Ajker Patrika

মানবদেহে রেগুলেটরি টি সেলের কাজ কী—যা আবিষ্কার করে নোবেল পেলেন ৩ বিজ্ঞানী

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ০৬ অক্টোবর ২০২৫, ১৮: ১৮
চিকিৎসাবিজ্ঞানে চলতি বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মেরি ই ব্রাঙ্কো, ফ্রেড র‍্যামসডেল ও শিমন সাকাগুচি। ছবি: সংগৃহীত
চিকিৎসাবিজ্ঞানে চলতি বছর নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মেরি ই ব্রাঙ্কো, ফ্রেড র‍্যামসডেল ও শিমন সাকাগুচি। ছবি: সংগৃহীত

মানবদেহের শক্তিশালী রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা সব সময় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। নইলে এই ব্যবস্থা উল্টো আমাদের অঙ্গপ্রত্যঙ্গেই আক্রমণ করতে পারে। আমাদের শরীরের ভেতরে এই রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণকারী একধরনের কোষ রয়েছে। এই কোষ আবিষ্কারের কারণেই ২০২৫ সালের চিকিৎসাবিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন মেরি ই ব্রাঙ্কো, ফ্রেড র‍্যামসডেল ও শিমন সাকাগুচি।

তাঁরা দেহের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থায় ‘পেরিফেরাল ইমিউন টলারেন্স’ নিয়ে যুগান্তকারী আবিষ্কার করেছেন, যা দেহকে নিজস্ব রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার আঘাত থেকে রক্ষা করে।

নোবেল কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, প্রতিদিন আমাদের শরীরকে রক্ষা করতে রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা হাজারো জীবাণুর সঙ্গে লড়াই করে। এসব জীবাণুর রূপ ভিন্ন ভিন্ন। অনেকে আবার নিজেদের এমনভাবে আড়াল করে যে দেখতে মানুষের কোষের মতো লাগে। তখন প্রশ্ন জাগে—কোনটি আক্রমণ করবে আর কোনটি দেহের জন্য নিরাপদ, তা রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কীভাবে ঠিক করে?

এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজেই নোবেল পেয়েছেন ব্রাঙ্কো, র‍্যামসডেল ও সাকাগুচি। তাঁরা আবিষ্কার করেছেন রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার প্রহরী হিসেবে কাজ করা বিশেষ কোষ—রেগুলেটরি টি সেল। এই কোষগুলো অন্য প্রতিরোধী কোষকে নিয়ন্ত্রণ করে, যাতে দেহ নিজের অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ না করে।

নোবেল কমিটির চেয়ারম্যান অলে ক্যম্পে বলেছেন, ‘তাঁদের আবিষ্কার আমাদের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থা কীভাবে কাজ করে এবং কেন আমরা সবাই ভয়াবহ অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হই না, তা বোঝার ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।’

শিমন সাকাগুচি প্রথম গুরুত্বপূর্ণ আবিষ্কার করেন ১৯৯৫ সালে। তখনকার অধিকাংশ গবেষক বিশ্বাস করতেন, ক্ষতিকর প্রতিরোধী কোষগুলো থাইমাস গ্রন্থিতে ধ্বংস হওয়ার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধের সহনশীলতা গড়ে ওঠে, যাকে বলা হয় ‘সেন্ট্রাল টলারেন্স’। কিন্তু সাকাগুচি দেখান, বিষয়টি আরও জটিল। তিনি নতুন ধরনের এক বিশেষ প্রতিরোধী কোষের সন্ধান দেন, যা দেহকে অটোইমিউন রোগ থেকে রক্ষা করে।

২০০১ সালে মেরি ব্রাঙ্কো ও ফ্রেড র‍্যামসডেল আরেকটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। তাঁরা দেখান, একধরনের ইঁদুর সহজে অটোইমিউন রোগে আক্রান্ত হয়, কারণ, তাদের দেহে ‘Foxp3’ নামের একটি জিনে মিউটেশন ঘটে। পরে তাঁরা প্রমাণ করেন, মানুষের শরীরেও একই জিনে মিউটেশন হলে ভয়াবহ অটোইমিউন রোগ ‘IPEX’ দেখা দেয়।

এর দুই বছর পর সাকাগুচি এই দুই আবিষ্কারের মধ্যে সম্পর্ক খুঁজে বের করেন। তিনি প্রমাণ করেন, Foxp 3 জিন আসলে সেই প্রতিরোধী কোষগুলোর বিকাশ নিয়ন্ত্রণ করে, যেগুলোর খোঁজ তিনি ১৯৯৫ সালে পেয়েছিলেন। বর্তমানে এই কোষগুলো ‘রেগুলেটরি টি সেল’ নামে পরিচিত। এরা অন্য প্রতিরোধী কোষকে নিয়ন্ত্রণ করে নিশ্চিত করে যেন দেহের নিজস্ব টিস্যুগুলো আক্রমণের শিকার না হয়।

এ তিন গবেষকের আবিষ্কার থেকে ‘পেরিফেরাল টলারেন্স’-বিষয়ক গবেষণার পথ খুলে যায়। এর ফলে ক্যানসার ও অটোইমিউন রোগের চিকিৎসা নতুন দিগন্তে পৌঁছেছে। অঙ্গ প্রতিস্থাপনেও এর ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। ইতিমধ্যে এসব চিকিৎসার কিছু পদ্ধতি ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে চলছে।

মেরি ই ব্রাঙ্কোর জন্ম ১৯৬১ সালে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটি থেকে তিনি পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলে ইনস্টিটিউট ফর সিস্টেমস বায়োলজিতে সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত। ফ্রেড র‍্যামসডেলের জন্ম ১৯৬০ সালে। ১৯৮৭ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটি, লস অ্যাঞ্জেলেস থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের সান ফ্রান্সিসকোভিত্তিক সোনোমা বায়োথেরাপিউটিকসের বৈজ্ঞানিক উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করছেন।

শিমন সাকাগুচির জন্ম ১৯৫১ সালে। ১৯৭৬ সালে এমডি ও ১৯৮৩ সালে জাপানের কিয়োটো ইউনিভার্সিটি থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন। বর্তমানে জাপানের ওসাকা ইউনিভার্সিটির ইমিউনোলজি ফ্রন্টিয়ার রিসার্চ সেন্টারে ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত