সাজিদ মোহন
যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন দিয়ে অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধার ললাটে জুটেছে ট্র্যাজিক চরিত্রের তকমা। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁদের এই বিশেষ ট্র্যাজিক পরিণতির কারণে ইতিহাসের পাতায় ও মানুষের মনে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছেন তাঁরা। আবার অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ না হয়েও যাপিত জীবনের মধ্যেই ধারণ করে গেছেন ট্র্যাজিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কবি বেলাল মোহাম্মদ তাঁদেরই একজন।
২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পাঠানো স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারের অনুষ্ঠানটি তখনকার সময়ের জন্য সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হলেও, এটি বেতারকর্মীদের উদ্যোগে সংগঠিত কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। বেলাল মোহাম্মদই মূলত প্রথম বেতারের একজন সাধারণ কর্মচারী (তৎকালীন সময়ে স্ক্রিপ্ট রাইটার, পরে উচ্চপদে গেছেন) হয়েও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধের দায়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ১০ জন সহযোগীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র। ছিলেন ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ২ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত আদ্যোপান্ত।
তাঁর এই স্বপ্নের দেশ তিনি না-ও দেখে যেতে পারতেন। অন্যান্য শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার মতো তিনি ইতিহাসের ট্র্যাজিক চরিত্র। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের কর্মীদের ওপর সবচেয়ে বড় বিপদটি আসে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ দুপুরে। হন্যে হয়ে খোঁজার তিন দিন পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গুপ্ত বেতারকেন্দ্রের অবস্থান চিহ্নিত করার পর শুরু হয় বোমাবর্ষণ। এ হামলাটি ছিল বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি সামরিক দস্যুদের প্রথম বিমান হামলা।
বিমান হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারও প্রাণ হারানোর শঙ্কায় পড়েছিলেন। বেলাল মোহাম্মদ ‘স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’ বইয়ে লিখেছেন: ‘গ্রাম চান্দগাঁওয়ের ধানজমির আলপথ বেয়ে নিরুদ্দিষ্ট ছুটে চলা। সহসা কানে এলো—ঐ রে, একটা বিহারি পালাচ্ছে। ধর ধর। ভীত চকিত দাঁড়িয়ে গেলাম। কাছে ছুটে এলো তিন-চারজন যুবক। অচেনা যুবকেরা ভেবেছে বিহারি বলে।’
দেখেছিলেন মৃত্যু কীভাবে নিজের সঙ্গীকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যায়। বারবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরার কারণে অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধার মতো ট্র্যাজিক পরিণতি হয়নি বেলাল মোহাম্মদের। তবে ব্যক্তিজীবন, ইতিহাসের মূল্যায়ন-অবমূল্যায়ন, স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির মানদণ্ড পর্যালোচনা করলে সত্যিই তিনি ইতিহাসের ভিন্নধর্মী এক ট্র্যাজিক চরিত্র। ১৯৭৫ সালে স্ত্রীবিয়োগ হয়। ১৯৯৮ সালে তরুণ বয়সে মৃত্যু হয় একমাত্র সন্তানের। একাকী নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন বেলাল মোহাম্মদ।
ব্যক্তিগত জীবনের পাওয়া না-পাওয়া বাদ দিলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান ও ইতিহাসের রাজসাক্ষী হওয়ার কারণে বারবার চাকরিক্ষেত্রসহ বিভিন্ন জায়গায় পদে পদে অবমূল্যায়িত হতে হয়েছিল তাঁকে। একমাত্র আদ্যোপান্ত প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণদাতা শব্দসৈনিক বিধায়, ১৯৭২ সালে প্রকাশিত বহুসংখ্যক স্মৃতিচারণা নিবন্ধে, সাক্ষাৎকার ও গ্রন্থাদিতে জাতির জনকের স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রচার-সম্পর্কিত তথ্য যেভাবে এসেছে, তা বিএনপি সরকারের দাবির পরিপন্থী। তদানীন্তন মেজর জিয়াউর রহমানকে ২৭ মার্চ ১৯৭১-এ কালুরঘাটে তিনিই ডেকে এনেছিলেন পটিয়া থেকে। কথায় কথায় তাঁকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বকণ্ঠে ঘোষণা প্রচারের পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং খসড়া তৈরিতেও সহযোগিতা করেছিলেন। তাহলে বর্তমান সরকারের (আওয়ামী লীগ) চোখে চলমান ঘোষক বিতর্কের জন্য কি তিনিই দায়ী? বেলাল মোহাম্মদ তাঁর জীবনীগ্রন্থে তুলেছেন এ প্রশ্ন।
বেলাল মোহাম্মদকে তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া তো দূরের কথা; বরং তাঁর জীবদ্দশাতেই শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর অবদানকে খাটো করে, সত্য ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা। ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা বর্তমানেও বলবৎ আছে। তাঁর মৃত্যুর পর নির্বিবাদে বরং তা আরও বেপরোয়া হয়েছে।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই না-ফেরার দেশে চলে গেছেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল মোহাম্মদ। তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: শিশুসাহিত্যিক
যুদ্ধক্ষেত্রে জীবন দিয়ে অগণিত বীর মুক্তিযোদ্ধার ললাটে জুটেছে ট্র্যাজিক চরিত্রের তকমা। মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তাঁদের এই বিশেষ ট্র্যাজিক পরিণতির কারণে ইতিহাসের পাতায় ও মানুষের মনে আলাদা একটা জায়গা করে নিয়েছেন তাঁরা। আবার অসংখ্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আছেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদ না হয়েও যাপিত জীবনের মধ্যেই ধারণ করে গেছেন ট্র্যাজিক চরিত্রের বৈশিষ্ট্য। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা, শব্দসৈনিক, বীর মুক্তিযোদ্ধা, কবি বেলাল মোহাম্মদ তাঁদেরই একজন।
২৫ মার্চ রাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান গ্রেপ্তার হওয়ার আগে পাঠানো স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে প্রচারের অনুষ্ঠানটি তখনকার সময়ের জন্য সাহসী ও দূরদর্শী সিদ্ধান্ত হলেও, এটি বেতারকর্মীদের উদ্যোগে সংগঠিত কোনো অনুষ্ঠান ছিল না। বেলাল মোহাম্মদই মূলত প্রথম বেতারের একজন সাধারণ কর্মচারী (তৎকালীন সময়ে স্ক্রিপ্ট রাইটার, পরে উচ্চপদে গেছেন) হয়েও ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ দেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও কর্তব্যবোধের দায়ে চট্টগ্রামের কালুরঘাটে ১০ জন সহযোগীকে নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র। ছিলেন ২৬ মার্চ ১৯৭১ থেকে ২ জানুয়ারি ১৯৭২ পর্যন্ত আদ্যোপান্ত।
তাঁর এই স্বপ্নের দেশ তিনি না-ও দেখে যেতে পারতেন। অন্যান্য শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধার মতো তিনি ইতিহাসের ট্র্যাজিক চরিত্র। স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের কর্মীদের ওপর সবচেয়ে বড় বিপদটি আসে ১৯৭১ সালের ৩০ মার্চ দুপুরে। হন্যে হয়ে খোঁজার তিন দিন পর পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গুপ্ত বেতারকেন্দ্রের অবস্থান চিহ্নিত করার পর শুরু হয় বোমাবর্ষণ। এ হামলাটি ছিল বাংলাদেশে দখলদার পাকিস্তানি সামরিক দস্যুদের প্রথম বিমান হামলা।
বিমান হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে কিছুক্ষণের মধ্যেই আবারও প্রাণ হারানোর শঙ্কায় পড়েছিলেন। বেলাল মোহাম্মদ ‘স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র’ বইয়ে লিখেছেন: ‘গ্রাম চান্দগাঁওয়ের ধানজমির আলপথ বেয়ে নিরুদ্দিষ্ট ছুটে চলা। সহসা কানে এলো—ঐ রে, একটা বিহারি পালাচ্ছে। ধর ধর। ভীত চকিত দাঁড়িয়ে গেলাম। কাছে ছুটে এলো তিন-চারজন যুবক। অচেনা যুবকেরা ভেবেছে বিহারি বলে।’
দেখেছিলেন মৃত্যু কীভাবে নিজের সঙ্গীকে বিচ্ছিন্ন করে নিয়ে যায়। বারবার মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে ফেরার কারণে অন্যান্য বীর মুক্তিযোদ্ধার মতো ট্র্যাজিক পরিণতি হয়নি বেলাল মোহাম্মদের। তবে ব্যক্তিজীবন, ইতিহাসের মূল্যায়ন-অবমূল্যায়ন, স্বীকৃতি-অস্বীকৃতির মানদণ্ড পর্যালোচনা করলে সত্যিই তিনি ইতিহাসের ভিন্নধর্মী এক ট্র্যাজিক চরিত্র। ১৯৭৫ সালে স্ত্রীবিয়োগ হয়। ১৯৯৮ সালে তরুণ বয়সে মৃত্যু হয় একমাত্র সন্তানের। একাকী নিঃসঙ্গ হয়ে পড়েন বেলাল মোহাম্মদ।
ব্যক্তিগত জীবনের পাওয়া না-পাওয়া বাদ দিলেও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে অবস্থান ও ইতিহাসের রাজসাক্ষী হওয়ার কারণে বারবার চাকরিক্ষেত্রসহ বিভিন্ন জায়গায় পদে পদে অবমূল্যায়িত হতে হয়েছিল তাঁকে। একমাত্র আদ্যোপান্ত প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণদাতা শব্দসৈনিক বিধায়, ১৯৭২ সালে প্রকাশিত বহুসংখ্যক স্মৃতিচারণা নিবন্ধে, সাক্ষাৎকার ও গ্রন্থাদিতে জাতির জনকের স্বাধীনতার ঘোষণা বেতারে প্রচার-সম্পর্কিত তথ্য যেভাবে এসেছে, তা বিএনপি সরকারের দাবির পরিপন্থী। তদানীন্তন মেজর জিয়াউর রহমানকে ২৭ মার্চ ১৯৭১-এ কালুরঘাটে তিনিই ডেকে এনেছিলেন পটিয়া থেকে। কথায় কথায় তাঁকে বঙ্গবন্ধুর পক্ষে স্বকণ্ঠে ঘোষণা প্রচারের পরামর্শ দিয়েছিলেন এবং খসড়া তৈরিতেও সহযোগিতা করেছিলেন। তাহলে বর্তমান সরকারের (আওয়ামী লীগ) চোখে চলমান ঘোষক বিতর্কের জন্য কি তিনিই দায়ী? বেলাল মোহাম্মদ তাঁর জীবনীগ্রন্থে তুলেছেন এ প্রশ্ন।
বেলাল মোহাম্মদকে তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতি দেওয়া তো দূরের কথা; বরং তাঁর জীবদ্দশাতেই শুরু হয়েছিল স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে তাঁর অবদানকে খাটো করে, সত্য ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা। ইতিহাস বিকৃতির অপচেষ্টা বর্তমানেও বলবৎ আছে। তাঁর মৃত্যুর পর নির্বিবাদে বরং তা আরও বেপরোয়া হয়েছে।
জীবনের শেষ প্রান্তে এসে ২০১০ সালে স্বাধীনতা পুরস্কার ও ২০১১ সালে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সাহিত্যের জন্য বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ২০১৩ সালের ৩০ জুলাই না-ফেরার দেশে চলে গেছেন স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা বেলাল মোহাম্মদ। তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধা।
লেখক: শিশুসাহিত্যিক
আজকের পত্রিকায় ১৩ আগস্ট একটি সংবাদ পড়ে এবং এ বিষয়ে টিভি চ্যানেলের সংবাদ দেখে মর্মাহত হয়েছিলাম। এভাবে কেউ কোনো দেশের একটি প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশ ঘটাতে পারে? আজকের পত্রিকায় ‘সাদাপাথরের সৌন্দর্য হারানোর কান্না’ শিরোনামের সে প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, গত বছরের ৫ আগস্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকেই শুরু হয় পাথর
৯ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশের পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সংখ্যা এখন শতাধিক। প্রতিবছর এখানে হাজারো গবেষণা হয়, যার বড় অংশের উদ্দেশ্য জাতীয় ও আন্তর্জাতিক জার্নালে প্রকাশ। নিঃসন্দেহে বৈজ্ঞানিক প্রকাশনা একটি বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষকের মর্যাদা এবং বৈশ্বিক পরিচিতি বৃদ্ধির অন্যতম মাধ্যম।
৯ ঘণ্টা আগেখবরটি খুবই লজ্জার। বাংলাদেশ বিমানের একজন কেবিন ক্রু সোনা পাচারের দায়ে গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৪ আগস্ট বিকেলে সৌদি আরবের রিয়াদ থেকে বিজি-৩৪০ ফ্লাইটে ঢাকায় অবতরণ করার পর গ্রিন চ্যানেল অতিক্রমের সময় এই কেবিন ক্রুর গতিবিধিতে সন্দেহ জাগে কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। স্ক্যানিং মেশিনের নিচে তিনি পা দিয়ে কিছু লুকানোর
৯ ঘণ্টা আগেসম্প্রতি ঢাকায় বিদেশি বিনিয়োগকারীদের সম্মেলনে জাপানি বিনিয়োগ পরামর্শক তাকাও হিরোসে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও রাজনীতির জন্য অশনিসংকেত দিয়েছেন। তাঁর স্পষ্ট ভাষ্য, তাঁরা দ্রুত মুনাফার খোঁজে থাকা আগ্রাসী বিনিয়োগকারী, খামখেয়ালিও।
২০ ঘণ্টা আগে