Ajker Patrika

ভয় কাটিয়ে বিজ্ঞানের পথে

ভয় কাটিয়ে বিজ্ঞানের পথে

এখানে বেঁচে থাকা খুব কঠিন। নিজেকে বিক্রি করে দিতে হয় সমাজের কাছে। অন্যের ইচ্ছার অধীন দিনযাপন করতে হয়। আর প্রতিদিন হুমকি হয়ে আসে অপহরণকারীরা। এসবের মধ্যেই বিজ্ঞানের নানা কলাকৌশল শিখে আলোর পথে ছুটে চলেছেন নাইজেরিয়ার তরুণীরা। বিজ্ঞানের প্রায়োগিক বিষয় স্টিম এডুকেশনে দীক্ষিত হচ্ছেন তাঁরা।

পশ্চিম আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া। অন্যান্য শহরের মতো দেশটির উত্তরাঞ্চলের কানো শহরেও ছেয়ে আছে সংকীর্ণতা আর কুসংস্কার। এখানে প্রায়ই নারীদের কম বয়সে বিয়ে দেওয়া হয়। বেশি লেখাপড়া করার সুযোগ নেই তাঁদের। আর ধর্মীয় গোঁড়ামির কারণে সমাজে প্রায় দাসের মতোই জীবন কাটাতে হয়।

এসব বাধা জয় করে যাঁরা স্কুলে যান, জানার পথে পা বাড়ান, তাঁদের জন্য অপেক্ষা করে ভয়ানক এক প্রতিবন্ধক। নাইজেরিয়ার এ অঞ্চলে প্রায়ই স্কুল থেকে শিক্ষার্থীদের অপহরণ করে নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর চাওয়া হয় মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ। মুক্তিপণ না পেলে মেরে ফেলা হয় অনেককেই। গত ডিসেম্বর থেকে এ পর্যন্ত অপহরণের শিকার হয়েছে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী। উগ্রবাদী গোষ্ঠী বোকো হারামের প্রভাব এ এলাকায় কম থাকলেও তাদের চেয়ে এ চক্র কম ভয়ানক নয়। গাড়িতে করে দলবেঁধে গ্রামে গ্রামে ঘুরে ডাকাতি করে বেড়ায় তারা।

এত সব বিপত্তি সঙ্গী করেই বিজ্ঞানের পথে এগিয়ে যাচ্ছেন এ এলাকার অনেক তরুণী। সমাজের দৃষ্টিভঙ্গিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে রোবোটিকস, কম্পিউটার এবং স্টিম এডুকেশনের বিভিন্ন বিষয় শিখছেন তাঁরা। স্টিম এডুকেশন হচ্ছে সেই শিক্ষা, যেখানে একত্রে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি, প্রকৌশল ও গণিত শেখানো হয়। হাতে-কলমে এ শিক্ষা তাঁদের পড়াশোনার পর্যায় এগিয়ে নিতে যেমন সাহায্য করবে, তেমনি কর্মক্ষেত্রেও অবদান রাখার রসদ জোগাবে। আর উদ্ভাবনী প্রকল্পগুলো সমাজ বদলে দেবে।

এ ক্ষেত্রে ভ্যানগার্ডের মতো তাঁদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে ‘কাবারা’ নামের একটি বেসরকারি সংস্থা (এনজিও)। কীভাবে বিল্ডিং বানাতে হয়, সাধারণ সফটওয়্যার ব্যবহার করে দ্রুত জটিল সব সমস্যার সমাধান করা যায়। এসবের পাশাপাশি মজাচ্ছলে শেখানো হচ্ছে গণিত ও বিজ্ঞান। এখানে শিখতে আসা ১২ বছর বয়সী ফাতিমা জাকারি বলে, ‘এখানে এসে আমি রোবোটিকস নিয়ে অনেক কিছু শিখেছি।’

উত্তর নাইজেরিয়ার তরুণীদের হাতে-কলমে শেখানোর মাধ্যমে ছোট ব্যবসায় নিয়ে যেতে এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যাওয়ার জন্য সহায়তা করতে কাবারা প্রতিষ্ঠা করেন প্রকৌশলী হাদিজা গারবাতি। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ২০০ জনের বেশি তরুণীকে দেওয়া হয়েছে ট্রেনিং।

অপহরণের ভয় এবং সামাজিক কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে অভিভাবকদের কীভাবে বের করে এনেছেন–এমন প্রশ্নের জবাবে হাদিজা গারবাতি জানান, ইসলামি ধারা বজায় রেখে তাঁদের সঙ্গে আলাপ করেছেন তিনি। প্রতিটি ক্লাসে মেয়েরা হিজাব পরে থাকবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন। রাজি হওয়ার পর তাঁদের কথা রেখেছেন হাদিজা।

প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এগিয়ে যাচ্ছে বিশ্ব। অপুষ্টি আর ক্ষুধামান্দ্যজর্জরিত আফ্রিকান মেয়েরাও পিছিয়ে নেই। আজ রোবোটিকস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছেন, কাল রোবট নিয়ে খেলা করবেন তাঁরা। রাজনৈতিক সংকট কাটানো গেলে সুদিন আসবেই।

বিষয়:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত