Ajker Patrika

একই ভুল বারবার করছেন কোহলি

আরমান হোসেন, ঢাকা
একই ভুল বারবার করছেন কোহলি

হেডিংলি টেস্টে প্রায় সাড়ে তিন দিনেই ইনিংস ও ৭৬ রানে হেরেছে ভারত। এই টেস্টের প্রথম ইনিংসে ভারত গুটিয়ে গিয়েছিল ৭৮ রানে। দুই ইনিংসেই ভারতের ব্যাটিং ব্যর্থতার মতো আরেকটি ‘কমন’ বিষয় বিরাট কোহলির আউট হওয়ার ধরন। 

প্রথম ইনিংসে জিমি অ্যান্ডারসনের অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন কোহলি (৭)। দ্বিতীয় ইনিংসেও ওলি রবিনসনের অফ স্টাম্পের বাইরের বলে আত্মাহুতি দিয়েছেন, স্লিপে দাঁড়ানো জো রুটের হাতে দেওয়া ক্যাচ যেন প্রথম ইনিংসের আউটের রিপ্লে! এই সিরিজের আগের তিন ইনিংসেও কোহলি আউট হয়েছেন একইভাবে। যে ভুলগুলো করা উচিত নয় বলে ভারতীয় অধিনায়ক নিজেই জানিয়েছিলেন, সে ভুলগুলোই বারবার করছেন তিনি। 

প্রথম ইনিংসে কোহলির আউটের পর তাঁর ব্যাটিং কৌশল নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন ইংল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক নাসের হুসেইন। জনপ্রিয় এই ইংলিশ ধারাভাষ্যকার তখন জানিয়েছিলেন স্ট্যান্সসহ পুরো ব্যাটিং-কৌশলে বড় পরিবর্তন এনেছেন কোহলি। যেটা তাঁর ব্যাটিংয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। সাত বছর আগে কোহলির ব্যাটিং-কৌশল কেমন ছিল, সে প্রসঙ্গ টেনে এনে নাসের বলেছিলেন, ‘২০১৪ সালে কোহলি ব্যাটিং করার সময় তাঁর কাঁধ ও হিপ খোলা থাকত, শরীর থাকত সোজা।’ 

এই ব্যাটিং-কৌশলে শুরুর দিকে মানিয়ে নিতে বেশ সমস্যায় পড়েছিলেন কোহলি। ২০১৪ সালের ইংল্যান্ডে সফরে যেটি তাঁকে বেশ ভুগিয়েছিল। পরে অবশ্য সফল হয়েছিলেন তিনি। একই বছরের শেষ দিকে অস্ট্রেলিয়া সিরিজটি কাটিয়েছিলেন স্বপ্নের মতো। অ্যাডিলেড ওভালে সিরিজের প্রথম টেস্টে দুই ইনিংসেই করেছিলেন সেঞ্চুরি (১১৫ ও ১৪১)। মেলবোর্নে সিরিজের তৃতীয় টেস্টেও হেসেছিল তাঁর ব্যাট, প্রথম ইনিংসে উপহার দিয়েছিলেন ১৬৯ রানের ইনিংস। সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন সিরিজের চতুর্থ টেস্টেও। পরের তিন বছরও ব্যাট হাতে রান ফোয়ারা ছড়িয়েছেন। 

২০১৮ সালে আগের ব্যাটিং-কৌশল থেকে সরে আসেন কোহলি। নাসের মনে করিয়ে দিয়েছেন সে কথাও, ‘২০১৮ সালে পেছনের পা পপিং ক্রিজের সমান্তরালে ছিল। এবার ইংল্যান্ড সিরিজে পেছনের পা আর সমান্তরালে রাখতে পারছেন না। ডান কাঁধ আবারও উন্মুক্ত হয়ে গেছে ২০১৪–এর মতো। তাঁর আউটের ধরন তাই আগের মতো।’ 

শরীরের এই ভারসাম্য আর পায়ের কাজের পরিবর্তন প্রভাব ফেলেছে কোহলির ব্যাটিংয়ে। ২০১৮ সালের পর থেকে ভারতীয় তারকার ব্যাটিংয়েই সে প্রভাব দারুণভাবে ফুটে উঠেছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে কোহলির পরিসংখ্যান দেখলে বিষয়টি আরও স্পষ্ট হবে। পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৪ সালের ইংল্যান্ড সফরে অফ স্টাম্প লাইনে কোহলির ব্যাটিং গড় অবিশ্বাস্যভাবে নিচে নেমে গিয়েছিল—৬.৭১! সেই ব্যর্থতা ঢাকা পড়েছিল ২০১৮ সালের গড়ে ১৫৯ রান তুলে। এ বছর সেটি আবার পৌঁছে গেছে ২০১৪ সালের কাছাকাছি—১১.৬৬! (হেডিংলি টেস্টের আগ পর্যন্ত) 

ব্যাটিং-কৌশলের এই পরিবর্তন গত দুই বছরেও মানিয়ে নিতে পারেননি কোহলি। উপমহাদেশের বাইরে রানখরায় ভুগছেন তিনি। প্রায় দুই বছর হতে চলল সেঞ্চুরি নেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে। তিন সংস্করণ মিলিয়ে এই সময়ে খেলেছেন ৫১ ইনিংস। 

নটিংহাম, লর্ডসের পর হেডিংলিতেও জিমি অ্যান্ডারসনের আউট সুইংয়ে পরাস্ত বিরাট কোহলিচলতি বছর এখন পর্যন্ত ১১ টেস্টে ১৯ ইনিংসে মাত্র প্রায় ২৩ গড়ে ৪৬৯ রান করেছেন কোহলি, যা সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের নামের সঙ্গে একেবারেই বেমানান। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের মাটিতে সাদা পোশাকে ক্যারিয়ারজুড়েই ভুগেছেন ভারতীয় অধিনায়ক। সময়ের অন্যতম সেরা দুই ব্যাটসম্যান বাবর আজম ও স্টিভ স্মিথের গড় যেখানে যথাক্রমে ৬৫.৭৫ ও ৫৯.৫৫। সেখানে ইংল্যান্ডের মাটিতে কোহলির গড় ৩৩.৬২। 

দল এত দিন ভালো করায় কোহলির ব্যাটিং ব্যর্থতা সেভাবে সামনে আসছিল না। কিন্তু পরশু হেডিংলি টেস্টে ইংলিশ পেসারদের তোপে ভারতের ব্যাটিং লাইন আপ যেভাবে অসহায় ছিল, ভারতীয় অধিনায়কের ব্যর্থতা আবার সামনে চলে আসছে। ইংলিশ কন্ডিশনে সুইংয়েই বারবার ধরাশায়ী হচ্ছেন কোহলি। হেডিংলি টেস্টের প্রথম ইনিংসে অ্যান্ডারসনের দুর্দান্ত এক আউট সুইংয়ে ফিরেছিলেন ৭ রান করে। দ্বিতীয় ইনিংসেও রবিনসনের বলে একই পরিণতি। টেস্টে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সাতবার আউট হয়েছেন অ্যান্ডারসনের বলে। 

১৭ বছর আগে ২০০৩-০৪ মৌসুমে কোহলির মতো একই সমস্যায় পড়েছিলেন শচীন টেন্ডুলকার। সেবার অস্ট্রেলিয়া সফরে গিয়েছিল ভারত। চার ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ৫ ইনিংসে শচীনের স্কোর ছিল ০, ১, ৩৭, ০, ৪৪। বারবার অফ স্টাম্পের বাইরের বল ড্রাইভ করতে গিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিচ্ছিলেন শচীন। সিরিজের আগের টেস্টের দুই ইনিংসেই আউটও হয়েছিলেন একইভাবে। সিরিজের শেষ টেস্টে তাই শচীনের সামনে শেষ সুযোগ ছিল অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে নিজেকে প্রমাণের। বছরের পর বছর কাভার ড্রাইভ খেলা শচীন এবার চোয়ালবদ্ধ। 

এবারের লড়াইটা যতটা না প্রতিপক্ষ বোলারদের বিপক্ষে, তার চেয়ে বেশি নিজের সঙ্গে। ধৈর্য, অধ্যবসায় আর নিজের ওপর অসম্ভব নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এবার সিডনি টেস্টের প্রথম ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামেন লিটল মাস্টার। শচীন এরপর প্রায় ১০ ঘণ্টা ব্যাটিং করলেন অফ স্টাম্পের বাইরের বলে কোনো কাভার ড্রাইভ না করেই। প্রিয় শট বিসর্জন দিয়ে সেবার সিডনিতে অপরাজিত ২৪১ রানের মহাকাব্যিক ইনিংস খেলে নিজেকে প্রমাণ করেছিলেন শচীন। 

ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে এসে কোহলির সামনেও একই চ্যালেঞ্জ। অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে যেকোনোভাবে নিজের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠা। অফ ফর্ম, আউট হওয়ার ধরন সবকিছুর কারণ যে একটাই—অফ স্ট্যাম্পের বাইরের বলে নিজেকে সংবরণ করতে না পেরে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে আসা। 

এমন কত কঠিন চ্যালেঞ্জকেই তো বাউন্ডারি হাঁকিয়ে সীমানা পার করেছেন কোহলি। এ চ্যালেঞ্জও তাঁর উতরে যাওয়ার কথা। না হলে নিন্দুকেরা তাঁর ব্যাটসম্যানশিপ নিয়ে কথা তুলবে নিশ্চিত!

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

ভারতের সঙ্গে সংঘাতে পাকিস্তানের ভাগ্যনিয়ন্তা সেনাপ্রধান জেনারেল মুনির

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

পাকিস্তানে কীভাবে হামলা চালাতে পারে ভারত, ইতিহাস যা বলছে

আইপিএলে চাহালের রেকর্ড হ্যাটট্রিকের রাতে রহস্যময় পোস্ট এই নারীর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত