Ajker Patrika

জামায়াতের শীর্ষ ১১ নেতাকে জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে: জামায়াত আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ মে ২০২৫, ১৪: ৫৬
বরগুনা টাউন হলে জেলা জামায়েতে ইসলামী আয়োজিত পথসভায় বক্তব্য দেন শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা
বরগুনা টাউন হলে জেলা জামায়েতে ইসলামী আয়োজিত পথসভায় বক্তব্য দেন শফিকুর রহমান। ছবি: আজকের পত্রিকা

জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাজানো পাতানো আদালত ও মিথ্যা সাক্ষীর মধ্য দিয়ে ‘জুডিশিয়াল কিলিং’ (বিচারিক হত্যা) করা হয়েছে। স্বৈরাচারী আওয়ামী লীগ সরকার নিজেদের ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করতে জামায়াতের এই নেতাদের হত্যা করেছেন।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কাকরাইলে ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আয়োজিত জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান।

তিনি বলেন, আগামী দিনে জামায়াত জনগণের সমর্থনে দেশসেবার দায়িত্ব পেলে প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাবেন।

শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী বিগত স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে ভয়ংকর জুলুমের শিকার হয়। জুলুম করে আমাদের শীর্ষস্থানীয় ১১ জন নেতাকে সাজানো পাতানো আদালত, মিথ্যার সাক্ষীর মাধ্যমে কার্যত জুডিশিয়াল কিলিং করা হয়েছে।

তিনি বলেন, আজকে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ আমাদের রিভিউ আবেদন শুনানির পর রায় আজকে ঘোষণা করেছেন। এই রায়ে আমাদের মজলুম নেতা ও ভাই আজহারুল ইসলামের ওপর আনা সব অভিযোগ থেকে খালাস দেওয়া হয়েছে। আলহামদুলিল্লাহ।

জামায়াত আমির বলেন, জাতির এই সংকট মুহূর্তে আমাদের মাথার তাজ নেতৃবৃন্দ যদি বেঁচে থাকতেন তাঁরা তাঁদের প্রজ্ঞা দূরদর্শিতা অভিজ্ঞতা দিয়ে এই জাতিকে পথ দেখাতে পারতেন। ক্যাঙারু কোর্ট এভাবে এক এক করে যাদের বিদায় দিয়েছে, দুনিয়ার কেউ আর তাঁদের আমাদের কাছে এভাবে ফিরিয়ে দিতে পারবে না। তাঁরা বেঁচে থাকলে এই জাতিকে সততা দক্ষতার সঙ্গে সেবা দিতেন এবং রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আসত।

তিনি অভিযোগ করে বলেন, মামলাগুলো পরিচালনা করতে গিয়ে সীমাহীন জাল জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়া হয়েছে। এসকে সিনহা তাঁর বইয়ে অপরাধ শিকার করে নিয়ে তা লিখেছেন। এসব নেতাদের ঠান্ডা মাথায় কীভাবে খুন করতে হবে তা বিচার বিভাগ ও সরকার ঠিক করেছে। অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার কোনো সুযোগ রাখা হয় নাই।

শফিকুর রহমান বলেন, যাকে খুন করা হয়েছে তিনি তো আল্লাহর দরবারেই চলে গেছেন। কিন্তু তাদের পরিবারের ওপর সীমাহীন অত্যাচার করা হয়েছে। একেকটা পরিবার ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। কোথায় কে গিয়েছে হিসাব পাওয়া কঠিন। আজকে যার রায় হলো তার একটা মেয়ে ছাড়া দেশে কেউ নেই। ছেলেটা ভয়ংকর চাপে পড়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছে।

তিনি বলেন, গোটা বিচার প্রক্রিয়ার সময় দুইটা টর্চার সেল গড়ে তোলা হয়েছিল। সেফ হোম আর সেফ হাউস। সেফহোমে নির্ঘুম রেখে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দিনের পর দিন নির্যাতন করা হতো। সেফহোমে নির্যাতনের পাশাপাশি মিথ্যা সাক্ষী দেওয়ার জন্য সেফ হাউসে রাখা হতো। যাত্রাবাড়ীর একটা ঠিকানায়। এসব কিছু মিডিয়ায় উঠে এসেছে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোও এসবের নিন্দা করেছে, স্বচ্ছ বিচারের দাবি জানিয়েছে। তবে তারা জানত, স্বচ্ছ বিচার হলে খুন করা যাবে না।

মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে ‘এভিডেন্স ল’ একেবারেই অনুসরণ করা হয়নি উল্লেখ করে জামায়াত আমির বলেন, তাণ্ডব চালানো হয়েছে। এই মামলার একটা মামলা ব্রিটেনে পরিচালিত হয়েছে। তাদের রায়ে বলেছে, বিচারের নামে এখানে জেনোসাইড টু দ্য জাস্টিস হয়েছে। আজকে বাংলাদেশের কোর্টও তাদের রায়ের মাধ্যমে বলেছে ‘মিসক্যারিয়েজ অব জাস্টিস’, অন্যায় রায়।

সুপ্রিম কোর্ট এটিএম আজহারকে খালাস দেওয়ার রায় প্রসঙ্গে জামায়াত আমির বলেন, এই রায়ের মধ্য দিয়ে আজকে পরিষ্কার হয়ে গেছে, এটা ছিল ইচ্ছাকৃত গণহত্যা। দায়িত্বশীল নেতা ঘরে ঘরে প্রতিদিন জন্মায় না। এটা আল্লাহর দান। একটা দলকে নেতৃত্বশূন্য করা মানে একটা জাতিকে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দেওয়া।

তিনি বলেন, আমাদের বিপদ ঘাড়ে নিয়েও আমাদের পুরো সময় চেষ্টা করেছি দেশবাসীর বিপদে পাশে থাকার। ফ্যাসিস্ট সরকার বিদায়ের পরেও আমরা চেষ্টা করে সবার পাশে থাকার। কিন্তু আমরা বিশ্বাস করি, আমরা আমাদের পুরো কর্তব্য পালন করতে পারিনি। আমাদের কোনো আচরণে কষ্ট পেয়ে থাকলে আমাদের ক্ষমা করবেন। দল হিসেবেও আমরা ভুলের ঊর্ধ্বে নয়। যারাই আমাদের আচরণে কষ্ট পেয়েছেন, কোনো শর্ত নেই, বিনা শর্তে আমরা ক্ষমাপ্রার্থী। আপনারা আমাদের ক্ষমা করে দেবেন।

জামায়াত আমির আরও বলেন, জাতির অনেকগুলো বার্নিং ইস্যু এখনো সুরাহা হয়নি। জনগণের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে আমরা যেন ভূমিকা রাখতে পারি। মহান আল্লাহর একান্ত ইচ্ছায় প্রিয় দেশবাসীর সমর্থন সহযোগিতায় যদি দেশের সেবা করার দায়িত্ব আমাদের ওপরে আসে তবে আমরা প্রতিশোধের রাজনীতির অবসান ঘটাব, বৈষম্যের রাজনীতির অবসান ঘটাব।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত