Ajker Patrika
সাক্ষাৎকার

ক্রিকেটের চেয়ে নির্বাচনে বেশি আগ্রহ কেন

বিসিবির ১৬তম সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল। ছবি: বিসিবি

বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল অস্ট্রেলিয়া থেকে ঢাকায় ফিরবেন আগামী সোমবার। এবার ঢাকায় ফিরে তাঁর মূল কাজ হবে হাতে থাকা সময়ের মধ্যে নিজের উদ্যোগগুলো পরিপূর্ণ বাস্তবায়ন করা। গতকাল অস্ট্রেলিয়া থেকে ফোনে গত দুই মাসে সভাপতি হিসেবে বোর্ডের কার্যক্রমই শুধু নয়; বিসিবির নির্বাচন, নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলেছেন বুলবুল। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস

আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৫, ১১: ৩৮

প্রশ্ন: ছুটিতে কদিন মেলবোর্নে পরিবারের কাছে ছিলেন। বিদেশ থেকে বোর্ড চালানোর বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন এক সাবেক পরিচালক...।

আমিনুল ইসলাম বুলবুল: বোর্ড কি প্রেসিডেন্ট চালান নাকি? ক্রিকেট বোর্ড চালান প্রধান নির্বাহী ও তাঁর জনবল। এসব কথাবার্তা নিয়ে বিচলিত নই।

প্রশ্ন: জাতীয় দলের ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের নিয়ে আপনি একটি জরিপ চালাতে চেয়েছিলেন বলে জানি। সেই জরিপে কেমন সাড়া বা উত্তর পেলেন?

বুলবুল: খুব ভালো ফল এসেছে। ৮টি প্রশ্ন রেখেছিলাম। সেসব উত্তর নিয়ে ভ্যালু শেয়ারিং সেশন নামে ১৯ আগস্ট একটা সেশন করব। জাতীয় দলের সাদা ও লাল বলের ক্রিকেটাররা থাকবে। কোচিং স্টাফ থাকবে। পরিচালকদেরও জানিয়েছি, সেশনে কে কী বলতে চান, আমাকে জানান। ক্রিকেটাররা মন খুলে অনেক কিছু লিখে আমাকে জানিয়েছে। একটা প্রশ্নে বর্ণনামূলক উত্তর জানতে চাওয়া হয়েছিল—এগোনোর উপায় কী। বাকিগুলো ১ থেকে ৫ নম্বর দেওয়ার বিষয় ছিল। ১ মানে খুব বাজে, ৫ মানে খুব ভালো। বিসিবির সাপোর্ট, আমাদের কাছে তারা কী আশা করে—খাবার, লজিস্টিক, উইকেট, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদি নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল। খেলোয়াড় ও বোর্ড—দুই পক্ষের কাছে আসার একটা দারুণ পদ্ধতি এটা। এই রিপোর্ট কার্ড দেখলে বুঝতে পারব, আমরা কোথায় আছি। এ রকম আরও জরিপ করব।

প্রশ্ন: গত দুই মাসে অনেক কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। তিন ফরম্যাটে তিন অধিনায়ক, পাওয়ার হিটিং কোচ জুলিয়ান উডকে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য আনা, টনি হেমিংকে আনা...। (থামিয়ে)

বুলবুল: এসব তো আছেই। আম্পায়ার্স, ম্যাচ রেফারিদের কোর্স, হাই পারফরম্যান্স সেশন। লেভেল থ্রি কোর্স, ব্যাটিং বিশেষজ্ঞ কোর্স হবে, বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে জেলা কোচদের প্রশিক্ষিত করে বিভিন্ন উপজেলা থেকে প্রতিভা তুলে আনার কাজটাও শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে রাজশাহীতে একটা বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতা হয়েছে। ধীরে ধীরে বাকি বিভাগে হবে। চট্টগ্রামে একটা আঞ্চলিক টি-টোয়েন্টি করতে যাচ্ছি। চট্টগ্রামের পর সিলেটে আঞ্চলিক ওয়ানডে টুর্নামেন্ট হবে। এসবই বিকেন্দ্রীকরণের পরীক্ষামূলক অংশ। এরপর একটা ফান্ডিং মডেল দাঁড় করানো হবে। আমরা এরই মধ্যে মানবসম্পদ প্রতিষ্ঠানকে ঠিক করেছি প্রশাসনিক কাঠামো পর্যালোচনা করে সঠিক দিকনির্দেশনা পেতে। এই যে ফুটবলার ঋতুপর্ণা চাকমা মেয়েটা কী যে খুশি হয়েছে বাড়ি করে দেওয়ার ঘোষণায়।

প্রশ্ন: সাইমন টফেলের সঙ্গে চুক্তি পুরোপুরি সম্পন্ন হয়েছে?

বুলবুল: তাঁর চুক্তির ব্যাপারে কিছু প্রশ্ন করেছিলাম, আমাদের কী আছে, কী নেই। তাঁকে আমরা কী কাজে লাগাতে পারি। আর আমাদের এই বিনিয়োগে কী লাভ হবে। দিন, মাসের হিসাব করে তাঁকে আমরা একটা ভালো ডিসকাউন্টে রাজি করিয়েছি। এটা খুব দরকার ছিল। গ্রাউন্ডসে এখন এত কাজ হচ্ছে, গামিনি (ডি সিলভার) ব্যাপারে এত দিন কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এখন (উইকেটের পাশে) পুঁইশাক বের হচ্ছে! এসব এত বছরে বের হয়নি কেন? সব এক এক করে ধরা হচ্ছে।

বিসিবি সভাপতি হওয়ার আগে আইসিসিতে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। ছবি: বিসিবি
বিসিবি সভাপতি হওয়ার আগে আইসিসিতে দীর্ঘদিন কাজ করার অভিজ্ঞতা রয়েছে আমিনুল ইসলাম বুলবুলের। ছবি: বিসিবি

প্রশ্ন: বিপিএল পরিচালনার দায়িত্ব নাকি আন্তর্জাতিক স্পোর্টস মার্কেটিং প্রতিষ্ঠান ইন্টারন্যাশনাল ম্যানেজমেন্ট গ্রুপকে (আইএমজি) দিতে যাচ্ছে বিসিবি। বিষয়টি কি চূড়ান্ত?

বুলবুল: তিন-চারটা মডেল আছে, এখনো আলোচনা চলছে। ১৮ আগস্ট আইসিসির সাবেক দুর্নীতি দমন বিভাগের প্রধান অ্যালেক্স মার্শাল আসছেন। তাঁরা সবাই আমার পরিচিত। কীভাবে আমাদের এসিইউ বিভাগকে বিশ্বমানের করব, সে হিসেবে তাঁকে পরামর্শক হিসেবে নেওয়া হয়েছে। গত দুই মাসে অনেক কিছুই ঘটেছে বিসিবিতে। গ্রাউন্ডসের কথা যদি বলি, ইনডোরগুলো রেডি হয়ে যাচ্ছে। প্রতিটি বিভাগে কাজ হচ্ছে। একটা বায়োমেকানিকস ল্যাব করার চেষ্টা চলছে। জরিপের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের মনের কথা শোনা হচ্ছে। এনসিএলে ময়মনসিংহ বিভাগকে যুক্ত করা হচ্ছে। সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একটা নাইট অ্যাওয়ার্ডস প্রোগ্রাম করতে চাইছি। গত ১৫ বছরে এটা কি হয়েছে? ক্রিকেট-সংশ্লিষ্ট সবাইকে পুরস্কৃত করা হবে। সব একার পক্ষে সম্ভব নয়, হচ্ছে একটা টিম হিসেবে। পরিচালনা পর্ষদের প্রত্যেক সদস্যই আমাকে দারুণভাবে সহযোগিতা করছেন। বোর্ডের সবারই সহযোগিতা আছে।

প্রশ্ন: বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ শেষ হয়ে যাচ্ছে অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে। এবার ঢাকায় ফেরার পর আপনার সামনে যে বিষয়টা বেশি আসবে—বিসিবির নির্বাচন।

বুলবুল: এটা কিছু নয়। সব ঠিকঠাক করে বোর্ডের সঙ্গে বসে একটা নির্বাচন কমিশন করব। কাউন্সিলরদের চিঠি দেওয়া হবে। স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার যা যা হওয়ার—সবই করব। তবে আমার মনোযোগ বেশি থাকবে ট্রিপল সেঞ্চুরি কর্মসূচি বাস্তবায়ন আর বোর্ডের কাজে। আচ্ছা, বড় বড় যেসব ক্রিকেট বোর্ড আছে; যেমন ভারত, অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড—এদের সর্বশেষ কবে বোর্ড নির্বাচন হয়েছে, জানেন? বিসিবির নির্বাচন কবে, এটির গুরুত্ব এত বেশি কেন আমাদের এখানে? ক্রিকেট নিয়ে এত কার্যক্রম চলছে, ক্রিকেটের চেয়ে নির্বাচন কেন এত বড় বিষয় হয়ে যায়? কোনো ক্রিকেটার কি বিএনপি বা আওয়ামী লীগের পরিচয়ে খেলতে নামে? এত বছরে একটা বোর্ডের ঠিকঠাক অর্গানোগ্রামে চলেনি, সেটি নিয়ে আপনারা কেউ কি প্রশ্ন তুলেছেন? জাস্ট জিজ্ঞেস করছি। আগের একজন সভাপতি মিরপুর থেকে বিকেএসপি কিংবা ফতুল্লায় গেলেও হেলিকপ্টারে গেছেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম কিংবা সিলেটে গেলে পুরো বিমান ভাড়া করা হয়েছে। তখন এসব নিয়ে আপনারা প্রশ্ন করেননি কেন? আমার পেছনেও বিসিবির খরচ হচ্ছে। সবাইকে নিয়ে অফিসে চা খেলাম, লাঞ্চ করলাম—এসবে যতটুকু খরচ হয়, হচ্ছে। তবে আমার জন্য বিসিবিতে কোনো স্পেশাল চা তৈরি হয় না। সবার জন্য যা, আমার জন্যও তা। যাহোক, (নির্বাচনের বিষয়ে) এটা ইলেকশন কমিশন না, ক্রিকেট বোর্ড।

প্রশ্ন: গত দুই মাসে যতটুকু করার সুযোগ পেয়েছেন, কতটা করতে পারলেন বলে মনে হয়?

বুলবুল: কাজ তো চলমান। এখনই বলতে পারব না। একেবারে শেষে বলতে পারব। তবে যেসব কাজে হাত দিয়েছি, সবই ঠিকঠাক এগোচ্ছে। বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল জিতে ফিরল। জাতীয় দল টানা দুটি সিরিজ জিতেছে। সামনে যে এশিয়া কাপ হতে যাচ্ছে, এখানে থেকে আমরা রাজস্ব ভাগাভাগি থেকে ৩-৪ মিলিয়ন ডলার (৪০-৫০ কোটি টাকা) পাব। এশিয়া কাপ কতটা অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গিয়েছিল, তা তো দেখেছেনই। এখানে ক্রিকেট কূটনৈতিকতায় আমরা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছি। প্রথমবারের মতো এসিসির এজিএম হয়েছে ঢাকায়।

প্রশ্ন: একাধিকবার বলেছেন, মেয়াদ শেষ হতেই বিদায় নিয়ে চলে যেতে চান। বিসিবি নির্বাচনের পর নতুন পরিচালনা পর্ষদ যদি আপনাকে সম্মানজনক গুরুত্বপূর্ণ কোনো জায়গায় কাজ করার প্রস্তাব দেয়, গ্রহণ করবেন?

বুলবুল: এখন শুধু আমি মনোযোগী ট্রিপল সেঞ্চুরি বাস্তবায়ন আর বোর্ডের কাজে। এখানে দুটি বিষয় আছে। আমাকে আসতে হবে সরকারের কাউন্সিলর হিসেবে। এলেই হবে না, ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করতে হবে। আরেকটা হচ্ছে, আমি চাই কি না। যখন দুটি বিষয় এক বিন্দুতে মিলবে, তখন বুঝব। আমাকেও তো চাইতে হবে। আমি এটা শুধু গৌরবের ব্যাপার হিসেবে ভাবি না, এটা অনেক বড় দায়িত্ব। জেনেশুনে এই গুরুদায়িত্ব নেবেন? এটির প্রতিটি পদে ঝুঁকি থাকে।

প্রশ্ন: সংক্ষিপ্ত মেয়াদ বলেই শুধু বিসিবি সভাপতি হিসেবে রাজি হয়েছিলেন?

বুলবুল: চার মাসে যখন একটা বোর্ডে নতুন করে অর্গানোগ্রাম তৈরি হয়, পুরো এইচআর রিস্ট্রাকচার করা হয়, তার মানে এগুলো ছিল না। এটা করতেই এখানে এসেছি। যেটা কখনোই ছিল না, সেটা এখন হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত