Ajker Patrika

আমাদের মিতা আপা

অরুণাভ পোদ্দার
আমাদের মিতা আপা

আজ ৬ সেপ্টেম্বর, মিতা হক, আমাদের মিতা আপার জন্মদিন। মিতা আপাকে আমরা হারিয়েছি বেশিদিন হয়নি, এই তো এ বছরের ১১ এপ্রিল। এবারই প্রথম মিতা আপাকে ছাড়া তাঁর জন্মদিন পালিত হচ্ছে।

রবীন্দ্রনাথকে আঁকড়ে জীবনের পথ চলেছেন। তাই তো ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে তবে একলা চল রে’ ছিল তাঁর মূলমন্ত্র। বাংলাদেশের শিল্প-সংস্কৃতিজগতের আলোকবর্তিকা প্রয়াত ওয়াহিদুল হক ছিলেন তাঁর বড় চাচা। যাঁকে ‘বড়দা কাকা’ বলে সম্বোধন করতেন। তিনিই ছিলেন মিতা আপার প্রেরণার উৎস। ছোটবেলা থেকেই সাংস্কৃতিক পরিবেশে মানুষ হয়েছেন। তাঁর হাতেখড়ি ওস্তাদ আয়েত আলী খাঁর ছাত্র মামা মো. শফিউল্লাহর কাছে হলেও, বড়দা কাকার পরামর্শে উপমহাদেশের প্রখ্যাত তবলিয়া ও উচ্চাঙ্গসংগীতের শিক্ষক ওস্তাদ মোহাম্মদ হোসেনের কাছে তিনি তালিম নেন। পরে ওয়াহিদুল হক ও সন্জীদা খাতুন ছিলেন তাঁর আজীবনের শিক্ষক। সংগীতাচার্য শ্রী শৈলজারঞ্জন মজুমদার, নীলিমা সেন, মায়া সেনের কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। ছায়ানট বা শান্তিনিকেতনে না শিখেও দুই বাংলাতেই তিনি ছিলেন স্বমহিমায় ভাস্বর। তাঁর গায়কী ছিল একেবারেই স্বতন্ত্র।

ওয়াহিদুল হকের নিজের হাতে গড়া জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ ও আনন্দধ্বনির হাত ধরেই মিতা হকের শিল্পী হয়ে ওঠা। সম্মিলন পরিষদের নিবেদিতপ্রাণ সংগঠক, প্রশিক্ষক হিসেবে সারা দেশেই ঘুরে বেড়িয়েছেন। দেশের সুদূর প্রত্যন্ত অঞ্চলও তাঁর পদচারণে মুখরিত হয়েছে। রাজধানী থেকে আসা নামী শিল্পীর তকমা ছেড়ে অবলীলায় এক কাতারে বসে যেতেন মফস্বলের সংস্কৃতিকর্মীদের মাঝে। এখন এ ধরনের সংগঠক খুব একটা চোখে পড়ে না।
‘কত অজানারে জানাইলে তুমি কত ঘরে দিলে ঠাঁই–দূরকে করিলে নিকট বন্ধু পরকে করিলে ভাই।’

রবীন্দ্রনাথের এই গানকেই যেন মিতা আপা চলার পথের পাথেয় করে নিয়েছিলেন।

মিতা হক একবার একটি টেলিভিশন চ্যানেলে বাঙালি নারীর আবহমানকালের পোশাক শাড়ি, বাঙালি সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের পরিবর্তে মরু সংস্কৃতির আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছিলেন।

আমার ব্যক্তিগত একটি অভিজ্ঞতার কথা বলছি। ২০১৩-১৫ সালে যখন অজস্র বাধা ডিঙিয়ে একে একে যুদ্ধাপরাধীদের  ফাঁসি কার্যকর হচ্ছিল, তখন প্রতিবারই মিতা আপার সেই ‘জয় বাংলা’ লেখা খুদে বার্তা আমরা পেয়েছি, যা তখনকার বাস্তবতার আলোকে আমাদের উজ্জীবিত করত। হেফাজতিদের দাবিতে পাঠ্যপুস্তক থেকে রবীন্দ্র, নজরুল, হুমায়ুন আজাদ বাদ গেলে কঠোর ভাষায় এর প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন। হেফাজতের তাণ্ডবে যখন ব্রাহ্মণবাড়িয়া অচল, সারা শহরে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চলছে, তখন মিতা আপা করোনায় আক্রান্ত হয়েও আমার খবর নিয়েছেন, সাহস জুগিয়েছেন।

একে একে প্রিয়জনদের বিদায়, তাঁকে বিষণ্ন করলেও হতোদ্যম করতে পারেনি। পরম আশ্রয় ‘বড়দা কাকা’, ওয়াহিদুল হকের প্রয়াণ, মা-বাবার চলে যাওয়া, প্রাণপ্রিয় স্বামী খালেদ খানের (যুবরাজ) দীর্ঘ দুরারোগ্য ব্যাধি ও মৃত্যু, এমনকি নিজের অসুস্থতাও তাঁকে বিচলিত করতে পারেনি। সপ্তাহে তিন দিন ডায়ালাইসিস করিয়েও হাসিমুখে নিজ প্রতিষ্ঠান ‘সুর তীর্থে’ শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গান শিখিয়েছেন। আজ মিতা আপার জন্মদিনে এই মহান শিল্পীকে জানাই শ্রদ্ধাঞ্জলি। 

লেখক: চিকিৎসক ও সংস্কৃতিকর্মী

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ডাকসুতে শিবিরের জয়ে উদ্বেগ শশী থারুরের, জবাব দিলেন মেঘমল্লার

শুক্রবার দুপুরের মধ্যে ফলাফল ঘোষণা সম্ভব: জাকসু নির্বাচন কমিশন

‘বেয়াদবি ছুটায় দেব’: সরি বলতে অসুবিধা নেই, বললেন সেই জামায়াত নেতা

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির হোতা মোতাজ্জেরুল ইসলাম মিঠু গ্রেপ্তার

নতুন ট্রেন্ড ন্যানো ব্যানানা, নিজের থ্রিডি ফিগারিন বানাবেন যেভাবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত