মামুনুর রশীদ
এক অস্থির ও অনিশ্চিত সময় কাটছে দেশবাসীর। কয়েক দিন ধরে চলেছে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগবিষয়ক ঘটনা। নানা গুজব, প্রচার-অপপ্রচার, শালীন, অশালীন নানা মন্তব্যে ভরে উঠছে ফেসবুক আর ইউটিউবের পাতা। মানুষের মনে স্বস্তি নেই, তবু অদ্ভুত এক জীবনচর্চার মধ্যে তারা ঢুকে গেছে। এখানে-সেখানে সমাবেশ হচ্ছে, কোথাও গরম পানির বর্ষণ হচ্ছে, কোথাও লাঠিপেটা হচ্ছে, পরোয়া নেই। নিজের শরীরটা বাঁচিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে সবাই। তবে ঘরের মানুষেরা শুধু প্রার্থনা করে চলেছে—কাজের মানুষেরা যেন ফিরে আসে।
আমাদের শাসকগোষ্ঠী এক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের জীবিকার সমস্যা নেই, বাজার-সদাই করার তাগিদ নেই। পুরো বাজারটাই যেন কখনো ক্ষমতাধরদের বাড়িতে এসে পৌঁছে যায়। বহু বহুবার আমাদের দেশের খেটে-খাওয়া, কাজ করা মানুষেরা বাজার না করতে পারার সংকটে পড়েছে। অনাহারেও থাকতে হয়েছে। এর ওপর এক ব্যতিক্রমী আন্দোলন হলো এবার। অনেক দিক দিয়েই ব্যতিক্রম। যেকোনো অভ্যুত্থানের সময় দেখা যায়, মানুষের ঐক্য এক জায়গায় থাকে; তখন চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি এসব হয় না। এবারে সরকার পতনের পর থেকেই এসব শুরু হয়েছে। পাড়া-মহল্লার অধিবাসীদের রীতিমতো পাহারাদার হিসেবে লাঠি নিয়ে পাহারা দিতে হয়েছে।
যেকোনো আন্দোলন-অভ্যুত্থানের পর বিপ্লবী জনতা রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদারত্ব দাবি করে বসেনি। এবার দাবি নয়, একেবারে শপথ গ্রহণ পর্যন্ত করে ফেলেছে। ষাটের দশকের আন্দোলনের পর কেউ দাবি করে বসেনি—আমার কিন্তু নমিনেশনটা চাই-ই। এরপর মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসের সঙ্গে লড়াই করে কেউ মন্ত্রিত্ব চায়নি। এমনকি নানা ধরনের বীরত্বের খেতাবের জন্যও বায়না ধরেনি। কিন্তু এবারের মতো নগদ দাবি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শেষে, এরশাদ পতনের পর কেউ চায়নি। যারা এসব দাবিদাওয়া আদায় করছে, তাদের পক্ষে একটা বড় সুবিধা ছিল যেন এই সরকার।
ষাটের দশক, মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশক এবং মাঝে মাঝেই বাংলাদেশ প্রবল অশান্ত হয়েছে। আমাদের শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি এমন কোনো আন্দোলনে অংশ নিতে দেখিনি। তবে সবকিছুতেই তাঁর নিজস্ব একটা লবিংজাতীয় ভঙ্গি থাকে। বড় বড় পত্রিকার সম্পাদক, অরাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের তিনি মোটিভেট করতে পারেন। তিনি ক্ষুদ্রঋণের যে কারবার করেছেন, সেই কোম্পানিটিকে ক্রমাগত পুষ্ট করতে করতে রীতিমতো নোবেল পুরস্কারের দিকে ধাবিত হয়েছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ব্যাংক’ দিয়েছেন কেন, সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন। অনেক দিন লেগে থেকে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আশীর্বাদটাও তাঁর ঠিকই জুটে গেছে। শান্তির জন্য নোবেল পাওয়া এই মহৎ ব্যক্তি যখন দায়িত্বে আছেন, তখন কেন চারদিকে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে?
এবারের সরকারের নামকরণ করা হয়েছে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’। আগের সরকারগুলোর নামকরণ করা হয়েছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। ওই সরকারপ্রধানগণ, বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় জন ছিলেন মহামান্য বিচারপতি। তৃতীয় জনও তা-ই। চতুর্থ জনের সময় শাসনের পরিধিটা বড় হলেও একসময় তা গুটিয়ে এনে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে চলে যান। অথচ এই সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত কথাই বলছে না। মনে হচ্ছে, নতুন দলগুলোকে একটা সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে আসার পরই নির্বাচন হবে। কিন্তু এত সহজে কি এ দেশের মানুষ একটা নতুন দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে? যারা ইতিমধ্যেই নানাভাবে অতীতের লুটপাটের প্রবাহ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি, মবের নানামুখী আক্রমণে ভদ্র সমাজ এতটাই উত্ত্যক্ত যে সব সময়ই আত্মসম্মান রক্ষার্থে তারা দিশেহারা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই অনির্বাচিত সরকারের কাছে আমরা কী পেলাম? রাষ্ট্রে নাগরিকদের প্রথম দাবি তার নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ৫ আগস্ট এবং তার পরবর্তীকালে প্রকাশ্যে যে লুটপাটের এবং ভাঙচুরের ঘটনা হয়েছে, তাকে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা বৈধতা দিয়েছেন। এগুলোকে তিনি ‘জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ’ বলেছেন। ‘স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ’ কি অন্যের বা রাষ্ট্রের সম্পদকে ধ্বংস করে আত্মসাৎ করা? প্রতিশোধস্পৃহায় তিনি নিজেও দিশেহারা। তাই রাষ্ট্রের কাছে মানুষের কতটা অধিকার আছে, সে বিচারটাও করতে পারেননি। তিনি বাটন দিয়ে ইতিহাসকে কীভাবে মুছে ফেলবেন?
আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষকেরা দেবতাতুল্য। কিন্তু শিক্ষকদের কিছু কিছু আচরণ, বাণিজ্য আকাঙ্ক্ষা, কর্তব্যে অবহেলা ও শীর্ষ পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফলে তাঁরা বিতর্কিত হয়েছেন। কিন্তু সবাই কি তা-ই? যাঁরা এখনো শিক্ষার শৃঙ্খলা ও সুনীতি কার্যকর করতে চান, তাঁদের কী হবে? আবার শিক্ষার যে কোনো বিকল্প নেই—তারই-বা কী হবে? কী করলেন তাঁদের এই সময়টায়? সব শিক্ষক-সমাজকে অপমান করার নানা কৌশল রাতারাতি আবিষ্কার করা হলো। নানা ধরনের অবমাননাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শিক্ষকদের পেশাগত গৌরবকে ধ্বংস করা হলো। মাদ্রাসা শিক্ষায় ঘোরতর দুর্নীতি, যৌন কেলেঙ্কারি, ধর্ষণের মতো ঘটনা থাকলেও তাদের কিছু হলো না। বরং জামায়াতের শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে শিক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলেন। ঘটনাগুলোতে শুধু দোষী শিক্ষকদেরই শাস্তি হয়েছে তা-ই নয়, ভালো-আদর্শবান শিক্ষকেরাও শাস্তি পেয়েছেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা একটি কথাও বলার প্রয়োজন বোধ করেননি।
দুর্নীতি, অর্থ পাচার—এসব বড় সব অ্যাজেন্ডা ছিল। এখন তো দেখা যাচ্ছে, এই কয় মাসে এসব ক্ষেত্রে যা দুর্নীতি হয়েছে তা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলবে। নতুন দলের নেতারা দলের জন্য চাঁদাবাজি করতে শুরু করেছেন, তা-ও চিন্তার অতীত। এইভাবে ক্ষমতা দখল করে চাপিয়ে দেওয়া দলকে দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়? সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হলো লেখাপড়ার। যেসব প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা আন্দোলনে এসেছিল, তাদের দ্রুতই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। পরিকল্পনাগুলো সফল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার যে সংস্কৃতিটা ছিল, তা ধ্বংস হওয়ার ফলে শিক্ষকদের হাতে সেই পাঠের নিয়ন্ত্রণটা নেই। মাঝে মাঝে আবার মাঠে ডাক আসে বলে ক্লাসরুমে তাদের মনটাও টেকে না। আবার মাঝে মাঝেই অটোপাসের আন্দোলনটাও করতে হয়! ছাত্ররা বুঝতে পারছে না, এই অটোপাসের কদর্য সিলখানা ভবিষ্যতে তাদের জন্য কত বড় বিঘ্ন বয়ে আনবে। সেই সময় আন্দোলনের পরিস্থিতি বা সরকারটাও থাকবে না। কী হবে এই কোমলমতি ছাত্রদের?
যেকোনো আন্দোলন ও অভ্যুত্থান মানুষকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসে। সবাই একটা স্বপ্নের দেশের দিকে তাকিয়ে জীবনের অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এগিয়ে চলে। কিন্তু প্রতিদিন সেই স্বপ্নের মৃত্যু হচ্ছে। আশা করি, পরিস্থিতি বিবেচনা করে যে বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল, তাদের জন্য আবার একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে, যেখান থেকে আমরা গণতন্ত্র ও বিচারমুখী সংস্কৃতির দিকে এগোতে পারি।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
এক অস্থির ও অনিশ্চিত সময় কাটছে দেশবাসীর। কয়েক দিন ধরে চলেছে প্রধান উপদেষ্টার পদত্যাগবিষয়ক ঘটনা। নানা গুজব, প্রচার-অপপ্রচার, শালীন, অশালীন নানা মন্তব্যে ভরে উঠছে ফেসবুক আর ইউটিউবের পাতা। মানুষের মনে স্বস্তি নেই, তবু অদ্ভুত এক জীবনচর্চার মধ্যে তারা ঢুকে গেছে। এখানে-সেখানে সমাবেশ হচ্ছে, কোথাও গরম পানির বর্ষণ হচ্ছে, কোথাও লাঠিপেটা হচ্ছে, পরোয়া নেই। নিজের শরীরটা বাঁচিয়ে গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে সবাই। তবে ঘরের মানুষেরা শুধু প্রার্থনা করে চলেছে—কাজের মানুষেরা যেন ফিরে আসে।
আমাদের শাসকগোষ্ঠী এক অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের জীবিকার সমস্যা নেই, বাজার-সদাই করার তাগিদ নেই। পুরো বাজারটাই যেন কখনো ক্ষমতাধরদের বাড়িতে এসে পৌঁছে যায়। বহু বহুবার আমাদের দেশের খেটে-খাওয়া, কাজ করা মানুষেরা বাজার না করতে পারার সংকটে পড়েছে। অনাহারেও থাকতে হয়েছে। এর ওপর এক ব্যতিক্রমী আন্দোলন হলো এবার। অনেক দিক দিয়েই ব্যতিক্রম। যেকোনো অভ্যুত্থানের সময় দেখা যায়, মানুষের ঐক্য এক জায়গায় থাকে; তখন চুরি, ডাকাতি, রাহাজানি, চাঁদাবাজি এসব হয় না। এবারে সরকার পতনের পর থেকেই এসব শুরু হয়েছে। পাড়া-মহল্লার অধিবাসীদের রীতিমতো পাহারাদার হিসেবে লাঠি নিয়ে পাহারা দিতে হয়েছে।
যেকোনো আন্দোলন-অভ্যুত্থানের পর বিপ্লবী জনতা রাষ্ট্রক্ষমতার অংশীদারত্ব দাবি করে বসেনি। এবার দাবি নয়, একেবারে শপথ গ্রহণ পর্যন্ত করে ফেলেছে। ষাটের দশকের আন্দোলনের পর কেউ দাবি করে বসেনি—আমার কিন্তু নমিনেশনটা চাই-ই। এরপর মুক্তিযুদ্ধের কথা বলতে হয়। মুক্তিযুদ্ধে অসম সাহসের সঙ্গে লড়াই করে কেউ মন্ত্রিত্ব চায়নি। এমনকি নানা ধরনের বীরত্বের খেতাবের জন্যও বায়না ধরেনি। কিন্তু এবারের মতো নগদ দাবি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনের শেষে, এরশাদ পতনের পর কেউ চায়নি। যারা এসব দাবিদাওয়া আদায় করছে, তাদের পক্ষে একটা বড় সুবিধা ছিল যেন এই সরকার।
ষাটের দশক, মুক্তিযুদ্ধ, আশির দশক এবং মাঝে মাঝেই বাংলাদেশ প্রবল অশান্ত হয়েছে। আমাদের শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রধান উপদেষ্টাকে সরাসরি এমন কোনো আন্দোলনে অংশ নিতে দেখিনি। তবে সবকিছুতেই তাঁর নিজস্ব একটা লবিংজাতীয় ভঙ্গি থাকে। বড় বড় পত্রিকার সম্পাদক, অরাজনৈতিক ব্যবসায়ীদের তিনি মোটিভেট করতে পারেন। তিনি ক্ষুদ্রঋণের যে কারবার করেছেন, সেই কোম্পানিটিকে ক্রমাগত পুষ্ট করতে করতে রীতিমতো নোবেল পুরস্কারের দিকে ধাবিত হয়েছেন। তিনি এই প্রতিষ্ঠানের নাম ‘ব্যাংক’ দিয়েছেন কেন, সেটা অবশ্য ভিন্ন প্রশ্ন। অনেক দিন লেগে থেকে কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের আশীর্বাদটাও তাঁর ঠিকই জুটে গেছে। শান্তির জন্য নোবেল পাওয়া এই মহৎ ব্যক্তি যখন দায়িত্বে আছেন, তখন কেন চারদিকে অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে?
এবারের সরকারের নামকরণ করা হয়েছে ‘অন্তর্বর্তী সরকার’। আগের সরকারগুলোর নামকরণ করা হয়েছিল ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’। ওই সরকারপ্রধানগণ, বিশেষ করে প্রথম ও দ্বিতীয় জন ছিলেন মহামান্য বিচারপতি। তৃতীয় জনও তা-ই। চতুর্থ জনের সময় শাসনের পরিধিটা বড় হলেও একসময় তা গুটিয়ে এনে দ্রুত নির্বাচন দিয়ে চলে যান। অথচ এই সরকার নির্বাচনের রোডম্যাপ নিয়ে কোনো চূড়ান্ত কথাই বলছে না। মনে হচ্ছে, নতুন দলগুলোকে একটা সুবিধামতো জায়গায় নিয়ে আসার পরই নির্বাচন হবে। কিন্তু এত সহজে কি এ দেশের মানুষ একটা নতুন দলকে ভোট দিয়ে ক্ষমতায় নিয়ে আসবে? যারা ইতিমধ্যেই নানাভাবে অতীতের লুটপাটের প্রবাহ থেকে বেরিয়ে আসতে পারেনি, মবের নানামুখী আক্রমণে ভদ্র সমাজ এতটাই উত্ত্যক্ত যে সব সময়ই আত্মসম্মান রক্ষার্থে তারা দিশেহারা।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই অনির্বাচিত সরকারের কাছে আমরা কী পেলাম? রাষ্ট্রে নাগরিকদের প্রথম দাবি তার নিরাপত্তা। এই নিরাপত্তা দিতে রাষ্ট্র সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। ৫ আগস্ট এবং তার পরবর্তীকালে প্রকাশ্যে যে লুটপাটের এবং ভাঙচুরের ঘটনা হয়েছে, তাকে স্বয়ং প্রধান উপদেষ্টা বৈধতা দিয়েছেন। এগুলোকে তিনি ‘জনতার স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ’ বলেছেন। ‘স্বতঃস্ফূর্ত বহিঃপ্রকাশ’ কি অন্যের বা রাষ্ট্রের সম্পদকে ধ্বংস করে আত্মসাৎ করা? প্রতিশোধস্পৃহায় তিনি নিজেও দিশেহারা। তাই রাষ্ট্রের কাছে মানুষের কতটা অধিকার আছে, সে বিচারটাও করতে পারেননি। তিনি বাটন দিয়ে ইতিহাসকে কীভাবে মুছে ফেলবেন?
আমাদের সংস্কৃতিতে শিক্ষকেরা দেবতাতুল্য। কিন্তু শিক্ষকদের কিছু কিছু আচরণ, বাণিজ্য আকাঙ্ক্ষা, কর্তব্যে অবহেলা ও শীর্ষ পর্যায়ে শিক্ষা কর্মকর্তাদের দুর্নীতির ফলে তাঁরা বিতর্কিত হয়েছেন। কিন্তু সবাই কি তা-ই? যাঁরা এখনো শিক্ষার শৃঙ্খলা ও সুনীতি কার্যকর করতে চান, তাঁদের কী হবে? আবার শিক্ষার যে কোনো বিকল্প নেই—তারই-বা কী হবে? কী করলেন তাঁদের এই সময়টায়? সব শিক্ষক-সমাজকে অপমান করার নানা কৌশল রাতারাতি আবিষ্কার করা হলো। নানা ধরনের অবমাননাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে শিক্ষকদের পেশাগত গৌরবকে ধ্বংস করা হলো। মাদ্রাসা শিক্ষায় ঘোরতর দুর্নীতি, যৌন কেলেঙ্কারি, ধর্ষণের মতো ঘটনা থাকলেও তাদের কিছু হলো না। বরং জামায়াতের শিক্ষকেরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে শিক্ষা বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হলেন। ঘটনাগুলোতে শুধু দোষী শিক্ষকদেরই শাস্তি হয়েছে তা-ই নয়, ভালো-আদর্শবান শিক্ষকেরাও শাস্তি পেয়েছেন। এ বিষয়ে মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা একটি কথাও বলার প্রয়োজন বোধ করেননি।
দুর্নীতি, অর্থ পাচার—এসব বড় সব অ্যাজেন্ডা ছিল। এখন তো দেখা যাচ্ছে, এই কয় মাসে এসব ক্ষেত্রে যা দুর্নীতি হয়েছে তা অতীতের সব রেকর্ড ভেঙে ফেলবে। নতুন দলের নেতারা দলের জন্য চাঁদাবাজি করতে শুরু করেছেন, তা-ও চিন্তার অতীত। এইভাবে ক্ষমতা দখল করে চাপিয়ে দেওয়া দলকে দিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা যায়? সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা হলো লেখাপড়ার। যেসব প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেমেয়েরা আন্দোলনে এসেছিল, তাদের দ্রুতই ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। পরিকল্পনাগুলো সফল হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু শিক্ষার যে সংস্কৃতিটা ছিল, তা ধ্বংস হওয়ার ফলে শিক্ষকদের হাতে সেই পাঠের নিয়ন্ত্রণটা নেই। মাঝে মাঝে আবার মাঠে ডাক আসে বলে ক্লাসরুমে তাদের মনটাও টেকে না। আবার মাঝে মাঝেই অটোপাসের আন্দোলনটাও করতে হয়! ছাত্ররা বুঝতে পারছে না, এই অটোপাসের কদর্য সিলখানা ভবিষ্যতে তাদের জন্য কত বড় বিঘ্ন বয়ে আনবে। সেই সময় আন্দোলনের পরিস্থিতি বা সরকারটাও থাকবে না। কী হবে এই কোমলমতি ছাত্রদের?
যেকোনো আন্দোলন ও অভ্যুত্থান মানুষকে মানুষের কাছাকাছি নিয়ে আসে। সবাই একটা স্বপ্নের দেশের দিকে তাকিয়ে জীবনের অনেক ত্যাগ স্বীকার করে এগিয়ে চলে। কিন্তু প্রতিদিন সেই স্বপ্নের মৃত্যু হচ্ছে। আশা করি, পরিস্থিতি বিবেচনা করে যে বিপুলসংখ্যক ছাত্রছাত্রী অভ্যুত্থানে অংশ নিয়েছিল, তাদের জন্য আবার একটি স্বস্তিদায়ক পরিবেশ সৃষ্টি করা হবে, যেখান থেকে আমরা গণতন্ত্র ও বিচারমুখী সংস্কৃতির দিকে এগোতে পারি।
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব
লেখার শিরোনাম দেখেই যদি কেউ ভেবে থাকেন, এখানে অমূল্য রতন পেয়ে যাবেন, তাহলে ভুল করবেন। ফেব্রুয়ারি আর এপ্রিল নিয়ে এমন এক গাড্ডায় পড়েছে নির্বাচন যে, কোনো ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করার শক্তি কারও নেই। বিএনপির হাতে মুলা ধরিয়ে দিয়ে এই সরকারই আরও অনেক দিন ক্ষমতায় থাকার বাসনা পোষণ করছে কি না...
১২ ঘণ্টা আগেবিশ্বে পরিবেশদূষণকারী হিসেবে ১৫টি প্রধান দূষক চিহ্নিত করা হয়েছে। পয়লা নম্বরে আছে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার। বিশ্বব্যাপী পরিবেশদূষণে ৫ নম্বর দূষণকারী এখন প্লাস্টিক। দূষণের মাত্রা অনুযায়ী এই অবস্থান নির্ধারিত হয়েছে।
১২ ঘণ্টা আগেবাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) পরিচালিত ‘সিটিজেন পারসেপশন সার্ভে (সিপিএস) ২০২৫’-এর প্রাথমিক প্রতিবেদন আমাদের সামনে একটি হতাশাজনক বাস্তবতা তুলে ধরেছে।
১২ ঘণ্টা আগেঅন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে অনুষ্ঠিত সভা এখন অতীত বিষয়। ওই সভার পর দেশের রাজনীতিতে অনেক কিছুই সমন্বয় হয়ে গেছে এবং এখনো হয়ে যাচ্ছে। রাজনীতি একটি দ্রুত অগ্রসরমাণ বিষয়। তার কয়েক দিনও এক জায়গায় অবস্থানের সুযোগ নেই।
১ দিন আগে