Ajker Patrika

‘গলায় রশি ঝোলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি’, মুক্তি পেয়ে এ টি এম আজহার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ মে ২০২৫, ১৫: ৪৫
কারামুক্তির পর দলীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন এটিএম আজাহরুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা
কারামুক্তির পর দলীয় সমাবেশে বক্তব্য দেন এটিএম আজাহরুল ইসলাম। ছবি: আজকের পত্রিকা

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজহারুল ইসলাম বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে মুক্তিলাভের পর শাহবাগে সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনায় বলেছেন, ‘আমার কী অপরাধ ছিল! আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস রাখাই কী আমার অপরাধ ছিল? আজ আল্লাহর রহমতে আমিরে জামায়াতের কাছ থেকে ফুলের মালা পাচ্ছি। গলায় রশি ঝোলানোর পরিবর্তে ফুলের মালা পাচ্ছি।’

আজ বুধবার সকালে দুপুরে শাহবাগ মোড়ে অস্থায়ীভাবে নির্মিত মঞ্চে সংক্ষিপ্ত সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। সেখানে শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় দলের শীর্ষ নেতার মুক্তিলাভে আনন্দঘন পরিবেশ তৈরি হয় জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীদের মধ্যে।

এর আগে ছাদখোলা গাড়িতে করে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শাহবাগে আসেন এটিএম আজহার। পরে শাহবাগ থেকে মগবাজারে জামায়াতের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে রওনা দেন তিনি।

এটিএম আজহার বলেন, ‘আমার জীবন থাকতে, এক ফোঁটা রক্ত থাকতে আজীবন যেন আমি ইসলামি আন্দোলনের জন্য শহীদ হতে পারি সেই তাওফিক আল্লাহর কাছে চাই। মনে রাখবেন আমাদের সবাইকে মৃত্যুবরণ করতে হবে। আমরা কেউ মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচতে পারব না। আব্দুল কাদের মোল্লা ভাই, আমাকে প্রায়ই বলতেন, আজহার ভাই, আমরা যে পরিমাণ গুনাহগার, তাতে জান্নাত পাব না। জান্নাত পাওয়ার একটাই মাত্র পথ আমাদের শাহাদাত বরণ করা। এই শাহাদাতই আমাদের জান্নাত দিতে পারে। তাই যে দল, যে জাতি, যে ব্যক্তি শাহাদাতের তামান্না নিয়ে এগিয়ে যায়, সেই দল সেই জাতিকে কেউ দমাতে পারে না।’

আজহার বলেন, ‘এই দেশ আমাদের, এই দেশ আমাদের সবার। এই দেশের মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষা, চিন্তা-চেতনা অনুযায়ী এই দেশটাকে গড়ার জন্য আমরা যেন এগিয়ে যেতে পারি। অবশ্যই আপনারা আমাদের সঙ্গে থাকবেন। আমার আর পাওয়ার কিছুই নেই। আমরা যদি দ্বীন প্রতিষ্ঠা করে যেতে পারি এটাই আমার একমাত্র পাওয়া, আর কোনো পাওয়ার নেই।’

এ সময় তিনি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতাদের স্মরণ করে বলেন, ‘যারা আমার নেতা ছিলেন তাঁদের অন্যায়ভাবে হত্যা করা হয়েছে। তাঁদের জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে।’

আজহারুল ইসলাম আরও বলেন, ‘যারাই এসব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে যেখানে যে পর্যায়ে জড়িত তাদের সবাইকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে বিচার করা হোক। তা না হলে এই খারাপ সংস্কৃতি চালু থাকবে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে।’

আজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, আমি প্রায় ১৪ বছর কারাগারে থাকার পর আজ সকালে মুক্ত হলাম। আমি এখন মুক্ত, আমি এখন স্বাধীন। স্বাধীন দেশে আমি একজন স্বাধীন নাগরিক।’

মুক্তিলাভের পর সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি সর্বপ্রথম কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই, মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনকে যিনি আসমান থেকে ফায়সালা করেছেন। এরপর আমাদের মহামান্য আদালতকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, তাঁরা ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করছেন। এত দিন ন্যায় বিচার ছিল না; আদালতকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হয়েছে। আশা করি সামনের দিনগুলোতে আদালত জনগণের আশা আকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী তাঁরা যথাযথ ভূমিকা পালন করবেন।’ এ ছাড়া তিনি তাঁর মামলায় নিযুক্ত আইনজীবীদের প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান।

জুলাই অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দকে ধন্যবাদ জানিয়ে এটিএম আজহার বলেন, ‘ধন্যবাদ জানাতে চাই, যাদের কারণে আজকে মুক্ত হওয়ার সুযোগ পেয়েছি; সেই ৩৬ জুলাই অর্থাৎ ৫ আগস্টের মহাবিপ্লবী নায়কদের। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও আন্দোলনের মাধ্যমে স্বৈরাচার ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছে। আমি ধন্যবাদ জানাব এই ক্ষেত্রে ছাত্র সমাজকে যারা তাদের অতীতের গৌরব পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন।; জুলাই অভ্যুত্থানে জনগণের পক্ষ নেওয়ার জন্য সেনাবাহিনীর প্রতিও কৃতজ্ঞতা জানান তিনি।

এ সময় জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘আমাদের সম্মানিত এই ভাইয়ের বক্তব্য অচিরেই আরও বড় পরিসরে শুনব ইনশা আল্লাহ। এই ঢাকাতেই শুনব ইনশা আল্লাহ। আমি শুধু আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করি যে মানুষটাকে সুদীর্ঘ ১৪টি বছর ঘাড়ের ওপর মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দিয়ে জুলুম করা হয়েছে। আল্লাহ তাকে বাঁচিয়ে রেখেছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘কিছুক্ষণ আগে এখানে বলা হয়েছে আমার নেতৃত্বে ফ্যাসিবাদের পতন হয়েছে, আমি তা মোটেই মনে করি না। আমি মনে করি এ দেশের ১৮ কোটি মজলুম মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় জালিম সরকারের পতন হয়েছে। আমরা এর মূল ক্রেডিট আল্লাহ তায়ালাকে দেই। আর জমিনের এই ক্রেডিট এ দেশের জনগণকে দেওয়ার পক্ষে। আমরা এক থাকব। জাতির প্রয়োজনে এক পথে হাঁটব এবং জাতির প্রয়োজনে সমস্ত ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাব ইনশা আল্লাহ।’

সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, ড. হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, মোয়ায্যম হোসাইন হেলাল, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য সাইফুল আলম খান মিলন প্রমুখ শীর্ষস্থানীয় নেতারা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি বাসভবনে একাই থাকতেন শরীয়তপুরের ডিসি, পরিবার থাকত ঢাকায়

‘তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস’ বলেই জুলাই যোদ্ধাকে মারধর

বুশেহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে, বিশ্লেষকদের হুঁশিয়ারি

কারাগারে ১০৫ মন্ত্রী-এমপি

ইউআইইউ শিক্ষার্থীদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত ও পুলিশ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত