথম ক্লাউড প্রকল্প ছিল একপ্রকার ব্যবসায়িক বিপর্যয়। তবে ২০১৮ সালে শুরু হওয়া দ্বিতীয় প্রকল্পটি ছিল তুলনামূলক সস্তা এবং নমনীয়। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারির সময়, জুম যখন বাড়তি চাপে পড়েছিল, তখন ওরাকল ক্লাউডে স্থানান্তরের পর সেবা নির্বিঘ্নে চলতে থাকে।

২০২২ সালে টিকটকের ১০ কোটির বেশি মার্কিন ব্যবহারকারীর ডেটা ওরাকল ক্লাউডে স্থানান্তর হয়, যা ব্যবহারকারীরা বুঝতেই পারেননি—এটি ছিল বিশাল প্রযুক্তিগত সফলতা।

তবে এই সফলতা হারানোর ঝুঁকি এখনো আছে। গার্টনারের (Gartner) বিশ্লেষক চিরাগ দেকাটে বলেন, ওরাকল নিজে ডেটা সেন্টার, বিদ্যুৎকেন্দ্র বা জমি কিনে না—সবই অংশীদারদের ওপর নির্ভরশীল। এই অংশীদারদের মধ্যে কেউ ব্যর্থ হলে, ওরাকল বড় ক্ষতির মুখে পড়তে পারে।

বিশেষ করে যখন একটি কোম্পানি মাত্র কয়েকটি বড় গ্রাহকের ওপর নির্ভর করে এবং তাদের মধ্যে কেউ যদি পথ ছাড়ে, তবে সেই শূন্যস্থান পূরণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।

ফোর্বসের ডেপুটি এডিটর ম্যাথিউ ডুরো বলেন, ‘মানুষ তাকে নিয়ে বহু বছর ধরে প্রশ্ন তুলেছে। এখন ওরাকল এআই প্রযুক্তিতে মনোযোগ দিয়ে সফল হওয়ায়, মনে হচ্ছে এলিসনই শেষ হাসি হাসছেন—অন্তত আপাতত।’

তথ্যসূত্র: রয়টার্স

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মেঘমল্লারের জবাবের পর ডাকসু ও বাংলাদেশের রাজনীতি নিয়ে যা লিখলেন শশী থারুর

জাতিসংঘে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রস্তাব বিপুল ভোটে পাস, বিপক্ষে ভোট দিল যারা

উপদেষ্টা পরিষদের ভেতরে মাহফুজকে হত্যার মৌন সম্মতি তৈরি করা হয়েছে: নাহিদ

রপ্তানিতে দ্বিতীয় থেকে ১০ নম্বরে নামল চিংড়ি

২০ শতাংশ অতিরিক্ত ভোটার কারা, প্রশ্ন অধ্যাপক মাফরুহী সাত্তারের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত