Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

ভারতের কাছে হেরে আমরা কেউই ঘুমাতে পারিনি

ভারতের কাছে ফাইনালে হারটা এখনো ভুলতে পারছেন না মুরশেদ আলী। ছবি: বাফুফে

একবার নয়, ভারতের বিপক্ষে এ নিয়ে চারবার হারের মুখ দেখলেন মুরশেদ আলী। তাঁর কষ্ট একটু বেশি হওয়াই স্বাভাবিক। সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ চ্যাম্পিয়নশিপে এত কাছে এসেও শিরোপা হাতছাড়া হওয়ায় তাঁর চোখে পানি চলে আসে। গতকাল আজকের পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি জানালেন, সেই রাতে সতীর্থরা কেউই ঘুমাতে পারেননি। মুরশেদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন আনোয়ার সোহাগ

প্রশ্ন: যুব সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে রানার্সআপ হলেও আপনাদের ফুটবল মানুষের হৃদয় জিতেছে। এটা ভেবে কেমন লাগছে?

মুরশেদ আলী: সবারই আশা থাকে দেশের জন্য ভালো কিছু করার। বাইরে থেকে মানুষ যেভাবে সমর্থন দিয়েছেন, তা বেশ ভালো লেগেছে।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বাঁ পায়ের ফুটবলার খুব একটা দেখা যায় না। আপনি সেখানে বিরলই বলা যায়।

মুরশেদ: আমি অনেক সৌভাগ্যবান যে বাঁ পায়ে খেলে থাকি। বাংলাদেশে বাঁ পায়ের ফুটবলার থাকলেও সংখ্যায় খুব কম। নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করি। এটি কাজে লাগিয়ে সামনে আরও ভালো কিছু করতে চাই।

প্রশ্ন: ফুটবলে উঠে আসার গল্পটা শুনতে চাই।

মুরশেদ: আমার বাড়ি পঞ্চগড় জেলায়। ফুটবলে আমার শুরুটা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্ট দিয়ে। সেখানে ভালো করার পর উপজেলা, জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের টুর্নামেন্টেও অংশ নিই। এরপর বিকেএসপি থেকে বাফুফে এলিট একাডেমিতে যুক্ত হই। একসময় ঢাকায় যখন ডাক পড়ল, তখন কোচরা বলতে থাকেন ফুটবল চালিয়ে যেতে।

প্রশ্ন: ফুটবলার হওয়ার পথে পরিবার থেকে কোনো বাধা ছিল কি না।

মুরশেদ: আসলে অনেক ফুটবলারের মতো আমিও শুরুতে পরিবার থেকে তেমন সমর্থন পাইনি। বাড়ির আশপাশে অনেকে ফুটবল খেলত। কিন্তু তাঁরা সেভাবে সফল হতে পারেননি। যখন আমি খেলতাম, তখন বাবা-মা তাঁদের উদাহরণ দিতেন, তারা তো ফুটবল খেলে কিছু করতে পারেনি, তুই কী করবি! তাঁদের সেই ভাবনা বদলেছে। ফুটবলে ভালো কিছু করলে আগে আমি বাবা-মা ও কোচের (মোফাজ্জল হোসেন বিপুল) অবদানকে স্মরণ করি। মোফাজ্জল স্যার না থাকলে হয়তো আমি বাংলাদেশের জার্সি গায়ে দিতে পারতাম না। ছোটবেলা থেকেই তিনি আমার দায়িত্ব নেন। বুট থেকে শুরু করে জার্সি—সবকিছুই তিনি কিনে দিতেন। এমনকি ঢাকায় যখন ট্রায়ালের ডাক পড়ত, আমার কাছে টাকা ছিল না। পরিবার থেকেও বেশি সহযোগিতার উপায় ছিল না। আমার বাবা ভ্যানে মালপত্র বিক্রি করে খুব বেশি রোজগার করতে পারতেন না। তখন কোচই আমাকে নিজ খরচে ঢাকায় নিয়ে আসতেন, আবার ঢাকা থেকে বাড়ি নিয়ে যেতেন।

প্রশ্ন: ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে রাতটা কীভাবে কেটেছে আপনাদের?

মুরশেদ: ভারতের সঙ্গে আমি চারবার ফাইনাল খেলেছি। কিন্তু একবারও শিরোপার স্বাদ নিতে পারিনি। এবার অন্তত আশা ছিল, শিরোপার ছোঁয়া পাব। কিন্তু এত কাছে এসেও আবার চলে গেল। হারের পর চোখে পানি চলে আসে। আমরা কেউই ঘুমাতে পারিনি। সবাই মন খারাপ করে ছিল। তবে ভারতকে একদিন হারাবই ইনশা আল্লাহ।

ভারতের কাছে কদিন আগে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে হেরেছে বাংলাদেশ। ছবি: বাফুফে
ভারতের কাছে কদিন আগে অনূর্ধ্ব-১৯ সাফে হেরেছে বাংলাদেশ। ছবি: বাফুফে

প্রশ্ন: আপনার খেলা দেখে ভারতের কেউ কিছু বলেছেন?

মুরশেদ: হ্যাঁ, ভারতের কোচ (বিবিয়ানো ফার্নান্দেজ) আমার প্রশংসা করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমার খেলা তাঁর ভালো লেগেছে। আমাকে বলেছেন, এই খেলাটা ধরে রাখতে পারলে ভবিষ্যতে তুমি বাংলাদেশের বড় তারকা হবে।

প্রশ্ন: এখন আপনার ব্যক্তিগত লক্ষ্য কী?

মুরশেদ: বয়সভিত্তিকে সব পর্যায়েই খেলেছি। সামনে অনূর্ধ্ব-২৩ দলে খেলতে চাই। তবে মূল লক্ষ্য হলো ক্লাবের (ফর্টিস এফসি) হয়ে ভালো খেলে জাতীয় দলে জায়গা করে নেওয়া। এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত প্রিমিয়ার লিগে একটি ম্যাচ খেলেছি ৷ সুযোগ পেলে ইনশা আল্লাহ নিজেকে মেলে ধরার চেষ্টা করব। আমি প্রস্তুত আছি। বাকিটা আল্লাহ জানেন।

প্রশ্ন: আপনার প্রিয় ফুটবলার কে?

মুরশেদ: লিওনেল মেসি। তবে এখন লামিনে ইয়ামালকে ভালো লাগে। আগে আমি লেফট উইংয়ে খেলতাম। তবে ইয়ামালকে দেখে রাইট উইংয়ে খেলা শুরু করি। সে আমার মতো বাঁ পায়ে খেলে। রাইট উইংয়ে খেললে অনেক সুবিধা পাওয়া যায়। বল নিয়ে আমি যদি ভেতরে ঢুকে থাকি, তখন ডিফেন্স আমার পেছনে থাকে। তাই বাঁ পায়ে বল থাকার কারণে তারা আমাকে সেভাবে চার্জ করতে পারে না। বল কেড়ে নিতে হলে অনেক সংগ্রামের পাশাপাশি ফাউল করতে হয় তাদের।

প্রশ্ন: টাইব্রেকারে নাজমুলের গোল করতে না পারা আপনাকে অবাক করেছিল কি না?

মুরশেদ: আমি একেবারেই বিস্মিত হয়ে পড়ি। অনুশীলনে আমরা সব সময় পেনাল্টি নিয়ে কাজ করি। কারও না কারও মিস হয়, আমারও মিস হতো। কিন্তু ওর কোনো দিন মিস হয়নি। কোচও আমাদের বলেছিলেন, খেলার সময় যদি পেনাল্টি পেয়ে থাকি, তাহলে সেটা নাজমুল নেবে। ও পেনাল্টি বরাবরই ভালো মারে। কিন্তু ভাগ্য সেদিন পক্ষে ছিল না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডিসেম্বরেই নির্বাচন হওয়া উচিত: সেনাপ্রধান

৪ ধরনের শৃঙ্খলাভঙ্গে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শাস্তি চাকরিচ্যুতি

বদলে গেল স্কুল-কলেজের শপথ, বাদ মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা

কক্সবাজার সৈকতে প্রশিক্ষণ মহড়ায় মার্কিন সেনারা, সামাজিক মাধ্যমে আলোচনা

কুসুম-কুসুম খেলা চলবে না, ওয়াহিদউদ্দিন-সালেহউদ্দিন-আসিফ নজরুলকে পদত্যাগে বাধ্য করব: নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত