Ajker Patrika

মব জাস্টিস মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে: তারেক রহমান

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। ফাইল ছবি

দেশে মব জাস্টিসের নামে হিংস্র উন্মাদনা মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরিবেশকে বিপন্ন করবে বলে মনে করেন তিনি।

আজ বুধবার নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবসে দেওয়া এক বিবৃতিতে তিনি এ মন্তব্য করেন।

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, ‘রক্তোন্মাদনা দেশে দেশে ভয়ংকর হানাহানি ও রক্তারক্তি অব্যাহত রেখেছে। এ কারণে বিশ্বের অসংখ্য মানুষ নিহত ও আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করছে। বিভিন্ন রাষ্ট্রে স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী তাদের বিরোধীদের ওপর সীমাহীন ক্রোধে ভয়ানক দমন-পীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। সেই সব দেশে নাগরিকদের জীবন ও সম্পদ মারাত্মক হুমকির মুখে। একনায়কদের দোর্দণ্ড প্রতাপে বিরোধী মতের মানুষকে গুম, খুনসহ মিথ্যা মামলায় এক অবর্ণনীয় বন্দীজীবন কাটাতে হয় বছরের পর বছর।’

বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে প্রায় ১৬ বছর বন্দী করে ভয়াবহ আওয়ামী ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন কায়েম করা হয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘আওয়ামী ফ্যাসিবাদী আমলে বাংলাদেশকে সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রে পরিণত করা হয়েছিল। মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ সব নাগরিক স্বাধীনতাকে হরণ করা হয়েছিল। সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নানা কালাকানুন দ্বারা ছিল শৃঙ্খলে বন্দী। গণতন্ত্রের প্রতীক বিএনপির চেয়ারপারসন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় অন্যায়ভাবে সাজা দিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছিল।

‘চিকিৎসাধীন মুমূর্ষু দেশনেত্রীর সুচিকিৎসাকেও বর্বর আওয়ামী সরকার নির্দয়ভাবে বাধা দিয়েছিল। গোটা দেশটাই ছিল বাকরুদ্ধ, ভীতি ও শঙ্কার মধ্যে আবদ্ধ।’

তারেক রহমান বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারের অগণতান্ত্রিক ও অসহিষ্ণু আচরণের প্রতিবাদ করলেই লেলিয়ে দেওয়া হতো পেটোয়া বাহিনী। মানবতাকে উচ্ছেদ করে আওয়ামী সরকারের পোষ্য সন্ত্রাসীরা বিচারহীনতার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা করে বলেই নারী, শিশুসহ সাধারণ মানুষের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়েছিল। একমাত্র গণতান্ত্রিক সমাজেই মানুষের সার্বিক অধিকার নিশ্চিত হয়। আমরা ফ্যাসিবাদমুক্ত হলেও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও গণতন্ত্র চর্চার সুষ্ঠু কর্মপ্রক্রিয়া এখনো শুরু হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘এখন মব জাস্টিসের নামে এক হিংস্র উন্মাদনা মানবতার শত্রু হয়ে দাঁড়িয়েছে। এটি গণতান্ত্রিক সংস্কৃতি গড়ে তোলার পরিবেশকে বিপন্ন করবে। আর যেন একমাত্রিক রাষ্ট্রের পুনঃপ্রবর্তন না হয়, সে জন্য গণতন্ত্রকে গতিশীল ও এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে। মানবতা, ন্যায়বিচার, আইনের শাসন এবং অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের সুমহান ঐতিহ্য আমাদের গড়ে তুলতে হবে। সে জন্য গণতান্ত্রিক শক্তির অটুট ঐক্য বজায় রাখা অত্যন্ত জরুরি।’

নির্যাতিতদের সমর্থনে আন্তর্জাতিক দিবস সম্পর্কে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘জাতিসংঘ ঘোষিত এই দিবস অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই দিবসের তাৎপর্য অপরিসীম। প্রতিবছর ২৬ জুন নির্যাতনের শিকার ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা ও সংহতি জানানো হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরপরই পরাধীন জাতিগুলো ক্রমান্বয়ে স্বাধীনতা অর্জন করলেও সারা বিশ্বে সহিংসতা ও সংঘাত বন্ধ হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘আমি নির্যাতিতদের সমর্থনে জাতিসংঘ ঘোষিত আন্তর্জাতিক দিবসে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সব নির্যাতিত মানুষকে সহমর্মিতা জানাচ্ছি। নির্যাতিতদের ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে নানা প্রতিকূলতা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। মানবিকবোধে উদ্বুদ্ধ বিশ্বের সব গণতন্ত্রকামী মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের মাধ্যমেই নিষ্ঠুর নির্যাতনকারী গোষ্ঠী ও স্বৈরশাসককে পরাস্ত করা সম্ভব।’

এই দিবস উপলক্ষে আরেক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমি আন্তর্জাতিক এই দিবসে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের নিপীড়িত-নির্যাতিত মজলুম ব্যক্তি, জাতি, গোষ্ঠী, বর্ণ ও ভাষাগত সম্প্রদায়ের প্রতি জানাই গভীর সমবেদনা ও সহমর্মিতা।

‘গত বছর জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানে তৎকালীন ফ্যাসিস্ট সরকারের বীভৎস দমননীতির কারণে অসংখ্য প্রাণ ঝরে গেছে এবং হাজার হাজার ছাত্র-জনতা পঙ্গুত্ব বরণ করেছে। বিগত নিষ্ঠুর ও কর্তৃত্ববাদী আওয়ামী সরকারের উৎপীড়নের বিকট রূপ দেখে সারা বিশ্ব হতভম্ব হয়েছে।

‘১৬ বছর ধরে তাদের রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাসের কারণে গুম, কথিত বন্দুকযুদ্ধে হত্যা, শারীরিক নির্যাতনে মৃত্যুর শিকার হয়েছে অসংখ্য মানুষ। ফ্যাসিস্ট সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহি ছিল না। সব প্রতিষ্ঠানকে হাতের মুঠোয় নিয়ে একদলীয় দুঃশাসনের জগদ্দল পাথর জনগণের বুকের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল। গণমাধ্যমকে হুমকি, ভয় ও নির্যাতন চালিয়ে মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে নির্মমভাবে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। বিএনপিসহ গণতন্ত্রকামী নেতা-কর্মীদের ওপর চালানো হয়েছে বেপরোয়া জুলুম-নির্যাতন। সারা দেশের মানুষ যেন ভয়াবহ নৈরাজ্যের অন্ধকারে বাস করেছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত