অজয় দাশগুপ্ত
‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে আরও একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে, যার চেয়ারম্যান হয়েছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। মহাসচিব হিসেবে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, যিনি দুই বছর আগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। গত ২৫ এপ্রিল ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নতুন দলের ঘোষণা দেন শওকত মাহমুদ।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিটি গণ-অভ্যুত্থান, বিপ্লব ও আন্দোলনের পর ওইসব সংগ্রামী চেতনায় নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের অভ্যুদয় ঘটে। যেহেতু রাষ্ট্র সাজবে একাত্তর ও চব্বিশের গণজাগরণের চেতনায়, সেই আঙ্গিকে নতুন দলের আবির্ভাব অনিবার্য। জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতীয় প্রত্যাশায় সব প্রকার বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে-জনকল্যাণ, ইনসাফ ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং গর্বিত জাতীয়তাবোধ দৃঢ়করণ করতে আমরা আজ নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করছি।’
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। আমরা যখন তারুণ্যের দোরগোড়ায়, তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর পরপর বেশ হাঁকডাক করে মাঠে নেমেছিল ফ্রিডম পার্টি। রশীদ ও ফারুকের ফ্রিডম পার্টি ভোটেও অংশ নিয়েছিল। তাঁদের মার্কা ছিল সম্ভবত কুড়াল। ত্রাস সৃষ্টিকারী সেই পার্টি আজ অতীতের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। টেকেনি মোশতাকের দল। অলি আহাদের দল, মিজানুর রহমান চৌধুরীর দল, এরশাদের করুণায় গড়ে ওঠা আ স ম আবদুর রবের দল—কিছুই আজ আর নেই। শুধু নেই বললে হবে না, সগৌরবে লুপ্ত হয়ে গেছে সেসব দল।
খুব বেশি দিনের আগের কথা নয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমি গিয়েছিলাম ঢাকার একুশের বইমেলায়। তখন মেলা জমত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। হঠাৎ বাঁশির শব্দ আর মোটরসাইকেলের ধুলায় আচ্ছাদিত মাঠে দেখলাম দলে দলে যুবকেরা ঢুকছে। শোডাউন করতে এসেছিল তারা। মাথায় পট্টি বাঁধা এসব যুবক নব্য গঠিত কিংস পার্টির নেতা-কর্মী। একসময়ের ছাত্রনেতা ফেরদৌস আহমদ কোরেশী গঠন করেছিলেন বিরোধী দল। সে দল মাথা তুলে দাঁড়ানোর আগেই অক্কা পেয়েছিল। অথচ ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের বিরুদ্ধে চুরি, দুর্নীতি, বাটপারি, অশান্তি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তেমন ছিল না। কিন্তু তাতে কী?
বাংলাদেশের মানুষ নতুন রাজনৈতিক দল চায়নি। কেন চায়নি, তার উত্তর আমাদের অজানা নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত আওয়ামী লীগ আর বিএনপিতে বিভক্ত। অবশ্যই এর বাইরে জামায়াতে ইসলামী, বাম দলসহ আরও কিছু পার্টি আছে। এদের ঘিরেই আবর্তিত হয় দেশের রাজনীতি। মনে রাখতে হবে, ইতিহাসের একেক সময় একেক ধরনের বাস্তবতা তৈরি হয়। এখন যে বাস্তবতা, তার পেছনে আছে নতুন ইতিহাস। বিগত সরকারের আমলকে আমি বলি ‘অচলায়তন অবস্থা’। টানা ১৬ বছর জনগণের ম্যান্ডেট আর ভোটবিহীন দল দেশ শাসন করতে করতে তারা ধরে নিয়েছিল এটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মতো। দেশ তাদের একার। কথা বলতে পারেনি মানুষ। পারেনি রাজনীতি করতে। করতে পারলে বা করতে দিলে কাউকে দেশ ছেড়ে পালাতে হতো না। সে যা-ই হোক, সে সময়কালে রাজনীতি ও দলের বারোটা বাজানো হয়েছিল। একমুখী দল আর ক্লাউন নেতাদের সার্কাসের সং মনে করা জনগণ ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিল। কিন্তু বিগত সরকার জনগণের মনের অবস্থা কোনোভাবেই বুঝতে পারেনি। যে কারণে আজ দেশের সবচেয়ে পুরোনো দলটি কিছু মানুষের মনে থাকলেও, বাস্তবে অস্তিত্বহীন।
প্রকৃতি কোনো কিছু অপূর্ণ রাখে না। শূন্য রাখা প্রকৃতির স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। ফলে নতুন দল গড়ে উঠবে এবং পুরোনো দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের ভয় এসব দল কি সেইসব দলের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার জন্য গঠন হচ্ছে? উত্তরটা দেওয়ার মতো সময় এখনো আসেনি। তবে অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। রাজনীতি করতে হলে, নেতা হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হয়। জনগণের পালস বা নাড়ি বুঝতে হয়। বিশেষত, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কী চায়, কেন চায়, সেটা জানতে হয়। যে দলগুলো বিলাসবহুল হোটেলে জাঁকজমকের সঙ্গে আত্মপ্রকাশ করছে, তারা কি সে হোমওয়ার্ক করে মাঠে নেমেছে? আমরা যদি উপমহাদেশের রাজনীতির দিকে তাকাই দেখব, স্বয়ং গান্ধী, জিন্নাহ বা সুভাষ বোসও মাঠে নামার আগে দেশ চষে বেড়াতেন। আম জনতার সঙ্গে মিশে তারপর নিজের মত দিতেন। দলকে সেভাবে সাজাতেন।
গণতন্ত্রের বড় সুবিধা হচ্ছে, বহু মত আর পথের মিলন। আবার গণতন্ত্রের সমস্যা হচ্ছে, বহুত্ববাদকে নিজের মতো করে ভাবা। আমার ধারণা, এখন যে দলগুলো তৈরি হচ্ছে বা নিজেদের নাম নিয়ে মাঠে আসছে তারা বহুত্ববাদের আড়ালে নিজেদের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে চাইছে। সেটা দোষের কিছু না। কিন্তু তাদের জনসম্পৃক্ততা কোথায়? আবারও বলছি ভোট দিতে না পারা এবং বঞ্চনা থেকেই মানুষ জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিল। প্রাণ দিয়েছিল। তাদের সে চাওয়ার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য যে বিশাল কর্মপ্রবাহ করার জন্য শহর-গ্রামে চষে বেড়ানোর দরকার ছিল, সেটা না করে ঘরপোড়া আগুনে আলু পোড়া খেতে চাইছেন কেউ কেউ।
গণতন্ত্র বলতে যদি আমরা জনগণের শাসন বুঝি তাহলেও সাবধানতার দরকার আছে। কারণ, গণতন্ত্র বহু দেশে বহু সমাজে হিংসা, হানাহানি বন্ধ করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক ভারত বা আমেরিকাতে এমন হানাহানি রোজ ঘটে। এত বছর পরও তারা কেন তা দমন করতে পারল না?
একটা গল্প বলি: একবার এক রাজা রাজ্যজুড়ে ঘোষণা দিলেন ‘সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়ে প্রথম যেই বিশাল পাহাড় আছে, তার গুহায় থাকে এক দৈত্য, যার মুখ থেকে আগুনের গোলা বের হয়; এর মাথা থেকে মুকুটটা নিয়ে এসে আমার মেয়েকে যে দিতে পারবে আমি তার সঙ্গেই আমার মেয়ের বিয়ে দেব।’ তিনি আরও বললেন, ‘দৈত্যটা ছয় মাস ঘুমায়, ছয় মাস জেগে থাকে।’ এ ঘোষণা শুনে রাজ্যের বুড়ো-জোয়ান অনেকেই রাজসুখের আশায় সেই মুকুট উদ্ধারে রওনা দিল, কেউ আর ফিরে এল না। এক রাজকুমার আবার সেই রাজকন্যাকে পছন্দ করত, সে ভাবল, আমি তো রাজকুমার, আমি পারবই। এই বলে সেও রওনা দিল। গুহা পর্যন্ত পৌঁছে দেখে দৈত্যটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সে তো হাসিমুখে তাজটা নিয়ে উল্টো দিকে ফিরে হাঁটা শুরু করল। সব ঠিকই ছিল, শুধু সেই রাজা কিন্তু একটা জিনিস বলেনি। সেটা হলো, ‘দৈত্যটা দুমুখো, এক মুখ সামনে আরেক মুখ পেছনে। যখন এক মুখ ঘুমায় তখন আরেক মুখ জেগে থাকে।’ সেই দ্বিতীয় মুখের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল সেই রাজকুমার আর বাকিদের মতো!
ফলে সাধু সাবধান। গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল জরুরি। তবে দুমুখো দৈত্য থেকে সাবধান থাকাটা আরও বেশি জরুরি।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
‘জনতা পার্টি বাংলাদেশ’ নামে আরও একটি রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হয়েছে, যার চেয়ারম্যান হয়েছেন ‘নিরাপদ সড়ক চাই’ আন্দোলনের প্রধান চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন। মহাসচিব হিসেবে তাঁর সঙ্গী হয়েছেন সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, যিনি দুই বছর আগে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত হয়েছেন। গত ২৫ এপ্রিল ঢাকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে নতুন দলের ঘোষণা দেন শওকত মাহমুদ।
আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে শওকত মাহমুদ বলেন, ‘বাংলাদেশের ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, প্রতিটি গণ-অভ্যুত্থান, বিপ্লব ও আন্দোলনের পর ওইসব সংগ্রামী চেতনায় নতুন নতুন রাজনৈতিক দলের অভ্যুদয় ঘটে। যেহেতু রাষ্ট্র সাজবে একাত্তর ও চব্বিশের গণজাগরণের চেতনায়, সেই আঙ্গিকে নতুন দলের আবির্ভাব অনিবার্য। জাতির এই মাহেন্দ্রক্ষণে জাতীয় প্রত্যাশায় সব প্রকার বৈষম্য, ফ্যাসিবাদ, আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকে এগিয়ে নিতে-জনকল্যাণ, ইনসাফ ও সার্বভৌমত্ব নিশ্চিত করতে এবং গর্বিত জাতীয়তাবোধ দৃঢ়করণ করতে আমরা আজ নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করছি।’
নতুন রাজনৈতিক দল গঠন বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। আমরা যখন তারুণ্যের দোরগোড়ায়, তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন। তাঁর মৃত্যুর পরপর বেশ হাঁকডাক করে মাঠে নেমেছিল ফ্রিডম পার্টি। রশীদ ও ফারুকের ফ্রিডম পার্টি ভোটেও অংশ নিয়েছিল। তাঁদের মার্কা ছিল সম্ভবত কুড়াল। ত্রাস সৃষ্টিকারী সেই পার্টি আজ অতীতের গহ্বরে হারিয়ে গেছে। টেকেনি মোশতাকের দল। অলি আহাদের দল, মিজানুর রহমান চৌধুরীর দল, এরশাদের করুণায় গড়ে ওঠা আ স ম আবদুর রবের দল—কিছুই আজ আর নেই। শুধু নেই বললে হবে না, সগৌরবে লুপ্ত হয়ে গেছে সেসব দল।
খুব বেশি দিনের আগের কথা নয়। ওয়ান-ইলেভেনের সময় আমি গিয়েছিলাম ঢাকার একুশের বইমেলায়। তখন মেলা জমত বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে। হঠাৎ বাঁশির শব্দ আর মোটরসাইকেলের ধুলায় আচ্ছাদিত মাঠে দেখলাম দলে দলে যুবকেরা ঢুকছে। শোডাউন করতে এসেছিল তারা। মাথায় পট্টি বাঁধা এসব যুবক নব্য গঠিত কিংস পার্টির নেতা-কর্মী। একসময়ের ছাত্রনেতা ফেরদৌস আহমদ কোরেশী গঠন করেছিলেন বিরোধী দল। সে দল মাথা তুলে দাঁড়ানোর আগেই অক্কা পেয়েছিল। অথচ ওয়ান-ইলেভেনের সরকারের বিরুদ্ধে চুরি, দুর্নীতি, বাটপারি, অশান্তি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তেমন ছিল না। কিন্তু তাতে কী?
বাংলাদেশের মানুষ নতুন রাজনৈতিক দল চায়নি। কেন চায়নি, তার উত্তর আমাদের অজানা নয়। বাংলাদেশের রাজনীতি মূলত আওয়ামী লীগ আর বিএনপিতে বিভক্ত। অবশ্যই এর বাইরে জামায়াতে ইসলামী, বাম দলসহ আরও কিছু পার্টি আছে। এদের ঘিরেই আবর্তিত হয় দেশের রাজনীতি। মনে রাখতে হবে, ইতিহাসের একেক সময় একেক ধরনের বাস্তবতা তৈরি হয়। এখন যে বাস্তবতা, তার পেছনে আছে নতুন ইতিহাস। বিগত সরকারের আমলকে আমি বলি ‘অচলায়তন অবস্থা’। টানা ১৬ বছর জনগণের ম্যান্ডেট আর ভোটবিহীন দল দেশ শাসন করতে করতে তারা ধরে নিয়েছিল এটা তাদের পৈতৃক সম্পত্তির উত্তরাধিকারের মতো। দেশ তাদের একার। কথা বলতে পারেনি মানুষ। পারেনি রাজনীতি করতে। করতে পারলে বা করতে দিলে কাউকে দেশ ছেড়ে পালাতে হতো না। সে যা-ই হোক, সে সময়কালে রাজনীতি ও দলের বারোটা বাজানো হয়েছিল। একমুখী দল আর ক্লাউন নেতাদের সার্কাসের সং মনে করা জনগণ ভেতরে ভেতরে ফুঁসছিল। কিন্তু বিগত সরকার জনগণের মনের অবস্থা কোনোভাবেই বুঝতে পারেনি। যে কারণে আজ দেশের সবচেয়ে পুরোনো দলটি কিছু মানুষের মনে থাকলেও, বাস্তবে অস্তিত্বহীন।
প্রকৃতি কোনো কিছু অপূর্ণ রাখে না। শূন্য রাখা প্রকৃতির স্বভাববিরুদ্ধ কাজ। ফলে নতুন দল গড়ে উঠবে এবং পুরোনো দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে—এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু আমাদের ভয় এসব দল কি সেইসব দলের মতো হাওয়ায় মিলিয়ে যাওয়ার জন্য গঠন হচ্ছে? উত্তরটা দেওয়ার মতো সময় এখনো আসেনি। তবে অনুমান করা কঠিন কিছু নয়। রাজনীতি করতে হলে, নেতা হতে হলে জনগণের কাছে যেতে হয়। জনগণের পালস বা নাড়ি বুঝতে হয়। বিশেষত, আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ কী চায়, কেন চায়, সেটা জানতে হয়। যে দলগুলো বিলাসবহুল হোটেলে জাঁকজমকের সঙ্গে আত্মপ্রকাশ করছে, তারা কি সে হোমওয়ার্ক করে মাঠে নেমেছে? আমরা যদি উপমহাদেশের রাজনীতির দিকে তাকাই দেখব, স্বয়ং গান্ধী, জিন্নাহ বা সুভাষ বোসও মাঠে নামার আগে দেশ চষে বেড়াতেন। আম জনতার সঙ্গে মিশে তারপর নিজের মত দিতেন। দলকে সেভাবে সাজাতেন।
গণতন্ত্রের বড় সুবিধা হচ্ছে, বহু মত আর পথের মিলন। আবার গণতন্ত্রের সমস্যা হচ্ছে, বহুত্ববাদকে নিজের মতো করে ভাবা। আমার ধারণা, এখন যে দলগুলো তৈরি হচ্ছে বা নিজেদের নাম নিয়ে মাঠে আসছে তারা বহুত্ববাদের আড়ালে নিজেদের ইচ্ছা চরিতার্থ করতে চাইছে। সেটা দোষের কিছু না। কিন্তু তাদের জনসম্পৃক্ততা কোথায়? আবারও বলছি ভোট দিতে না পারা এবং বঞ্চনা থেকেই মানুষ জুলাই আন্দোলনে সম্পৃক্ত হয়েছিল। প্রাণ দিয়েছিল। তাদের সে চাওয়ার সঙ্গে একাত্ম হওয়ার জন্য যে বিশাল কর্মপ্রবাহ করার জন্য শহর-গ্রামে চষে বেড়ানোর দরকার ছিল, সেটা না করে ঘরপোড়া আগুনে আলু পোড়া খেতে চাইছেন কেউ কেউ।
গণতন্ত্র বলতে যদি আমরা জনগণের শাসন বুঝি তাহলেও সাবধানতার দরকার আছে। কারণ, গণতন্ত্র বহু দেশে বহু সমাজে হিংসা, হানাহানি বন্ধ করতে পারেনি। গণতান্ত্রিক ভারত বা আমেরিকাতে এমন হানাহানি রোজ ঘটে। এত বছর পরও তারা কেন তা দমন করতে পারল না?
একটা গল্প বলি: একবার এক রাজা রাজ্যজুড়ে ঘোষণা দিলেন ‘সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়ে প্রথম যেই বিশাল পাহাড় আছে, তার গুহায় থাকে এক দৈত্য, যার মুখ থেকে আগুনের গোলা বের হয়; এর মাথা থেকে মুকুটটা নিয়ে এসে আমার মেয়েকে যে দিতে পারবে আমি তার সঙ্গেই আমার মেয়ের বিয়ে দেব।’ তিনি আরও বললেন, ‘দৈত্যটা ছয় মাস ঘুমায়, ছয় মাস জেগে থাকে।’ এ ঘোষণা শুনে রাজ্যের বুড়ো-জোয়ান অনেকেই রাজসুখের আশায় সেই মুকুট উদ্ধারে রওনা দিল, কেউ আর ফিরে এল না। এক রাজকুমার আবার সেই রাজকন্যাকে পছন্দ করত, সে ভাবল, আমি তো রাজকুমার, আমি পারবই। এই বলে সেও রওনা দিল। গুহা পর্যন্ত পৌঁছে দেখে দৈত্যটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছে। সে তো হাসিমুখে তাজটা নিয়ে উল্টো দিকে ফিরে হাঁটা শুরু করল। সব ঠিকই ছিল, শুধু সেই রাজা কিন্তু একটা জিনিস বলেনি। সেটা হলো, ‘দৈত্যটা দুমুখো, এক মুখ সামনে আরেক মুখ পেছনে। যখন এক মুখ ঘুমায় তখন আরেক মুখ জেগে থাকে।’ সেই দ্বিতীয় মুখের আগুনে পুড়ে ছারখার হয়ে গেল সেই রাজকুমার আর বাকিদের মতো!
ফলে সাধু সাবধান। গণতন্ত্রের জন্য রাজনীতি ও রাজনৈতিক দল জরুরি। তবে দুমুখো দৈত্য থেকে সাবধান থাকাটা আরও বেশি জরুরি।
লেখক: অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী কলামিস্ট
লেখার শিরোনাম দেখেই যদি কেউ ভেবে থাকেন, এখানে অমূল্য রতন পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিল নিয়ে এমন এক গাড্ডায় পড়েছে নির্বাচন যে, কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার শক্তি কারও নেই। বিএনপির হাতে মুলা ধরিয়ে দিয়ে এই সরকারই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পোষণ করছে কি না...
২১ ঘণ্টা আগেবিশ্বে পরিবেশদূষণকারী হিসেবে ১৫টি প্রধান দূষক চিহ্নিত করা হয়েছে। পয়লা নম্বরে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণে ৫ নম্বর দূষণকারী এখন প্লাস্টিক। দূষণের মাত্রা অনুযায়ী এই অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে।
২১ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন আমাদের সামনে একটি হতাশাজনক বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
২১ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সভা এখন অতীত বিষয়। ওই সভার পর দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই সমন্বয় হয়ে গেছে এবং এখনো হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি দ্রুত অগ্রসরমাণ বিষয়। তার কয়েক দিনও এক জায়গায় অবস্থানের সুযোগ নেই।
২ দিন আগে