Ajker Patrika

আপনার ব্যস্ততা অন্যের প্রাণ নিচ্ছে না তো? 

আশিকুর রিমেল, ঢাকা
আপডেট : ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২১: ৩১
আপনার ব্যস্ততা অন্যের প্রাণ নিচ্ছে না তো? 

থামুন! এত তাড়া? কোথাও যেতে হবে যাবেন, কিন্তু একটু রয়েসয়ে যান। আপনার ব্যস্ততা অন্য কারও মৃত্যুর কারণ হচ্ছে না তো? হয়তো ভাবছেন, ‘না কোনো প্রাণ তো হরণ করিনি। কোনো মানুষকে চাকায় পিষ্ট করিনি।’ এবার তবে আরেকবার ভাবুন। নিজেকে প্রশ্ন করুন—মানুষ ছাড়া আর কোনো প্রাণই কি প্রাণ নয়? 

পথে এখন পাগলপ্রায় হয়ে থেকে থেকেই ডেকে উঠছে একটি মা কুকুর। রাজধানীর বনশ্রী এলাকার ‘সি’ ব্লকের দুই নম্বর রোডে দুটি বাড়ির মাঝখানে জন্ম দিয়েছিল সে পাঁচটি বাচ্চা। কিছুক্ষণ আগেও ২০ দিন বয়সী বাচ্চাগুলো খেলছিল মা কুকুরটার সঙ্গেই। কিন্তু মাত্র কয়েক মুহূর্তের ব্যবধানে সেই খেলা রূপ নিল মা-কুকুরটির একলার আর্তনাদে। একটি দ্রুতগামী স্কুটির চাকায় পিষ্ট হয়ে মারা গেছে তার এক সন্তান। আজ বুধবার সন্ধ্যায় এ ঘটনা ঘটেছে। ঘড়িতে তখন ৬টা বাজে। মাত্র একটা মুহূর্ত তার আনন্দকে বেদনায় রূপান্তরিত করল। 

যখন ঘটনাটি ঘটল, ততক্ষণে ঘাড় ভেঙে পড়ে আছে পাঁচটি কুকুর ছানার একটি। থেঁতলে যাওয়া ছানাটির মুখ দিয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। মা কুকুরটি তখন দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে দেখছিল। শুধু দেখছিল, আর বাচ্চাটির চারপাশে হাঁটছিল। তখন তার কোনো ডাকহাক নেই, চুপচাপ শান্ত। বাকি ছানাগুলো হতভম্ব মা কুকুরটির পাশ দিয়েই ঘুরঘুর করছিল। 

আজ বুধবার ৬টার দিকে একটি স্কুটি দ্রুত এসে দলে দিয়ে যায় কুকুর ছানাটিকে। চালক স্কুটি নিয়ে থামলেন; কিন্তু নামলেন না। তাকিয়ে দেখলেন, এর পর চলে গেলেন। 

আমরা কোথায় এসে দাঁড়িয়েছি তাহলে! একটা প্রাণীকে তার মায়ের সামনে রক্তাক্ত করে চলে যেতে পারি এমন অনায়াসে! মানছি দুর্ঘটনা দুর্ঘটনাই। তাই বলে ছানাটিকে কি তার মা কুকুরটির জিম্মাতেই শুধু রেখে চলে যাওয়া যায়? 

তবুও জীবনের পাশেই জীবন। সে উদাহরণও মিলে। পৃথিবীতে এখনো নিজেদের ‘মানুষ’ হিসেবে পরিচয় দেওয়ার মতো কিছু টিকে আছে। কুকুর ছানাটিকে দেখতে পেয়ে ছুটে এলেন আজকের পত্রিকার সাংবাদিক সুপ্রিয় সিকদার, মন্টি বৈষ্ণব, মৃত্তিকা পণ্ডিত ও স্থানীয় এক যুবক। দীর্ঘক্ষণ ছানাটির মুখে পানি ঢাললেন ওই স্থানীয় যুবক। অবস্থা আরও খারাপের দিকে যাচ্ছিল। পরে অন্য দুই সাংবাদিক মুহায়মিনুল ইসলাম বাপ্পি ও মৃত্তিকা পণ্ডিত তাকে নিয়ে ছুটলেন খিলগাঁও পশু হাসপাতালের দিকে। 

এদিকে সন্তান হারিয়ে দিশেহারা হয়ে মা কুকুরটি কেঁদেই যাচ্ছে। দুর্ঘটনাস্থলে আশপাশে শুঁকে যাচ্ছে একটু পরপর। একটু আগে হারিয়ে যাওয়া সন্তানের শরীরের গন্ধই কি তবে সে খুঁজছে? পাচ্ছে কি? হয়তো পাচ্ছে। তারপর গোল হয়ে বসে থাকছে রাস্তার পাশের বাড়ির সামনে অপরিসর জায়গায়। আবার একটা হাহাকার ঘিরে ধরছে তাকে। ডেকে উঠছে; সে ডাকে ক্ষোভ আছে যতটা, তার চেয়ে অনেক বেশি আছে বেদনা। সে বেদনা সংক্রমিত করে প্রাণ মাত্রকেই। আশপাশের মানুষ সে বেদনা টের পাচ্ছেন। কিন্তু বেদনাভরা সেই ডাক পৌঁছাচ্ছে না ওই চালকের কান পর্যন্ত। যার স্কুটির নিচে ছানাটি পড়েছিল, তিনি হয়তো বাকি গল্পটি জানেন না। জানবেনই-বা কী করে, তাঁর হয়তো ভীষণ তাড়া ছিল! অথবা এটি নিছক দুর্ঘটনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

বন্ধুকে ছাত্রলীগ সাজিয়ে পুলিশে দিয়ে তাঁর প্রেমিকাকে ধর্ষণ করলেন ছাত্রদল নেতা

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে না নেওয়ার প্রস্তাব র‍্যাব ডিজির

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

পরিপাকতন্ত্রের ওষুধের পেছনেই মানুষের ব্যয় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত