বিভুরঞ্জন সরকার
‘বাবা, মামলা করি কী হইবে, পুলিশ থাকিয়াও হামার জীবনে নিরাপত্তা নাই’—রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লির ৪৮ বছরের কোনিকা রানী যখন এই কথাগুলো বলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে ছিল আতঙ্ক আর চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছাপ। কথাগুলো কি আমাদের কারও জন্য খুব স্বস্তির? এক দেশ, এক রাষ্ট্র, এক সংবিধান নিয়ে আমরা যারা গর্ব বোধ করি, তাদের জন্য কোনিকা রানীর বক্তব্য কি ব্যঙ্গ নয়? এই দেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে আমরা কেউ কেউ তৃপ্তির ঢেকুর তুলি ঠিকই, কিন্তু বাস্তব অনেক ঘটনায় এটা একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে যে এই ভূখণ্ডে কারও কারও জীবনের দাম বাকি নাগরিকদের চেয়ে কম। তারা নাগরিক, কিন্তু পূর্ণ অধিকারভোগী নয়। ধর্মীয় পরিচয়ই তাদের আশ্রয় কেড়ে নেয়, স্বস্তি কেড়ে নেয়, শৈশবের আতঙ্ক প্রৌঢ়ত্বেও অবসান ঘটে না।
গত শনিবার, ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ী ইউনিয়নে এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করে একদল মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে, আর অচিরেই তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমে ভুল করে অন্য একজনের বাড়ি আক্রমণ করে, তারপর সেই ভুল সংশোধনের নামে আবার আরেক দফা পরিকল্পিত হামলা চালায় হিন্দুপল্লির ওপর। ভাঙচুর করে ঘরবাড়ি, লুট করে সম্পদ, ছিঁড়ে ফেলে সহাবস্থানের বুনন। পুলিশের সামনেই ঘটে এসব, পুলিশ সদস্য আহত হন, কিন্তু তারপরও অনেকে বিশ্বাস করে না যে পুলিশ তাদের পক্ষে আছে। কেননা, ঘটনার দিন থেকেই তারা দেখেছে—রাষ্ট্র থেকেও বড় হয়ে উঠতে পারে উন্মত্ততা, সংখ্যাগরিষ্ঠের দম্ভ আর রাজনৈতিক সুবিধাবাদ।
ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমপক্ষে ১৮টি পরিবার। আরও প্রায় ৫০টি পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে আশ্রয়ের খোঁজে। কিছু পরিবার ঘরের আসবাব, গবাদিপশু, চাল-ডাল, মূল্যবান সামগ্রী নিজ হাতে বের করে নিচ্ছে—যেন শত্রু সেনাবাহিনী আসার আগে নিজেই ঘর খালি করছে। সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে, কিন্তু যাদের ঘর ভেঙে দেওয়া হলো, যাদের চোখের সামনে পুড়ে গেল জীবনের সম্বল, তাদের কাছে এই নিরাপত্তা-আস্ফালন নিছক বিলম্বিত ট্র্যাজেডি।
রবীন্দ্রনাথ রায় নামের আরেক ভুক্তভোগী বললেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন এসে আমাদের মামলা করতে বলতেছে, কিন্তু এখন যদি মামলা করি, দোষী–নির্দোষী সবাই ফাঁসবে। তখন এই মামলা দিয়ে সবাই ব্যবসা করবে।’ এই কথায় ভেসে আসে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, আশাভঙ্গের ধ্বনি। মানুষের ন্যায্য বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও সেখানে নিঃশব্দ মৃত্যুবরণ করে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘রঞ্জন রায়ের সময় যদি পুলিশ বাদী হয়া মামলা করিবার পারে, তাহলে হামার বেলা ক্যান বাদী হয়া মামলা করতে পারে না?’ এ প্রশ্ন শুধু পুলিশের উদ্দেশে নয়, রাষ্ট্রের উদ্দেশে, বিচারব্যবস্থার উদ্দেশে, রাজনীতির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি বিবেকবান মানুষের উদ্দেশে।
আটক কিশোরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে, তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। অথচ ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, প্রাণনাশের হুমকি—এই সবকিছুর পরেও থানায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। যাদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো, তাদের জন্য কোনো ‘আইন’ সক্রিয় নয়। এই নিঃশব্দতা, এই দায় এড়িয়ে যাওয়া, এই ন্যায়ের শীতলতা—এগুলোই আবার নতুন সহিংসতার পথ খুলে দেয়। কারণ, অপরাধীরা জানে—তাদের অপরাধের কোনো পরিণতি নেই, বরং নীরবতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে পরোক্ষ বৈধতা।
গঙ্গাচড়ার এই ঘটনা আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়—এই দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থান এখনো টালমাটাল। তাদের ওপর একটি গুজবই যথেষ্ট, একটি পোস্টই যথেষ্ট, এমনকি শুধু সন্দেহই যথেষ্ট—ঘরবাড়ি ভাঙার জন্য, জীবন তছনছ করে দেওয়ার জন্য, ইতিহাস থেকে তাদের অস্তিত্ব মুছে দেওয়ার জন্য। তারা মামলা করতে চায় না, কারণ জানে—মামলা তাদের নতুন করে বিপদে ফেলবে। তাদের ভিটা থাকবে না, জীবিকা থাকবে না, সামাজিক অবস্থান যাবে হারিয়ে।
বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখেছি—নাসিরনগর, রামু, শাল্লা, কুমিল্লা, রংপুর—একই ধাঁচের সহিংসতা, একই স্টাইল, একই কায়দা। একধরনের মিথ্যা অভিযোগ, এরপর উত্তেজক প্রচার, তারপর মিছিল, হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ। তারপর রাষ্ট্র কিছুদিনের জন্য সক্রিয়, তারপর আবার নীরবতা। দোষীদের অনেকেই ধরা পড়ে না, আবার ধরা পড়লেও বিচার হয় না, আর বিচার হলেও শাস্তি হয় না। ফলে একই নাটক আবার মঞ্চস্থ হয়, শুধু চরিত্র বদলায়।
এই চক্র ভাঙবে কবে? রাষ্ট্র কি একবারও দায় নেবে না? সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কি কেবল নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলিয়ে রাখা যাবে? সংখ্যালঘুদের প্রতি প্রতিবার এই নিষ্ঠুরতা কেবল সামাজিক বিভাজন তৈরি করে না, বরং তা আমাদের মৌলিক সহাবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। কেউ যদি এই দেশের নাগরিক হয়েও বলার সাহস পায় না যে ‘আমি মামলা করব’, যদি কেউ রাষ্ট্রকে বলে—‘পুলিশ থাকিয়াও নিরাপত্তা নাই’—তবে তা শুধু এক ব্যক্তির নয়, রাষ্ট্রেরই চূড়ান্ত ব্যর্থতা।
এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে ছোট করা নয়, কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোও নয়। বরং আমরা চাই, কেউ যেন আর বলার সুযোগ না পায়—‘পুলিশ থাকিয়াও হামার নিরাপত্তা নাই।’ আমরা চাই, যারা নিজের ধর্ম, জাত, ভাষা বা পোশাকের কারণে বারবার নিপীড়নের শিকার হয়, তারা যেন অন্তত এই রাষ্ট্রে আশ্রয় খুঁজে পায়। যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই মাটিতে বাস করছে, সেই হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী—তাদের কারও যেন ঘর পুড়তে না হয় আরেকটি গুজবের জন্য।
মানুষ তার ধর্ম বেছে নেয়, কিন্তু রাষ্ট্র তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এই দায়িত্ব আমাদের রাজনীতি, প্রশাসন, সমাজ—সবখানেই ভাগাভাগি করে নিতে হবে। যারা ঘর হারিয়েছে, তাদের ফেরত দিতে হবে সম্মান, নিরাপত্তা আর বিচার। রাষ্ট্র যদি তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সংবিধান শুধু পুঁথিগত বুলি হয়ে থাকবে।
গঙ্গাচড়া আরেকবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—এই দেশ এখনো সবার বসবাসের যোগ্য দেশ হয়ে উঠতে পারেনি। যত দিন পর্যন্ত একজন সংখ্যালঘুও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না, মামলা করার সাহস পাবে না, আর পুলিশ থাকার পরও বলবে—‘আমার জীবনে নিরাপত্তা নাই’ তত দিন এই দেশ সব ধর্মবিশ্বাসীদের শান্তির আবাসভূমি, এটা মুখে বলা হলেও বাস্তবে তা হবে না।
গঙ্গাচড়ায় যা হয়েছে, হচ্ছে তা আমাদের সবার জন্যই লজ্জার। এর দায় এড়াতে পারি না আমরা কেউ।
‘বাবা, মামলা করি কী হইবে, পুলিশ থাকিয়াও হামার জীবনে নিরাপত্তা নাই’—রংপুরের গঙ্গাচড়া উপজেলার আলদাতপুর ছয়আনি হিন্দুপল্লির ৪৮ বছরের কোনিকা রানী যখন এই কথাগুলো বলেন, তখন তাঁর কণ্ঠে ছিল আতঙ্ক আর চোখেমুখে উৎকণ্ঠার ছাপ। কথাগুলো কি আমাদের কারও জন্য খুব স্বস্তির? এক দেশ, এক রাষ্ট্র, এক সংবিধান নিয়ে আমরা যারা গর্ব বোধ করি, তাদের জন্য কোনিকা রানীর বক্তব্য কি ব্যঙ্গ নয়? এই দেশকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উজ্জ্বল উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরে আমরা কেউ কেউ তৃপ্তির ঢেকুর তুলি ঠিকই, কিন্তু বাস্তব অনেক ঘটনায় এটা একাধিকবার প্রমাণিত হয়েছে যে এই ভূখণ্ডে কারও কারও জীবনের দাম বাকি নাগরিকদের চেয়ে কম। তারা নাগরিক, কিন্তু পূর্ণ অধিকারভোগী নয়। ধর্মীয় পরিচয়ই তাদের আশ্রয় কেড়ে নেয়, স্বস্তি কেড়ে নেয়, শৈশবের আতঙ্ক প্রৌঢ়ত্বেও অবসান ঘটে না।
গত শনিবার, ফেসবুকে ধর্মীয় কটূক্তির অভিযোগে গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ী ইউনিয়নে এক কিশোরকে আটক করে পুলিশ। অভিযোগের সত্যতা যাচাই না করে একদল মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়ে, আর অচিরেই তারা হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। প্রথমে ভুল করে অন্য একজনের বাড়ি আক্রমণ করে, তারপর সেই ভুল সংশোধনের নামে আবার আরেক দফা পরিকল্পিত হামলা চালায় হিন্দুপল্লির ওপর। ভাঙচুর করে ঘরবাড়ি, লুট করে সম্পদ, ছিঁড়ে ফেলে সহাবস্থানের বুনন। পুলিশের সামনেই ঘটে এসব, পুলিশ সদস্য আহত হন, কিন্তু তারপরও অনেকে বিশ্বাস করে না যে পুলিশ তাদের পক্ষে আছে। কেননা, ঘটনার দিন থেকেই তারা দেখেছে—রাষ্ট্র থেকেও বড় হয়ে উঠতে পারে উন্মত্ততা, সংখ্যাগরিষ্ঠের দম্ভ আর রাজনৈতিক সুবিধাবাদ।
ভাঙচুরে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কমপক্ষে ১৮টি পরিবার। আরও প্রায় ৫০টি পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়েছে আশ্রয়ের খোঁজে। কিছু পরিবার ঘরের আসবাব, গবাদিপশু, চাল-ডাল, মূল্যবান সামগ্রী নিজ হাতে বের করে নিচ্ছে—যেন শত্রু সেনাবাহিনী আসার আগে নিজেই ঘর খালি করছে। সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন হয়েছে পরিস্থিতি সামাল দিতে, কিন্তু যাদের ঘর ভেঙে দেওয়া হলো, যাদের চোখের সামনে পুড়ে গেল জীবনের সম্বল, তাদের কাছে এই নিরাপত্তা-আস্ফালন নিছক বিলম্বিত ট্র্যাজেডি।
রবীন্দ্রনাথ রায় নামের আরেক ভুক্তভোগী বললেন, ‘বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের লোকজন এসে আমাদের মামলা করতে বলতেছে, কিন্তু এখন যদি মামলা করি, দোষী–নির্দোষী সবাই ফাঁসবে। তখন এই মামলা দিয়ে সবাই ব্যবসা করবে।’ এই কথায় ভেসে আসে দীর্ঘ অভিজ্ঞতা, আশাভঙ্গের ধ্বনি। মানুষের ন্যায্য বিচার পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও সেখানে নিঃশব্দ মৃত্যুবরণ করে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, ‘রঞ্জন রায়ের সময় যদি পুলিশ বাদী হয়া মামলা করিবার পারে, তাহলে হামার বেলা ক্যান বাদী হয়া মামলা করতে পারে না?’ এ প্রশ্ন শুধু পুলিশের উদ্দেশে নয়, রাষ্ট্রের উদ্দেশে, বিচারব্যবস্থার উদ্দেশে, রাজনীতির চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা প্রতিটি বিবেকবান মানুষের উদ্দেশে।
আটক কিশোরের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হয়েছে, তাকে পুনর্বাসন কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে। অথচ ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, প্রাণনাশের হুমকি—এই সবকিছুর পরেও থানায় এখনো পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি। যাদের বাড়িঘর গুঁড়িয়ে দেওয়া হলো, তাদের জন্য কোনো ‘আইন’ সক্রিয় নয়। এই নিঃশব্দতা, এই দায় এড়িয়ে যাওয়া, এই ন্যায়ের শীতলতা—এগুলোই আবার নতুন সহিংসতার পথ খুলে দেয়। কারণ, অপরাধীরা জানে—তাদের অপরাধের কোনো পরিণতি নেই, বরং নীরবতার মধ্যেই লুকিয়ে আছে পরোক্ষ বৈধতা।
গঙ্গাচড়ার এই ঘটনা আমাদের আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়—এই দেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের অবস্থান এখনো টালমাটাল। তাদের ওপর একটি গুজবই যথেষ্ট, একটি পোস্টই যথেষ্ট, এমনকি শুধু সন্দেহই যথেষ্ট—ঘরবাড়ি ভাঙার জন্য, জীবন তছনছ করে দেওয়ার জন্য, ইতিহাস থেকে তাদের অস্তিত্ব মুছে দেওয়ার জন্য। তারা মামলা করতে চায় না, কারণ জানে—মামলা তাদের নতুন করে বিপদে ফেলবে। তাদের ভিটা থাকবে না, জীবিকা থাকবে না, সামাজিক অবস্থান যাবে হারিয়ে।
বছরের পর বছর ধরে আমরা দেখেছি—নাসিরনগর, রামু, শাল্লা, কুমিল্লা, রংপুর—একই ধাঁচের সহিংসতা, একই স্টাইল, একই কায়দা। একধরনের মিথ্যা অভিযোগ, এরপর উত্তেজক প্রচার, তারপর মিছিল, হামলা, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ। তারপর রাষ্ট্র কিছুদিনের জন্য সক্রিয়, তারপর আবার নীরবতা। দোষীদের অনেকেই ধরা পড়ে না, আবার ধরা পড়লেও বিচার হয় না, আর বিচার হলেও শাস্তি হয় না। ফলে একই নাটক আবার মঞ্চস্থ হয়, শুধু চরিত্র বদলায়।
এই চক্র ভাঙবে কবে? রাষ্ট্র কি একবারও দায় নেবে না? সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা কি কেবল নির্বাচনের সময় প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভুলিয়ে রাখা যাবে? সংখ্যালঘুদের প্রতি প্রতিবার এই নিষ্ঠুরতা কেবল সামাজিক বিভাজন তৈরি করে না, বরং তা আমাদের মৌলিক সহাবস্থানকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলে। কেউ যদি এই দেশের নাগরিক হয়েও বলার সাহস পায় না যে ‘আমি মামলা করব’, যদি কেউ রাষ্ট্রকে বলে—‘পুলিশ থাকিয়াও নিরাপত্তা নাই’—তবে তা শুধু এক ব্যক্তির নয়, রাষ্ট্রেরই চূড়ান্ত ব্যর্থতা।
এই লেখার উদ্দেশ্য কাউকে ছোট করা নয়, কাউকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানোও নয়। বরং আমরা চাই, কেউ যেন আর বলার সুযোগ না পায়—‘পুলিশ থাকিয়াও হামার নিরাপত্তা নাই।’ আমরা চাই, যারা নিজের ধর্ম, জাত, ভাষা বা পোশাকের কারণে বারবার নিপীড়নের শিকার হয়, তারা যেন অন্তত এই রাষ্ট্রে আশ্রয় খুঁজে পায়। যারা শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে এই মাটিতে বাস করছে, সেই হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান কিংবা ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী—তাদের কারও যেন ঘর পুড়তে না হয় আরেকটি গুজবের জন্য।
মানুষ তার ধর্ম বেছে নেয়, কিন্তু রাষ্ট্র তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। এই দায়িত্ব আমাদের রাজনীতি, প্রশাসন, সমাজ—সবখানেই ভাগাভাগি করে নিতে হবে। যারা ঘর হারিয়েছে, তাদের ফেরত দিতে হবে সম্মান, নিরাপত্তা আর বিচার। রাষ্ট্র যদি তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সংবিধান শুধু পুঁথিগত বুলি হয়ে থাকবে।
গঙ্গাচড়া আরেকবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—এই দেশ এখনো সবার বসবাসের যোগ্য দেশ হয়ে উঠতে পারেনি। যত দিন পর্যন্ত একজন সংখ্যালঘুও নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারবে না, মামলা করার সাহস পাবে না, আর পুলিশ থাকার পরও বলবে—‘আমার জীবনে নিরাপত্তা নাই’ তত দিন এই দেশ সব ধর্মবিশ্বাসীদের শান্তির আবাসভূমি, এটা মুখে বলা হলেও বাস্তবে তা হবে না।
গঙ্গাচড়ায় যা হয়েছে, হচ্ছে তা আমাদের সবার জন্যই লজ্জার। এর দায় এড়াতে পারি না আমরা কেউ।
অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব গ্রহণের এক বছর পূর্ণ হচ্ছে। গত বছর জুলাই-আগস্টে দেশে গড়ে ওঠা ছাত্র-জনতার তীব্র আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটে। তখন সাধারণ মানুষের মনে একধরনের ইতিবাচক প্রত্যাশা সৃষ্টি হয়েছিল।
৩ ঘণ্টা আগেবর্ষাকাল এলেই যেন ঢাকায় জলাবদ্ধতা ভর করে বসে। জলাবদ্ধতা যখন এই শহরের ঘাড়ে চেপে বসে, তখন এই নগরের মানুষকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। আজ এই শহরের এত সমস্যার মুখোমুখি হতে হতো না যদি তারা অপরিকল্পিত নগরায়ণের দিকে না ঝুঁকত, যদি নদী কিংবা খালের স্থান দখল না করে কোনো স্থাপনা করার পরিকল্পনা করত।
৩ ঘণ্টা আগেটাঙ্গাইলের সখীপুর-কচুয়া-আড়াইপাড়া সড়কের যে করুণ অবস্থা, তা আসলে আমাদের সড়ক যোগাযোগব্যবস্থার অব্যবস্থাপনার এক করুণ প্রতিচ্ছবি। সাত কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক—যেখানে প্রতিদিন স্কুলশিক্ষার্থী, রোগী, কৃষিপণ্যবাহী ট্রাক ও হাজারো সাধারণ মানুষ চলাচল করে।
৩ ঘণ্টা আগেজুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর হয়ে গেল। ওই অভ্যুত্থানের সময় দেশের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেশি ছিল। মূলত তারা ফ্যাসিবাদী সরকারব্যবস্থার পতন ঘটিয়ে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখেছিল। মূলত বাংলাদেশের মূল সমস্যা সেটাই যে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশে একটি
১ দিন আগে