Ajker Patrika

সর্বোচ্চ শাস্তির প্রয়োগ না থাকায় মজুত বন্ধ হচ্ছে না 

এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা
সর্বোচ্চ শাস্তির প্রয়োগ না থাকায় মজুত বন্ধ হচ্ছে না 

তেল নিয়ে তেলেসমাতি যেন শেষই হচ্ছে না। দফায় দফায় দাম বাড়ানোর পরও বাজারে ভোজ্য তেলের সংকট রয়েছে। যার কারণে সারা দেশেই অভিযান পরিচালনা করছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। করছে জরিমনাও। তারপরও যেন তেল সরবরাহ স্বাভাবিক হচ্ছে না বাজারে। এর কারণে বেশি দামে তেল কিনে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন ভোক্তারা। অনেকেরই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে এই নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যটি।

সম্প্রতি পটুয়াখালীর দুমকিতে মুরাদিয়া বোর্ড অফিস বাজারে তিন ব্যবসায়ীর গুদাম থেকে ৩ হাজার ১০৬ লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে। তেল মজুত রাখার দায়ে এক ব্যবসায়ীকে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। অন্যদিকে ৭ হাজার লিটার সয়াবিন তেল জব্দ করা হয়েছে গাজীপুর থেকে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা দুটি গুদামে অভিযান চালিয়ে ওই তেল জব্দ করেন। পরে ওই দুই গুদাম মালিককে তিন লাখ টাকা জরিমানা করা হয়।

৯ মে পাবনার ঈশ্বরদীতে শ্যামল স্টোর নামে একটি মুদিদোকানের গুদামে অভিযান চালিয়ে ১৮ হাজার ২৪৪ লিটার ভোজ্যতেল উদ্ধার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ওই দোকানের মালিক শ্যামল দত্তকে ২০ হাজার টাকা জরিমানাও করা হয়েছে। এ ছাড়া কুষ্টিয়া শহরের বড়বাজার এলাকায় মেসার্স মা ফুড প্রোডাক্টসের গুদামে পাওয়া গেছে ৪০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের কুষ্টিয়া জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তারা অভিযান চালিয়ে তেল মজুতের দায়ে গুদামমালিককে ৩০ হাজার টাকা জরিমানা করেন।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী বিক্রেতার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা হলো-পণ্যের মোড়ক ব্যবহার না করা, মূল্য তালিকা প্রদর্শন না করা, অধিক মূল্যে পণ্য বিক্রয় করা, ভেজাল পণ্য বিক্রয়, খাদ্যপণ্যে নিষিদ্ধ দ্রব্যের মিশ্রণ, অবৈধ প্রক্রিয়ায় পণ্য উৎপাদন, মিথ্যা বিজ্ঞাপন দ্বারা প্রতারণা, প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ না করা, ওজনে ও পরিমাপে কারচুপি, নকল পণ্য প্রস্তুত, মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বিক্রয়ের ক্ষেত্রে। 

জানতে চাইলে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ. এইচ. এম. সফিকুজ্জামান বলেন, ‘মজুতদারদের বিরুদ্ধে যে জরিমানা হচ্ছে সেটা আইন মেনেই করা হচ্ছে।’

১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ২৫ (১)-এ বলা হয়েছে, ‘মজুতদারি অথবা কালোবাজারির অপরাধে কেউ দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি মৃত্যুদণ্ড অথবা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা ১৪ বছর পর্যন্ত সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত হইবেন। সেই সঙ্গে তাকে জরিমানাও করা যাবে।’

এদিকে মজুতদারদের বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির বিধান থাকলেও তা প্রয়োগ করা হচ্ছে না। যার কারণে মজুতদারিও বন্ধ হচ্ছে না বলে মনে করেন আইনজ্ঞরা। তারা মনে করেন জরিমানা করে দায়সারা শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। এর জন্য বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করে শাস্তির বিধান নিশ্চিত করতে পারলে মজুতদারি বন্ধ হবে বলে মনে করেন তারা। 

এ বিষয়ে ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামীম আজিজ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘১৯৭৪ সালের বিশেষ আইন এখনই প্রয়োগ করা উচিত। কেননা এই জরিমানার মাধ্যমে গুরু অপরাধে লঘু দণ্ড দেওয়া হচ্ছে। কঠিন সাজার বিধান প্রয়োগ করলে মজুতদারি বন্ধ হবে এবং বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিক হবে বলে মনে করেন তিনি।’

এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী তানভীর আহমেদ বলেন, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে সরাসরি মজুতদারির শাস্তির বিধান নেই। যে অপরাধের জন্য যে আইন সেটিই প্রয়োগ করা উচিত। মজুতদারি গুরুতর অপরাধ। এর ফলে জন জীবনে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হচ্ছে। মজুতদারির জন্য জরিমানা বড় অপরাধে ছোট সাজা। তাই বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করা হলে এই অপরাধ কমবে বলে মনে করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শিক্ষার্থীদের ‘কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে’ সপরিবারে পালিয়েছেন বিএসবির বাশার

পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে ‘প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপের’ নির্দেশ

কাশ্মীরে বিধ্বস্ত বিমানের অংশবিশেষ ফরাসি কোম্পানির তৈরি, হতে পারে রাফাল

সীমান্তে সাদা পতাকা উড়িয়ে আত্মসমর্পণের ইঙ্গিত দিয়েছে ভারত: পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী

পাকিস্তানে হামলায় ‘লোইটারিং মিউনিশনস’ ব্যবহারের দাবি ভারতের, এটি কীভাবে কাজ করে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত