Ajker Patrika

কয়লাখনির শ্রমিকদের দলই ফুটবলের প্রথম বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন

ক্রীড়া ডেস্ক    
১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপের তখনকার ট্রফি জুলে রিমে চুরি হয়ে গেলে স্যার থমাস লিপটন ট্রফিকে এর স্থলাভিষিক্তের আলোচনা হয়। ছবি: সংগৃহীত
১৯৬৬ সালে বিশ্বকাপের তখনকার ট্রফি জুলে রিমে চুরি হয়ে গেলে স্যার থমাস লিপটন ট্রফিকে এর স্থলাভিষিক্তের আলোচনা হয়। ছবি: সংগৃহীত

চেলসি ও পিএসজি যখন ক্লাব বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হওয়ার লড়াইয়ে নামবে, তখন কেউ হয়তো কল্পনাও করে না, একসময় এমনই এক খেতাবের জন্য লড়েছিল ইংল্যান্ডের কাউন্টি ডারহামের একটি অপেশাদার দল—ওয়েস্ট অকল্যান্ড টাউন এফসি। ইংল্যান্ডের ফুটবল কাঠামোর নবম স্তরের দলটি আজও ফিফার স্বীকৃত প্রথম ‘বিশ্বচ্যাম্পিয়ন’।

সেই অর্জনের ইতিহাস ১৯০৯ সালের—এক শতাব্দীরও বেশি আগের। তবে আজও গর্বের সঙ্গে সেই খেতাব বহন করে চলে দলটি। কিন্তু কীভাবে কয়লাখনি শ্রমিকদের নিয়ে গঠিত একটি অপেশাদার দল ইংল্যান্ডের প্রতিনিধিত্ব করল একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল টুর্নামেন্টে? চলুন দেখি...

ফিফা বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার ২১ বছর আগেই ১৯০৯ সালে একটি আন্তর্জাতিক ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্যোগ নেন স্যার থমাস লিপটন। যিনি আইস টি’র জনক ও দানবীর হিসেবে খ্যাতি পেয়েছেন। প্রতিযোগিতার নামও দেওয়া হয় ‘স্যার থমাস লিপটন ট্রফি’। সেই টুর্নামেন্টে দেশ নয়, লড়াই করেছিল ক্লাবগুলো। ইতালির তুরিন শহরে আয়োজিত টুর্নামেন্টে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল ইংল্যান্ড, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড ও ইতালির সেরা ক্লাবগুলোকে।

জার্মানি পাঠায় তাদের চ্যাম্পিয়ন স্টুটগার্ট, সুইজারল্যান্ড পাঠায় উইন্টারথার, ইতালি পাঠায় তুরিন ও পিয়েমন্তের যৌথ দল। তবে ইংলিশ ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন (এফএ) টুর্নামেন্টে দল পাঠাতে রাজি হয়নি। তখন লিপটন নিজের উদ্যোগে যোগাযোগ করেন ইংল্যান্ডের নর্দার্ন লিগের একটি দলের সঙ্গে। নানা জল্পনা থাকলেও শেষ পর্যন্ত আমন্ত্রণ পায় ওয়েস্ট অকল্যান্ড টাউন এফসি (ডব্লিউএএফসি)।

এক সময় গুজব ছিল, ‘ডব্লিউএএফসি’ দেখে লিপটনের সেক্রেটারি ভুল করে ‘উলউইচ আর্সেনালের’ বদলে ওয়েস্ট অকল্যান্ডকে চিঠি পাঠিয়েছিলেন। তবে স্থানীয় ইতিহাসবিদ মার্টিন কনোলির মতে, ব্যাপারটা এ রকম ছিল না। তিনি বলেন, ‘সম্ভবত বিখ্যাত দল বিশপ অকল্যান্ডকে আমন্ত্রণ জানানো কথা ছিল, কিন্তু ভুল করে বা অন্য কারণে ডাক পড়ে ওয়েস্ট অকল্যান্ডের।’

বৈচিত্র্যময় যাত্রা

ওয়েস্ট অকল্যান্ডের খেলোয়াড়েরা নিজের পকেট থেকে টাকা দিয়ে তুরিনে পাড়ি দেন। কেউ কেউ নাকি আসবাবপত্র বিক্রি করে খরচ জোগাড় করেছিলেন। তাদের যাত্রাও বেশ বৈচিত্র্যময়। বাসে ডারলিংটন, ট্রেনে লন্ডন, ফেরিতে ফ্রান্স—সেখান থেকে রওনা হয়ে ইতালির উত্তরে তুরিন।

চ্যাম্পিয়ন

প্রথম ম্যাচেই চমক। জার্মান চ্যাম্পিয়ন স্টুটগার্টকে ২-০ গোলে হারায় ওয়েস্ট অকল্যান্ড। ফাইনালে একই স্কোরে পরাজিত করে সুইস দল উইন্টারথারকে। পুরো টুর্নামেন্টে একটিও গোল হজম করেনি তারা! কনোলির ভাষায়, ‘এটা সম্ভবত ইংরেজ ফুটবলের সবচেয়ে অবিশ্বাস্য অর্জন। খনি থেকে উঠে আসা ছেলেরা এসে ইউরোপের সেরা দলগুলোকে হারায়—অসাধারণ!’

দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন ও ট্রফির চূড়ান্ত মালিক

দুই বছর পর, ১৯১১ সালে, আবারও আমন্ত্রণ পায় ওয়েস্ট অকল্যান্ড। এবার আরও কঠিন প্রতিপক্ষ তুরিনো ও জুভেন্টাস। ইস্টার সানডেতে ৩-২ গোলে তুরিনোকে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছে যায় তারা। ফাইনালে ভবিষ্যতের ইউরোপীয় জায়ান্ট জুভেন্টাসকে ৬-১ গোলে হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বার ট্রফি জেতে। এবার ট্রফিটা পুরোপুরিভাবে দিয়ে দেওয়া হয় ওয়েস্ট অকল্যান্ডকে—চূড়ান্ত মালিকানা তাদেরই।

ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ট্রফি বিক্রি ও চুরি

কিন্তু জয় ফিরিয়ে আনল না অর্থ। আর্থিক সংকটে পড়া ক্লাবটি ট্রফিটি মাত্র ৪০ পাউন্ডে বিক্রি করে দেয় এক স্থানীয় হোটেল মালিককে। ৪৮ বছর পর, ১৯৬০ সালে, ক্লাব ট্রফিটি ফেরত কিনে নেয় ১০০ পাউন্ডে। সংরক্ষণে রাখা হয়েছিল ওয়েস্ট অকল্যান্ডকে ওয়ার্কিং মেন্স ক্লাবে। কিন্তু ১৯৯৪ সালের জানুয়ারিতে ট্রফিটি চুরি হয়ে যায়। আজও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। নেই। এখন ক্লাবের কাছে রয়েছে একটি অবিকল প্রতিরূপ (রেপ্লিকা)।

এখনো বেঁচে আছে সেই গৌরব

ওয়েস্ট অকল্যান্ডে ঢুকলেই আপনি দেখতে পাবেন সাইনবোর্ড—‘ওয়েলকাম টু ওয়েস্ট অকল্যান্ডকে-হোম অব দ্য ফার্স্ট ওয়ার্ল্ড কাপ’। অর্থাৎ ‘ (স্বাগতম ওয়েস্ট অকল্যান্ডে, প্রথম বিশ্বকাপের ঘরবাড়ি’। ২০১৩ সালে টাউন গ্রিনে স্থাপন করা হয় একটি ব্রোঞ্জের ভাস্কর্য—যেখানে আছে খেলোয়াড়দের ট্রফি উঁচিয়ে ধরার দৃশ্য। এটি নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে ২ লাখ পাউন্ডের বেশি। স্থানীয়দের চাঁদা ও অনুদানে উঠে আসে এই অর্থ। স্থানীয় খেলার মাঠের পাশেই স্থাপন করা হয় ভাস্কর্যটি—সেখানে এখনো ওয়েস্ট অকল্যান্ড টাউন ক্লাব তাদের ঘরের ম্যাচ খেলে।

সাবেক কাউন্সিলর রবার্ট ইয়র্ক বলেন, ‘পুরো গ্রাম একসঙ্গে চাঁদা দিয়েছে। এটা শুধু ট্রফি নয়, এটা ছিল আমাদের গর্বের অংশ।’ ইয়র্ক ২০০৮ সালে স্থানীয় সরকার পুনর্গঠনের সময় ওয়েস্ট অকল্যান্ডের কাউন্টি কাউন্সিলর ছিলেন। তিনি মনে করেন, এই অসাধারণ ক্রীড়া সাফল্য উদ্যাপন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তিনি বলেন, ‘আমরা খুব দ্রুত তহবিল সংগ্রহে নেমে পড়ি—স্থানীয় আয়োজন, চিঠি পাঠিয়ে বিভিন্ন শিল্প সংগঠন ও ফাউন্ডেশন থেকে অনুদান চেয়ে টাকা তুলি।

গ্রামের সবাই অংশ নেয়, যা প্রমাণ করে কতটা গুরুত্বপূর্ণ এই অর্জন আমাদের কমিউনিটির কাছে।’

যদিও ওয়েস্ট অকল্যান্ডের এই গল্প বিশ্বব্যাপী ১৯৩০ বিশ্বকাপজয়ী উরুগুয়ে মতো বিখ্যাত নয়। তবুও ইয়র্ক দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করেন, কারা ছিল আসল প্রথম বিশ্বকাপজয়ী তা নিয়ে তার সন্দেহ নেই। তিনি বলেন, ‘ওয়েস্ট অকল্যান্ড এফসি যে প্রথম বিশ্বকাপ জিতেছিল, এই গল্প কাউন্টি ডারহাম এলাকায় পরিচিত হলেও বাইরের দুনিয়ায় খুব কম মানুষ জানে। অথচ ১৯০৯ সালে নিজেদের অর্থে ইউরোপে গিয়ে খেলে সেই সময়কার সেরা টিমগুলোর বিপক্ষে জিতে আসাটা ছিল দারুণ এক কীর্তি।’

ইতিহাসে অমর

১৯৮২ সালে আইটিভি তৈরি করে ‘এ ক্যাপ্টেনস টেল’—ওয়েস্ট অকল্যান্ডের এই ঐতিহাসিক জয়ের গল্প নিয়ে নাট্যধর্মী টেলিফিল্ম। আর ইতিহাসবিদ ও গ্রামবাসীদের জোরালো দাবি, ‘১৯০৯ সালে যে দলটা বিশ্বে প্রথম আন্তর্জাতিক ক্লাব টুর্নামেন্ট জিতেছিল, তারা-ই প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়ন।’

ইয়র্ক আরও যোগ করেন, ‘তাই যখন কেউ জিজ্ঞেস করবে—প্রথম বিশ্বকাপ কে জিতেছিল? তুমি নিশ্চিন্তে বলতে পারো—ওয়েস্ট অকল্যান্ড এফসি!’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ক্যাম্প ন্যুতে দীর্ঘদিন পর ফিরে মেসির আবেগঘন পোস্ট

ক্রীড়া ডেস্ক    
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২৩: ২৪
দীর্ঘ দিন পর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত
দীর্ঘ দিন পর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন লিওনেল মেসি। ছবি: সংগৃহীত

লিওনেল মেসির বার্সেলোনা ছাড়ার পর কেটে গেছে চার বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু যে ক্লাবে তিনি প্রায় দুই দশক কাটিয়েছেন, তাঁর ‘মেসি’ হয়ে ওঠা যেখানে, সেই জায়গা কি এত সহজেই স্মৃতি থেকে ‘ডিলিট’ করা সম্ভব! দীর্ঘদিন পর ফিরে মেসি নস্টালজিক হয়ে পড়লেন।

৮৯৪ দিন পর ৭ নভেম্বর ক্যাম্প ন্যুতে ফিরেছে বার্সেলোনা ফুটবল। যে ক্লাবের জার্সিতে মেসি অসংখ্য শিরোপা জিতেছেন, তাঁর অনেক স্মৃতি ক্যাম্প ন্যুতে, সেখানে অনেকটা নিভৃতে ঘুরে গেলেন তিনি। মাঠে কিছু ছবি তুলে নিজের অফিশিয়াল ইনস্টাগ্রাম হ্যান্ডলে সেটা পোস্ট করেন মেসি। আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড লেখেন, ‘আমি গত রাতে ফিরে গিয়েছিলাম এমন এক জায়গায়, যেটাকে অনেক মিস করি। এই জায়গাটা ছিল আমার মন-প্রাণ। অনেক সুখ ছিল এখানে। আমি যে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী মানুষ সেটা আপনারা মনে করিয়ে দিয়েছিলেন।’

২০২১ সালে কান্নাভেজা চোখে ক্যাম্প ন্যু ছেড়ে গিয়েছিলেন মেসি। সেই দৃশ্য ফুটবলভক্তদের স্মৃতিতে এখনো তরতাজা। বার্সায় এরপর তাঁর ফেরার গুঞ্জন শোনা গেলেও সেটা গুঞ্জনই রয়ে গেছে। আর্জেন্টাইন তারকা ফরোয়ার্ড ফিরতে পারেননি বার্সায়। ইনস্টাগ্রামে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড বলেন, ‘একদিন আবার ফিরতে পারব। খেলোয়াড় হিসেবে বিদায় জানানোর জন্য নয়। বরং এমন কিছুর জন্য যেটা আগে কখনো পারিনি।’

বার্সা ছেড়ে মেসি ২০২১ সালে গিয়েছিলেন প্যারিস সেন্ট জার্মেইয়ে (পিএসজি)। কিন্তু দুই বছর থাকার পর পিএসজির পরিবেশ বিষাক্ত হয়ে উঠেছিল তাঁর কাছে। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড পাড়ি জমান ইন্টার মায়ামি। ঠিক তার এক মাস আগে (২০২৩-এর জুনে) সংস্কারের জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায় ক্যাম্প ন্যুতে। ৮৯৪ দিন পর ৭ নভেম্বর ঐতিহাসিক ক্যাম্প ন্যুতে ফেরার পর অনুশীলন করেছেন রবার্ট লেভানডফস্কি-লামিনে ইয়ামালরা। এদিকে মায়ামির জার্সিতে ২৮ মাসে সব ধরনের প্রতিযোগিতা মিলে ৮৫ ম্যাচ খেলেছেন। ৭৬ গোল করেছেন ও অ্যাসিস্ট করেছেন ৩৮ গোলে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দুই মলাটে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক ৫০ ম্যাচের ‘টিকিট’, দাম কত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশ করা হয়েছে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’। ছবি: ফেসবুক
বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে প্রকাশ করা হয়েছে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’। ছবি: ফেসবুক

টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেকের পর ২৫ বছর পূর্ণ করে ফেলেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট। ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে ২০০০ সালের ১০ নভেম্বর ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে হাঁটিহাঁটি পায়ে শুরু হয় টেস্টে বাংলাদেশের পথচলা। ২৫ বছরে ঐতিহাসিক কিছু মুহূর্ত নিয়ে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ নামে একটি স্মারকগ্রন্থ প্রকাশ করা হয়েছে। বইটি কেনা যাবে ৮০০ টাকায়।

বাংলাদেশ টেস্ট ক্রিকেট অভিষেকের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে দুই দিনব্যাপী চলা ক্রিকেট কনফারেন্স শেষ হলো আজ। ক্রিকেটের রাজকীয় সংস্করণে বাংলাদেশের আড়াই দশকের স্মরণীয় মুহূর্ত নিয়ে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ প্রকাশ করেছে ক্রিকেট স্মারক সংগ্রাহক জুনায়েদ পাইকার। ব্যক্তিগত সংগ্রহ থেকে বাছাই করা ৫০টি ঐতিহাসিক ম্যাচ টিকিট নিয়ে সাজানো এই গ্রন্থে ফুটে উঠেছে আড়াই দশকের আবেগ, স্মৃতি ও গৌরব। জুনায়েদ বলেন, ‘এই টিকেট শুধু স্মারক নয়, আমাদের ক্রিকেটের পথচলা ও অগ্রগতির প্রতীক।’ বাংলাদেশ ক্রিকেট জাদুঘর ফেসবুকে বইটির একটি বিজ্ঞাপনও করেছে। দুই মলাটের এই বইয়ের দাম ৮০০ টাকা। বইটি কীভাবে কেনা যাবে, সেটার লিংকও বাংলাদেশ ক্রিকেট জাদুঘর ফেসবুকে দিয়েছে।

‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ স্মারকগ্রন্থে বাংলাদেশের শততম টেস্ট জয়ও থাকবে বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন জুনায়েদ। ২০১৭ সালে কলম্বোর পি সারা ওভালে সেই ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৪ উইকেটে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। ঐতিহাসিক সেই ম্যাচসহ বাংলাদেশের স্মরণীয় কিছু সিরিজ জয়ও থাকবে ‘মেমোরেবল ম্যাচ টিকেটস’ স্মারকগ্রন্থে। বইয়ে নিজের শুভেচ্ছা বার্তায় বিসিবি সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, ‘প্রতিটি টিকেটই একটি গল্প-মুহূর্ত, মাইলফলক ও আবেগের গল্প, যা আমাদের ক্রিকেট পরিচয়কে গড়ে তুলেছে।’

টেস্ট অভিষেকের রজতজয়ন্তী নিয়ে যখন ঢাকায় উৎসব, নাজমুল হোসেন শান্তর নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ দল অবস্থান করছে সিলেটে। আগামীকাল সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুরু হবে বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম টেস্ট। দ্বিতীয় টেস্ট মিরপুরে শুরু হবে ১৯ নভেম্বর। এই টেস্ট দিয়ে বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে মুশফিকুর রহিম শততম টেস্ট খেলতে যাচ্ছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুটবল নিয়ে আসিফের ‘অপমানজনক’ মন্তব্যে ক্ষুব্ধ বাফুফে সভাপতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১০ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৩৯
আসিফ আকবরের কুরুচিকর মন্তব্যে খেপেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ছবি: ফাইল ছবি
আসিফ আকবরের কুরুচিকর মন্তব্যে খেপেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল। ছবি: ফাইল ছবি

বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) মধ্যে ‘যুদ্ধ’ লেগে গেছে। যুদ্ধের কারণ আসিফ আকবরের ফুটবল নিয়ে ‘কুরুচিকর’ মন্তব্য। আলোড়ন তোলা এই বক্তব্যের পর খেপেছেন বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল।

টেস্ট অভিষেকে বাংলাদেশের রজতজয়ন্তী উপলক্ষ্যে গতকাল ক্রিকেট কনফারেন্সের প্রথম দিনে বিসিবি পরিচালক আসিফ আকবর ফুটবল নিয়ে মারপিটের কথা বলেছিলেন। আজ ঢাকার একটি চার তারকা হোটেলে নারী ফুটবলের একটি প্রোগ্রামে তাবিথের কাছে সেই প্রসঙ্গ। উত্তরে সাংবাদিকদের বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘দেখুন আমরা যারা ফুটবল নিয়ে কাজ করি বা ফুটবলটাকে বাংলাদেশে এবং বাংলাদেশের বাইরে জাগ্রত করার চেষ্টা করছি, যখনই আমরা ফুটবল নিয়ে কোন নেতিবাচক কমেন্ট আমরা শুনি, অবশ্যই আমরা ব্যথিত হই এবং আঘাতপ্রাপ্ত হই। তাও কদিন আগে আমাদের ক্রিকেট কনফারেন্সের সময় আমরা একটা বক্তব্য শুনেছিলাম যেটা ফুটবলের বিরুদ্ধে যায় এবং খেলোয়াড়দের ওপর অপমানজনক একটা মন্তব্য করা হয়েছে। তার প্রসঙ্গে আমি ব্যক্তিগত প্যাডে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পক্ষ থেকে বিসিবি সভাপতির কাছে একটা চিঠি পাঠিয়েছি।’

আসিফের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে বাফুফে একটা চিঠি এরই মধ্যে পাঠিয়েছে বিসিবির কাছে। চিঠির জবাবে বিসিবি একটা সমাধানের পথ খুঁজে দেবে বলে আশা তাবিথের। ঢাকার একটি চার তারকা হোটেলে নারী ফুটবলের একটি প্রোগ্রামে বাফুফে সভাপতি বলেন, ‘আশা করি, এই চিঠির উত্তরে আমরা অনেক ব্যাপারে স্পষ্ট জানতে পারব। যখন স্পষ্ট কিছু জানতে পারব বা বিসিবির অবস্থান আমরা জানতে পারব, সেখানে সমাধানের একটা পথ খুঁজে নেব। আমরা সবাই খেলোয়াড়। আমরা সবাই ক্রীড়াবিদ। আর আমাদের সকল ফেডারেশনের দায়িত্ব হলো ঐক্যবদ্ধ থাকা। তা আমরা চাইব না কোনো একটা ইস্যুতে বা কোনো কারোর ইস্যুতে সেটা আমাদের আমাদের বিভক্ত করে ফেলে। অতি শীঘ্রই আপনারা দেখবেন যে সকল ক্রীড়া ফেডারেশন এক হয়ে বাংলাদেশের জন্য এবং বাংলাদেশের কল্যাণের জন্য আমরা কাজ করছি।’

দেশের ৬৪ জেলার ক্রিকেট কোচ, সংগঠক ও ক্রীড়া কর্মকর্তাদের নিয়ে গতকাল শুরু হয়েছে বিসিবির দুই দিনব্যাপী ক্রিকেট কনফারেন্স। গতকাল ঢাকার একটি পাঁচতারকা হোটেলে ক্রিকেট কনফারেন্সের প্রথম দিনে বিসিবি পরিচালক ও সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর বলেছিলেন, ‘ফুটবলারদের জন্য (ক্রিকেট) খেলা যাচ্ছে না সারা দেশে। তারা উইকেট ভেঙে ফেলল, উইকেট নষ্ট করে ফেলেছে। আবার ২৪ তারিখ আবাহনী-মোহামেডান ফুটবল খেলা কুমিল্লা স্টেডিয়ামে। এই সমস্যাটা শুধু কুমিল্লার না। প্রতিটা জেলার স্টেডিয়াম দখল করে রেখেছে ফুটবল, প্রতিটা জেলার যেখানে ফুটবলের কাজ নেই, সেখানেও ফুটবল দখল করে রেখেছে এবং ফুটবলারদের ব্যবহার খুব খারাপ।’ তাঁর এমন মন্তব্যের পর নিন্দার ঝড় উঠেছে দেশের ফুটবল অঙ্গনে। বিসিবির এই পরিচালক ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন ফুটবলাররা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নারী ফুটবলার তুলে আনতে ফিফার সঙ্গে মিলে বাফুফের উদ্যোগ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফিফা কর্মকর্তাকে (ডানে) জার্সি তুলে দিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি: বাফুফে
ফিফা কর্মকর্তাকে (ডানে) জার্সি তুলে দিয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। ছবি: বাফুফে

বিশ্বজুড়ে নারী ফুটবলের প্রসারের লক্ষ্যে ‘এমপাওয়ার হার’ নামে এক বিশেষ পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে ফিফা। এশিয়ান অঞ্চলে নারী ফুটবলে উন্নয়ন বিষয়ক প্রধান সাইমন আন্তোনির উপস্থিতিতে ২০২৫-২৮ চক্রের সেই পরিকল্পনায় যুক্ত হলো বাংলাদেশও। এই পরিকল্পনার উদ্দেশ্য নারী ফুটবলারদের অংশগ্রহণ, বাণিজ্যিক উন্নয়ন বৃদ্ধি ও ভিত্তি তৈরি করা।

নারী কোচের বর্তমান সংখ্যা নিয়ে সাইমন বলেন, ‘আমরা একটা জরিপ করেছি। সেখানে দেখা গেছে নারী-পুরুষ লিগ মিলিয়ে নারী কোচের সংখ্যা মাত্র ২২ শতাংশ। আমরা এই চার বছরে অনেক নারী কোচ বাড়াতে চাই।’ বাফুফে সভাপতি তাবিথ আউয়াল ফিফার এই উদ্যোগের সঙ্গে বাফুফে সম্পৃক্ত হতে পেরে বেশ সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তিনি এই উদ্যোগের মাধ্যমে নারী ফুটবলে কার্যকর পরিবর্তন আনা সম্ভব বলে মনে করেন, ‘নারী ফুটবলে আমাদের ক্লাব সংখ্যা কম। নারীদের ঘরোয়া লিগ বাড়ানো, তাদের আরও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির চেষ্টা করব। ফিফা আমাদের টেকনিক্যাল ও আর্থিকভাবে সহায়তা করবে।’

বাফুফে ২০২৫-২৮ সালে নারী ফুটবলে কী কী করতে চায় সেই পরিকল্পনা ডিসপ্লেও করেনি কিংবা পুরোপুরি প্রকাশও করেনি। মাঠের খেলা বৃদ্ধির পাশাপাশি নারী ফুটবলারদের সুরক্ষার বিষয়টিও বাফুফে সভাপতি গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু নারী ফুটবলারদের খেলার মান উন্নয়ন ও সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধিতেই সীমাবদ্ধ থাকব না। নারী হিসেবে তাদের সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতার পাশেও দাঁড়াব। অনেক সময় নারীরা সাইবার বুলিংয়ের শিকার হয়। আমরা সেক্ষেত্রে প্রয়োজনে আইনি পদক্ষেপ নেব।’

আজকের অনুষ্ঠানে ঢাকাস্থ আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত মার্সেলো সেসা, মরক্কো দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স উপস্থিত ছিলেন। মরক্কো দূতাবাসের কর্মকর্তা বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী ফুটবলের উন্নয়নে মরক্কো সব সময় পাশে থাকবে।’ আর্জেন্টিনার রাষ্ট্রদূত বাংলাদেশের নারী ফুটবলারদের প্রশংসা করে বলেন, ‘বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা সাফল্য আনছে এটা আসলেই বেশ গর্বের বিষয়।’

বাংলাদেশের নারী ফুটবলে প্রধান পৃষ্ঠপোষক ঢাকা ব্যাংক। আজকের অনুষ্ঠানে ঢাকা ব্যাংকের প্রতিনিধি বলেন, ‘ঢাকা ব্যাংক নারী ফুটবলের সঙ্গে থাকতে পেরে গর্বিত। আগামী দিনেও ঢাকা ব্যাংক নারী ফুটবলারদের সাথে থাকবে।’ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের তারকা খেলোয়াড় ঋতুপর্ণা চাকমা ফিফা কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের পক্ষে জার্সি তুলে দিয়েছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত