Ajker Patrika

সরকারের দায় বেড়েছে

সম্পাদকীয়
সরকারের দায় বেড়েছে

করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে লকডাউনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত। এর মধ্যে সংক্রমণ এবং মৃত্যুর হার কমে না এলে লকডাউন কি আরও বাড়বে? লকডাউন কঠোর বা ঢিলেঢালা যা-ই হোক না কেন, তাতে প্রতিদিন কাজ করে আয় করেন, এমন মানুষের জীবনে বড় সংকট দেখা দেয়। গত কয়েক দিনেই অনেক মানুষ কাজ হারিয়ে এক অনিশ্চিত অবস্থার মধ্যে পড়েছেন। প্রতিদিনের খাদ্য জোগাড় করাই অনেকের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে। কী হবে তাহলে? প্রশ্ন আছে, জবাব নেই। সরকারের দিকে চেয়ে আছেন অভাবী মানুষেরা। সরকারের সামনে সবার মুখে আহার জোগানোর কঠিন চ্যালেঞ্জ। অনেক কিছু করতে হবে সরকারকে।

সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়ে ভাবতে হবে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম নিয়ে। কারণ, সরাসরি মানুষের জীবন ও জীবিকার সঙ্গে বিষয়টি যুক্ত। সরকার নির্ধারিত স্থানে পণ্য বিক্রির মাধ্যমে দ্রব্যমূল্য সবার হাতের নাগালের মধ্যে রাখার বিষয়টি বিবেচনা করলেও অনেকেই টিসিবির পণ্য সঠিক সময়ে পায় না অথবা পাওয়া সম্ভব হয় না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে দ্রব্যমূল্য খুব ভাবায় সাধারণ মানুষকে। একদিকে লকডাউনের কারণে অনেকের আয়ের রাস্তা পুরোপুরি ও আংশিক বন্ধ; অন্যদিকে ওষুধ, পথ্য ক্রয়, বাড়ি ভাড়া, খাবার জোগাড়ের চিন্তা—সবকিছু মিলিয়ে মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে অনেক পরিবার। অনেকের মধ্যে মানসিক অশান্তিও সৃষ্টি হচ্ছে।

রিকশাচালক, মুটেমজুর, ছোট হকার, ভাসমান মানুষদের জীবিকা নির্বাহ কঠিন হয়ে পড়েছে। কেউ কেউ হয়তো সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন, সরকারও চেষ্টা করছে। কিন্তু যারা কোনোটাই পাচ্ছে না তাদের অবস্থা কী? কোনো পরিসংখ্যান না থাকার কারণে অনেক মানুষের কষ্টগুলো অদেখাই থেকে যাচ্ছে।

সবজি থেকে শুরু করে অনেক নিত্যপণ্যের দাম নাগালের বাইরে সাধারণত দরিদ্র পরিবারগুলোর জন্য। কিছু পণ্যের দাম বাড়ানো হয় মৌসুমী ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। পবিত্র রমজানে দাম বেড়েছে তেল, শসা, বেগুন, মাছ ও মাংসের! এই প্রভাব পড়ছে একটি পরিবারের অন্যান্য ব্যয়ের খাতে।

দ্রব্যমূল্য কমিয়ে আনার জন্য সরকার কিছু ব্যবস্থা হাতে নিতে পারে। বাজার মনিটরিং তো আছেই, সঙ্গে সঙ্গে কোনো বাজারে যে পণ্যের দাম বেশি সে পণ্যটির বর্তমান উৎপাদনব্যবস্থা ও ঘাটতির কারণ দ্রুত বিশ্লেষণ করে ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্যের উৎপাদন বেশি থাকলে, তার দাম বৃদ্ধির কারণ বের করে ব্যবস্থা নিতে হবে। পণ্য পরিবহনে খরচ বেশি হচ্ছে কি না সে বিষয়টিও বিবেচনায় আনতে হবে। পাইকারি দাম, কৃষকের কাছ থেকে কেনা দাম এবং খুচরা মূল্যের মোট পার্থক্য কত তা জেনেও এই অবস্থাটি দূরীকরণে কাজ করা যায়।

দ্রব্যমূল্য কমাতেই হবে। বিশেষ করে সবজি, ডাল, মাছ, তেল ও বিভিন্ন শিশুখাদ্য। সরকারি টিসিবির পণ্য একেবারে গ্রামে গ্রামে পৌঁছে দেওয়ারও ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

অনেক কষ্টই দেখা যায় না। সরকারের চেষ্টাকে যেমন পৌঁছে দিতে হবে মানুষের কাছে তেমনি তদারকি থাকতে হবে—কেউ অন্যায্যভাবে জিনিসপত্রের দাম অযথা বাড়াচ্ছে কি না সেটা দেখতে। সরকারের দেওয়া টাকা কেউ অন্যায়ভাবে ভোগ করছে কি না—সে ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি আশা করছি। দ্রব্যমূল্য না কমাতে পারলে মানসিক সমস্যায় বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়তে পারে পরিবারের আয় করা সক্ষম মানুষগুলোও! করোনার মতো মহামারি জয়ের লড়াইয়ে মানুষের পরাজয় আমরা দেখতে চাই না।

মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার দায় সরকারের। তাই স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে এই খারাপ সময়ে সরকারের কর্মতৎপরতা বাড়াতে হবে। কোনো বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রক্রিয়া জটিল করা চলবে না। দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে তা বাস্তবায়নেও দ্রুততার পরিচয় দিতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত