Ajker Patrika

সাক্ষাৎকার /বাংলাদেশে প্রবাসী ফুটবলার আরও বেশি আসা উচিত

হামজা চৌধুরী, শমিত শোম, ফাহামিদুল ইসলাম আসার পর গত পাঁচ মাসে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত যে ফুটবলার তুমুল আলোচিত, সেই কিউবা মিচেল এখন বাংলাদেশে। তিন বছরের চুক্তি করে বসুন্ধরা কিংসে নাম লেখানো ১৯ বছরের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার পরশু সন্ধ্যায় দলীয় অনুশীলন শেষে সময় দিলেন আজকের পত্রিকাকে। কিউবার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন রানা আব্বাস

রানা আব্বাস, ঢাকা 
আপডেট : ২৪ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ০০
বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করেছেন কিউবা মিচেল। ছবি: বাফুফে
বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে তিন বছরের চুক্তি করেছেন কিউবা মিচেল। ছবি: বাফুফে

প্রশ্ন: বাংলাদেশে কেমন লাগছে সবকিছু? কী কী সবচেয়ে ভালো লেগেছে?

কিউবা মিচেল: ভালোই চলছে। খাবারের কথা বলতে হবে। বাড়িতে আমার মা অনেক ভিন্ন ধরনের বাঙালি খাবার রান্না করেন। এখন মনে হচ্ছে প্রতিদিনই তা খেতে পারি। সকাল, দুপুর, রাত—সব সময়। এটাই সম্ভবত অন্যতম সেরা ব্যাপার।

প্রশ্ন: কোন বিষয়টি সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং লাগছে?

কিউবা: টাইম জোন। ঘুমের সঙ্গে মানিয়ে নিতে সমস্যা হচ্ছে। পরিবারের সঙ্গে কথা বলাটাও। এখানে যখন বেলা ২টা, সেখানে তারা তখনো সজাগ হয়নি। সময় পার্থক্যটা বেশ চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রশ্ন: ক্যারিবিয়ান বংশোদ্ভূত হয়েও কেন জাতীয় দলে খেলতে বাংলাদেশকে বেছে নিলেন?

কিউবা: (বাংলাদেশ ফুটবল) ফেডারেশন প্রথমে যেভাবে আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে এবং ভক্তদের কাছ থেকে যেভাবে ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছি, সেটা অন্যতম বড় কারণ। তারা আমাকে যেভাবে ভালোবাসে এবং খেলতে দেখতে চায়, সেটা উৎসাহিত করেছে (বাংলাদেশে) খেলতে। তাদের প্রতি আমার ভালোবাসা আরও গভীর হয়েছে। আমি বলব এটাই সবচেয়ে বড় কারণ।

প্রশ্ন: বসুন্ধরা কিংসের সঙ্গে ৩ বছরের চুক্তি করার পেছনে কোন বিষয়টি বেশি কাজ করেছে?

কিউবা: সান্ডারল্যান্ড ছাড়ার পর মানসিকভাবে কঠিন সময় যাচ্ছিল আমার। বুঝতে পারছিলাম না, পরবর্তী দুই-তিন বছরে আমার ক্যারিয়ার কোথায় যাবে। তখন ক্লাব (কিংস) যোগাযোগ করল এবং আমাকে যে প্রজেক্টের অংশ হতে বলল, সেটার অংশ হতে চেয়েছিলাম। এখানে গেম টাইম এবং মূল দলে খেলার অভিজ্ঞতা পাব। হ্যাঁ, সম্ভবত এটিই সবচেয়ে বড় বিষয় ছিল।

প্রশ্ন: সান্ডারল্যান্ড ছাড়ার পর কি মনে হয়েছিল ইউরোপে খেলার সুযোগ পাবেন না?

কিউবা: হ্যাঁ, বিষয়টি নিয়ে আমি ভেবেছি। সান্ডারল্যান্ড ছাড়ার পর নতুন গন্তব্য খুঁজছিলাম। তবে খুব বেশি অপশন ছিল না আমার হাতে। সবাই জানে ইউরোপ খুব প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ। যদি জাতীয় দলে খেলতে চাই, যেসব মহাদেশীয় টুর্নামেন্ট খেলব এবং নিজের উন্নতি করতে মনে হয়েছে, এটাই সেরা পদক্ষেপ—আমার জন্য এটাই সেরা সিদ্ধান্ত ছিল।

প্রশ্ন: বাংলাদেশের ফুটবল সংস্কৃতিতে নতুন কিছু যোগ করতে কতটা আত্মবিশ্বাসী?

কিউবা: হ্যাঁ, অবশ্যই মাঠে আমার সৃজনশীলতা এবং গোল করার সক্ষমতা দিয়ে আমি দল ও ক্লাবকে আরও এগিয়ে নিতে পারব। হয়তো বাংলাদেশ ফুটবলের জন্য এটি বড় কিছু হবে। এখানে সবকিছুই উন্মুক্ত। আশা করি, ভালো কিছু হবে।

প্রশ্ন: বিপিএল খেলে কি মনে হয় বাংলাদেশের ফুটবলকে হামজা ও শমিতের চেয়ে ভালো বুঝতে পারবেন আপনি?

কিউবা: আমি অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি এবং তারা মনে করে এই ক্লাবে যোগ দেওয়াটা জাতীয় দলে খেলার ক্ষেত্রে আমাকে সহায়তা করবে। সবাই জানে জাতীয় দলের অনেক খেলোয়াড় কিংসের হয়ে খেলে। মাঠ ও মাঠের বাইরে খেলোয়াড়দের সঙ্গে সম্পর্ক রাখাটা অনেক কিছু সহজ করে দেবে। মাঠে আমার কাজও সহজ করে দেবে।

প্রশ্ন: ঘরোয়া ফুটবল প্রায়ই সমালোচিত হয় বাজে সুযোগ সুবিধা ও মাঠের জন্য। আপনার নিশ্চয়ই জানা?

কিউবা: এখানে যোগ দেওয়ার আগেই আমি তা জানতাম। তবে এটা অন্যতম কারণ, কেন আমি এই ক্লাবকে বেছে নিয়েছি। বাংলাদেশের মধ্যে তাদের সেরা সুযোগ-সুবিধা, সেরা জিম আছে। তাদের সবকিছুই সেরা। আমি মনে করি, সেসব আমার উন্নতিতে বাধা হবে না। সে কারণে আমি এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

প্রশ্ন: প্রবাসী খেলোয়াড়দের নিয়ে সমর্থকদের মধ্যে আলাদা উন্মাদনা রয়েছে। তারা মনে করে প্রবাসী ফুটবলারেরা এসেই পারফর্ম করতে পারবে। এটা কি আপনার কাছে বাড়তি চাপ মনে হয়?

কিউবা: চাপ তো কিছুটা থাকবে। তবে শুধু সমর্থকেরা নয়, আমিও নিজের কাছে এমন প্রত্যাশা করি। আমি যেখান থেকে এসেছি, সেখান থেকে এসে পারফর্ম করাটা গুরুত্বপূর্ণ। এর জন্যই এখানে আসা। নিজেকে নিয়ে আমার ও সমর্থকদের তাই একই প্রত্যাশা। আমার মনে হয় না খুব বেশি চাপ থাকবে। তবে এটা এমন কিছু নয়, যেটাতে আমি অভ্যস্ত নই।

সান্ডারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলা এই ফুটবলার এবার খেলবেন বাংলাদেশের জার্সিতে। ছবি: এএফপি
সান্ডারল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলা এই ফুটবলার এবার খেলবেন বাংলাদেশের জার্সিতে। ছবি: এএফপি

প্রশ্ন: জাতীয় দল নিয়ে আপনার লক্ষ্য কী?

কিউবা: আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলা সম্ভবত প্রতিটি ফুটবলারের স্বপ্ন। পুরো দেশকে প্রতিনিধিত্ব করা আমার এবং পরিবারের জন্য বড় সম্মানের। জাতীয় দলের জন্য লক্ষ্য বলতে বোঝায় বড় টুর্নামেন্টে খেলার যোগ্যতা অর্জন করা। সবচেয়ে বড় লক্ষ্য বিশ্বকাপে খেলা। দলের অনেকে তা করতে চাইবে।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয় জাতীয় দলে আরও বেশি প্রবাসী ফুটবলার আসা উচিত?

কিউবা: অবশ্যই আসা উচিত। আমি ইতিমধ্যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলেছি। হামজা আসার পর দেখেছেন শমিত এসেছে। আমিও খেলতে চাই জাতীয় দলে। আমার আসাটা লিগের জন্য অবশ্যই বড় ব্যাপার হতে পারে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অনেক খেলোয়াড়ই আমাকে দেখবে এবং তারাও বাংলাদেশের লিগে খেলতে চাইবে।

প্রশ্ন: অনূর্ধ্ব-২৩ এশিয়ান কাপ বাছাই নিয়ে আপনি কতটা আশাবাদী?

কিউবা: অবশ্যই আশাবাদী। আমি কোচের সঙ্গে কথা বলেছি। টুর্নামেন্টের জন্য খুবই ভালো একটি দল গড়েছেন তিনি। সব খেলোয়াড় টুর্নামেন্টটি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে। অনূর্ধ্ব-২৩ হোক বা জাতীয় দল, দিন শেষে আমি দেশকে প্রতিনিধিত্ব করব এবং নিজের সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব। অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে কোয়ালিফাই করার। না করতে পারলে সেটা হবে হতাশার। আমাদের যথেষ্ট ভালো স্কোয়াড রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত