Ajker Patrika

পিআরের দুই-একটা সাইড ইফেক্ট নাই, তা আমি বলব না: ফয়জুল করীম

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭: ৫৩
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব এক সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব এক সমাবেশে বক্তব্য দেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। ছবি: আজকের পত্রিকা

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেছেন, ‘যদি ঐকমত্য কমিশনে আপনারা সিদ্ধান্ত নিতে না পারেন, তাহলে সহজ কথা, আপনারা গণভোট দেন, রেফারেনডাম দেন। যদি জনগণ পিআর সিস্টেম নির্বাচনের পক্ষে থাকে, তাহলে আমরা অবশ্যই দাবি করতে পারি। আর যদি জনগণ পিআর সিস্টেম নির্বাচন না চায়, তাহলে আমরা দাবি করব না। সরকারকে বলব, অবশ্যই আপনি রেফারেনডাম দেন, গণভোট দেন। যদি অন্য কারও ইঙ্গিতে আপনি পিআর সিস্টেম নির্বাচন দিতে গড়িমসি করেন, তাহলে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে আপনাকে বাধ্য করবে পিআর সিস্টেম নির্বাচন দেওয়ার জন্য।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকে আয়োজিত বিক্ষোভ মিছিলপূর্ব এক সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

ফয়জুল করীম আরও বলেন, ‘জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে হবে। এটা সবার দাবি, শুধু আমাদের দাবি নয়, জনগণেরও দাবি। কাজেই এটা দিতে অসুবিধা কোথায়? কাদের ইঙ্গিতে আপনারা দিচ্ছেন না? আমি মনে করি, ভারত চায় না জুলাই সনদের আইনি ভিত্তি দিতে। আপনারা কি ভারতের আশা ও আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাচ্ছেন?’

অন্তর্বর্তী সরকার শুধু নির্বাচনের জন্য বসেনি—এমনটি উল্লেখ করে ফয়জুল করীম বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার কেন বসেছে আমরা সবাই জানি—সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন। আপনি সংস্কার না করে কীভাবে নির্বাচন দেন? দৃশ্যমান বিচার না করে আপনি কীভাবে নির্বাচন দেন? যদি শুধু আপনি নির্বাচনের জন্য ক্ষমতায় বসেন, তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু যদি আপনি তিনটি বিষয়কে সামনে নিয়ে ক্ষমতায় বসেন, তাহলে অবশ্যই আপনাকে সংস্কার করতে হবে, দৃশ্যমান বিচার দেখাতে হবে, এরপর নির্বাচনে যেতে হবে। যদি এগুলো আপনি না করেন, শুধু নির্বাচন নির্বাচন করেন, তাহলে আমি মনে করব, আপনিও কোনো এক দলের দিকে ঝুঁকে গেছেন। আপনি নিরপেক্ষতা হারিয়ে ফেলবেন।’

নির্বাচন কোন পদ্ধতিতে হবে—এমন প্রশ্ন রেখে ফয়জুল করীম বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ অনেক আগে থেকে দাবি করছে পিআর সিস্টেম নির্বাচন। ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ স্পষ্ট ঘোষণা করেছে যে পিআর সিস্টেম নির্বাচন দিতে হবে। পিআর সিস্টেম নির্বাচনের ফায়দা কী, উপকারিতাটা কী—এ বিষয়ে ইতিমধ্যে আমার মনে হয় জনগণ বুঝে গিয়েছে। এমনকি বর্তমান জরিপে দেখা যায়, ৮০% জনগণ পিআরের পক্ষে।’

পিআর পদ্ধতি নিয়ে এ নেতা আরও বলেন, ‘পিআরের বিপক্ষে কিছু নাই, তা আমি বলব না। যখন আমরা ওষুধ সেবন করি, সেখানে লেখা থাকে এর প্রতিক্রিয়া বা সাইড ইফেক্ট কী আছে। পিআরের ব্যাপারেও দুই-একটা সাইড ইফেক্ট নাই, তা আমি বলব না। কিন্তু দেখতে হবে অধিকাংশ ভালো না মন্দ? যদি পিআরের ১% ভালো আর ৯৯% খারাপ হয়, তাহলে পিআরের বিপক্ষে বক্তব্য দেওয়া যায়। কিন্তু যদি ২% খারাপ থাকে আর ৯৮% ভালো হয়, তখন পক্ষে বক্তব্য দেওয়া যায়।’

বর্তমান নির্বাচনব্যবস্থাতেও দুর্বল সংসদ হতে পারে দাবি করে ফয়জুল করীম বলেন, ‘পিআরের ব্যাপারে তাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন কী? কাকে ভোট দেবেন আর কে নির্বাচিত হবেন? এটা তাদের সবচেয়ে বড় প্রশ্ন। স্থিতিশীল গভর্নমেন্ট হবে না, স্থিতিশীল সরকার হবে না। আমি তাদের প্রশ্ন করতে চাই, ধরে নেন, আজকে যেই পদ্ধতিতে নির্বাচন হচ্ছে, সেখানেও যদি এককভাবে কেউ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন না করে, সংখ্যা না পায়, তাহলে সেই পার্লামেন্টের অবস্থাটা কী হবে? সেটা তো দুর্বল পার্লামেন্ট। যদি কোয়ালিশন সরকার গঠন করতে হয়, সেই পার্লামেন্ট তো দুর্বলই হয়। তাই বর্তমান পদ্ধতিতেও তো দুর্বল পার্লামেন্ট হওয়া সম্ভব।’

ফয়জুল করীম বলেন, ‘পিআর সিস্টেম নির্বাচনে বিএনপির আপত্তি থাকারই কথা না। কারণ, তাদের একজন উঁচুপর্যায়ের নেতা বক্তব্য দিয়েছেন যে ৯০% ভোট তাদের। যদি ৯০% ভোট তাদের হয়, তাহলে তারা আসন পাবে ২৭০-এর ওপরে। তাতে এককভাবে সরকার গঠন করতে পারতেছে। সমস্যা কোথায়? বরং আজ ঝামেলামুক্ত সরকার গঠন করতে পারবে। পিআর সিস্টেম নির্বাচনের ব্যাপারে তো বিএনপি বক্তব্য দিয়েছে। কী বলছে? তারা জাতীয় সংসদ গঠন করবে। জাতীয় সরকার গঠন করবে। জাতীয় সরকারটা কীভাবে হবে, আমাকে বলুন? সবাই মিলে সম্মিলিত যে সরকার হয়, সেই সরকারটা তো জাতীয় সরকার হয়, না একক সরকারকে জাতীয় সরকার বলা হয়? যেহেতু সম্মিলিত সরকারকে জাতীয় সরকার বলা হয় আর পিআর পদ্ধতিতেই তো সমস্ত দল, সমস্ত মত, সমস্ত আদর্শের মানুষগুলো সংসদে যাবে। কাজেই বিএনপির বক্তব্য অনুযায়ী তো পিআর সিস্টেম নির্বাচনের প্রয়োজন।’

সমাবেশে সভাপতির বক্তব্যে ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি ইমতিয়াজ আলম বলেন, ‘আমাদের দাবিগুলোর অন্যতম হলো, আওয়ামী ফ্যাসিস্টের সহযোগী ১৪ দলকে নিষিদ্ধ করতে হবে।’

দলটির কেন্দ্রীয় সদস্য মুফতি আজহারুল করিম আবরার, যুগ্ম মহাসচিব আহমেদ আব্দুল কাইয়ুম প্রমুখ সমাবেশে বক্তব্য দেন।

বিষয়:

চরমোনাই
Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত