Ajker Patrika

‘পরিবার কেমন আছে, কিছুই জানতাম না’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ১০: ৫২
‘পরিবার কেমন আছে, কিছুই জানতাম না’

পুরো সিলেট শহর তলিয়ে গেছে বন্যার পানিতে। প্লাবিত হয়েছে শহরের বিদ্যুৎকেন্দ্রও। বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিতে হয়েছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। ফোনের চার্জ আর নেটওয়ার্ক না থাকায় বন্ধ হয়ে গেছে যোগাযোগের শেষ মাধ্যমটুকুও।

জীবিকার টানে রাজধানী ঢাকায় থাকলেও পরিবার-প্রিয়জনের চিন্তায় উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন সিলেট শহর থেকে উঠে আসা বাংলাদেশ দলের একাধিক ফুটবলার। ফোনের চার্জ না থাকায় খোঁজ-খবর নিতে পারছেন না পরিবারের। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় যেতে পারছেন না সিলেটেও।

সিলেট শহরের শাহজালাল বিজ্ঞান প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই থাকেন ফুটবলার সাদ উদ্দিনের পরিবার। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে ভারী বৃষ্টিপাতের কারণে সৃষ্ট এমন আকস্মিক বন্যা কখনো দেখেননি বলে আজকের পত্রিকাকে জানিয়েছেন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের উইঙ্গার সাদ, ‘২০০৪ সালে একবার বন্যা হয়েছিল। অল্প অল্প মনে আছে। কিন্তু সিলেট শহরে এমন বন্যা কখনো দেখিনি। ফেসবুকে শহরের অবস্থা দেখছি। কারও সঙ্গে যোগাযোগের উপায় নেই। আমাদের বাড়ি একটু উঁচু জায়গায় হওয়ায় রক্ষা। আরও দুই দিন বৃষ্টি হলে সেখানেও পানি উঠে যাবে।’

বিদ্যুৎ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় একটা সময় পরিবারের খোঁজ করতে পারছিলেন না সাদ, ‘তারা কেমন আছে, কিছুই জানতাম না। ঢাকা থেকে যে যাব তারও অবস্থা নেই। গাড়ি চলে না, বিমান বন্ধ। পরে বাধ্য হয়ে মামাকে পাঠিয়ে তাদের খোঁজ নিয়েছি।’ 

সিলেট শহরের আগে ইসমাইলনগর এলাকার বাসিন্দা ফরোয়ার্ড মতিন মিয়া। টিলাবেষ্টিত হওয়ায় আপাতত সেখানে বন্যার পানি ঢোকার সুযোগ কিছুটা কম। নিজেকে নিয়ে দুশ্চিন্তা কম থাকলেও সতীর্থদের নিয়ে উৎকণ্ঠা মতিনের, ‘সিলেটে সাদ থাকে, বিপলু থাকে (বিপলু আহমেদ)। ওদের পরিবার আছে। যাদের সঙ্গে খেলে বড় হয়েছি, তাদেরও খোঁজ করতে পারছি না। কে কোথায় আছে জানি না। নেটওয়ার্ক পেলে কেউ কেউ ফোনে দুর্দশার কথা জানাচ্ছে, সাধ্যমতো চেষ্টা করছি তাদের সহায়তা করার।’ 

সিলেটের পাশের জেলা মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে থাকেন মাসুক মিয়া জনি। শ্রীমঙ্গল আপাতত বন্যামুক্ত থাকলেও জনির দুশ্চিন্তা অন্যদের নিয়ে, ‘সুনামগঞ্জে পরিচিত মানুষজন আছে। শুনেছি সেখানে সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো স্রোত বয়ে যাচ্ছে। সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা, সবাই যেন সুস্থ থাকে।’

ঢাকায় থাকা সিলেটের ফুটবলাররা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রাখছেন। সবাই মিলে সিলেট-সুনামগঞ্জে ত্রাণসহায়তা দেওয়া যায় কি না, সেই উদ্যোগের চেষ্টা চলছে বলে জানালেন মতিন। তবে সবার আগে উদ্ধারকাজ বেশি জরুরি বলে মনে করেন সাদ, ‘আগে তো মানুষকে বাঁচাতে হবে। যেসব জায়গায় যাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে কীভাবে ত্রাণ পৌঁছাবে? আগে সেসব জায়গার মানুষদের উদ্ধার করতে হবে। এটা বেশি জরুরি।’

এদিকে বন্যায় জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবলে অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে সিলেট জেলা দলের অংশগ্রহণ। বন্যায় আটকে থাকা অনেক ফুটবলারের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। এই ফুটবলাররা কীভাবে টুর্নামেন্টে খেলবেন তা নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের। মাঠে নামার মতো ফুটবলার না পেলে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপ ফুটবল থেকে নাম প্রত্যাহার করে নিতে পারে গতবারের রানার্সআপ সিলেট।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত