অশোক সাহা
আমার বাবারা চার ভাই। বাবা, কাকু বাবু জগদীশ সাহা, স্বদেশ সাহা, উষা রঞ্জন সাহা। কেউ এখন পৃথিবীতে নেই।
আমার ছোট কাকু–উষা কাকু নিজের বিবেচনায় অন্যায় মনে করলে মুখের ওপর প্রতিবাদ করতেন। ভয় পেতেন না।
আমরা তখন ছোটই, স্কুলে পড়ি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ চলছিল। পরিস্থিতি ছিল বেশ উত্তেজনাকর।
একদিন বেগমগঞ্জ থানা থেকে কাকুকে দেখা করতে বলা হলো। তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমার বাবা সাথে করে কাকুকে থানায় নিয়ে গেলেন। রাতের বেলা আমরা জানতে পারলাম, কাকুকে থানায় রেখে দিয়েছে। অ্যারেস্ট।
পরে জানতে পারলাম কাকুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।
অপরাধ কী? কাপড় ইস্ত্রি করতে কাকু গেছেন লন্ড্রিতে। ইস্ত্রির দাম বেশি কেন কাকু জানতে চেয়েছিলেন। লন্ড্রিওয়ালার উত্তর, ‘অত কথা বলবেন না, ইন্ডিয়াতে আরও বেশি, ওখানে অভাবে-অনটনে মানুষ ভাত পায় না, ভাতের ফেন (মাড়) খায়।’ কাকু নাকি বলেছিলেন, ‘আপনি জানেন কী করে?’ দু-চার কথা হয়তো তর্কাতর্কি হয়ে থাকতে পারে। থানায় চলে গেল এসব কথা। সাজানো হলো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। পাকিস্তান রাষ্ট্রর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলো। বিশেষত ’৭৫-এর খুনের পর নিজ চোখে সব তো দেখলাম। শুনলাম। কত সভা-সমাবেশ বক্তৃতা ওয়াজ তাফসির হয়েছে এই স্বাধীন বাংলায়।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কত অশ্রাব্য কুৎসা গালাগালি।
আর্কাইভ বের করলে, পুরোনো পত্রিকা বের করলে সব পাওয়া যাবে। কিছুই গোপন নেই। পিঠের চামড়া তোলা থেকে সবকিছু। কতজন ১৮০ ডিগ্রি উল্টে গেছেন।
পাকিস্তানে জিন্নাহ সাহেব সম্পর্কে কোনো নেগেটিভ কথা! ঘাড়ে তার মাথা কয়টা? গ্রেপ্তার করে হান্টার দিয়ে পেটাত। জেল-জরিমানা তো ছিলই।
আর বাংলাদেশে? সব ফ্রি স্টাইল। গণতান্ত্রিক অধিকার। চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীদের কোনো আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা অন্য কেউ আপত্তি জানালে বলা হতো, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি জাদুঘর ও সংগীত বিদ্যালয়, শিল্পকলা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা, জ্বালাও পোড়াও, হামলা, নির্যাতন সবই হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকারের অংশ হিসেবে। ভালোই তো, মন্দ কি!
নানা সংকটে বিধ্বস্ত পাকিস্তানে এখন কেউ পারবে ’৪৭-এর স্বাধীনতা বা জিন্নাহ সাহেব নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা বলতে?
’৪৭-এর পর পাকিস্তানের কমিউনিস্টরা বলেছিল, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’। এর জন্য পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। চরম নির্যাতন, গ্রেপ্তার নেমে এসেছিল। ছাত্র ইউনিয়ন আমাদের শিখিয়েছে ’৭২-এ, ধর্মের ভিত্তিতে স্লোগান দিয়ে হিন্দু-মুসলিম গলা কাটাকাটির ফলে হাজার মাইলের ব্যবধানে সৃষ্ট পাকিস্তান একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র। এটা জাতিরাষ্ট্র নয়। এটা টিকবে না।
’৪৮, ’৫২তেই পাকিস্তানে আওয়াজ উঠেছে, ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’। এই বাঙালিই ’৪৭-এ একে অপরের প্রাণ বধ করেছিল নতুন এক দেশের আশায়, সুখ আহ্লাদের আশায়।
লাখো শহীদের রক্তদানে পাওয়া বাংলাদেশ এটা? চেনা যায় এখন?
আমার বাবারা চার ভাই। বাবা, কাকু বাবু জগদীশ সাহা, স্বদেশ সাহা, উষা রঞ্জন সাহা। কেউ এখন পৃথিবীতে নেই।
আমার ছোট কাকু–উষা কাকু নিজের বিবেচনায় অন্যায় মনে করলে মুখের ওপর প্রতিবাদ করতেন। ভয় পেতেন না।
আমরা তখন ছোটই, স্কুলে পড়ি। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধ চলছিল। পরিস্থিতি ছিল বেশ উত্তেজনাকর।
একদিন বেগমগঞ্জ থানা থেকে কাকুকে দেখা করতে বলা হলো। তাঁর নামে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। আমার বাবা সাথে করে কাকুকে থানায় নিয়ে গেলেন। রাতের বেলা আমরা জানতে পারলাম, কাকুকে থানায় রেখে দিয়েছে। অ্যারেস্ট।
পরে জানতে পারলাম কাকুর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়েছে।
অপরাধ কী? কাপড় ইস্ত্রি করতে কাকু গেছেন লন্ড্রিতে। ইস্ত্রির দাম বেশি কেন কাকু জানতে চেয়েছিলেন। লন্ড্রিওয়ালার উত্তর, ‘অত কথা বলবেন না, ইন্ডিয়াতে আরও বেশি, ওখানে অভাবে-অনটনে মানুষ ভাত পায় না, ভাতের ফেন (মাড়) খায়।’ কাকু নাকি বলেছিলেন, ‘আপনি জানেন কী করে?’ দু-চার কথা হয়তো তর্কাতর্কি হয়ে থাকতে পারে। থানায় চলে গেল এসব কথা। সাজানো হলো রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা। পাকিস্তান রাষ্ট্রর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ।
বাংলাদেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পার হলো। বিশেষত ’৭৫-এর খুনের পর নিজ চোখে সব তো দেখলাম। শুনলাম। কত সভা-সমাবেশ বক্তৃতা ওয়াজ তাফসির হয়েছে এই স্বাধীন বাংলায়।
বাংলাদেশের বিরুদ্ধে, স্বাধীনতার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে, মুক্তিযোদ্ধার বিরুদ্ধে, বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কত অশ্রাব্য কুৎসা গালাগালি।
আর্কাইভ বের করলে, পুরোনো পত্রিকা বের করলে সব পাওয়া যাবে। কিছুই গোপন নেই। পিঠের চামড়া তোলা থেকে সবকিছু। কতজন ১৮০ ডিগ্রি উল্টে গেছেন।
পাকিস্তানে জিন্নাহ সাহেব সম্পর্কে কোনো নেগেটিভ কথা! ঘাড়ে তার মাথা কয়টা? গ্রেপ্তার করে হান্টার দিয়ে পেটাত। জেল-জরিমানা তো ছিলই।
আর বাংলাদেশে? সব ফ্রি স্টাইল। গণতান্ত্রিক অধিকার। চিহ্নিত স্বাধীনতাবিরোধীদের কোনো আয়োজনে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ বা অন্য কেউ আপত্তি জানালে বলা হতো, গণতান্ত্রিক অধিকার খর্ব করা হচ্ছে। কয়েক দিন আগে ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ স্মৃতি জাদুঘর ও সংগীত বিদ্যালয়, শিল্পকলা, বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য ভাঙা, জ্বালাও পোড়াও, হামলা, নির্যাতন সবই হয়েছে গণতান্ত্রিক অধিকারের অংশ হিসেবে। ভালোই তো, মন্দ কি!
নানা সংকটে বিধ্বস্ত পাকিস্তানে এখন কেউ পারবে ’৪৭-এর স্বাধীনতা বা জিন্নাহ সাহেব নিয়ে কোনো নেতিবাচক কথা বলতে?
’৪৭-এর পর পাকিস্তানের কমিউনিস্টরা বলেছিল, ‘ইয়ে আজাদি ঝুটা হ্যায়’। এর জন্য পার্টিকে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। চরম নির্যাতন, গ্রেপ্তার নেমে এসেছিল। ছাত্র ইউনিয়ন আমাদের শিখিয়েছে ’৭২-এ, ধর্মের ভিত্তিতে স্লোগান দিয়ে হিন্দু-মুসলিম গলা কাটাকাটির ফলে হাজার মাইলের ব্যবধানে সৃষ্ট পাকিস্তান একটি কৃত্রিম রাষ্ট্র। এটা জাতিরাষ্ট্র নয়। এটা টিকবে না।
’৪৮, ’৫২তেই পাকিস্তানে আওয়াজ উঠেছে, ‘জাগো জাগো বাঙালি জাগো’। এই বাঙালিই ’৪৭-এ একে অপরের প্রাণ বধ করেছিল নতুন এক দেশের আশায়, সুখ আহ্লাদের আশায়।
লাখো শহীদের রক্তদানে পাওয়া বাংলাদেশ এটা? চেনা যায় এখন?
মব ভায়োলেন্স তথা উচ্ছৃঙ্খল জনতার সংঘবদ্ধ সহিংসতাই যেন কথিত নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের পথ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। মব সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা না করে উল্টো এর সাফাই গাওয়ায় এমন ধারণার উদ্রেক হওয়াটা কি খুব অস্বাভাবিক? মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের...
১৩ ঘণ্টা আগেউত্তেজনা একটি রোগ। এটি সংক্রামকও বটে। হঠাৎ করে আমাদের দেশ ও সমাজে উত্তেজনা এত বেড়েছে যে শান্তিতে থাকা যাচ্ছে না। আমরা বাস করি দেশের বাইরে অথচ এই দূরদেশেও সে উত্তেজনার আঁচ দেখতে পাচ্ছি। যত দিন যাচ্ছে, নিজেদের ভেতর অশান্তি আর গন্ডগোল যেন বেড়েই চলেছে। এর নিরসন কোথায় বা কীভাবে তা সম্ভব...
১৩ ঘণ্টা আগেবর্তমান সময়ে ঢাকা মহানগরীসহ যেকোনো শহর এলাকায় ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার সংখ্যা যেভাবে জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, তাতে সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব পায়ে চালিত রিকশাকে জাদুঘরে দেখতে যাওয়ার সময় চলে এসেছে। বিষয়টি নিয়ে তর্ক বা বিতর্কে যাওয়া যেতেই পারে, তবে আমার লেখার উদ্দেশ্য এর কোনোটিই...
১৩ ঘণ্টা আগেশুনলে মনে হয় রসিকতা। কিন্তু বাস্তবটা এতটাই তিক্ত যে চোখ কপালে ওঠে। গাজীপুরের শ্রীপুরে এক্স সিরামিকস লিমিটেড নামের একটি কারখানা, যাদের বিরুদ্ধে নদী দখল ও দূষণের একাধিক অভিযোগ প্রমাণসহ রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের নথিতে, তারা কিনা পেয়েছে ‘গ্রিন ফ্যাক্টরি অ্যাওয়ার্ড’। হ্যাঁ, ঠিকই পড়ছেন...
১৩ ঘণ্টা আগে