Ajker Patrika

উন্নয়নের নামে লুটপাট

সম্পাদকীয়
উন্নয়নের নামে লুটপাট

প্রকল্প মানে উন্নয়ন, নাকি দুর্নীতি-অনিয়ম—এই প্রশ্ন তোলা বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মোটেও অস্বাভাবিক নয়। উন্নয়ন প্রকল্পের নামে লাগামহীন লুটপাট যেন এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাজার কোটি টাকার প্রকল্প থেকে শতকোটি ‘নেই’ হওয়া কোনো ব্যাপারই না! ৯ মে আজকের পত্রিকায় ‘সাসটেইনেবল কোস্টাল অ্যান্ড মেরিন ফিশারিজ প্রকল্প’ নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি তার বড় উদাহরণ। প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য ছিল উপকূলীয় মৎস্যসম্পদ রক্ষা ও চাষিদের উন্নয়ন। কিন্তু বাস্তবে তা রূপ নিয়েছে অনিয়ম আর লুটপাটের এক বিরাট খেলায়।

অডিটে ধরা পড়েছে প্রায় ২৫৮ কোটি টাকার অনিয়ম। কোথাও দরপত্র ছাড়াই কাজ দেওয়া হয়েছে, কোথাও বিল তোলা হয়েছে কাজ শুরুর আগেই। মাঠপর্যায়ের কর্মকাণ্ডের অভাবে প্রকল্পের প্রভাব পড়েনি চাষিদের জীবনে, বরং এর সঙ্গে যুক্ত একটি সিন্ডিকেট দুর্নীতিকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়েছে। নিম্নমানের নির্মাণ, ভুয়া রেণু আমদানি, আগাম চালক নিয়োগ, অপ্রয়োজনীয় গাড়িভাড়া, কোটি টাকার অপ্রাসঙ্গিক যন্ত্রপাতি কেনা—সব মিলিয়ে এটি ক্ষমতাকেন্দ্রিক সুবিধাভোগীদের পকেট ভারী করার প্রকল্পে পরিণত হলেও দোষীদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো পদক্ষেপ দেখা যায় না।

দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাঁদের দায়িত্ব, তাঁদের কাছে তো অনিয়ম ও লুটপাটের খবরই নেই। নির্দিষ্ট এই প্রকল্পে অনিয়মের অভিযোগ বিষয়ে বক্তব্য নিতে প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. জিয়া হায়দার চৌধুরীকে কয়েক দিন একাধিকবার কল ও মেসেজ দিয়েও সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে ভারপ্রাপ্ত পিডি উপপ্রকল্প পরিচালক বরুণ চন্দ্র বিশ্বাস আজকের পত্রিকার প্রতিবেদককে বলেছেন, অভিযোগের বিষয়গুলো সত্য নয়। একটি পক্ষ বিশেষ উদ্দেশ্যে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। আবার মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ নেওয়ার কথা বললেও ব্যস্ততার কারণে এক সপ্তাহেও খোঁজ নিতে পারেননি। মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, এসব বিষয়ে তাঁর কাছে তথ্য নেই। জেনে পরে কথা বলবেন।

মাথার ওপর যাঁরা বসে আছেন, তাঁরা কেন সব বিষয়ে তথ্য জানবেন? জানলেই তো নড়াচড়া করতে হবে। নিজে খেয়ে, দিয়েথুয়ে যাঁরা প্রকল্পের দায় সামলাচ্ছেন, তাঁদের ওপর খবরদারি করা যেন সময়ের অপচয়।

বিশ্বব্যাংক হয়তো এসব অনিয়মের খবরে বিরক্ত হয়, কিন্তু আমাদের দুর্নীতি দমন কমিশনের কোনো হেলদোল লক্ষ করা যায় না। তাদের ভূমিকা সব সময় রহস্যময়। দুদক একটি সক্ষম প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড়ালে দুর্নীতিবাজেরা দেশে বুক ফুলিয়ে দাপিয়ে বেড়াতে পারত না।

উন্নয়ন প্রকল্পের নামে অর্থনৈতিক অপচয়, স্বজনপ্রীতি ও লুটপাট আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রে

গভীরে শিকড় গেড়ে ফেলেছে। প্রকল্প মানে এখন আর জনস্বার্থ নয়, বরং কিছু কর্মকর্তার বাড়তি আয়ের উৎস।

প্রকল্প মূল্যায়ন, বাস্তবায়ন ও পর্যালোচনার যথাযথ পদ্ধতি না থাকলে ভবিষ্যতের উন্নয়ন ভাবনাও ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। এখনই এই প্রবণতা থামানো না গেলে রাষ্ট্রব্যবস্থাই পরিণত হবে এক অন্তঃসারশূন্য খোলসে, যেখানে থাকবে না জনগণের আস্থা, থাকবে শুধু সন্দেহ ও ক্ষোভ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পুরোনো রাউটার ফেলে না দিয়ে যে কাজে ব্যবহার করতে পারেন

পাকিস্তানের সামরিক ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতার সামনে অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে ভারত: ব্রিটিশ বিশ্লেষক

কী লিখেছিলেন মাহফুজ আলম, ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ডিলিট করলেন কেন

প্রশাসনিক আদেশে জামায়াত নিষিদ্ধ ভুল, আ.লীগের কার্যক্রম বন্ধ সঠিক: বিএনপি

প্রথম ভাষণে গাজা প্রসঙ্গে যা বললেন পোপ লিও চতুর্দশ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত