Ajker Patrika

নতুন বাংলাদেশে আর কোনো শাহবাগতন্ত্র চাই না: ওসমান হাদি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ৪৮
শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। ছবি: ফেসবুক থেকে
শাহবাগে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি। ছবি: ফেসবুক থেকে

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে করা মামলার রায় আজ। এ প্রসঙ্গে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান হাদি বলেছেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করি আদালতের কাছ থেকে সর্বোচ্চ বিচার পাব। যদি সুবিচার না পাই, তাহলে শহীদ পরিবারগুলোকে সঙ্গে নিয়ে যতটুকু আইনি লড়াই করা যায়, আমরা ততটুকু লড়াই করব। আমরা রাজপথ ও আদালতে সমান তালে লড়াই চালিয়ে যাব। তবে শাহবাগের মতো মবতন্ত্র করব না। আমরা নতুন বাংলাদেশে আর কোনো শাহবাগতন্ত্র চাই না। আমরা আইনের শাসন চাই, সুবিচার চাই।’

আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।

ওসমান হাদি বলেন, ‘আমরা প্রত্যাশা করছি, বাংলাদেশের আদালত স্বাধীনতাঁর পর আজ একটি ঐতিহাসিক রায় দিতে পারেন। কোনো প্রকারের রাজনৈতিক প্রভাব ছাড়া বাংলাদেশের আইনের ওপর রায় দেবেন। ইনসাফ ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করবেন। আজ যদি আদালত সেই ন্যায়বিচারটা প্রতিষ্ঠা করতে পারেন, তাহলে শুধু শহীদ পরিবারই নয়, ১৮ কোটি মানুষের যে নতুন বাংলাদেশ, তাঁর সূচনা আজ আদালতের মাধ্যমেই হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে যে সর্বোচ্চ শাস্তি রয়েছে, তাতে এই ফ্যাসিস্ট, খুনি হাসিনার একবার না, অন্তত জুলাইয়ে ১৪০০ মানুষ হত্যার জন্য তাঁর ১৪০০ বার এই রায় কার্যকর করা দরকার।’

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র বলেন, ‘যেহেতু উনি পলাতক আছেন, আজ যখন তাঁর বিরুদ্ধে রায় হবে, তখন সরকারের প্রথম কাজ হবে দিল্লিকে বলা যে, দণ্ডপ্রাপ্ত আসামিকে তুমি এখনো আশ্রয় দিয়ে রেখেছ, ফেরত দাও। আর যদি না দেয় তাহলে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে বা অন্যান্য জায়গা থেকে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করতে হবে। এমনকি সেই মামলা যদি দিল্লির বিরুদ্ধেও করতে হয় তাও করতে হবে।’

রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ও এর আশপাশে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের সামনের পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনাবাহিনীর সদস্য মোতায়েন রয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১–এর এজলাস থেকে রায় ঘোষণার কার্যক্রম সরাসরি সম্প্রচার করার কথা রয়েছে। বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এই মামলার রায় ঘোষণা করবেন। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারক মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী। এই মামলার শুনানিতে প্রসিকিউশন (রাষ্ট্রপক্ষ) একাধিকবার বলেছে, শেখ হাসিনা ছিলেন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী সব ধরনের অপরাধের মাস্টারমাইন্ড (পরিকল্পনাকারী), হুকুমদাতা ও সুপিরিয়র কমান্ডার (সর্বোচ্চ নির্দেশদাতা)।

এই মামলার প্রধান আসামি হলেন ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁর সঙ্গে অন্য দুই আসামি হলেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিন আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান পলাতক এবং তাঁরা বর্তমানে ভারতে অবস্থান করছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে গুলি গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রায় সরাসরি আঘাত: এনসিপি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০৫
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। ছবি: ফেসবুক থেকে নেওয়া

ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদির ওপর সন্ত্রাসী হামলার তীব্র নিন্দা ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। দলটি এই হামলাকে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে পুনরুদ্ধার হওয়া গণতান্ত্রিক অগ্রযাত্রার ওপর ‘সরাসরি আঘাত’ বলে মন্তব্য করেছে। গুরুতর আহত শরীফ ওসমান হাদির দ্রুত সুস্থতা কামনা করেছে এনসিপি।

এনসিপির যুগ্ম সদস্যসচিব এবং মিডিয়া সেলের সম্পাদক মুশফিক উস সালেহীন স্বাক্ষরিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, এই ন্যক্কারজনক হামলা দেশের সামগ্রিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি এবং আসন্ন নির্বাচনী পরিবেশের ভঙ্গুরতা সম্পর্কে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছে।

বিজ্ঞপ্তিতে এনসিপি বিশেষ উদ্বেগ জানিয়ে বলেছে, শরিফ ওসমান হাদি হামলার আগেই প্রকাশ্যে হুমকির কথা জানালেও তাঁর নিরাপত্তা নিশ্চিতে সরকার ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি। এর আগে জাতীয় নাগরিক পার্টি কার্যালয়ের সামনে বারংবার ককটেল হামলা এবং একজন প্রার্থী হুমকি পাওয়ার পরেও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের এই ব্যর্থতাকে ‘দায়িত্বহীনতা, অদক্ষতা ও উদাসীনতার নগ্ন উদাহরণ’ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে দলটি।

জাতীয় নাগরিক পার্টি তাদের বিবৃতিতে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন আওয়ামী লীগ জনগণের বিরুদ্ধে সহিংসতা চালিয়েছে, সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তুলেছে, এবং তাদের অবশিষ্ট সন্ত্রাসী বাহিনী এখনো সক্রিয়ভাবে দেশ অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। সরকার যদি অবিলম্বে আওয়ামী লীগের এই সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান পরিচালনা না করে, তবে তারা আবারও গণতান্ত্রিক উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করবে এবং দেশকে সহিংস অরাজকতার দিকে ঠেলে দেবে।

দলটি দৃঢ়ভাবে জানিয়েছে, এখন গণ-অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিগুলোর একে অপরকে দোষারোপ করে রাজনৈতিক লাভ তোলার সময় নয়, বরং প্রকৃত অপরাধী ও তাদের পৃষ্ঠপোষকদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি করার সময়। তারা সতর্ক করে বলেছে, গণ-অভ্যুত্থানের শক্তি বিভক্ত হলে ‘পতিত ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ও দেশবিরোধী চক্র’ সুযোগ নেবে।

জাতীয় নাগরিক পার্টি দেশের সব গণতান্ত্রিক শক্তি ও আপামর জনগণকে সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে এবং যেকোনো হুমকি উপেক্ষা করে নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণ নিশ্চিত করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকার ঘোষণা দিয়েছে।

এনসিপি অবিলম্বে এই হামলার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত, হামলাকারীদের গ্রেপ্তার, হুমকির উৎস শনাক্ত করা-সহ আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান এবং সব প্রার্থী ও নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকারের প্রতি জোর দাবি জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার বিএনপির বিক্ষোভ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৮: ০৫
হাদির ওপর হামলার প্রতিবাদে শনিবার বিএনপির বিক্ষোভ

ইনকিলাব মঞ্চের নেতা ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধের ঘটনার সঙ্গে জড়িত দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে বিএনপি। আগামীকাল শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে দলটির পক্ষ থেকে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করা হবে।

আজ শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে ‘রাষ্ট্র গড়ার পরিকল্পনা’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

রিজভী বলেন, ‘দুষ্কৃতকারীরা ওসমান হাদিকে গুলিবিদ্ধ করেছে। এটা পরিকল্পিত ষড়যন্ত্রের অংশ। আমরা অবিলম্বে হাদির গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনার তদন্ত করে দ্রুত দুষ্কৃতকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। এই দাবিতে আগামীকাল শনিবার ঢাকাসহ সারা দেশে বিএনপিসহ সকল অঙ্গসংগঠন বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে।’

আজ শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর বিজয়নগরের বক্স কালভার্ট এলাকায় ওসমান হাদিকে গুলি করা হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়। ঢামেক হাসপাতালের পরিচালকের দপ্তর থেকে জানানো হয়, হাদির অবস্থা খুবই সংকটাপন্ন (ক্রিটিক্যাল) এবং বুলেটটি মাথার ভেতরে থাকায় তাঁকে লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

নভেম্বরে ‘হত্যার হুমকি’ পাওয়ার কথা জানিয়েছিলেন হাদি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪১
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার আগে থেকেই ‘হত্যার হুমকি’ পাচ্ছিলেন বলে জানিয়েছিলেন। গত নভেম্বর মাসে ৩০টিরও বেশি বিদেশি নম্বর থেকে হুমকি পাওয়ার কথা উল্লেখ করে তিনি ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়েছিলেন।

আজ শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগরে রিকশায় থাকা অবস্থায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের আইসিইউতে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

গত ১৩ নভেম্বর গভীর রাতে দেওয়া এক পোস্টে শরিফ ওসমান হাদি সরাসরি আওয়ামী লীগকে দায়ী করে লিখেছিলেন—‘গত তিন ঘন্টায় আমার নাম্বারে লীগের খুniরা অন্তত ৩০টা বিদেশী নাম্বার থেকে কল ও টেক্সট করেছে। যার সামারি হলো- আমাকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখা হচ্ছে। তারা আমার বাড়িতে আগুন দেবে। আমার মা, বোন ও স্ত্রীকে ধ র্ষণ করবে। এবং আমাকে হ’ ত্যা করবে।’

ওই পোস্টে তিনি আরও লিখেছিলেন, ‘১৭ তারিখ খুni হাসিনার রায় হবে। ১৪০০ শহীদের রক্তের ঋণ মেটাতে কেবল আমার বাড়ি-ঘর না, যদি আমাকেও জ্বালিয়ে দেয়া হয়, ইনসাফের এই লড়াই হতে আমি এক চুলও নড়বো না, ইনশাআল্লাহ। এক আবরারকে হ’ ত্যার মধ্য দিয়ে হাজারো আবরার জন্মেছে এদেশে। এক হাদিকে হ’ ত্যা করা হলে তাওহীদের এই জমিনে আল্লাহ লক্ষ হাদি তৈরি করে দিবেন। স্বাধীনতার এই ক্রুদ্ধ স্বরকে কোনোদিন রুদ্ধ করা যাবে না। লড়াইয়ের ময়দানে আমি আমার আল্লাহর কাছে আরও সাহস ও শক্তি চাই। আরশ ওয়ালার কাছে আমি হাসিমুখে শহীদি মৃত্যু চাই। আমার পরিবার ও আমার কলিজার সহযোদ্ধাদেরকে আল্লাহ তায়ালার কুদরতি কদমে সোপর্দ করলাম। শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে। হাসবিয়াল্লাহ।’

উল্লেখ্য, আজ জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় হাদির ওপর হামলার ঘটনা ঘটে। ডিএমপির জনসংযোগ বিভাগের উপকমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান বলেন, মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়। দুর্বৃত্তরা মোট তিনটি মোটরসাইকেলে করে এসেছিল বলে জানান তিনি। রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম গুলিবিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

হাদির একজন সহযোদ্ধা জানান, জুমার নামাজের পর মসজিদে তাদের লিফলেট বিলি কর্মসূচি ছিল। কথা ছিল লিফলেট বিলি শেষে সবাই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে একত্রিত হয়ে দুপুরের খাবার খাবেন।

ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক চিকিৎসকের বরাতে বলেন, ওসমান হাদিকে মাথায় গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয় এবং আইসিইউতে রেখে তাঁর চিকিৎসা চলছে।

প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর সতীর্থরা ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগে ‘বি নেগেটিভ’ রক্ত জোগাড় করার জন্য চেষ্টা করছেন।

জুমার নামাজের আগে বেলা ১১টা ৫২ মিনিটে হাদি সর্বশেষ ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলেন—‘যেহেতু ঢাকা-৮ এ আমার পোস্টার-ফেস্টুন কিছুই নাই, তাই আমার এখন ছেঁড়া-ছিঁড়িরও চাপ নাই। দুদকের সামনে থেইকা জুম্মা মোবারক।’

সর্বশেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত জানা গেছে, ‎ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ওসমান হাদিকে লাইফসাপোর্টে রাখা হয়েছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান আজ বিকেল ৫ টার পর আজকের পত্রিকাকে এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

‎তিনি বলেন, ‘তাঁর (ওসমান হাদি) মাথার ভেতরে গুলি আছে। বর্তামানে অপারেশন থিয়েটারে তাঁর সার্জারি চলছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

যেভাবে আলোচিত রাজনৈতিক মুখ হয়ে উঠলেন হাদি

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৭: ৪৭
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি। ফাইল ছবি

রাজধানীতে দুর্বৃত্তদের গুলিতে সংকটাপন্ন অবস্থায় হাসপাতালে ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরীফ ওসমান বিন হাদি। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরদিনই ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী হাদিকে গুলি করার ঘটনা ঘটল। সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক হাদি গুলিবিদ্ধ হওয়ার ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন করে আলোচনা ও উত্তাপ ছড়িয়েছে। আজ জুমার নামাজের পর রাজধানীর বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় মোটরসাইকেলে আসা দুই দুর্বৃত্ত চলন্ত রিকশায় বসা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

গুলিবিদ্ধ হাদিকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে ঢামেক পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো. ফারুক জানিয়েছেন, ওসমান হাদিকে মাথায় ও বাম কানের নিচে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আনা হয়।

ঢামেক হাসপাতালের জরুরি বিভাগের আবাসিক চিকিৎসক (আরএস) ডা. মোশকাত আহমেদ নিশ্চিত করেন, গুলিবিদ্ধ শরিফ ওসমান বিন হাদি বর্তমানে কোমায় আছেন এবং তাঁর অবস্থা অত্যন্ত গুরুতর ও আশঙ্কাজনক। প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণে তাঁর চিকিৎসায় জটিলতা তৈরি হয়েছে। হাদির সঙ্গী ও সমর্থকেরা জরুরি ভিত্তিতে ‘বি নেগেটিভ’ রক্তের সন্ধান করছেন।

হাদির ওপর হামলার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। সরকারপ্রধানের দপ্তর থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, প্রধান উপদেষ্টা এই সহিংস হামলাকে ‘নির্বাচনী পরিবেশে একেবারেই অগ্রহণযোগ্য’ ও ‘দেশের শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক অঙ্গনের জন্য অত্যন্ত দুঃখজনক ঘটনা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি আহত ওসমান হাদির সর্বোচ্চ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে তদারকির নির্দেশ দিয়েছেন।

একই সঙ্গে তিনি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দ্রুত ও ব্যাপক তদন্ত চালিয়ে হামলায় জড়িত সবাইকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। প্রধান উপদেষ্টা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ, প্রত্যক্ষদর্শীর তথ্য গ্রহণ, সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা এবং হামলার পেছনে কোনো সংগঠিত পরিকল্পনা থাকলে তা উন্মোচনের জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে বলেছেন।

হামলা ও হাদির সাম্প্রতিক কর্মকাণ্ড

পুলিশের রমনা বিভাগের ডিসি মাসুদ আলম জানান, জুমার নামাজের পর বেলা ২টা ২৫ মিনিটে বিজয়নগর বক্স কালভার্ট এলাকায় তিনটি মোটরসাইকেলে আসা হামলাকারীরা হাদিকে গুলি করে পালিয়ে যায়।

হাদির সহকর্মীরা জানান, জুমার নামাজের পর মসজিদে তাদের লিফলেট বিতরণ ও জনসংযোগ কর্মসূচি ছিল। এরপর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আলোচনার পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যেই হামলার খবর আসে।

উল্লেখ্য, গত নভেম্বরে হাদি তাঁর ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তাঁকে ও তাঁর পরিবারকে হত্যার এবং ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে জানান। তিনি ওই পোস্টে আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকদের নজরদারির অভিযোগ এনেছিলেন।

আলোচিত রাজনৈতিক মুখ ওসমান হাদি

জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে আন্দোলনের অন্যতম পরিচিত মুখ ওসমান হাদি। রাজনৈতিক অবস্থান এবং তীব্র ভাষায় বক্তব্যের জন্য তিনি সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রায়ই আলোচনায় উঠে আসেন।

শরীফ ওসমান বিন হাদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১০-২০১১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০২৪ সালের বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ভূমিকার জন্য তিনি পরিচিতি পান।

হাদির গ্রামের বাড়ি ঝালকাঠির নলছিটিতে। বাবা ছিলেন মাদ্রাসার শিক্ষক। নেছারাবাদ কামিল মাদ্রাসায় হাদির শিক্ষাজীবন শুরু। পরে ভর্তি হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে।

এক সময় ইংরেজি শেখার কোচিং সেন্টার সাইফুর’স এ শিক্ষকতা করেছেন হাদি। বর্তমানে ইউনিভার্সিটি অব স্কলারস নামে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শিক্ষকতা করেন বলেও জানা যায়।

মাদ্রাসায় পড়ালেখা করায় এবং ভাষা ও পোশাকের কারণে শিবির বা হিজবুত তাহরীরের কর্মী সন্দেহে ক্যাম্পাস, শ্রেণিকক্ষসহ বিভিন্ন স্থানে তাঁকে সন্দেহ ও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে বলে একাধিকবার বলেছেন হাদি।

তবে তিনি ও তাঁর সহকর্মীদের দাবি, জুলাই অভ্যুত্থানের আগে কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন না হাদি; তিনি সাংস্কৃতিক অঙ্গনে কাজ করতেন, একাধিক বইও লিখেছেন।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর ওসমান হাদির হাত ধরে গড়ে ওঠে সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম ‘ইনকিলাব মঞ্চ’। ‘সব ধরনের আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও ইনসাফভিত্তিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ’ সংগঠনটির ঘোষিত লক্ষ্য।

এবারের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনে শিবির নেতৃত্বাধীন প্যানেল থেকে ভোট করে ইনকিলাব মঞ্চের ফাতিমা তাসনিম জুমা মুক্তিযুদ্ধ ও গণতান্ত্রিক আন্দোলনবিষয়ক সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন।

আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সোচ্চার ওসমান হাদি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার মৃত্যুদণ্ডের রায়ের পর বলেন, ‘এই রায় পুরো পৃথিবীর জন্য নজির স্থাপন করেছে।’

গত জুলাইয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হাদি বলেছিলেন, বিএনপি যদি ‘পুরোনো ধারায়’ রাজনীতি করে ক্ষমতায় আসে, তবে তারা দুই বছরও ক্ষমতায় টিকতে পারবে না।

বিভিন্ন সময়ে সেনাবাহিনীরও সমালোচনা করেছেন হাদি। এর বাইরে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের দুর্বলতা, সংস্কার প্রশ্নে সমঝোতামূলক মনোভাব এবং দৃশ্যত পরিবর্তনের ঘাটতির সমালোচনা করে একটি জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব করেছিলেন।

চলতি বছর জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) ডাকা ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিতে হামলার পর হাদি গোপালগঞ্জ জেলা ভেঙে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তীব্র ভাষায় বক্তব্য দেন। তাঁর বক্তব্যের ভাষা ব্যাপকভাবে আলোচিত হয়। বিতর্কের মুখে তিনি তাঁর শব্দচয়নকে ‘মুক্তির মহাকাব্য’ হিসেবে বর্ণনা করেন এবং কেউ কষ্ট পেয়ে থাকলে তাঁদের কাছে দুঃখ প্রকাশ করেন।

গত নভেম্বরে হাদি নিজের ফেসবুক পেজে পোস্ট দিয়ে বলেন, দেশি-বিদেশি অন্তত ৩০টি ফোন নম্বর থেকে তাঁকে ফোন এবং মেসেজ পাঠিয়ে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে, তাঁর বাড়িতে আগুন দেওয়া ও তাঁর মা, বোন ও স্ত্রীকে ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হয়েছে।

ওই পোস্টে তিনি লেখেন, আওয়ামী লীগের ‘খুনি’ সমর্থকেরা তাঁকে সর্বক্ষণ নজরদারিতে রাখছে। ‘জীবননাশের আশঙ্কা’ সত্ত্বেও তিনি ‘ইনসাফের লড়াই’ থেকে পিছিয়ে যাবেন না।

মতিঝিল, শাহজাহানপুর, পল্টন, রমনা ও শাহবাগ থানা এলাকা নিয়ে গঠিত ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার ঘোষণা দিয়েছেন হাদি। সম্প্রতি ব্যাপক প্রচার-প্রচারণায় তৎপর হয়েছিলেন তিনি। প্রতি শুক্রবারে জনসংযোগ করতেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত