Ajker Patrika

সেতু ভবন পোড়ানো নিয়ে হাসিনা-তাপস ‘ফোনালাপ’ ট্রাইব্যুনালে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
সেতু ভবন পোড়ানো নিয়ে হাসিনা-তাপস ‘ফোনালাপ’ ট্রাইব্যুনালে

ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনের সময় শেখ হাসিনাকে বলতে শোনা গেছে, ‘সব জায়গায় আগুন। বিআরটি, বিটিআরসি বন্ধ করে দিছে, পোড়াইয়া দিছে, বিটিভি পোড়াইয়া দিছে। এখন তো ইন্টারনেট বন্ধ, সব পোড়াইয়া দিছে, এখন চলবে কীভাবে।’ তখন অপর প্রান্ত থেকে তাপস বলেন, ‘জি এটা ভালো হয়েছে।’ তখন শেখ হাসিনা বলেন, ‘মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে, আমি যা যা পোড়াতে বলেছি...ও আমাদের সেতু ভবন পোড়াইছে।’

আজ বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ শেখ হাসিনা ও ফজলে নূর তাপসের কথোপকথনের অডিওতে এসব কথা বলতে শোনা যায়। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় সারা দেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনায় করা মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে তানভীর হাসান জোহা সাক্ষ্য দেওয়ার পর ওই অডিও শোনানো হয়। ৫৩তম সাক্ষী হিসেবে জবানবন্দি দেন জোহা। তিনি এই মামলার বিশেষ তদন্ত কর্মকর্তা এবং আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর।

জবানবন্দির শেষ পর্যায়ে ট্রাইব্যুনালকে পাঁচটি অডিও দেন তানভীর হাসান জোহা। এর মধ্যে চারটি শোনানো হয়। যার মধ্যে দুটি অডিও শেখ হাসিনা ও হাসানুল হক ইনুর। আর অন্য দুটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন ভিসি এ এস এম মাকসুদ কামাল ও ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপসের সঙ্গে কথোপকথনের।

ট্রাইব্যুনালের আজকের এই বিচারিক কার্যক্রম বিটিভির মাধ্যমে সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। পরে জোহাকে জেরা করেন পলাতক আসামি শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এ মামলার অপর আসামি পুলিশের সাবেক প্রধান চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। চৌধুরী মামুন এরই মধ্যে রাজসাক্ষী হিসেবে এ মামলায় জবানবন্দি দিয়েছেন।

শেখ হাসিনা ও তাপসের ফোনালাপ হুবহু তুলে ধরা হলো—

শেখ হাসিনা: হ্যালো

তাপস: জি, সালামালাইকুম

শেখ হাসিনা: হ্যাঁ, ওয়ালাইকুম আসসালাম

তাপস: জি

শেখ হাসিনা: বল বাবা। তুমি নরমাল ফোনে কল দেও ইন্টারনেটের অবস্থা ভালো না।

তাপস: নরমাল ফোনেই, নরমাল ফোনেই।

শেখ হাসিনা: আচ্ছা বল বাবা।

তাপস: জি, সন্ত্রাসীরা তো বিভিন্ন জায়গায় রাস্তায় বিভিন্ন সময় ঘুরতেছে। এখন কোথায় কী আক্রমণ করে, বলা যাচ্ছে না তো।

শেখ হাসিনা: না, করতেছে আমরা ওদের আবার ব্যবস্থা নিচ্ছি। আর্মি আর আবাহনী ক্লাবে কি আগুন দিচ্ছে?

তাপস: ওরা মনে হয় সচিবালয়ে আক্রমণ করছে, আবাহনী ক্লাবেও।

শেখ হাসিনা: কোথায়?

তাপস: সচিবালয়ে তো আক্রমণ করছে, আপনি জানেন না?

শেখ হাসিনা: না।

তাপস: হ্যাঁ, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো ওইখানে আছে, সচিবালয়ে কয়েকবার ওরা আক্রমণ করছে, ওরা রাতে যদি আবার কোথাও কোথাও বিভিন্ন সংবেদনশীল বাসাবাড়িতে আক্রমণ করে, তাহলে তো ইয়ে হবে।

শেখ হাসিনা: রাতের বেলা সব ভিজিলেন্স থাকবে এবং এই এত দিন তো...। আচ্ছা ঠিক আছে আমি এখনি ব্যবস্থা নিচ্ছি। একটু আস্তে আস্তে অনেক জায়গায় গেদারিং ক্লিয়ার হচ্ছে।

তাপস: ওরা মনে হচ্ছে না ইয়ে করবে, রাতে মনে হয় ওদের আরও অনেক কিছু পরিকল্পনা আছে মনে হচ্ছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তো আমাকে তা-ই বলল, আভাস দিল এবং আপনাকেও মনে হয় বলছে কিছু যে, রাতে যদি সর্বোচ্চ না ইয়ে করে, করবেন নাকি?

শেখ হাসিনা: কী করব?

তাপস: মানে সেনাবাহিনী দিবেন?

শেখ হাসিনা: বাবা, একটু চিন্তা করে কথা কইও।

তাপস: জি

শেখ হাসিনা: এটাই তাদের আকাঙ্ক্ষা।

তাপস: বুঝতেছি। আমি টেকনিক্যালি এইটা বুঝতেছি। কিন্তু ওরা মনে হয় ওই পথে নেওয়ার জন্য ইয়ে করছে।

শেখ হাসিনা: দরকার নাই, ওটা দরকার নাই। আমি সেনাপ্রধানের সঙ্গে কথা বলছি। ওরা রেডি থাকবে ঠিক আছে। এখন তো আমরা অন্য ইয়ে করতেছি। ড্রোন দিয়ে ছবি নিচ্ছি আর হেলিকপ্টারে ইয়ে হচ্ছে, মানে কয়েক জায়গায়।

তাপস: তাহলে ওই কিছু ছবি দেখে পাকড়াও করা যায় না রাতের মধ্যে?

শেখ হাসিনা: সবগুলিকে গ্রেপ্তার করতে বলেছি রাতে।

তাপস: হ্যাঁ, পাকড়াও পাকড়াও করলে ওদেরকে।

শেখ হাসিনা: না ওটা বলা হয়ে গেছে, ওটা নিয়ে র‍্যাব, ডিজিএফআই, এনএসআই সবাইকে বলা হয়েছে। যে যেখান থেকে যে কয়টা পারবা, ধইরা ফেলো।

তাপস: জি।

শেখ হাসিনা: ওটা বলা আছে, আর যেখানে জটলা দেখবে সেখানে ওপর থেকে, এখন ওপর থেকে করাচ্ছি, অলরেডি গুরু হয়েছে কয়েকটা জায়গায়।

তাপস: জি জি, মোহাম্মদপুর। মোহাম্মদপুর থানার দিকে মনে হয় ওরা যাচ্ছে একটা। আমাকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলল।

শেখ হাসিনা: মোহাম্মদপুর থানার দিকে?

তাপস: হ্যাঁ

শেখ হাসিনা: ওখানে পাঠাইয়া দিক র‍্যাবকে।

তাপস: জি, তাহলে আপনার নির্দেশনা লাগবে।

শেখ হাসিনা: আমার নির্দেশনা দেওয়া আছে। ওপেন নির্দেশনা দিয়ে দিছি এখন। এখন লেথাল উইপন ব্যবহার করবে। যেখানে পাবে সোজা গুলি করবে।

তাপস: জি জি।

শেখ হাসিনা: ওটা বলা আছে, আমি এত দিন বাধা দিয়ে রাখছিলাম। ওই যে ছাত্ররা ছিল, ওদের নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে, তারপর তো ওই...।

তাপস: না রাতে ছাত্র না। রাতে হলো ওরা সন্ত্রাসী।

শেখ হাসিনা: ওই যে আমাদের রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুলের একটা বাচ্চা ছেলে। তার শিক্ষক তাকে ডেকে নিয়ে আসছে, শিক্ষক নাকি আবার শিবির করত, ওরা জানে না। তারপর সেই ছেলেটা মারা গেছে। তার মাত্র বুকে একটা গুলি অথচ পুলিশ কিন্তু কোনো রিভলবার ব্যবহার করেনি।

তাপস: হ্যাঁ...জি।

শেখ হাসিনা: এই রকম ঘটনা তারা ঘটিয়েছে।

তাপস: জি, আপনি সর্বোচ্চ নিরাপত্তা ইয়ে করেন।

শেখ হাসিনা: সব জায়গায় আগুন... বিআরটি, বিটিআরসি বন্ধ করে দিয়েছে, পুড়িয়ে দিয়েছে, বিটিভি পুড়িয়ে দিয়েছে। এখন তো ইন্টারনেট বন্ধ সব পুড়িয়ে দিয়েছে, এখন চলবে কীভাবে?

তাপস: জি, এটা ভালো হয়েছে।

শেখ হাসিনা: মেশিনপত্র সব পুড়ে গেছে। আমি বলছি যা যা পোড়াতে...ও আমাদের সেতু ভবন পুড়িয়ে দিয়েছে।

উপস: জি, ওরা রাতে মনে হয় আরও ব্যাপক আক্রমণ করবে।

হাসিনা: হ্যাঁ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সেটা পুড়িয়ে দিয়েছে।

তাপস: জি, কারণ এই যে আমি ফিরলাম, আমি দেখলাম যে রাস্তায় রাস্তায় ওরা বিভিন্ন জায়গায় ইয়ে করতে।

শেখ হাসিনা: কোন কোন জায়গায়?

তাপস: বনানীতে। বনানী গুলশানে তো সচরাচর করে না। কিন্তু বনানী গুলশানে ওরা ইয়েতে চলে আসছে। কোথাও কোথাও ইয়ে করতে পারে। মুভমেন্ট আছে সব জায়গায়।

শেখ হাসিনা: ঠিক আছে আমি দেখছি।

তাপস: জি।

শেখ হাসিনা: তোমরা সাবধানে থেকো।

তাপস: জি আমি সাবধানে আছি।

শেখ হাসিনা: আচ্ছা।

তাপস: ধরপাকড় করতে হবে, সব ধরে ফেলতে হবে রাতের মধ্যে।

শেখ হাসিনা: না না ওটা বলে দেওয়া আছে অলরেডি। আর একটু রাত গাঢ় হলেই শুরু হবে।

তাপস: জি, জি।

শেখ হাসিনা: অন্য ব্যবস্থা নিচ্ছি।

তাপস: জি জি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

প্রধান উপদেষ্টার মুখ্য সচিবকে জনপ্রশাসন বিষয়ক কমিটি থেকে বাদ

ঘরে সদ্য বিবাহিত বিক্রয় প্রতিনিধির লাশ, চিরকুটে লেখা ‘জীবন খুবই কঠিন’

নিয়মিত দাঁত ব্রাশ করেও মুখে দুর্গন্ধের কারণ, পরিত্রাণের উপায়

২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৯ অক্টোবর হাইস্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষা নয়: শিক্ষা মন্ত্রণালয়

রাজশাহী খাদ্য অফিস: ‘আশীর্বাদপুষ্ট’ কর্মকর্তা বহাল

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত