টিআইয়ের প্রতিবেদন একপেশে: তথ্যমন্ত্রী

দুর্নীতির ধারণা সূচক নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল (টিআই) প্রকাশিত প্রতিবেদন বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে গতানুগতিক ও একপেশে। তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী হাছান মাহমুদ আজ এ মন্তব্য করেছেন। ভুল তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে বাংলাদেশ নিয়ে অনেকটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে বলেও দাবি করেন তিনি।

টিআইয়ের দুর্নীতির সূচকে এবার এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। সর্বোচ্চ দুর্নীতিগ্রস্ত দেশের তালিকায় আগে ১২ ক্রমিকে ছিল বাংলাদেশ। এবার বাংলাদেশের অবস্থান ১৩ নম্বরে হলেও গত তিন বছরের মতো স্কোর ১০০-তে ২৬ই রয়েছে।

সচিবালয়ে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে তথ্যমন্ত্রী বলেন, টিআই যে তথ্য প্রকাশ করেছে, এটি গতানুগতিক ছাড়া অন্য কোনো কিছু নয়। টিআই একটি এনজিও। বিভিন্ন জায়গা থেকে তারা ফান্ড সংগ্রহ করে চলে। তারা জাতিসংঘের অ্যাফিলিয়েটেড কোনো সংস্থাও নয়। এটিকে আমাদের দেশে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হলেও ভারতসহ অনেক দেশে গুরুত্ব দেওয়া হয় না। আমরা মনে করি এ ধরনের সংগঠন থাকা ভালো, কিন্তু সেই সংগঠনের কোনো প্রতিবেদন যদি ভুল তথ্য-উপাত্তে হয় কিংবা ফরমায়েশি, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বা গতানুগতিক হলে সেই সংস্থাটির মানমর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়, সেটি একপেশে হয়। এবারের রিপোর্টটাও গতানুগতিক, একপেশে। তারা যখন পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে যায়, ভুল তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে যখন প্রতিবেদন প্রকাশ করে, যখন তাদের মধ্যে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য জড়িত হয়ে যায়, তখন প্রতিবেদনও সে রকম হয়।

মন্ত্রী আরও বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন গঠন আইন নিয়ে টিআইবি বিবৃতি দিয়েছে। তারা তো দুর্নীতি নিয়ে কাজ করে। নির্বাচন কমিশন আইন কিংবা নির্বাচন কমিশন গঠন পুরো বিষয়টি রাজনৈতিক। রাজনৈতিক ইস্যুতে বিবৃতি দিয়ে টিআইবি প্রমাণ করেছে তারা রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহৃত হয়। টিআইবির বিবৃতি ও বিএনপির বিবৃতির মধ্যে কোনো পার্থক্য ছিল না।’

সরকার টিআইয়ের প্রতিবেদন প্রত্যাখ্যান করছে কি না, সেই প্রশ্নের জবাব দেননি আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, টিআইয়ের রিপোর্ট একপেশে, ভুল তথ্যের ওপর ভিত্তি করে এবং অনেকটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে।

বিএনপি সরকারে থাকাকালে টিআই বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে তিনবার চ্যাম্পিয়ন করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে। আওয়ামী লীগ নেতারা এটি নিয়ে বহু বক্তব্য-বিবৃতি দিয়েছেন। এ বিষয়ে এক প্রশ্নে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তখন দিয়েছে, যারা আজকে টিআইবিতে কাজ করছেন, তখন এঁদের অনেকে ছিলেন না, তখন অন্য অনেকে ছিলেন। তখন যে দুর্নীতি হয়েছে, সেটির প্রমাণ হয়েছে। আরাফাত রহমান কোকোর টাকা বিদেশ থেকে ফেরত এসেছে, তারেক রহমানের দুর্নীতির বিষয়ে এফবিআই এসে বাংলাদেশে সাক্ষ্য দিয়ে গেছে। হাওয়া ভবন প্রতিষ্ঠা করে প্যারালাল সরকার পরিচালনা করে দুর্নীতি করা হতে সেটি সর্বজনবিদিত ও আদালতের বিচারেও প্রমাণিত হয়েছে।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি ভালোর জন্য লবিস্ট নিয়োগ করে বলে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মঙ্গলবার স্বীকার করে নিয়েছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর সহকর্মীদের চাপের মুখে পাঁচ মিনিট পর এসে বললেন, কোনো লবিস্ট নিয়োগ করিনি। আসলে প্রথমটাই সত্য ভাষণ ছিল। শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করে কোনো লাভ নেই। বিভিন্ন দেশের সরকার দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার জন্য এবং দেশের রপ্তানি বাণিজ্য ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি এবং ট্যুরিজমকে প্রোমোট করার জন্য পিআর ফার্ম নিয়োগ করে।

নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগে আইন প্রণয়নের বিষয়ে এক প্রশ্নে হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপির কথা শুনে মনে হচ্ছে স্বয়ং জিবরাইলকে (আ.) যদি দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং উনি এসে যতক্ষণ বিএনপিকে না বলবে এমন একটি কমিশন গঠন করে দেব যেটি বিএনপিকে ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে সেটার আগ পর্যন্ত তারা সন্তুষ্ট হবেন না।