Ajker Patrika

শৈশবের যৌন নির্যাতনের ছবি এক্সে, মুছতে মাস্কের কাছে আকুতি ভুক্তভোগীর

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
২০২২ সালে টুইটার কিনে নিয়ে এক্স হিসেবে নামকরণ করেন মাস্ক। ছবি: ফ্রান্ডড্রয়িড
২০২২ সালে টুইটার কিনে নিয়ে এক্স হিসেবে নামকরণ করেন মাস্ক। ছবি: ফ্রান্ডড্রয়িড

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সের মালিক ইলন মাস্কের কাছে মানবিক আবেদন জানালেন শৈশবে যৌন নির্যাতনের শিকার হওয়া যুক্তরাষ্ট্রের এক নারী। তাঁর নির্যাতনের ছবি যাতে আর কেউ এক্সে শেয়ার না করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নিতে মাস্কের কাছে অনুরোধ জানান জোরা (ছদ্মনাম)।

জোরা বলেন, ‘আমার দুঃসহ অভিজ্ঞতার ছবি এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে, বিক্রি হচ্ছে—এটা শুধু আমার নয়, অসংখ্য ভুক্তভোগীর জন্যই বেদনাদায়ক।’ আজ থেকে প্রায় ২০ বছর আগে একজন আত্মীয়ের হাতে প্রথম যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি।

জোরা বলেন, ‘প্রতিবার যখন কেউ এসব ছবি শেয়ার করে বা বিক্রি করে, তারা সেই ভয়ংকর নির্যাতনের কষ্ট আরও বাড়িয়ে দেয়।’

এক্স দাবি করেছে, তারা শিশু যৌন নির্যাতনের কনটেন্ট বিষয়ে ‘শূন্য সহনশীলতা’ নীতিতে চলছে এবং শিশুদের সুরক্ষা তাদের ‘অগ্রাধিকার তালিকার শীর্ষে’।

বিবিসির এক অনুসন্ধানে শিশু পর্নোগ্রাফির বৈশ্বিক বাণিজ্য নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখা যায়, এক্সের একটি অ্যাকাউন্ট থেকে জোরার ছবি বিক্রি করা হচ্ছে। এটি ছিল এমন হাজার হাজার ছবি ও ভিডিওর মধ্যে একটি। ছবিগুলো টেলিগ্রাম মেসেজিং অ্যাপের মাধ্যমে বিক্রি করা হয়।

টেলিগ্রামের অ্যাকাউন্টটি ট্র্যাক করতে গিয়ে একটি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পাওয়া যায়। ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় এই অ্যাকাউন্টের মালিক বসবাস করেন।

জোরা জানান, তাঁর নির্যাতনের ছবি প্রথমে পাওয়া যেত ডার্ক ওয়েবে। তবে এখন এক্সে তা উন্মুক্তভাবে প্রচার করা হচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমার শরীর কোনো পণ্য নয়, কখনো ছিল না, কখনো হবেও না। এসব ছবি যারা ছড়ায়, তারা শুধু দর্শক নয়, তারাও অপরাধী।’

ভুক্তভোগী শিশুদের পর্নোগ্রাফি ঠেকাতে কাজ করছে এমন হ্যাকটিভিস্ট দল অ্যানোনিমাস বিবিসিকে জানায়, এক এক্স অ্যাকাউন্টে শিশুদের ছবি বিক্রির প্রমাণ মেলে।

অ্যাকাউন্টটির প্রোফাইলে একটি শিশুর ছবি ছিল। কোনো অশ্লীলতা না থাকলেও ব্যবহার করা শব্দ ও ইমোজি স্পষ্ট করে দেয় যে, এটি শিশু নির্যাতনের ছবি বিক্রি করছিল। ওই প্রোফাইল থেকে টেলিগ্রামের একটি অ্যাকাউন্টে যাওয়ার লিংকও ছিল।

সেই বিক্রেতা দাবি করেন, তাঁর কাছে হাজার হাজার ছবি ও ভিডিও রয়েছে। তাঁর মেসেজে বলা হয়, ‘আমার কাছে শিশু আছে। ৭-১২ বছরের ছোট বাচ্চারাও রয়েছে।’

বিবিসি সরাসরি এই বিক্রেতার সঙ্গে যোগাযোগ করে। বিক্রেতা কিছু ভিডিওর নমুনা লিংক পাঠান। তদন্তের সুবিধার্থে কানাডিয়ান সেন্টার ফর চাইল্ড প্রোটেকশনের (সিসিসিপি) সঙ্গে বিবিসি যোগাযোগ করে। সংস্থাটি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে কাজ করে এবং এ ধরনের কনটেন্ট আইনি অনুমতিতে পর্যালোচনা করতে পারে।

সংস্থার টেকনোলজি ডিরেক্টর লয়েড রিচার্ডসন জানান, এটি ছিল একধরনের ‘টেস্টার প্যাক’। হাজার হাজার ছবি দিয়ে তৈরি কোলাজ, যাতে বিভিন্ন ভুক্তভোগীর ছবি ছিল। এর মধ্যেই ছিল জোরার ছবি।

জোরা জানান, তাঁর নির্যাতনকারী বহু বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে গ্রেপ্তার এবং শাস্তি পেলেও ছবিগুলো আগেই বিশ্বজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে।

তিনি বলেন, ‘আমি আমার অতীতকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে চেয়েছি। তবে এখনো লোকজন এসব ঘৃণ্য ছবি খুঁজে বের করে, আমাকে হুমকি দেয়। এটা যেন একটা অপরাধের শাস্তি, যা আমি কখনো করিনি।’

বিক্রেতার নাম জানতে বিবিসি নিজেকে একজন ‘ক্রেতা’ হিসেবে পরিচয় দেয়। বিক্রেতা তার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট এবং অনলাইন পেমেন্টের বিস্তারিত তথ্য পাঠায়। সব নথিতে একই নাম পাওয়া যায়। এই নাম দুটি টাকা লেনদেন এবং আরেকটি ব্যাংক অ্যাকাউন্টের সঙ্গেও সম্পৃক্ত।

বিবিসির এক প্রযোজক সরাসরি সেই ব্যক্তির সঙ্গে দেখা করেন। তিনি অভিযোগ শুনে হতবাক হয়ে বলেন, ‘আমি এসব কিছু জানি না।’

তিনি স্বীকার করেন, একটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট তাঁর নামে ছিল, যা বন্ধকসংক্রান্ত একটি এককালীন লেনদেনে ব্যবহৃত হয়েছিল। তবে অন্য ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও টাকা লেনদেন সম্পর্কে কিছু জানেন না বলে দাবি করেন। তাঁর সম্পৃক্ততা কতটুকু, তা নিশ্চিত করতে না পারায় বিবিসি তাঁর নাম প্রকাশ করেনি।

তদন্তে দেখা যায়, জোরার ছবি ছড়ানোর পদ্ধতি বিশ্বজুড়ে শত শত বিক্রেতা ব্যবহার করে। এক্সে কিছু হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে বিক্রেতারা অশ্লীল নয় অথচ পরিচিত ছবি পোস্ট করে। ছবি ছোট করে কেটে পোস্ট করায় তা অ্যাডাল্ট বা প্রাপ্তবয়স্ক কনটেন্ট হিসেবে শনাক্ত হয় না।

২০২২ সালে টুইটার কিনে নেওয়ার পর মাস্ক বলেছিলেন, শিশু যৌন নির্যাতনের কনটেন্ট দূর করাই তাঁর ‘শীর্ষ অগ্রাধিকার’ হবে। তবে এখনো সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা।

সিসিসিপির লয়েড রিচার্ডসন বলেন, ‘হ্যাঁ, রিপোর্ট পেলেই তারা অ্যাকাউন্ট ডিলিট করে। তবে এটা তো ন্যূনতম কাজ। বিক্রেতারা আবার নতুন অ্যাকাউন্ট খুলে ফিরে আসে।’

এক্স জানায়, তারা ‘শূন্য সহনশীলতা নীতি’ মেনে চলে এবং উন্নত প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়। টেলিগ্রাম জানায়, ২০২৫ সালেই তারা ৫ লাখ ৬৫ হাজার গ্রুপ ও চ্যানেল বন্ধ করেছে, যারা শিশু নির্যাতনবিষয়ক কনটেন্ট ছড়ানোর সঙ্গে জড়িত ছিল।

তাদের বক্তব্য, হাজারের বেশি মডারেটর নিয়োজিত রয়েছে এবং তারা প্রো-অ্যাকটিভলি কনটেন্ট পর্যবেক্ষণ করে।

জোরা যখন জানতে পারেন এক্সে এখনো তাঁর ছবির লিংক শেয়ার করা হচ্ছে, তখন তিনি মাস্কের উদ্দেশে বলেন, ‘আপনার নিজের সন্তানদের যদি কেউ এইভাবে ব্যবহার করত, আপনি নিশ্চয়ই ব্যবস্থা নিতেন। আমাদের ক্ষেত্রেও আপনি সেই মানবিকতা দেখান। এখনই সময় ব্যবস্থা নেওয়ার।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত