Ajker Patrika

রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত শিক্ষার্থী রেজাউলের বাবা কি ন্যায়বিচার পাবেন

গোলাম ওয়াদুদ, ঢাকা
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২৩, ১৬: ৫৯
রাজনৈতিক সংঘর্ষে নিহত শিক্ষার্থী রেজাউলের বাবা কি ন্যায়বিচার পাবেন

জাতীয় নির্বাচনের বাকি আর মাত্র কয়েক মাস। রাজনীতির মাঠ দখলে মরিয়া রাজনৈতিক দলগুলো। নিজেদের স্বার্থে সমাবেশ, মহাসমাবেশ, পদযাত্রা, জয়যাত্রা, শান্তি সমাবেশ করছে রাজনৈতিক দলগুলো। তাদের শান্তি সমাবেশ ও শান্তিপূর্ণ অবস্থানের ফলে অশান্তি তৈরি হয়েছে জনসাধারণের মধ্যে। ২৯ জুলাই আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশ শেষে ফেরার পথে দুই গ্রুপের সংঘর্ষে একজন শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়েছে। জানা যায়, নিহত শিক্ষার্থীর নাম রেজাউল ইসলাম (২১)। তিনি ঢাকার যাত্রাবাড়ি মাদ্রাসার দাওরা হাদিস বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি শেরপুরের নকলা উপজেলার চরঅষ্টাধর ইউনিয়নের নারায়ণখোলা পশ্চিমপাড়া গ্রামের বর্গাচাষি আব্দুস সাত্তারের ছেলে।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, তিনি সেদিন বায়তুল মোকাররমে নামাজ আদায় করে গুলিস্থানের পথ ধরে যাচ্ছিলেন। তখনই শান্তি সমাবেশ থেকে ফেরা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। সেখানে তাকে কোপানো হয়। হাসপাতালে নিলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। শান্তির ছড়িয়ে না দিয়ে একটি পরিবারের স্বপ্ন এভাবে শেষ করে দেওয়া হলো। তাকে নিয়ে বড় স্বপ্ন দেখত তাঁর বর্গাচাষি বাবা ও গৃহিণী মা। তাদের স্বপ্নের এখন কি হবে! বছরের পর বছর অভাবের সংসার থেকে ছেলেকে পড়ার খরচ যোগান দিয়েছেন তারা। হয়তো ভেবেছিলেন ছেলে পড়াশোনা শেষ করে পরিবারের দায়িত্ব নেবে। তখন তাদের এই কষ্টের দিন আর থাকবে না।

রেজাউল ইসলাম দাওরা হাদিস বিভাগে পড়তেন মানে কওমীর সর্বোচ্চ ক্লাস। যেটাকে মাস্টার্সের সমমান দিয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ বছরই শিক্ষা জীবন শেষ করে কর্মজীবনে প্রবেশ করতেন রেজাউল। বাবা-মার দুঃখ কমানোর নানা প্রতিশ্রুতিও হয়তো তিনি দিয়েছিলেন। কিন্তু তাকে হত্যা করল এই সহিংস রাজনীতি। যেটার সঙ্গে ছিল না তাঁর বা তাঁর বর্গাচাষি বাবার কোনো সম্পৃক্ততা। কে ক্ষমতায় যাবে বা গেলেই তাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হবে এমন চিন্তাও কখনো হয়তো ছিল না তাদের। যে দলই ক্ষমতায় যাক আব্দুস সাত্তারকে চাষাবাদ করেই খেতে হবে। অবস্থা হয়েছে এমন, রাজায় রাজায় যুদ্ধ হয় উলুখাগড়ার প্রাণ যায়। যে রাজনীতির সাতেও ছিলেন না, পাঁচেও ছিলেন না তিনি প্রাণ হারালেন।

ছেলের মৃত্যুর খবরে দিশেহারা বাবা বলেন, ‘ও তো কোনো দল করত না, তাইলে কেন অরে মারল। কত কষ্ট কইরা লেহাপড়া (লেখাপড়া) করাইতাছি। শুক্রবার সকালেও মোবাইলে কথা হইল। পুলাডা ডেঙ্গু পরীক্ষা করবো বইলা তিন হাজার টাকাও চাইছে। জুম্মার দিন বাজারের দোকান বন্ধ আছিলো বইলা পাঠাবার পাই নাই। পরদিন সকালে তো শুনি বাপ আমার নাই। আমার বাপের কী দোষ?’ এ ঘটনায় রেজাউলের বড়বোন ফারহানা আফরিন সুমি বাদি হয়ে পল্টন থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলার তিন দিন পার হলেও এ ঘটনায় এখনও গ্রেপ্তারের খবর পাওয়া যায়নি। তাকে কারা মারল, কেন মারল তা এখনও অজানা।

বাবার এমন আকুতি হয়তো হত্যাকারীদের মনে কোনো অনুভূতি জাগাবে না। কিন্তু তিনি এই হত্যার ন্যায় বিচার চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে। তিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘আমার পুলারে যারা মারছে আপনে তাদের সঠিক বিচার করবেন।’ হয়ত প্রধানমন্ত্রীর কাছে একজন সন্তান হারা বাবার আকুতি পৌঁছাবে। হয়তো ন্যায় পাবে এই বাবা। 

সোমবার নিজ বাড়িতে দাফন করা হয় রেজাউলকে। সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে তাঁর পরিবারের সঙ্গে এখনো সরকার বা আওয়ামী লীগের কেউ দেখা করেনি, খোঁজ নেয়নি বলে জানা যায়। বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আজকের পত্রিকার নালিতাবাড়ি প্রতিনিধি অভিজিৎ সাহা রেজাউলের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তাঁর চাচা আজাহারুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বার ছাড়া কেউ খোঁজ নেননি। আওয়ামী লীগ বা প্রশাসনের কেউ এখনো আসেনি এমনকি যোগাযোগও করেনি। মানুষ একটু খোঁজ খবরও তো নেয়। কিন্তু এত বড় ঘটনায় কেউ আসলো না।’

রাজনৈতিক সহিংসতায় রেজাউল নিহত হয়েছে আজ চার দিন হলো, এখনো তাঁর দরিদ্র পরিবারের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেনি। এই হত্যার বিচার হওয়ার আশ্বাসও কেউ দেয়নি। দরিদ্র পরিবারকে ক্ষতিপূরণের বিষয়েও কোনো আলাপ ওঠেনি। নাকি দরিদ্র পরিবারের সন্তান হওয়ায় তাঁর মৃত্যুর কোনো বিচার হবে না? তাঁর পরিবার কি ক্ষতিপূরণ পাবে না?

লেখক: সহ সম্পাদক, আজকের পত্রিকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শেখ মুজিবকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ছাত্রদল নেতার পোস্ট, শোকজ পেয়ে নিলেন অব্যাহতি

সিলেটের ডিসি হলেন ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে শাস্তি পাওয়া সারওয়ার আলম

আলাস্কা বৈঠকে পুতিনের দেহরক্ষীর হাতে ‘মলমূত্রবাহী স্যুটকেস’ কেন

অপারেশন সিঁদুরে নিহত প্রায় দেড় শ সেনার তালিকা প্রকাশ করে মুছে ফেলল পাকিস্তানি টিভি

মুচলেকা দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়লেন আনন্দ মোহন কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত