Ajker Patrika

আরেকবার শিরোপাটা হাতে নিয়ে কাঁদলেন মেসি

আপডেট : ১০ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩: ১৭
আরেকবার শিরোপাটা হাতে নিয়ে কাঁদলেন মেসি

কিছু বুঝে ওঠার আগেই আর্জেন্টিনা ছেড়ে পাড়ি দিয়েছিলেন স্পেনে। স্প্যানিশ ক্লাব বার্সেলোনার সঙ্গে লিওনেল মেসি যখন একের পর এক শিরোপা উৎসব করতেন, পৃথিবীর এই প্রান্ত আর্জেন্টিনায় তখন একটা শিরোপার হাহাকার। শিরোপাটার জন্য আর্জেন্টাইনদের রাগটা এই মেসির ওপরই বেশি। তা হবেই না কোন? পায়ের জাদুতে বিশ্বকে বিমোহিত করা মেসি যে বারবার এই একটা জায়গায় এসে থমকে দাঁড়িয়েছেন। 

বার্সার মতো অসংখ্য রেকর্ড আর শিরোপা উৎসব কোনোটাই যে স্বদেশের হয়ে করতে পারেননি মেসি। ক্ষোভটা দিনে দিনে বাড়ছিল। প্রশ্নটা তো সেই কবেই উঠে গিয়েছিল। মেসি যতটা আর্জেন্টিনার, তার চেয়ে বেশি স্পেনের! দেশপ্রেম নিয়ে উঠেছে অগণিত প্রশ্ন। মেসি শুধুই শুনে গেছেন। নিজে জানতেন আর্জেন্টিনা আর আর্জেন্টাইনদের জন্য তিনি কতটা অনুভব করেন। যেকোনো মূল্যে আর্জেন্টাইনদের জন্য একটা শিরোপা জিততে চান, অনেকবারই বলেছেন। 

কোনোভাবেই যেন কিছু হয়ে উঠছিল না। কাছে এসেও বারবার মলিন অবয়বে ফিরতে হয়েছে। আর্জেন্টাইনদের আর শিরোপার উৎসব করা হয় না। অবশেষে আসে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কোপা আমেরিকা ২০২১। স্বাগতিক ব্রাজিলকে হারিয়ে শিরোপা উৎসব করেন মেসি-দি মারিয়ারা। একে তো করোনা মহামারিতে খালি গ্যালারি, তার ওপর খেলাটা হয়েছে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাটিতে, শিরোপা উৎসবে থাকতে পারেননি আর্জেন্টাইনরা। 

শিরোপা উৎসবটা কী তবে অসমাপ্ত রয়ে গেল? সেই অপূর্ণতাটাও ঘুচে গেল আজ। শিরোপাজয়ের দুই মাস পর অবশেষে শিরোপা উৎসবের সুযোগ পেলেন আর্জেন্টাইনরা। ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে আজ বলিভিয়ার মুখোমুখি হয় আর্জেন্টিনা। গ্যালারিভর্তি দর্শক। ম্যাচটাও কী দারুণভাবেই না রাঙালেন মেসি। হ্যাটট্রিক করে দলকে জেতালেন। 

হ্যাটট্রিকের পথে দ্বিতীয় গোলে লাতিন আমেরিকা অঞ্চলের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায় পেছনে ফেলে দেন কিংবদন্তি পেলেকে। ম্যাচ শেষে আর্জেন্টাইনদের সামনে শিরোপা উৎসবও করলেন। তার আগে পৃথিবীর সব আবেগ যেন ছুঁয়ে গেল মেসিকে। অশ্রুসিক্ত হলেন তিনি। গাল বেয়ে পড়া মেসির সেই অশ্রু পাশে দাঁড়িয়ে দেখছিলেন সতীর্থরা। একজন এসে তো জড়িয়েই ধরলেন অধিনায়ককে। গ্যালারি থেকে যে কান্নার সাক্ষী হয়েছেন আর্জেন্টাইনরা। 

ম্যাচ শেষের সাক্ষাৎকারেও আবেগ লুকাতে পারেননি মেসি। ম্যাচ দেখতে মাঠে উপস্থিত ছিলেন মেসির মা-ভাই। তাঁরাও উৎসবে যোগ দিলেন। সাক্ষী হলেন কীভাবে সবাইকে ছাড়িয়ে লাতিন আমেরিকার সর্বোচ্চ গোলাদাতার মুকুট পরলেন ঘরের ছেলে। নিজের মাঠে এই উদ্‌যাপন করতে পেরে মেসি নিজেও খুশি। বলেছেন, ‘মনুমেন্টালে এই রেকর্ডটা উদ্‌যাপন করতে পারছি, এর থেকে ভালো কিছু হতে পারে না। আমার মা ও ভাই স্ট্যান্ডে আছেন, তাঁরা আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন। তাঁরা আজ আমার জন্য উদ্‌যাপন করছেন। আমি অনেক খুশি।’ 

পেলেকে ছাড়িয়ে যাওয়ার রেকর্ডটা গড়া যে মেসির স্বপ্ন ছিল, সেটাও লুকাননি মেসি। ম্যাচ শেষে বলেছেন, ‘আমি আসলেই এই মুহূর্তটা উপভোগ করতে চেয়েছি। আমি এই রেকর্ডটা নিজের করে নিতে চেয়েছি। রেকর্ডটা ভাঙার স্বপ্ন দেখেছি। অনেক অপেক্ষার পর অবশেষে রেকর্ডটা আমার হয়েছে। অসাধারণ এক মুহূর্ত এটা।’ 

এদিন অবশ্য আরেকটি রেকর্ডে নাম তুলেছেন মেসি। একসময়ের বার্সা সতীর্থ ও প্রিয় বন্ধু লুইস সুয়ারেজকে ছাড়িয়ে গেছেন কনমেবল বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের সর্বোচ্চ গোলদাতার তালিকায়। উরুগুয়ে তারকা সুয়ারেজের গোলসংখ্যা ২৫। হ্যাটট্রিক গোলে সেটা টপকে গেছেন মেসি (২৬)। 

আচমকা এক ঝড়ে বার্সার সঙ্গে দীর্ঘ সম্পর্কের ইতি ঘটেছে মেসির। পাড়ি জমিয়েছেন প্যারিসে। এত সব ভাঙনের মাঝে মেসি বছরটা ভুলতে পারবেন না কখনোই। এ বছরই যে তিনি আর্জেন্টাইনদের মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত