Ajker Patrika

সন্ধ্যায় যমুনায় বৈঠক, আসতে পারে বড় ঘোষণা

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২৪ মে ২০২৫, ১৭: ০৪
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা। ছবি: উইকিপিডিয়া
রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন ও প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনা। ছবি: উইকিপিডিয়া

গত কয়েক দিনের উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে আজ শনিবার সন্ধ্যার পর বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বৈঠকে বসছেন। সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক শুরু হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে নির্বাচনসহ নানা ইস্যুতে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছিল। বিশেষ করে নির্বাচন নিয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের ওপর চাপ বাড়ছিল। এর মধ্যে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের তাগিদ দিয়ে সেনাপ্রধানের বক্তব্য প্রথমে সোশ্যাল মিডিয়া এবং পরে মূল ধারার মিডিয়াতে আসার পর পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে ওঠে।

এই পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন বলে খবর বের হয়। বিষয়টি প্রথমে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) নাহিদ ইসলামের মাধ্যমে গণমাধ্যমে আসে। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নাহিদ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে দেখা করেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ ও মাহফুজ আলম। প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন—এমন খবর পেয়েই তিনি সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন বলে জানান নাহিদ।

এরপর সরকার ও রাজনৈতিক অঙ্গনে অস্থিরতা আরও বাড়ে। সোশ্যাল মিডিয়াতে একে অপরকে দোষারোপ করে বক্তব্য পোস্ট করা হয়। জামায়াতে ইসলামী সর্বদলীয় বৈঠকের প্রস্তাব করে। চরমোনাই পীরের ডাকে এনসিপিসহ পাঁচটি দল বৈঠক করে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়, তাঁরা প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগ চান না।

সর্বশেষ আজ প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের (একনেক) বৈঠক শেষে পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না। তিনি আমাদের সঙ্গেই থাকছেন।’

এই পরিস্থিতিতে নজর এখন যমুনায় বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার অনুষ্ঠেয় বৈঠকের দিকে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসবে। কী ঘোষণা আসতে পারে তা নিয়ে চলছে জল্পনা। চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রধান দুটি ইস্যু হলো—নির্বাচনের রোডম্যাপ এবং সরকারের তিন উপদেষ্টাকে নিয়ে বিতর্ক। এ ছাড়া সংস্কার, জুলাই সনদ, স্থানীয় নির্বাচন—এই ইস্যুগুলোও আলোচনার টেবিলে রয়েছে।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল রাতে রাজধানীর রমনার একটি বাসায় বিএনপি, জামায়াত এবং এনসিপির নেতাদের উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। আনুষ্ঠানিকভাবে কেউ এই বৈঠকের কথা স্বীকার না করলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ সময়ের রাজনৈতিক মিত্র থাকলেও বর্তমানে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠা বিএনপি ও জামায়াত নির্বাচনের ব্যাপারে একক সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পেরেছে। তারা ডিসেম্বর অথবা বড় জোর আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সরকারকে সময় দিতে রাজি। তবে এনসিপি তাদের অবস্থানের ব্যাপারে এখনো কিছুটা অনমনীয়। তারা নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ ঘোষণা, সংস্কার, স্থানীয় নির্বাচন, গণপরিষদ নির্বাচন চায়। সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশনেরও পুনর্গঠন চেয়েছে এনসিপি।

আজ দুপুরে বাংলামোটরে অস্থায়ী কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম নির্বাচনের বিষয়ে তাঁর দলের অবস্থান স্পষ্ট করেছেন। তিনি জানিয়েছেন, তাঁর দল অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জুলাই সনদ, সংস্কার, বিচার এবং নির্বাচনের রোডম্যাপ একসঙ্গে চায়।

ধারণা করা হচ্ছে, বিএনপি ও জামায়াতের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বৈঠকের পরই নির্বাচনের রোডম্যাপের বিষয়ে চূড়ান্ত ঘোষণা আসবে। এই বিষয়টিতে সব দলই মোটামুটি একমত। শুধু দিন তারিখ সুনির্দিষ্ট করা বাকি। সংসদ নির্বাচনের আগে স্থানীয় সরকার নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তাবে বিএনপি শুরু থেকেই ঘোরতর আপত্তি জানিয়ে আসছে। জামায়াত ও এনসিপি আগে স্থানীয় নির্বাচন আয়োজনের দাবি জানিয়ে আসছে। গতকালের ত্রিদলীয় বৈঠকে এ বিষয়টি নিয়ে কত দূর আলোচনা হয়েছে সেটি স্পষ্ট নয়।

সংস্কারের বিষয়ে বিএনপির অবস্থান আগের মতোই। তাঁদের মতে, নির্বাচনের প্রস্তুতি ও সংস্কার প্রক্রিয়া দুটো সমান্তরালে চলতে পারে। বিএনপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা বহুবার বলেছেন, নির্বাচনের জন্য যতটুকু সংস্কার দরকার সরকার ততটুকুই করুক। বাকিটা নির্বাচিত সরকার করবে। এই বিষয়টিতে বিশেষ করে এনসিপি বরাবর আপত্তি জানিয়ে এসেছে। তারা গণ-অভ্যুত্থানের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়নে সংবিধানসহ রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার অন্তর্বর্তী সরকারের সময়েই করার পক্ষে। জামায়াতের অবস্থানও অনেকটা এনসিপির পক্ষে। ফলে সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য এখনো অনিশ্চিত। এ বিষয়টি যমুনার বৈঠকেই খোলাসা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া বিশেষ করে বিএনপির পক্ষ থেকে সরকারের উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ও আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার বিভিন্ন বক্তব্য নিয়ে নানা সময় আপত্তি জানাতে দেখা গেছে। গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীদের নতুন দল গঠনের পর থেকে এই দুই উপদেষ্টার সরকারে থাকার নৈতিক ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলছে বিএনপি। তাঁরা দায়িত্বে থাকলে সরকারের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলেও মন্তব্য করেছেন একাধিক নেতা। যদিও আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগসহ সরকারের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে বিএনপির প্রভাব বিস্তারের অভিযোগও উঠেছে। এনসিপি তো বটেই, খোদ উল্লেখিত দুই উপদেষ্টার পক্ষ থেকেও এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

আজ সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম বলেছেন, উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও মাহফুজ আলমের সঙ্গে জাতীয় নাগরিক পার্টির কোনো সম্পর্ক নেই। তাঁরা গণ-অভ্যুত্থানের প্রতিনিধি হিসেবেই সরকারে গিয়েছিলেন। তাঁদের এনসিপির সঙ্গে যুক্ত করে হেয় করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এটি খুবই উদ্দেশ্যমূলক।

সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটির মেয়র হিসেবে ইশরাক হোসেনের শপথ গ্রহণকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতি দুই উপদেষ্টা ইস্যুতে বিএনপি ও সরকারকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। সরকারের সূত্রও বলছে, সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা এবং বাইরের কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির মন্তব্যের কারণে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অস্পষ্টতা তৈরি হয়েছে।

এই দুই উপদেষ্টাকে নিয়ে সরকারও এখন বেশ চাপে রয়েছে। আজ যমুনায় দুই দলের সঙ্গে বৈঠকে তাঁদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত আসতে পারে। তাঁদের দায়িত্ব থেকে সরানোও হতে পারে বলে বিভিন্ন সূত্রে ইঙ্গিত মিলছে।

এদিকে অনেকে বলছেন, সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর মতপার্থক্যের সুযোগেই এমন পরিস্থিতি দানা বাঁধছে। বিশেষ করে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাকে কেন্দ্র করে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর টানাপোড়েন ক্রমে জটিল রূপ ধারণ করেছে বলে মনে করেন অনেকে।

বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস ১৯৭৯ ব্যাচের পররাষ্ট্র কর্মকর্তা ড. খলিলুর রহমানকে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেনটেটিভ নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। পরে তাঁকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম এই পদে কাউকে নিয়োগ দেওয়া হয়। অনেকে মনে করেন, জাতীয় নিরাপত্তা ইস্যুতে এমন বেসামরিক পদ এতদিন না থাকায় এখন তা বেসামরিক ও সামরিক এখতিয়ারের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করেছে। অনেক দিন ধরেই বিরোধ চড়ছিল বলে মনে করেন পর্যবেক্ষকেরা। সেই বিরোধে ঘি ঢেলেছে রাখাইনে মানবিক করিডর নিয়ে আলোচনা। একপর্যায়ে বিএনপি ড. খলিলুর রহমানের পদত্যাগের দাবি তুলেছে।

নানামুখী আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ড. খলিলুর রহমানের বিষয়েও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে। তাঁকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

মোটা দাগে বিএনপি সংসদ নির্বাচনের রোডম্যাপ এবং তিন উপদেষ্টাকে সরানো—এই দুই ইস্যুতে অনড় থাকবে বলেই মনে হয়।

এই পরিস্থিতিতে জুলাই সনদ, স্থানীয় নির্বাচন, আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগীদের বিচার, সংস্কার ইত্যাদি বহুল আলোচিত ইস্যুগুলো অগুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়বে কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বাঁকা করব, ঘি আমাদের লাগবেই: তাহের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর পল্টন মোড়ে জমায়েতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর পল্টন মোড়ে জমায়েতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: আজকের পত্রিকা

জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘সোজা আঙুলে যদি ঘি না উঠে, আঙুল বাঁকা করব; ঘি আমাদের লাগবেই। সুতরাং যা বোঝাতে চাই বুঝে নিন। নো হাংকি পাংকি। জাতীয় নির্বাচনের আগে গণভোট লাগবেই। জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোট করতে আইনি কোনো বাধা নেই।’

আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঁচ দফা দাবিতে আট দলের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার আগে রাজধানীর পল্টন মোড়ে এসব কথা বলেন তিনি।

সরকার চালাকি শুরু করেছে মন্তব্য করে আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, ‘আপনাদের চালাকি আমরা বুঝি। আপনাদের চালাকি করলেও আমরাও প্রতিবাদে দাবি আদায়ের পন্থা আবিষ্কার করব। আমরা এখনো নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলনে আছি। দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।’

আরও বলেন, ‘গণভোট দিতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা পরেও গণভোটের সময় থাকবে। একদিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয় তা দিয়ে প্রতিদিন একটা গণভোট দেওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজপথে এসেছি। প্রয়োজনে আবারও রক্ত দেব। জুলাইয়ের অর্জন সনদকে ব্যর্থ হতে দেব না।’

সময়ক্ষেপণ সরকারকে বিপদে ফেলবে বলে মন্তব্য করেন নায়েবে আমির।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে তার ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য বললেই হবে না। বড় দলকে বলব, আপনারা আলোচনার জন্য কমিটি গঠন করুন। দ্রুত বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য আসুন।’

নির্বাচনের আগে গণভোট এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করেন যুগপৎ আন্দোলনের শরিক জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের নেতা-কর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পল্টন থেকে মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত আসেন ৮ দলের নেতা-কর্মীরা। পরে সেখান থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে।

জামায়াত ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা)।

তাদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হচ্ছে— জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর চলতি মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

১১ নভেম্বরের মধ্যেই সিদ্ধান্ত, অন্যথায় ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে—সরকারকে গোলাম পরওয়ার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ২২
রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে বৃহস্পতিবার প্রেস ব্রিফিংয়ে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার। ছবি: আজকের পত্রিকা

নির্বাচনের আগে গণভোট ও জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দাবি নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ১১ নভেম্বর পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে জামায়াতে ইসলামীসহ আন্দোলনরত আটটি দল।

যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর পক্ষে জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার সরকারের উদ্দেশে বলেছেন, ‘আগামী ১১ তারিখ ঢাকায় আমরা মহাসমাবেশ করব। ১১ তারিখ ঢাকায় লক্ষ লক্ষ জনতার উপস্থিতির আগে আমাদের পাঁচ দাবির প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবেন। অন্যথায় সেদিন ঢাকার চিত্র ভিন্ন হবে।’

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ২টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান শেষে রাজধানীর মৎস্য ভবন মোড়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন।

নির্বাচনের আগে গণভোট এবং জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ জারিসহ পাঁচ দফা দাবিতে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে বিক্ষোভ করেন জামায়াতে ইসলামীসহ আট দলের নেতা-কর্মীরা। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পল্টন থেকে মিছিল নিয়ে মৎস্য ভবন মোড় পর্যন্ত আসেন তাঁরা। পরে সেখান থেকে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৯ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল স্মারকলিপি নিয়ে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রবেশ করে।

যমুনায় প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার বিষয়ে গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের মহাপরিচালক স্মারকলিপি গ্রহণের দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু আমাদের দাবি ছিল, মহাপরিচালককে স্মারকলিপি দেব না। আমাদের দাবি ছিল, প্রধান উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দেব। পরে শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশে আমাদের স্মারকলিপি গ্রহণ করেন।’

গোলাম পরওয়ার বলেন, ‘আমরা আট দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ আদিলুর রহমানের সঙ্গে আলোচনা করেছি। স্মারকলিপি পড়ে শুনিয়েছি। শিল্প উপদেষ্টা আমাদের দাবির সঙ্গে দ্বিমত করেননি। তিনি প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের পাঁচ দাবি নিয়ে আলোচনা করবেন বলে জানিয়েছেন।’

গোলাম পরওয়ার আরও বলেন, ‘শিল্প উপদেষ্টা আমাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন রাজনৈতিক দলগুলোর পারস্পরিক আলোচনার কথা।’

এ সময় জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিসসহ আট দলের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ের পর আজকের কর্মসূচির সমাপ্তি ঘোষণা করেন গোলাম পরওয়ার।

জামায়াত ছাড়া যুগপৎ আন্দোলনের শরিক দলগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ, খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন, জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) ও বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টি।

তাদের পাঁচ দফা দাবিগুলো হচ্ছে—জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি ও ওই আদেশের ওপর চলতি মাসের মধ্যেই গণভোট আয়োজন করা; ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উভয় কক্ষে পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতি চালু করা; অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের লক্ষ্যে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার জন্য সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা; ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের জুলুম-নির্যাতন, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা; ‘স্বৈরাচারের দোসর’ জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রয়োজনে নির্বাচন দুই মাস পরে করেন, কিন্তু গণভোট ছাড়া হবে না: গাজী আতাউর রহমান

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
পল্টনে সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
পল্টনে সমাবেশে বক্তব্য রাখছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

শিগগিরই গণভোটের তারিখ ঘোষণা করার দাবি জানিয়েছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব গাজী আতাউর রহমান। তিনি বলেন, ‘দ্রুতই গণভোটের তারিখ ঘোষণা করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট এক সঙ্গে হবে না। দুইটার তফসিলও এক সঙ্গে হবে না। আমরা নভেম্বরে গণভোটের বিষয় বারংবার বলেছি। যদি নভেম্বর গণভোট করতে না পারেন তাহলে যেদিনই দেন গণভোট আগে হতে হবে। প্রয়োজনে জাতীয় নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হবে না, দুই মাস পরে করেন। কিন্তু গণভোট ছাড়া কোনো জাতীয় নির্বাচন হবে না। রাষ্ট্র সংস্কার ছাড়া কোনো নির্বাচন হবে না।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর পল্টনে পাঁচ দাবিতে স্মারকলিপি প্রদানের আগে সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।

গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘বিএনপি সংস্কারকে বারংবার বাধাগ্রস্ত করেছে। তারা রাষ্ট্র সংস্কার চায় না, সুষ্ঠু ধারার রাজনীতি চায় না। তাদের সিনিয়র নেতাদের কথাবার্তায় এটা বারংবার স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু জুলাই অভ্যুত্থানের পরে দেশকে আর কোনো অবস্থায় আগের পরিস্থিতিতে ফিরে যেতে দেওয়া যাবে না। তাই সংস্কার করতেই হবে। সে জন্য অবিলম্বে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ দিতে হবে এবং জুলাই সনদের আইনিভিত্তি নিশ্চিত করতে তফসিলের আগেই গণভোট দিতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আমাদের রাজপথে নামতে হবে, দাবি আদায়ে আন্দোলন করতে হবে তা আমরা ভাবি নাই। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আমাদের বাধ্য করেছে। তাদের তিনটা অঙ্গীকার ছিল। আমরা বলব, সেই অঙ্গীকার বাস্তবায়ন করুন। সংস্কারের জন্য কমিশন হয়েছে, ঐকমত্য কমিশন হয়েছে, জুলাই সনদ হয়েছে, সনদে সাক্ষর হয়েছে। জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশের ব্যাপারে সবাই একমত হয়েছে, সংস্কার বাস্তবায়নে গণভোটের বিষয়েও সকলে একমত হয়েছে; এখন গড়িমসি কীসের? আগামী ১০ তারিখের মধ্যে জুলাই সনদ বাস্তবায়ন আদেশ জারি না হলে আমরা ঢাকায় লোকে লোকারণ্য করে সমাবেশ করব ইনশা আল্লাহ।’

ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নেতা আরও বলেন, ‘যারা বলে সংস্কার চায় না, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বলেন? যারা দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছে, যারা পুরোনো বন্দোবস্ত টিকিয়ে রাখতে চায়, তাদের সঙ্গে সমঝোতা করতে বলেন? এটা তামাশা।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

এক দিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, তা দিয়ে প্রতিদিন একটা গণভোট করা যাবে: তাহের

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৬ নভেম্বর ২০২৫, ১৫: ২১
রাজধানীর পল্টন মোড়ে জমায়েতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: আজকের পত্রিকা
রাজধানীর পল্টন মোড়ে জমায়েতে জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের। ছবি: আজকের পত্রিকা

দেশে এক দিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, তা দিয়ে প্রতিদিন একটা করে গণভোটের আয়োজন করা যাবে বলে মন্তব্য করেছেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের।

আজ বৃহস্পতিবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে পাঁচ দফা দাবিতে আট দলের পক্ষ থেকে স্মারকলিপি দিতে যাওয়ার আগে রাজধানীর পল্টন মোড়ে এসব কথা বলেন তিনি।

আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের আরও বলেন, ‘গণভোট দিতে হবে। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পরও গণভোটের সময় থাকবে। এক দিনে যে পরিমাণ চাঁদাবাজি হয়, তা দিয়ে প্রতিদিন একটা গণভোট দেওয়া যাবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রাজপথে এসেছি। প্রয়োজনে আবারও রক্ত দেব। জুলাইয়ের অর্জন সনদকে ব্যর্থ হতে দেব না।’

সরকার চালাকি শুরু করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আপনারা চালাকি করলেও আমরা আমাদের দাবি আদায় করব, দাবি আদায়ে বাধ্য করা হবে।’

সময়ক্ষেপণ সরকারকে বিপদে ফেলবে বলে মন্তব্য করেন নায়েবে আমির।

তিনি আরও বলেন, ‘সরকারকে তার ভূমিকা পালন করতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনার জন্য বললেই হবে না। বড় দলকে বলব, আপনারা আলোচনার জন্য কমিটি গঠন করুন। দ্রুত বিএনপির পক্ষ থেকে আলোচনার জন্য আসুন।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত