Ajker Patrika

বারনামাকে ড. ইউনূস

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আসিয়ানের নেতা মালয়েশিয়ার প্রভাব কাজে লাগাতে চায় বাংলাদেশ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ১৬ আগস্ট ২০২৫, ১৭: ২২
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: বারনামা
প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি: বারনামা

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবর্তন-সংস্কার প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিচ্ছেন। এই হট সিটে বসার বিষয় এবং বাংলাদেশের সংস্কার প্রক্রিয়ায় বাধাসহ নানা বিষয়ে তিনি কথা বলেছেন মালয়েশিয়ার রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত সংবাদ সংস্থা বারনামার সঙ্গে। এই সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, তিনি স্বেচ্ছায় এই দায়িত্ব গ্রহণ করেননি, বরং জনগণের ইচ্ছাতেই তাঁর দায়িত্ব নেওয়া।

মালয়েশিয়ায় তিন দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে গিয়েছিলেন ড. ইউনূস। মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী আনোয়ার ইব্রাহিমের আমন্ত্রণে ১১ থেকে ১৩ আগস্ট তিনি সফর করেন। সফরে দেশটির শীর্ষ নেতৃত্বের পাশাপাশি ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গেও বৈঠক করেন তিনি। বেশ কয়েকটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তিও স্বাক্ষরিত হয়।

মালয়েশিয়াতে অবস্থানের সময়ই বারনামাকে একটি সাক্ষাৎকার দেন ড. ইউনূস। সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন, বারনামার এডিটর ইন চিফ আরুল রাজু দুরার রাজ। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বারনামার ইকোনমিক সার্ভিসের অ্যাসিস্ট্যান্ট এডিটর কিশু কুমারী সুসিদারাম এবং ইন্টারন্যাশনাল নিউজ সার্ভিসের এডিটর ভুন মিয়াও পিং।

সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা জানান, রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় বাংলাদেশ আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর পক্ষ থেকে আন্তর্জাতিকভাবে আরও জোরালো উদ্যোগ চায়। বিশেষ করে সংস্থাটির বর্তমান চেয়ারম্যান হিসেবে মালয়েশিয়ার ভূমিকার ওপর জোর দিচ্ছে ঢাকা।

ড. ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেওয়ার অভিজ্ঞতা এবং আসিয়ানের নেতৃত্বস্থানীয় অবস্থান—এই দুই দিক মিলিয়ে মালয়েশিয়া এক অনন্য অবস্থানে আছে। তারা চাইলে এ সমস্যা সমাধানে আঞ্চলিক পর্যায়ে ব্যাপক উদ্যোগ গ্রহণে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।

তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করছি, মালয়েশিয়া পুরো আলোচনা প্রক্রিয়ায় তাদের প্রভাব খাটাবে, যাতে করে আমরা এই সমস্যাকে কাটিয়ে উঠতে পারি।’

সাক্ষাৎকারে ড. ইউনূস সতর্ক করে বলেন, মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও সরকারি বাহিনীর লড়াইয়ের কারণে রোহিঙ্গা সংকট আরও জটিল আকার ধারণ করেছে। নতুন করে পালিয়ে আসছে আরও শরণার্থী।

তিনি জানান, শুধু গত ১৮ মাসে ১ লাখ ৫০ হাজার নতুন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এর আগে এই সংখ্যা ছিল ১২ লাখ। এতে পরিস্থিতি দিন দিন আরও শোচনীয় হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, যুক্তরাষ্ট্র রোহিঙ্গাদের জন্য সব অর্থায়ন স্থগিত করে দিয়েছে। ফলে বাংলাদেশের জন্য এটা বিশাল সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা আরও জানান, টেকসই সমাধানের খোঁজে আগামী কয়েক মাসে রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন আয়োজন করা হবে। এর প্রথমটি বসছে কক্সবাজারে চলতি মাসের শেষ দিকে। রোহিঙ্গাদের দায়িত্ব নেওয়ার অষ্টম বার্ষিকীর সঙ্গে মিল রেখেই এই আয়োজন হতে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে সংবিধান ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সংস্কার কার্যক্রম প্রসঙ্গে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমি নই, জনগণই এই পরিবর্তন চাচ্ছে। আমি শুধু তাদের সেই পথে যেতে সাহায্য করছি, যেদিকে তারা যেতে চায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমি নিজে কিছু চাপিয়ে দিই না। আমি কেবল অপেক্ষা করি জনগণের ইচ্ছা কী, সেটাই দেখি। তারপর সেই ইচ্ছাকে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করি।’

২০০৬ সালে ক্ষুদ্রঋণের উদ্ভাবক হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার জয়ী ড. ইউনূসের রাষ্ট্র পরিচালনার মতো কোনো দায়িত্ব নেওয়ার কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তবে তিনি বলেন, পরিস্থিতি তাঁর সামনে অন্য কোনো বিকল্প রাখেনি। নিজেকে তিনি নেতা হিসেবে নয়, বরং বহুদিন ধরে অনুপস্থিত গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার এক অভিভাবক হিসেবে বর্ণনা করেন। তবে সামনে কঠিন চ্যালেঞ্জ আছে, সেটিও তিনি স্বীকার করেন।

ড. ইউনূস বলেন, ‘অনেক জটিলতা আছে। অনেকে এটিকে (এই প্রক্রিয়া) ভেস্তে দিতে চায়। যারা বাংলাদেশ থেকে উৎখাত হয়েছে, সেই রাজনৈতিক শক্তিগুলো পুরো ব্যবস্থাকে অস্থিতিশীল করতে চাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, গত দেড় দশকে যারা প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছে, তাদের অনেকেই কোনো দিন ভোট দেওয়ার সুযোগ পায়নি।

তরুণদের ভোটের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘কেউ ১০ বছর ধরে অপেক্ষা করেছে, কেউ বা ১৫ বছর। কল্পনা করুন, ১৮ বছরে পৌঁছালেন, ভোট দেবেন বলে মুখিয়ে আছেন—কিন্তু সুযোগই এল না, কারণ আসলে কোনো নির্বাচনই হয়নি। এখন তারা ১৫ বছর পর প্রথমবারের মতো ভোট দেবে।’

ড. ইউনূসে কথায় জাতীয় পরিবর্তনের প্রত্যাশা স্পষ্ট। আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ফাইল বাসায় নিয়ে গায়েব করেন উপদেষ্টা— আসিফ মাহমুদের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের মেয়রের অভিযোগ

চীনা যুদ্ধবিমান থেকে এলএস-৬ বোমা ফেলে কেন নিজ দেশে ‘হত্যাযজ্ঞ’ চালাল পাকিস্তান

ভবদহের দুঃখ ঘোচাতে আসছে সেনাবাহিনী, খনন করবে ৫ নদ-নদীর ৮১.৫ কিমি

তাহসান তো জিহাদিদের মতোই কথা বললেন: তসলিমা

বেশির ভাগ ডেঙ্গু রোগী মারা যাচ্ছে শক সিনড্রোমে: স্বাস্থ্য অধিদপ্তর

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত