Ajker Patrika

প্রথম আলো-ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ভয়ংকর: নোয়াবের সভায় বক্তারা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৯: ৫৯
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়া এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের সামনে আজ সোমবার দুপুরে। ছবি: সংগৃহীত
প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও আগুন দেওয়া এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তার প্রতিবাদে মানববন্ধন। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের সামনে আজ সোমবার দুপুরে। ছবি: সংগৃহীত

সম্প্রতি দেশের শীর্ষস্থানীয় দুই সংবাদপত্রের কার্যালয়ে যে হামলা হয়েছে, এর মাধ্যমে শুধু গণমাধ্যম নয়, গণতন্ত্র, শিক্ষা ও সংস্কৃতির ওপরও আঘাত এসেছে। এই হামলার ঘটনায় সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ছিল ভয়ংকর। দেশের সর্বস্তরের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই ‘মব সন্ত্রাসকে’ রুখে দিতে হবে।

দৈনিক প্রথম আলো ও দ্য ডেইলি স্টার কার্যালয়ে হামলা ও অগ্নিসংযোগ এবং সম্পাদক পরিষদের সভাপতি নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরকে হেনস্তা করার প্রতিবাদে আয়োজিত সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন।

আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক এই যৌথ প্রতিবাদ সভার আয়োজন করে সংবাদপত্রের সম্পাদকদের সংগঠন সম্পাদক পরিষদ ও মালিকদের সংগঠন নিউজ পেপার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন (নোয়াব)।

সভায় সূচনা বক্তব্যে সম্পাদক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভাপতি দৈনিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীর বলেন, পৃথিবীর সব জায়গায় সংবাদমাধ্যমের নিজস্ব সম্পাদকীয় নীতি থাকে, সে নীতি পছন্দ না হলে গণমাধ্যমে আগুন লাগিয়ে দেওয়া কোনো গণতন্ত্রিক প্রক্রিয়া নয়। তারা (হামলাকারীরা) মধ্যযুগীয় কায়দায় পুড়িয়ে মারতে চেয়েছে। যখন অফিসে সবাই কাজ করছে, তখন চারপাশ থেকে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস আসার সুযোগ বন্ধ করে দেওয়ার মধ্য দিয়ে গোষ্ঠীটি চেয়েছে—মধ্যযুগীয় কায়দায় আগুন চারপাশ থেকে লাগিয়ে যাদের সঙ্গে তাদের মতান্তর, তাদের পুড়িয়ে মারতে।

সভায় দ্য ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ডেইলি স্টার ও প্রথম আলোর সাংবাদিকদের হত্যার হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ওই দিন ২৬-২৭ জন স্টাফ ভবনের ভেতরে আটকে ছিল, ফায়ার সার্ভিসকে যেতে দেওয়া হয়নি। তাদের উদ্দেশ্য শুধু ভবনে আগুন দেওয়া ছিল না, হত্যা করাও ছিল।

নোয়াবের সভাপতি দৈনিক সমকালের প্রকাশক এ কে আজাদ প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনা তুলে ধরে বলেন, ‘প্রথম আলোতে প্রথম আগুন দেওয়া হয়। তখনই ডেইলি স্টার সম্পাদক আশঙ্কা করেছিলেন—এর পরে হামলাকারীরা ডেইলি স্টারে যাবে। তখন তিনি সরকারের এমন কোনো সংস্থা নেই, এমন কোনো ব্যক্তি নেই, যাকে অনুরোধ, অনুনয়-বিনয় করেননি যে—আপনারা ডেইলি স্টারের সামনে প্রটেকশন দিন। কিন্তু তিনি কোনো সাহায্য বা সাড়া পাননি। পুড়ে যাওয়ার পরে পেয়েছেন।

‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব এই সভার আয়োজন করে। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে আজ সোমবার দুপুরে। ছবি: সংগৃহীত
‘মব ভায়োলেন্সে আক্রান্ত বাংলাদেশ’ শীর্ষক প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য দিচ্ছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াব এই সভার আয়োজন করে। প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে আজ সোমবার দুপুরে। ছবি: সংগৃহীত

এ কে আজাদ সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে আরও বলেন, ডেইলি স্টার সম্পাদক যখন অসহায়ের মতো নিচে দাঁড়িয়ে আছেন, তাঁর সামনে দিয়ে লুটকারীরা কম্পিউটার ও চেয়ার মাথায় করে নিয়ে যাচ্ছে। ওখানে তখন সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ছিল, কিন্তু বাহিনীগুলোর কেউ একটা প্রতিবাদ করেনি।

প্রতিবাদ সভায় সংহতি জানাতে এসে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘অত্যন্ত পরিষ্কার, এখানে বলার কিছু নেই। আজকে ডেইলি স্টার নয়, প্রথম আলো নয়, আজকে গণতন্ত্রের ওপর আঘাত এসেছে। আমার স্বাধীনভাবে চিন্তা করার যে অধিকার, আমার কথা বলার যে অধিকার, তার ওপর আবার আঘাত এসেছে। জুলাই যুদ্ধের ওপর আঘাত এসেছে। কারণ, জুলাই যুদ্ধ ছিল এ দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার যুদ্ধ। আজকে সেই জায়গায় আঘাত এসেছে। তাই আমার অনুরোধ, কোনো রাজনৈতিক দল-সংগঠন নয়, সব গণতন্ত্রকামী মানুষের এখন এক হওয়ার সময় এসে গেছে। আমরা যারা অন্ধকার থেকে আলোতে আসতে চাই, আমরা যারা বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থেই একটা স্বাধীন, সার্বভৌম ও গণতন্ত্রী দেখতে চাই, আজকে তাদের শুধু সচেতন নয়, রুখে দাঁড়ানোর সময় এসে গেছে। আমি আহ্বান জানাব, শুধু একাত্মতা ও সংহতি নয়, সর্বশক্তি দিয়ে আপনারা ঐক্যবদ্ধ হোন, এই অপশক্তিকে রুখে দিতে হবে।’

হামলার পর সরকারের নিষ্ক্রিয়তা ভয়ংকর ছিল বলে উল্লেখ করেন নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের প্রধান শিরীন পারভিন হক। নাগরিক প্ল্যাটফর্ম বাংলাদেশের আহ্বায়ক ও সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য জানান, মানুষ এখন নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত, তাঁরা সরকারের প্রতি আস্থাহীনতার কথা জানাচ্ছেন।

গণমাধ্যমে যে হামলা হয়েছে, এর সঙ্গে সরকারের ভেতরের একটি অংশের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে অভিযোগ করেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তিনি আরও বলেন, ‘আজকে আমরা শব্দটা ব্যবহার করছি মব ভায়োলেন্স। এই শব্দের সঙ্গে প্রথম দিকে একমত হতাম না বা আমরা এটার বিরোধিতা করতাম। কারণ, আমরা যাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলাম, তাদের পক্ষ থেকেই পুরা জুলাই গণ-অভ্যুত্থানকে প্রথম থেকে বলা হয়েছে মব। ফলে আমরা বলেছি যে, এটা মবোক্রেসি নয়।’

বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। ছবি: সংগৃহীত
বক্তব্য দিচ্ছেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এহসানুল মাহবুব জুবায়ের। ছবি: সংগৃহীত

বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের বলেন, অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। দোষীদের চিহ্নিত করে আইনের মুখোমুখি করতে হবে।

প্রতিবাদ সভায় বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সাংবাদিক, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবী ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত হয়ে ‘মব ভায়োলেন্সের’ বিরুদ্ধে তাঁদের শক্ত অবস্থান ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে মব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে লড়ার প্রতিশ্রুতি দেন তাঁরা।

প্রতিবাদ সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী, মানবাধিকারকর্মী আইরিন খান, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি, ব্র্যাকের নির্বাহী পরিচালক আসিফ সালেহ।

আরও উপস্থিত ছিলেন দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমান, দ্য ডেইলি সান সম্পাদক রেজাউল করিম লোটাস, দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড এর সম্পাদক ইনাম আহমেদ, দৈনিক ইনকিলাব সম্পাদক ও প্রকাশক এ এম এম বাহাউদ্দীন, দৈনিক মানবজমিন সম্পাদক মতিউর রহমান চৌধুরী, দৈনিক আজকের পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক কামরুল হাসান, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, দৈনিক সমকাল সম্পাদক শাহেদ মুহাম্মদ আলী প্রমুখ।

সভা শেষে হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ের সামনে মানববন্ধন করেন সম্পাদক পরিষদ ও নোয়াবের সদস্যরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ঢাকা-১৭ আসনে মনোনয়নপত্র নিলেন এনসিপির তাজনূভা, ১৮-তে নাসীর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ছবি: সংগৃহীত
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী। ছবি: সংগৃহীত

জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন ও মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। আজ সোমবার আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার কার্যালয় থেকে তাজনূভা জাবীন ঢাকা-১৭ ও নাসীরুদ্দীন ঢাকা-১৮ আসনের মনোনয়নপত্র নেন।

তাজনূভা জাবীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড প্রোফাইলে দেওয়া পোস্টে বলেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার লক্ষ্যে ঢাকা-১৭ আসন থেকে মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছি আজকে। আমার জন‍্য দোয়া করবেন আপনারা। আমার দল এনসিপি। আমার দলের মার্কা শাপলা কলি।’

ঢাকা-১৭ আসনের নির্বাচনী এলাকার মধ্যে রয়েছে গুলশান, বনানী, বারিধারা, ভাষানটেক, কালাচাঁদপুর, শাহজাদপুর, কড়াইল, মহাখালী ও ক‍্যান্টনমেন্ট। এই আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী এস এম খালিকুজ্জামান। বিএনপি এই আসনে এখানো দলীয় প্রার্থী দেয়নি। এই আসনের আরেকজন প্রার্থী বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি-বিজেপির চেয়ারম্যান আন্দালিব রহমান পার্থ।

এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পক্ষে তাঁর দলের নেতা-কর্মীরা উত্তরা আজিমপুর কাঁচাবাজার আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশনার অফিস থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। এনসিপির মিডিয়া সেল বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর পক্ষে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের যুগ্ম সদস্যসচিব মো. মান্নান তালুকদার (মাহিন), সহসাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম প্রিন্স এবং এনসিপির উত্তরার সাত থানার প্রধান সমন্বয়কারী ও যুগ্ম সমন্বয়কারীরা।

ঢাকা-১৮ আসনের নির্বাচনী এলাকার মধ্যে রয়েছে উত্তরখান, খিলক্ষেত, তুরাগ ও দক্ষিণখান। এই আসনে বিএনপির প্রার্থী এস এম জাহাঙ্গীর এবং জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী অধ্যক্ষ আশরাফুল হক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

মব সহিংসতা গণতন্ত্রকে হুমকির মুখে ফেলছে: রিজভী

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি
বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ফাইল ছবি

দেশের বিভিন্ন স্থানে উচ্ছৃঙ্খল জনতা মব তৈরি করে হামলা চালাচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আক্রমণ করছে— এ ধরনের কর্মকাণ্ডকে গণতন্ত্রবিরোধী বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।

আজ সোমবার জাতীয়তাবাদী মুক্তিযুদ্ধের প্রজন্মের কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা উপলক্ষে রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ কথা বলেন।

রিজভী বলেন, বিভিন্ন ইস্যুকে সামনে রেখে সারা দেশে একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশে গণতন্ত্র কখনোই শক্তিশালী হবে না। তিনি আরও বলেন, দেশের মানুষ দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত। জনগণ এখন ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছে। কিন্তু সেই সম্ভাবনাকে নষ্ট করার জন্য একটি চক্র পরিকল্পিতভাবে কাজ করছে। এ ধরনের অপচেষ্টাকে কোনোভাবেই সুযোগ না দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমালোচনা করে রিজভী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকাকালে বিদেশের সঙ্গে অসম চুক্তিতে চড়া মূল্যে বিদ্যুৎ কিনে জনগণের অর্থের অপচয় করেছে। জনগণের কষ্টার্জিত টাকাকে নিজের মনে করে লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি।

অনুষ্ঠানে নবগঠিত কমিটির আহ্বায়ক ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেনের নেতৃত্বের প্রশংসা করে রিজভী বলেন, ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে ইশরাক এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এই প্রজন্মের নেতা-কর্মীরা দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

নির্বাচন বানচালের চেষ্টা জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে প্রতিহত করবে: জোনায়েদ সাকি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা
জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ। ছবি: আজকের পত্রিকা

গণসংহতি আন্দোলনের (জিএসএ) প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যাবে, গণতান্ত্রিক বন্দোবস্তের দিকে যাবে; তার জন্য বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন অপরিহার্য। যারাই একে বানচাল করতে চেষ্টা করবে, তাদের জনতা ঐক্যবদ্ধ হয়ে জুলাইয়ের আদর্শে প্রতিহত করবে।

আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে শহীদ শরিফ ওসমান হাদি হত্যাকাণ্ড, গণমাধ্যম ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা, ময়মনসিংহে শ্রমিক দিপু চন্দ্র দাসকে গণপিটুনি দিয়ে মেরে লাশ পুড়িয়ে ফেলা ও লক্ষ্মীপুরে বিএনপি নেতা বেলাল হোসেনের বাড়িতে আগুন দিয়ে শিশু আয়েশা আক্তারকে পুড়িয়ে হত্যার প্রতিবাদ ও বিচারের দাবিতে গণসংহতি আন্দোলন আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

ওসমান হাদির হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়ে জোনায়েদ সাকি বলেন, জুলাইয়ে যে হত্যাযজ্ঞ হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। নির্বাচন বানচালের যে তৎপরতা চলছে, সরকারকে তার বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিতে হবে। যারা প্রথম আলো, ডেইলি স্টার কিংবা অন্যান্য সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন জনের ওপর হামলা করেছে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে।

সরকারের সমালোচনা করে জোনায়েদ সাকি বলেন, অভ্যুত্থানের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সরকার, যারা অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়িত করার দায়িত্বপ্রাপ্ত, তারা আজকে অভ্যুত্থানের অংশগ্রহণকারী নেতৃত্বের নিরাপত্তা দেওয়ার কাজটি করতে পারছে না।

কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ প্রসঙ্গে সাকি বলেন, তারা এখনো দেশকে ধ্বংস করার ক্ষেত্র থেকে নিরস্ত হয়নি। তারা গণতান্ত্রিক উত্তরণকে নস্যাৎ করে দিয়ে, বানচাল করে দিয়ে এই দেশকে আবারও চূড়ান্ত বিপর্যয়ের দিকে নিতে চায়। পতিত ফ্যাসিস্টরা বসে নেই, তারা বাংলাদেশের অভ্যুত্থানের অর্জনকে ধ্বংস করতে চায়।

দেশে নব্য ফ্যাসিস্টের আগমন ঘটেছে ইঙ্গিত করে জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘পতিত ফ্যাসিস্টরা যে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করেছিল, আজকে তার বিপরীতে আরেক দল নতুন করে ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতে চায় এবং সেইটাকে কি সরকার পৃষ্ঠপোষকতা দিচ্ছে? এক ফ্যাসিবাদ পাল্টে আরেক ফ্যাসিবাদের ধারা সেখানে জন্ম কিংবা তাদের উত্থানে সহায়তা করছে? আমাদের সতর্ক ও সচেতন হতে হবে, ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’ তিনি গণমাধ্যমের ওপরে হামলাকে গণতন্ত্রের ওপরে হামলা বলে উল্লেখ করেন।

সমাবেশে দলের নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেল বলেন, ‘আমরা নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত বলতে এই ন্যায়বিচার ও ইনসাফের রাজনৈতিক মতাদর্শকে বুঝেছিলাম। সেই রাষ্ট্র গঠনের জন্য আমাদের এই মুহূর্তে গণতান্ত্রিক উত্তরণ ঘটাতে হবে।’

দলের রাজনৈতিক পরিষদ সদস্য তাসলিমা আখতার বলেন, ‘যারা পতিত ফ্যাসিস্টকে পুনর্বাসন করতে চায়, তারাই আমাদের নির্বাচনকে বারবার পিছিয়ে দেওয়ার পাঁয়তারা করছে। এই ষড়যন্ত্রকারীদের চিহ্নিত করতে হবে।’

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন জিএসএর রাজনৈতিক পরিষদের সদস্য মনির উদ্দীন পাপ্পু, কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য বাচ্চু ভূঁইয়া, দীপক কুমার রায়, আমজাদ হোসেন, অঞ্জন দাস, লুৎফুন্নাহার সুমনা প্রমুখ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করলেন নুরুল হক নুর

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২২ ডিসেম্বর ২০২৫, ২২: ৪০
ডাকসু ভবনের সামনে ‘ডাকসু হামলার ৬ বছর’ উপলক্ষে প্রতিবাদ সভায় নুরুল হক নুর। ছবি: সংগৃহীত
ডাকসু ভবনের সামনে ‘ডাকসু হামলার ৬ বছর’ উপলক্ষে প্রতিবাদ সভায় নুরুল হক নুর। ছবি: সংগৃহীত

নিরাপত্তা শঙ্কায় থাকা ২০ জন রাজনৈতিক ব্যক্তিকে গানম্যান দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। আজ সোমবার (২২ ডিসেম্বর) দুপুরে সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত কমিটির বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে এসব কথা জানান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ২০ জনের এই তালিকায় গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুরের নাম থাকলেও সরকারের দেওয়া গানম্যান প্রত্যাখ্যান করেছেন নুরুল হক নুর।

আজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ভবনের সামনে ‘ডাকসু হামলার ৬ বছর’ উপলক্ষে এক প্রতিবাদ সভায় যোগ দিয়ে নুরুল হক নুর এসব কথা বলেন।

নুর বলেন, ‘যে সরকারের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী জনসমক্ষে পোশাক পরিহিত অবস্থায় আমার কার্যালয়ের সামনে হামলা করেছে, সেই হামলাকারীদের বিচার না হওয়া পর্যন্ত সরকারের দেওয়া গানম্যান আমি প্রত্যাখ্যান করছি।’

নুর আরও বলেন, ‘একক ব্যক্তিকে গানম্যান দিয়ে গোটা দেশকে নিরাপদ করা সম্ভব নয়। জনগণের নিরাপত্তায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ঢেলে সাজাতে হবে। শুধু নির্বাচনের প্রার্থীদের নিরাপত্তা দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা সম্ভব নয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে ও নিরাপদ ভোটের পরিবেশ তৈরি না হলে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যাবে না।’

পুলিশ ও সেনাবাহিনীর দুর্বৃত্তরা পোশাক পরিহিত অবস্থায় চলতি বছরের ২৯ আগস্ট জনসমক্ষে হামলা চালিয়েছিল উল্লেখ করে নুর বলেন, ‘৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এই হামলার ঘটনায় তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে চলতি বছরের ৪ সেপ্টেম্বর বিচার বিভাগীয় কমিটি গঠন করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হলেও এখন পর্যন্ত এই হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত ও বিচার করা হয়নি। এতে বোঝা যায়, সেদিনের হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তী সরকারের মৌন সমর্থন রয়েছে।’

এই ঘটনার জন্য সরকারের দায় রয়েছে জানিয়ে নুর বলেন, ‘হামলার ঘটনার বিচার না হওয়ায় প্রধান উপদেষ্টাসহ বাকি উপদেষ্টাদেরও আমি দায়ী করব।’ তাই গানম্যান প্রত্যাখ্যান করে নিজের ওপর কোনো ধরনের হামলা হলে তার দায় বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের নিতে হবে বলে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়েছেন ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত