Ajker Patrika

এপির প্রতিবেদন /শেখ হাসিনার পতনের ৬ মাস পরেও অস্থিরতায় হাবুডুবু খাচ্ছে বাংলাদেশ

আপডেট : ০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২: ৫২
শেখ হাসিনার ভাষণকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ করে ছাত্র-জনতা। রাতেই রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাড়ি ভাঙা হয়। ছবি: মেহেদী হাসান
শেখ হাসিনার ভাষণকে কেন্দ্র করে গত বুধবার রাতে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি অভিমুখে ‘বুলডোজার মিছিল’ করে ছাত্র-জনতা। রাতেই রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে বাড়ি ভাঙা হয়। ছবি: মেহেদী হাসান

ছয় মাস আগে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর নতুনভাবে দেশ গড়ার প্রত্যয় নিয়ে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে বাংলাদেশের দায়িত্ব তুলে দেন ছাত্র-জনতা। কিন্তু শেখ হাসিনার ১৫ বছরের ফ্যাসিজমের অবসান হলেও নতুন নেতৃত্বে বাংলাদেশ খুব ভালো নেই। ড. ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার দেশজুড়ে অস্থিরতা, অর্থনৈতিক সংকটসহ মানবাধিকার লঙ্ঘনের মতো বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।

সর্বশেষ, গত বুধবার রাত থেকে শেখ হাসিনার সমর্থকদের লক্ষ্য করে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। সাবেক সংসদ সদস্য, মন্ত্রী, আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘর এবং অনেক প্রতিষ্ঠানে আগুন দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়িতে হামলা চালানো হয়েছে।

এসব ঘটনার পর আজ শুক্রবার সকালে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস উইং একটি সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে জানায়, এই ধরনের সহিংসতার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘অন্তর্বর্তী সরকার গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ করছে, কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী দেশজুড়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বাড়িঘরে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করছে। সরকার এই ধরনের কাজ কঠোরভাবে দমন করবে।’ বিবৃতিতে আরও বলা হয়, সরকার জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুত।

শুক্রবার বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষ থেকে আরেকটি বিবৃতি প্রকাশ করা হয়। বিবৃতিতে তিনি দেশের সকল নাগরিককে তাৎক্ষণিকভাবে আইনশৃঙ্খলা পুনরুদ্ধার করতে এবং শেখ হাসিনা ও তাঁর সমর্থকদের বাড়িঘর ও স্থাপনায় হামলা না করার আহ্বান জানান।

তবে এই বিবৃতিগুলো আসে ৩২ নম্বরসহ বিভিন্ন স্থানে হামলার ২৪ ঘণ্টার বেশি সময় পরে। হামলার আগে সারা দিন শেখ হাসিনার সমালোচক ও ছাত্র আন্দোলনের নেতারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচারণা চালান। তাঁরা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের দিকে ‘বুলডোজার মিছিল’ করার ঘোষণা দেন। হামলাকারীরা সেখানে ঢুকে হামলা চালালেও পুলিশ নিষ্ক্রিয় থাকে। পরে সেনাবাহিনীর একটি দল তাদের থামানোর চেষ্টা করে, কিন্তু পরে সেখান থেকে সরে যায়।

ঢাকার একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসকে জানান, গত বুধবার থেকে দেশজুড়ে প্রায় ৭০টি হামলার খবর পাওয়া গেছে। আজ শুক্রবার দেশের শীর্ষস্থানীয় ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, সারা দেশে শেখ হাসিনার সমর্থকদের লক্ষ্য করে কমপক্ষে ২০টি জেলায় হামলার ঘটনা ঘটেছে। চ্যানেল ২৪-এর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৩৫টি জেলায় সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

গণ-অভ্যুত্থান

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের মুখে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর ৮ আগস্ট শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে দেশের দায়িত্ব দেন ছাত্র-জনতা। বর্তমানে ড. ইউনূসের নেতৃত্বেই অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনা করছে। সামরিক বাহিনী সরকারকে সহায়তা করছে।

এদিকে শেখ হাসিনার দল আওয়ামী লীগ ফেব্রুয়ারিতে বিক্ষোভ ও ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। এর জেরেই ক্ষুব্ধ জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকারীরা গত বুধবার ধানমন্ডির ৩২ নম্বর ভাঙচুর করেছেন বলে জানা গেছে।

গত বৃহস্পতিবার অন্তর্বর্তী সরকারের দেওয়া এক বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ভারত থেকে পলাতক শেখ হাসিনার উসকানিমূলক বক্তব্য জনগণের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে।’

অন্যদিকে শেখ হাসিনা ভারতে বসে ড. ইউনূসকে দায়ী করে বলেছেন, তাঁর সরকার হামলা ঠেকাতে ব্যর্থ হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় কূটনীতিককে তলব করে এবং শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যকে ‘মিথ্যা ও উসকানিমূলক’ বলে অভিহিত করে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন জানান, শেখ হাসিনার সাম্প্রতিক বক্তব্যের প্রতিবাদে ভারতের ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনারের কাছে একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। ভারতকে অনুরোধ করা হয়েছে, তারা যেন শেখ হাসিনার এমন বক্তব্য প্রচার করা থেকে বিরত থাকে।

শেখ হাসিনা কি ফিরে আসতে পারেন

১৫ বছরের শাসনামলে দুর্নীতি, দমন-পীড়ন, গুম, খুন, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও গণহত্যার অভিযোগে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশে ফিরলেই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হবে এবং তিনি বিচারের মুখোমুখি হবেন। কিন্তু তিনি কি দেশে ফিরতে পারবেন?

ভারত থেকে দেওয়া বক্তৃতা এবং ফাঁস হওয়া একাধিক ফোনালাপে দেশে ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্যদিকে, অন্তর্বর্তী সরকার ভারত থেকে তাঁকে ফেরানোর অনুরোধ জানালেও এ বিষয়ে এখনো কোনো জবাব দেয়নি দিল্লি। বাংলাদেশ ইন্টারপোলকেও শেখ হাসিনাকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে অনুরোধ করেছে।

আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের বেশির ভাগ দেশ ছেড়েছেন। কেউ কেউ কারাগারে আছেন, বাকিরা আত্মগোপনে। দলটির দাবি, শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে সারা দেশে শতাধিক কর্মী ও সমর্থক নিহত হয়েছেন। তবে এ দাবির সত্যতা যাচাই করেনি এপি।

এমন পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনার দেশে ফেরার বিষয়টি খুবই কঠিন এবং অসম্ভব বলেই মনে করা হচ্ছে।

সংস্কার নিয়ে অনিশ্চয়তা

অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনব্যবস্থা, আইনের শাসন, প্রশাসনিক কাঠামোসহ ছয়টি সংস্কার কমিশন গঠন করেছে।

সরকার বলছে, সংস্কারের বিষয়ে এসব কমিশনের সুপারিশ শিগগির প্রকাশ করা হবে। তবে বিএনপি দ্রুত নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। তাদের দাবি, দীর্ঘমেয়াদি সংস্কার কার্যক্রম নির্বাচিত সরকারের অধীনে হওয়া উচিত।

মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ) সরকারকে বিচারবহির্ভূত আটক ও সমালোচকদের দমনমূলক আইনের হাত থেকে রক্ষা করতে বলেছে। এ ছাড়া সরকার ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করলেও নতুন অধ্যাদেশে একই ধরনের বিতর্কিত ধারা সংযুক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)।

স্বাধীন সংবাদমাধ্যম দমনের অভিযোগ এনেছে সম্পাদকদের সংগঠন ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম সংস্থা কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টস (সিপিজে) ও রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স (আরএসএফ) বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারকে সাংবাদিকদের ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে। তবে সরকার বলছে, দেশে কোনো গণমাধ্যমের ওপর নিপীড়ন চালানো হয়নি।

এদিকে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ অভিযোগ করেছে, সম্প্রতি দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নির্যাতন বেড়েছে। অন্যদিকে সরকার বলছে, এসব সহিংসতা রাজনৈতিক কারণে হয়েছে, ধর্মীয় কারণে নয়।

ইসলামপন্থীদের উত্থান

শেখ হাসিনার পতনের পর সবচেয়ে চিন্তার যে বিষয়, সেটি হলো বাংলাদেশে আবারও ইসলামপন্থী সংগঠনগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের একজন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও জাতীয় নির্বাচন পর্যবেক্ষণকারী একটি সংস্থার প্রধান নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ বলেন, ‘এই ধরনের সহিংসতা নির্বাচনের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক উত্তরণের আকাঙ্ক্ষা হুমকির মুখে ফেলতে পারে। চরমপন্থী দল ও ইসলামপন্থী গোষ্ঠীগুলো মূলত বর্তমান রাজনৈতিক শূন্যতার সুযোগ নিচ্ছে।’

এ ছাড়া অভ্যুত্থানের সময় জেল থেকে পলাতক প্রায় ৭০০ বন্দীর মধ্যে অন্তত ৭০ জন চরমপন্থী ও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি বলে জানা গেছে। এটিও বড় আশঙ্কার বিষয়।

পরবর্তী নির্বাচন কবে

চলতি বছরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচনের আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। অন্যথায় তারা আন্দোলনে যাবে বলে জানিয়ে দিয়েছে।

অন্যদিকে জুলাই-আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের নেতা ও জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে বারবার বলা হচ্ছে, তারা নির্বাচনের আগে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বর্তমান সরকারকে সময় দেবে।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাপানি সম্প্রচারমাধ্যম এনএইচকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জানান, চলতি বছরের শেষ নাগাদ জাতীয় নির্বাচন হতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

দেশজুড়ে নির্বাচনী আমেজ

  • বিভিন্ন বিষয়ে মতবিরোধ থাকলেও রাজনৈতিক দলগুলো এখন নির্বাচনমুখী।
  • বিএনপিসহ কয়েকটি দল ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও প্রকাশ করেছে।
  • জামায়াত শিগগির তালিকা চূড়ান্ত করবে, এনসিপি প্রার্থী দেবে ৩০০ আসনে।
  • প্রার্থী ঘোষণা করেছে আরও বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল।
রেজা করিম, ঢাকা 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে বেজে উঠেছে নির্বাচনী সুর। রাজনৈতিক দলগুলো হঠাৎ নির্বাচনমুখী হয়ে উঠেছে। আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন আয়োজনের শেষ পর্যায়ের প্রস্তুতি সারছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ফলে জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়ন এবং গণভোট নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতার মধ্যেও দেশজুড়ে এখন নির্বাচনী আমেজ।

বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও সূত্র বলছে, জুলাই জাতীয় সনদ, গণভোটসহ বিভিন্ন বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মতভিন্নতায় পাল্টাপাল্টি অভিযোগে পরিস্থিতি ক্রমেই ঘোলা হচ্ছিল। সংশয় ও অনিশ্চয়তা তৈরি হয় নির্বাচন নিয়ে। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকারের কয়েকজন উপদেষ্টা কয়েকটি দলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করেন। তাঁদের প্রচেষ্টাতেই দলগুলো মতবিরোধ পাশে রেখে নির্বাচনী তৎপরতা শুরু করেছে। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই সংসদ নির্বাচন।

বিএনপিসহ কয়েকটি দল ইতিমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকাও ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীও প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা করেছে। শিগগির তালিকা চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। এ দুই দলের সম্ভাব্য প্রার্থীরা গণসংযোগও শুরু করেছেন। জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) প্রাথমিকভাবে কয়েকজনের নাম বলেছে।

জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে রাজনৈতিক দলগুলো আগে থেকে প্রার্থী বাছাই, দল গোছানোসহ বিভিন্ন প্রস্তুতি শুরু করে। বিএনপি গত সোমবার সংবাদ সম্মেলন করে জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে ২৩৭টিতে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে। দলটির নেতারা বলছেন, এটি সম্ভাব্য তালিকা। তফসিল ঘোষণার পর প্রয়োজনে এই তালিকায় অদলবদল হতে পারে। এর মধ্যে মাদারীপুর-১ আসনের প্রার্থীর নাম মঙ্গলবার স্থগিত করেছে দলটি।

বিএনপি প্রার্থী তালিকা ঘোষণার পর এনসিপিও প্রাথমিকভাবে কয়েকজন প্রার্থীর নাম বলেছে। দলটি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার কথা জানিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী শিগগির প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করার ঘোষণা দিয়েছে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগবিহীন ভোটের মাঠে এই তিন দলের বাইরেও ৫০ আসনে একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে গণঅধিকার পরিষদ। ১৩৮ আসনে প্রার্থী দিয়েছে গণতন্ত্র মঞ্চে থাকা ৬ দল। গণসংহতি আন্দোলন গতকাল বুধবার ৯১টি আসনে দলীয় প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। এবি পার্টি ১০৯, খেলাফত মজলিস ২৫৬, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস ২৬৮ এবং ইসলামী আন্দোলন প্রায় ৩০০ আসনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে। এর বাইরেও অধিকাংশ দল সম্ভাব্য একক প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নির্বাচনমুখী এসব দলের প্রার্থী, নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের গণসংযোগে সাধারণ মানুষ পাচ্ছেন ভোটের আমেজ।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন নিয়ে আর সংশয় নেই বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের মেহেদীবাগের বাসভবনে তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিএনপির প্রার্থী ঘোষণার মাধ্যমে দেশের মানুষ পুরোপুরি নির্বাচনী ট্রেনে উঠে গেছে। ফেব্রুয়ারিতে এই ট্রেন গন্তব্যে পৌঁছাবে। এখানে আর কোনো সংশয় নেই।’

আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘জুলাই সনদ নিয়ে আলোচনা করে সময় নষ্ট করার সুযোগ এখন আর নেই। অনেক আলোচনা হয়েছে, যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে, তার ওপর ভিত্তি করেই ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ১৮ বছর পর জনগণ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে উন্মুখ হয়ে আছে।’

নির্বাচনের আগে গণভোটের দাবিতে এখনো অনড় থাকলেও পিআর (সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব) পদ্ধতিতে নির্বাচনের দাবি থেকে সরে এসেছে জামায়াতে ইসলামী। দলটি এখন ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানকেই যুক্তিযুক্ত মনে করছে। গতকাল সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নির্বাচন প্রসঙ্গে জামায়াতের আমির শফিকুর রহমান বলেন, ‘সবাইকে নিয়েই আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন আদায় করে ছাড়ব। এটা দেরি হলেই বিভিন্ন ধরনের আশঙ্কা ও বিভিন্ন ধরনের বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা আছে।’ তিনি বলেন, ‘আমার দাবি বাস্তবায়ন হতে হবে এমনটি নয়। আমি বলব, আমার দাবিটাই মনে করি শ্রেষ্ঠ দাবি, জনগণ এইটা বিবেচনায় নেবে। আমরা যা করি, জনগণকে নিয়ে করব। জনগণের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছুই করব না।’

এনসিপিও নড়েচড়ে বসেছে। দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম ১৫ নভেম্বরের মধ্যে দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের ঘোষণা দিয়েছেন। নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত গাজী সালাহউদ্দিনের পরিবারের সঙ্গে গতকাল সাক্ষাৎ করেন তিনি। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমরা এককভাবে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার লক্ষ্য আমাদের।’

ঘোষিত সময়ে অর্থাৎ ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করতে বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। যথাসময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিয়েছে নির্বাচন কমিশনও। কমিশন ইতিমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গেও বৈঠক করেছে। সম্প্রতি নির্বাচন ভবনে এক বৈঠক শেষে ইসি সচিব আখতার আহমেদ জানান, ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনে ৯০ হাজার থেকে ১ লাখ সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। একই সঙ্গে দায়িত্ব পালন করবেন দেড় লাখ পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া সারা দেশে দায়িত্ব পালন করবেন সাড়ে ৫ লাখ আনসার সদস্য।

আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের পক্ষে সেনাবাহিনীও। গতকাল এক সংবাদ সম্মেলনে সেনাসদরের জেনারেল অফিসার কমান্ডিং, সদর দপ্তর আর্মি ট্রেনিং অ্যান্ড ডকট্রিন কমান্ড (জিওসি আর্টডক) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাইনুর রহমান বলেন, ‘দেশের জনগণ যেমন চায়, সেনাবাহিনীও চায় সরকারঘোষিত রূপরেখা অনুযায়ী অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। নির্বাচন হলে দেশের স্থিতিশীলতা আরও ভালো হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ধীরে ধীরে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরবে বলে আশা করে সেনাবাহিনী।’

রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, দেশের স্থিতিশীলতার জন্য রাজনৈতিক সরকারের বিকল্প নেই। এই অবস্থায় নির্বাচনের প্রশ্নে সবার এক জায়গায় আসাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, একটি রাষ্ট্রের জন্য রাজনৈতিক ব্যবস্থায় যাওয়া খুব জরুরি। দায়বদ্ধতার জায়গা শক্তিশালী করতে হলে দরকার নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকার। এই বিবেচনায় নির্বাচনেই স্বস্তি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

টেলিযোগাযোগ অধ্যাদেশের খসড়া

ফোনে অশোভন বার্তা পাঠালে ২ বছরের দণ্ড

  • সাজা হবে জরিমানা বা কারাদণ্ড কিংবা উভয়ই।
  • টেলিফোনে বিরক্ত করলে জরিমানা ১ লাখ।
  • বিধান অমান্য করে আড়ি পাতলে ২ বছরের সাজা।
  • মতামত জানানো যাবে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত।
‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফোনে অশোভন বার্তা পাঠালে ২ বছরের দণ্ড

ফোনে কাউকে অশ্লীল, অশোভন বার্তা পাঠালে হতে পারে দুই বছরের কারাদণ্ড ও দেড় কোটি টাকা জরিমানা। আর কাউকে টেলিফোনে বিরক্ত করার সাজা হতে পারে ১ লাখ টাকা অর্থদণ্ড এবং তা অনাদায়ে ৬ মাসের কারাদণ্ড। ‘বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’-এর খসড়ায় এসব কথা বলা হয়েছে।

ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ গতকাল এই খসড়া প্রকাশ করেছে। সংশ্লিষ্ট অংশীজন ও সাধারণ নাগরিকদের মতামত নেওয়ার জন্য খসড়াটি বিভাগের ওয়েবসাইটে রাখা হয়েছে।

বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়ার ধারা ৭০-এ টেলিফোনে বিরক্ত করা সম্পর্কে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তিকে যদি এমনভাবে বারবার ফোন করেন যে তা ওই ব্যক্তির জন্য বিরক্তিকর হয় বা অসুবিধার সৃষ্টি করে, তাহলে বিষয়টি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

অধ্যাদেশে অশ্লীল, অশোভন বার্তা পাঠালে হতে পারে দুই বছরের জেল, দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে। ধারা ৬৯-এ বলা হয়েছে অশ্লীল, অশোভন ইত্যাদি বার্তা পাঠানোর অপরাধ ও এর সাজা বিষয়ে। এতে বলা হয়েছে, টেলিযোগাযোগ যন্ত্রপাতি বা বেতার যন্ত্রপাতির সাহায্যে কোনো অশ্লীল, ভীতি প্রদর্শনমূলক বা গুরুতরভাবে অপমানকর কোনো বার্তা, ছবি বা ছায়াছবি পাঠালে তা অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট যন্ত্র পরিচালনাকারী ব্যক্তির কাছে এ কাজের প্রস্তাবকারী বা প্রেরণকারী কিংবা ক্ষেত্রমতো, উভয়েই অনধিক দুই বছর কারাদণ্ড বা অনধিক দেড় কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। আইনের দফা (গ)-এর ক্ষেত্রে প্রেরণকারী অনধিক পাঁচ বছর কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে এবং অনাদায়ে ৩ মাসের কারাদণ্ডে দণ্ডিত হবেন। প্রযোজ্য ক্ষেত্রে সাইবার সুরক্ষা আইনের সংশ্লিষ্ট ধারা প্রযোজ্য হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

বেআইনিভাবে আড়ি পাতলে দুই বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক দেড় কোটি টাকা জরিমানা কিংবা উভয় সাজার বিধান রাখা হয়েছে।

অধ্যাদেশের খসড়া অনুযায়ী, ইন্টারনেটভিত্তিক সেবা—যেমন ওটিটি প্ল্যাটফর্ম, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, অনলাইন মেসেজিং ও ভিডিও স্ট্রিমিং অ্যাপ—সবই সরকারের অনুমোদনের আওতায় আসবে। এসব সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানকে এখন থেকে বাংলাদেশে নিবন্ধন নিতে হবে এবং প্রয়োজনে নিরাপত্তা সংস্থাকে তথ্য সরবরাহ করতে হবে।

খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, এই খাতে একটি স্বাধীন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ কমিশন গঠন করা হবে, যা লাইসেন্স প্রদান, নীতিনির্ধারণ, স্পেকট্রাম বণ্টন ও প্রযুক্তিগত মান নিয়ন্ত্রণ করবে। কমিশন হবে পাঁচ সদস্যের, যার একজন চেয়ারম্যান ও একজন ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন।

খসড়ায় আরও বলা হয়েছে, অনুমতিহীনভাবে টেলিযোগাযোগ সেবা পরিচালনা বা বিদেশি ওটিটি প্ল্যাটফর্ম পরিচালনা করা হলে তা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা বা জনশৃঙ্খলার স্বার্থে সরকার প্রয়োজনে যেকোনো প্ল্যাটফর্ম স্থগিত বা বন্ধ করতে পারবে।

অধ্যাদেশের খসড়ার বিষয়ে মতামত পাঠানো যাবে [email protected] ই-মেইল ঠিকানায় অথবা ডাকযোগে সচিব, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগ, বাংলাদেশ সচিবালয়, ঢাকা ঠিকানায়। ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত মতামত দেওয়া যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ হামলার টার্গেট ছিলেন না—অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
বিএনপির প্রার্থী এরশাদ উল্লাহ হামলার টার্গেট ছিলেন না—অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বিবৃতি

চট্টগ্রাম-৮ আসনের বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের মনোনীত প্রার্থী এরশাদ উল্লাহর নির্বাচনী প্রচারণা অনুষ্ঠানে সহিংস হামলার ঘটনায় অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) তাৎক্ষণিক তদন্তের কথা উল্লেখ করে বুধবার রাতে এক বিবৃতিতে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—জনাব এরশাদ উল্লাহ এই হামলার টার্গেট ছিলেন না; বিক্ষিপ্তভাবে ছোড়া একটি গুলি তাঁর শরীরে এসে বিদ্ধ হয়। সরকার এই ঘটনায় পূর্ণাঙ্গ তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে এবং গুলিতে আহত জনাব এরশাদ উল্লাহর দ্রুত আরোগ্য কামনা করছে।

সরকার এই অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে গভীর উদ্বেগ জানিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থী এবং নাগরিকের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় দৃঢ় প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করছে।

বিবৃতিতে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের শনাক্ত, গ্রেপ্তার এবং বিচারের আওতায় আনতে নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস নির্দেশ দিয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। আরও বলা হয়—‘আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনে সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শনের কোনো স্থান নেই। সিএমপি ইতিমধ্যেই হামলাকারীদের গ্রেপ্তারে অভিযান শুরু করেছে।’

বিবৃতিতে সকল রাজনৈতিক দল এবং তাদের সমর্থকদের শান্ত থাকার, সংযম প্রদর্শনের এবং ফেব্রুয়ারির সাধারণ নির্বাচন যেন শান্তি, মর্যাদা ও ন্যায্যতার পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয় তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এ ছাড়া সারা দেশে অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য এবং উৎসবমুখর নির্বাচন আয়োজনের জন্য প্রয়োজনীয় নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নিশ্চিত করতে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বলে জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটিতে মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনা: প্রেস সচিব

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: পিআইডি
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে প্রেস ব্রিফিং করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। ছবি: পিআইডি

রাজধানীর মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে বিমান দুর্ঘটনা ঘটেছিল, এর কারণ হিসেবে যুদ্ধবিমানের পাইলটের উড্ডয়ন ত্রুটি চিহ্নিত হয়েছে তদন্তে।

ঘটনার তিন মাস পর আজ বুধবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির এ প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। পরে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত প্রতিবেদনের কিছু তথ্য ও সুপারিশ তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

প্রেস সচিব বলেন, ‘দুর্ঘটনার মূল কারণ ছিল, পাইলটের উড্ডয়নের ত্রুটি। ট্রেনিংয়ের সময় যখন ফ্লাই করছিলেন, পরিস্থিতি তাঁর আয়ত্তের বাইরে চলে যায়। এটা হচ্ছে কনক্লুশন। এই পুরো তদন্ত কমিটি ১৫০ জনের সঙ্গে কথা বলেছে। তার মধ্যে এক্সপার্ট আছেন, আই উইটনেস আছেন, ভিকটিমস আছেন। সবার সঙ্গে তাঁরা কথা বলেছেন। উনারা ১৬৮টি তথ্য উদ্‌ঘাটন করেছেন এবং তার মধ্যে তাঁরা ৩৩টি রিকমেন্ডেশন করেছেন। প্রতিবেদনে অনেকগুলো ফাইন্ডিংসে অনেকগুলো রিকমেন্ডেশন এসেছে।’

প্রেস সচিব আরও বলেন, তদন্ত প্রতিবেদনে বিমানবন্দর ও আশপাশের ফায়ার স্টেশনগুলোর জন্য বিশেষ সরঞ্জাম ও ফোমের মতো উপকরণ থাকা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। উড়োজাহাজের উড্ডয়ন ও অবতরণের পথে যে অংশ পড়ে (ফানেল), তার মধ্যে নির্মিত কাঠামোর উচ্চতার বিধিনিষেধ কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। এই ওঠানামার পথ বা ফানেলের আশপাশে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী হাসপাতাল, স্কুল বা বেশি জনসমাগম হয় এমন স্থাপনা নির্মাণের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

উল্লেখ্য, গত ২১ জুলাই উত্তরার দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। এতে ৩৬ জন নিহত হয়, এর অধিকাংশই শিক্ষার্থী। বিমানের পাইলট ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মো. তৌকির ইসলামও নিহত হন।

এ ঘটনা নিয়ে ৯ সদস্যের তদন্ত কমিশন গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। কমিশনকে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পরিপ্রেক্ষিত, কারণ, দায়দায়িত্ব ও ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ এবং ঘটনাসংশ্লিষ্ট অপরাপর বিষয় চিহ্নিত করতে বলা হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত