Ajker Patrika

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়া, রাজনীতিতে সুবাতাসের প্রত্যাশা

  • বিশেষজ্ঞদের মতে, খালেদার উপস্থিতি মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব কমাবে
  • খালেদা ১২ বছর আগে সর্বশেষ এ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন
  • খালেদার সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি পোস্ট করেছেন উপদেষ্টা মাহফুজ, নাহিদ ও আসিফ
তানিম আহমেদ, ঢাকা
আপডেট : ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯: ৩১
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: ফেসবুক
সশস্ত্র বাহিনী দিবসে সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: ফেসবুক

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে দেশে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে ঢাকা সেনানিবাসে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দীর্ঘ এক যুগ পর গুরুত্বপূর্ণ এ দিবসের কর্মসূচিতে তাঁর অংশগ্রহণকে রাজনীতির জন্য ইতিবাচক ঘটনা বলে মনে করছেন বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা। তাঁরা বলছেন, আওয়ামী লীগের স্বৈরশাসনের অবসানের পর অভ্যুত্থানের পক্ষের দলগুলোর মধ্যে যে মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল, খালেদা জিয়ার উপস্থিতির কারণে তা কিছুটা হলেও ঘুচবে। পর্যবেক্ষকদের ধারণা, বিষয়টি রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আশাবাদ জাগানোর পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতির পথে হাঁটারও ইঙ্গিত বহন করে।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১৯৭১ সালের ২১ নভেম্বর বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর তিনটি শাখা সমন্বিতভাবে যাত্রা শুরু করেছিল। সে কারণে দিনটি সশস্ত্র বাহিনী দিবস হিসেবে পালিত হয়। প্রতিবছর সেনাকুঞ্জে এ দিবসের অনুষ্ঠানে সরকার- প্রধান ও অন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব এবং সশস্ত্র বাহিনীর শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাদের পাশাপাশি দেশের বিশিষ্টজনদের মিলনমেলা বসে। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিরোধী দলীয় নেতা থাকার সময় সর্বশেষ ২০১২ সালে সেনাকুঞ্জে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছিলেন। এরপর থেকে তাঁকে দেখা যায়নি। বিএনপির পক্ষ থেকে গত বৃহস্পতিবার দাবি করা হয়, গত ১২ বছর পরিকল্পিতভাবে সশস্ত্র বাহিনী থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে দূরে রেখেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এবার খালেদা জিয়াকে সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের দুজন কর্মকর্তা গিয়ে আমন্ত্রণ জানান। অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকেও অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার উপস্থিতির বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছিল, যিনি একই সঙ্গে প্রয়াত সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের স্ত্রী। তিনি সেনাকুঞ্জে উপস্থিত হওয়ার পর বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খালেদা জিয়া অনুষ্ঠানস্থলে উপস্থিত হলে সবাই তাঁকে দাঁড়িয়ে সম্মান জানান। একপর্যায়ে তাঁকে ঘিরে জটলার সৃষ্টি হয়েছিল। উপস্থিত রাজনৈতিক নেতারা আলাদাভাবে তাঁর সঙ্গে কথা বলেন। সশস্ত্র বাহিনীর প্রধানেরা সস্ত্রীক আলাদা কথা বলেন। উপস্থিত বিদেশি কূটনৈতিক মিশনের সদস্যরাও খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। উপস্থিত এক অতিথি বলেন, দেশের রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার এখনো যে

একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান রয়েছে, তা ছিল দৃশ্যমান।

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সম্প্রতি বিভিন্ন ইস্যুতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, বিএনপি, জামায়াত ও অন্যান্য ইসলামি দল, সিপিবি, গণতন্ত্র মঞ্চসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের মধ্যে দৃশ্যত মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এর আলোকে সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টাসহ উপদেষ্টা পরিষদ এবং রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতি ও বিএনপির নেত্রীর সঙ্গে তাঁদের কুশল বিনিময় বরফ গলাতে সহায়তা করবে বলে মনে করা হচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার অংশগ্রহণে রাজনীতিতে ইতিবাচক ধারা সৃষ্টি হবে বলে মনে করেন কমিউনিস্ট পার্টির সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘আগামী নির্বাচন যে সকলের অংশগ্রহণে হবে, সে বিষয়ে এটা অর্থবহ ঘটনা বলে আমার কাছে মনে হয়।’

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম তিন সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ। ছবি: ফেসবুক
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে অন্যতম তিন সমন্বয়ক ও সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ। ছবি: ফেসবুক

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘খালেদা জিয়া দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের নেতা। ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে। তারপর তিনি এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরেছেন। তাতে সবার মধ্যে খুশি ও স্বস্তির হাওয়া বইছে। এখন দেখতে হবে, বিষয়টি রাজনীতিতে কীভাবে আসে; কিংবা আসে কি না।’

বর্ষীয়ান, অভিজ্ঞ রাজনীতিক হিসেবে এই অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি দেশের রাজনীতির জন্য স্বস্তির বলে মনে করেন বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘গণ-অভ্যুত্থানের পর যে বিশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে, সে ক্ষেত্রে এটি কিছুটা স্বস্তি ও আস্থা তৈরি করবে। সেখানে সশস্ত্র বাহিনী, রাজনৈতিক দল, আন্দোলনের নেতৃত্বে থাকা ছাত্র-তরুণদের সঙ্গে যে হৃদ্যতার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল, তার রাজনৈতিক গুরুত্ব আছে। খালেদা জিয়ার উপস্থিতিসমৃদ্ধ এই মিলনমেলা সবার মধ্যকার আপাত-মনস্তাত্ত্বিক দূরত্ব দূর করবে বলে মনে করি।’

গণফোরাম সমন্বয় কমিটির চেয়ারম্যান মোস্তফা মহসীন মন্টু বলেন, ‘এ রকম অনুষ্ঠান আমাদের জাতীয় ঐক্য গড়ে দেবে। প্রতিহিংসার রাজনীতি জাতীয় ঐক্য গড়তে পারে না।’

খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাতের ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম, মো. নাহিদ ইসলাম, আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক হাসনাত আবদুল্লাহ ও সারজিস আলম। সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ও আসিফও ছিলেন আন্দোলনের সমন্বয়ক। কুশলাদির একটি ছবির ক্যাপশন ছিল, ‘সোনালী অতীত, গর্বিত ভবিষ্যৎ’। উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ লেখেন, ‘আপনাকে এই সুযোগ করে দিতে পেরে আমরা গর্বিত।’ সারজিস আলম লেখেন, ‘আপনার আপসহীন মনোভাব আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে।’

পর্যবেক্ষকেরা মনে করেন, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের বিষয়ে অবস্থান, নির্বাচনের সময়সহ বিভিন্ন ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলের মধ্যে মতান্তরের যে আভাস পাওয়া যাচ্ছে, তা নিরসনে ভূমিকা রাখতে পারে এদিনের আশাজাগানিয়া ছবিটি।

সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম । ছবি: ফেসবুক
সেনাকুঞ্জে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ ও সারজিস আলম । ছবি: ফেসবুক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড. মাহবুবউল্লাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁদের স্তরের রাজনীতিকেরা যা কিছুই করেন, তার একটা প্রভাব রাজনীতিতে হয়, সমাজে হয়। ওনার ক্ষেত্রেও তার ব্যতিক্রম হওয়ার কথা নয়।’

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দীর্ঘদিন খালেদা জিয়াকে এসব অনুষ্ঠান থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছিল। সেখানে এবার সশস্ত্র বাহিনী এবং উপস্থিত অন্যরা তাঁকে সাদরে আমন্ত্রণ ও স্বাগত জানিয়েছেন। এর প্রভাব অবশ্যই সব জায়গায় থাকবে।’

সশস্ত্র বাহিনী দিবসের অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার উপস্থিতি বিএনপির নেতা-কর্মীদের উজ্জীবিত করবে বলে মনে করেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের অধ্যাপক শামসুল আলম। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সব রাজনৈতিক নেতৃত্ব খালেদা জিয়ার সঙ্গে কুশল বিনিময় করেছেন। এর রাজনৈতিক তাৎপর্য হচ্ছে, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগবিরোধী সবাই একত্র।’

২০১৮ সালে দুর্নীতি মামলায় কারাগারে যান বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। দুই বছর কারাগারে থাকার পর ২০২০ সালের মার্চে সরকারের নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি পান তিনি। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর রাষ্ট্রপতি দণ্ড মওকুফ করে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরিতে কমিটি করল জামায়াত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরিতে কমিটি করল জামায়াত

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন ও গণভোটের বিষয়ে ‘সমঝোতামূলক রূপরেখা’ তৈরির লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জামায়াতে ইসলামী।

গতকাল মঙ্গলবার দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের বৈঠকে এই কমিটি গঠন করা হয়। আজ বুধবার গণমাধ্যমে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।

বিজ্ঞপ্তিতে জামায়াতে ইসলামী জানায়, অন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনার জন্য গঠিত কমিটির সদস্যরা হলেন, নায়েবে আমির সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের ও সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ড. হামিদুর রহমান আযাদ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

তারেকের দলকে নিবন্ধন দেওয়ার দাবি জানালেন গণঅধিকারের রাশেদ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এই তালিকায় ‘আমজনতার দল’ না থাকায় নির্বাচন ভবনের প্রধান ফটকের সামনে গতকাল মঙ্গলবার বিকেল থেকে আমরণ অনশনে বসেছে দলটির সদস্যসচিব তারেক রহমান।

আজ বুধবার তারেকের অনশনের প্রতি সংহতি জানাতে আসেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খাঁন। এ সময় তিনি বলেন, “তারেক রহমান ভাই যে আন্দোলন করছেন এই আন্দোলন যৌক্তিক এবং তাঁর দল আমজনতার দলকে অবশ্যই নিবন্ধন দিতে হবে। ”

রাশেদ খাঁন বলেন, “রাজপথের লড়াকু সৈনিক ভারতীয় আধিপত্যবাদী শক্তির বিরুদ্ধে যিনি সব সময় রাজপথে লড়াই করেছেন আপনাদের পরিচিত মুখ আমজনতার দলের সদস্যসচিব তারেক রহমান ভাই। তিনি প্রায় ২০ ঘণ্টা ধরে নির্বাচন কমিশনের মূল ফটকের সামনে তাঁর দলের নিবন্ধনের দাবিতে অনশন করছেন। আমরা রাজপথে তাঁর বিভিন্ন সময় আন্দোলন সংগ্রাম দেখেছি। ”

তিনি বলেন, “গতকাল আমরা দেখেছি তিনটি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে এনসিপি নিবন্ধন পেয়েছে, আমরা তাদের শুভকামনা জানাই। কিন্তু বাকি দু’টি দল কীভাবে নিবন্ধন পেয়েছে সেটি নিয়ে প্রশ্ন আছে। আমরা মনে করি নিবন্ধন পাওয়ার ক্ষেত্রে এক নম্বর শর্ত হতে হবে রাজপথের সক্রিয়তা। কিন্তু এই সক্রিয়তা বিবেচনা না করে শুধুমাত্র কমিটি দিয়েছে, বাসা-বাড়িকে অফিস হিসেবে দেখিয়ে; তারা এই ছলে বলে কৌশলে নিবন্ধন পাবে—সেটি আমরা কোনোভাবেই মানতে পারি না। ”

রাশেদ খাঁন বলেন, “আমরা দেখেছি ২৪-এর ডামি নির্বাচনের আগে কীভাবে বিএনএম, সুপ্রিম পার্টিসহ কয়েকটি দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে আমরা অনুরোধ জানিয়েছিলাম এই সকল ভুঁইফোড় দলকে যারা আগে ডিজিএফআই’র মাধ্যমে নিবন্ধন পেয়েছে এদের অবশই নিবন্ধন বাতিল করতে হবে। তাদেরকে বাতিল করা হয়নি। উল্টো আমরা দেখলাম গণ-অভ্যুত্থানের পরে রাজপথের সক্রিয় দলগুলোকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। ”

আলোচিত ডেসটিনি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল আমীনের গড়া বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টিকে নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত প্রসঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের এই নেতা বলেন, ডেসটিনি প্রায় ৪২ লাখ গ্রাহকের অর্থ আত্মসাৎ করেছিল। সেই দলও দেখলাম নিবন্ধন পেল। আমার প্রশ্ন হলো—এই দল কীভাবে নিবন্ধন পেল? ২৪-এর গণ–অভ্যুত্থানের আগে আমরা এই দলকে কখনোই রাজপথে দেখি নাই। হঠাৎ করে জেল থেকে বের হলো। দল গঠন করল। কমিটি দিল। বাসাবাড়িকে অফিস হিসেবে দেখিয়ে দিল। তারা নিবন্ধন পেল। কিন্তু তারেক রহমান যাকে আপনারা সকলে চিনেন, রাজপথের জ্বালাময়ী বক্তব্য সকলে শুনেছেন, সব সময় সংগ্রাম করেছেন। তাঁর দলকে নিবন্ধন দেওয়া হয়নি। ”

রাশেদ খাঁন বলেন, “আমার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে তারেক রহমানের সঙ্গে সংহতি জানানোর জন্য আমি এখানে এসেছি। এখন প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে কথা বলব। তিনি (তারেক রহমান) অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। প্রায় ২০ ঘণ্টার অধিক সময় তিনি পাড়ি দিয়েছেন। এখানে সারা রাত তিনি শুয়েছিলেন। মশার কামড় খেয়েছেন। এইভাবে একজন রাজপথের সংগ্রামী নেতা তিনি রাস্তায় শুয়ে থাকবেন। আর নির্বাচন কমিশনার তাঁরা কোনো মন্তব্য করবেন না—সেটি হতে পারে না। তাঁদের মন্তব্য জানার জন্য, তাঁরা কী ভাবছেন, কী করবেন—সেটি জানার জন্য, প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে কথা বলার জন্য এই মুহূর্তে আমি যাব। ”

এ সময় তিনি আরও বলেন, “তারেক রহমান ভাইয়ের যে আন্দোলন, সেই আন্দোলনের প্রতি আমার সংহতি রয়েছে। আমি মনে করি, তারেক রহমান ভাই যে আন্দোলন করছেন, এই আন্দোলন যৌক্তিক এবং তাঁর দল আমজনতার দলকে অবশ্যই নিবন্ধন দিতে হবে। ”

উল্লেখ্য, গতকাল নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ বলেছেন, চূড়ান্ত পর্যালোচনা শেষে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি), বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল (মার্ক্সবাদী), বাংলাদেশ আম জনগণ পার্টি নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। দাবি-আপত্তি আসলে তা নিষ্পত্তি করে চূড়ান্ত নিবন্ধন দেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছে এনসিপি: নাহিদ

সিদ্ধিরগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৬: ০৪
সিদ্দিরগঞ্জে জুলাই শহীদ সালাহউদ্দীনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
সিদ্দিরগঞ্জে জুলাই শহীদ সালাহউদ্দীনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের সামনে কথা বলেন নাহিদ ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

এককভাবেই জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তাদের লক্ষ্য ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়া।

আজ বুধবার সিদ্ধিরগঞ্জের গোদনাইল এলাকার জুলাই শহীদ সালাউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।

নির্বাচন প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আমরা স্পষ্টভাবে বলেছি যে আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি এবং আমাদের ৩০০ আসনেই লক্ষ্য। তবে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াইয়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখায় খালেদা জিয়ার সম্মানে আমরা ওই সব আসনে প্রার্থী দেব না। এ ছাড়া আমরা সব আসনেই শাপলা কলি মার্কার প্রার্থী দেব।’

ভোটারদের উদ্দেশে নাহিদ বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের মানুষকে আহ্বান করেছি যে যারা গডফাদারগিরি করে, তারাই নির্বাচনে দাঁড়ায়—এই সংস্কৃতিকে আমরা চ্যালেঞ্জ করতে চাই। একজন এলাকার সাধারণ মানুষ, গ্রহণযোগ্য মানুষ, যাকে মানুষ কাছে পাবে এবং শিক্ষকদের আমরা জনপ্রতিনিধি হিসেবে সংসদে দেখতে চাই।’

নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, ‘এখন যেহেতু নির্বাচনী ঢাকঢোল বাজছে, এতে যেন আমরা আমাদের আহত এবং শহীদ ভাইদের ভুলে না যাই। তাহলে সালাউদ্দিন ভাইয়ের মতো আরও অনেকে মৃত্যুবরণ করবে। সরকারের পক্ষ থেকে তাদের যে স্বাস্থ্য সুবিধার কথা বলা হয়েছে, সেটাতেও অনেক অভিযোগ আছে।’

বক্তব্য শেষে নাহিদ ইসলাম গাজী সালাউদ্দিনের কবর জিয়ারত করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে ছিলেন এনসিপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম সদস্যসচিব আব্দুল্লাহ আল-আমীন, কেন্দ্রীয় সংগঠক শওকত আলী, কেন্দ্রীয় সদস্য আহমেদুর রহমান তনু, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় সিনিয়র সহসভাপতি তুহিন খান প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পদত্যাগ করে ভোটে দাঁড়াবেন অ্যাটর্নি জেনারেল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৬
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি
অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান। ফাইল ছবি

পদ ছেড়ে দিয়ে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঝিনাইদহ-১ আসন থেকে প্রার্থী হবেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান।

আজ বুধবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।

অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, 'আমি ভোট করব। আমি নমিনেশন ওখানে চেয়েছি। আমি ভোট করব, আমি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে আছি এখনো। আমার অ্যাটর্নি জেনারেল পদ ছেড়ে যেয়ে আমি ভোট করব। যখন সময় আসবে তখন করব।'

এরপর তাহলে কে এই দায়িত্বে আসবেন এমন প্রশ্নে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘বাংলাদেশ যাকে মনে করে।’

বিএনপির মনোনয়ন পাচ্ছেন কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আমি আশাবাদী।’

গত বছরের ৮ আগস্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. আসাদুজ্জামান অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি বিএনপির মানবাধিকার বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত