Ajker Patrika

দলগুলোর মতপার্থক্য

জুলাই সনদ নিয়ে আগস্টেও সংশয়

  • প্রত্যাশা ছিল আগস্টের শুরুতেই চূড়ান্ত হবে।
  • ৬ দল মত দিয়েছে, সময় চেয়েছে ৫টি।
  • ২২ আগস্টের মধ্যে মত দেওয়ার অনুরোধ।
  • অনিশ্চয়তা দেখছি না : আলী রীয়াজ
রেজা করিম ও তানিম আহমেদ, ঢাকা 
আপডেট : ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৯: ৪৪
জুলাই সনদ নিয়ে আগস্টেও সংশয়

২০২৪ সালের জুলাই-আগস্ট গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থী সংগঠনের অন্যতম প্রধান দাবি ছিল জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদ; যার মধ্যে প্রতিফলিত হবে আন্দোলনের মূল চেতনা ও অঙ্গীকার। মতানৈক্যসহ নানা কারণে তা বিলম্বিত হলেও শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল ও সমমনা সংগঠনগুলোর প্রত্যাশা ও দাবি ছিল আন্দোলনের বর্ষপূর্তিতে আগস্টের প্রথম দিকে বিষয়টি চূড়ান্ত হয়ে যাবে। কিন্তু জাতীয় সনদের সমন্বিত চূড়ান্ত খসড়া নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এখনো মতবিরোধ রয়ে যাওয়ায় আগস্ট মাসের মধ্যে এর ফয়সালা হবে কি না, তা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে অনিশ্চয়তা। এ অবস্থায় বিষয়টির সুরাহার জন্য তাদের দিকে তাকিয়ে আছে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন

বর্তমানে রাজনৈতিক অঙ্গনে সক্রিয় বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) বিভিন্ন দল সনদের খসড়ার কোনো না কোনো বিষয় নিয়ে নিজ নিজ আপত্তির কথা জানিয়েছে। ঐকমত্য কমিশন এখন তাদের সুনির্দিষ্ট অভিমত জানার অপেক্ষায় রয়েছে।

দলগুলোর মতবিরোধের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে গতকাল বুধবার জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ আজকের পত্রিকা'কে বলেন, ‘বাইরে রাজনৈতিক দলগুলোর মন্তব্য বিবেচনায় নিলে তো বিষয়টা দুরূহ হয়ে পড়বে। উনারা (দলগুলো) লিখিত মতামত দিলে আমরা বিবেচনা করব।’ তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামতের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি। মতামত এলে কমিশন এবং কমিশনের বিশেষজ্ঞ প্যানেল সেগুলো সমন্বয় করার পর সার্বিক বিষয়টি বিবেচনা করা হবে।

তবে অগ্রগতি দৃশ্যত ধীর হলেও জুলাই সনদ নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখছেন না আলী রীয়াজ। তিনি বলেন, ‘আমি এখন পর্যন্ত কোনো অনিশ্চয়তা দেখছি না। প্রক্রিয়া তো চলছে, প্রক্রিয়া তো বন্ধ হয়নি।’

আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসার সম্ভাবনার কথা জানিয়ে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি বলেন, ‘আমরা আশা করছি এই সপ্তাহে না হলেও আগামী সপ্তাহে দলগুলোর সঙ্গে বসব। তারা যত দ্রুত মতামত দেবে, তত তাড়াতাড়ি পর্যালোচনা করে তার ভিত্তিতে আলোচনা সম্ভব হবে।’

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মতামতের ভিত্তিতে জুলাই জাতীয় সনদের সমন্বিত খসড়া চূড়ান্ত করে ১৬ আগস্ট মতামতের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে পাঠায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গতকাল বুধবার বিকেল ৪টার মধ্যে মতামত জমা দিতে বলেছিল কমিশন। তবে এ সময়ের মধ্যে শুধু বিএনপি, এবি পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, এনডিএম, জাতীয় গণফ্রন্ট ও আমজনতার দল মতামত জমা দিয়েছে। জামায়াতে ইসলামী, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) মতামত দেয়নি। পাঁচটি দল আনুষ্ঠানিকভাবে মতামত জমা দিতে সময় চেয়েছে। সেগুলো হচ্ছে সিপিবি, গণফোরাম, বাংলাদেশ জাসদ, বাসদ, বাসদ-মার্কসবাদী। গতকাল বিকেলে কমিশনের পক্ষ থেকে বাকি সব দলকে ২২ আগস্ট শুক্রবারের মধ্যে তাদের মত জমা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে।

জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপি সময় চায়নি। তবে এরাসহ সবার সঙ্গেই কমিশনের অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ রয়েছে।

বিশেষ করে সনদের অঙ্গীকারনামার কিছু ধারা নিয়ে দলগুলোর বিভিন্ন আপত্তি রয়েছে। বিএনপি ও সমমনারা জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দিতে চায় না। বামদলগুলোও এ বিষয়ে আপত্তি জানাবে বলে জানা গেছে। অন্যদিকে এনসিপি জুলাই সনদের বাস্তবায়নের নির্দিষ্ট সময়সীমা চায়। সনদকে সংবিধানের ওপরে স্থান দেওয়ার বিষয়ে জামায়াতের আপত্তি নেই। দলটি বলছে, সংবিধানের সাত অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে জনগণের অভিপ্রায় সংবিধানের ওপরে।

সনদের সমন্বিত খসড়ার কয়েকটি বিষয় নিয়ে আপত্তি বিএনপির। দলটি মনে করে, কোনো রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল সংবিধানের ওপরে স্থান পেতে পারে না। জুলাই সনদকে সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য দেওয়া হলে খারাপ নজির তৈরি হবে। এ নিয়ে গত সোমবার দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে আলোচনার পর খসড়া পর্যালোচনা করে গতকাল মতামত জমা দিয়েছে বিএনপি। দলটির সূত্র বলছে, কিছু বিষয়ে আপত্তি থাকলেও ছাড় দেওয়ারও চিন্তা আছে বিএনপির। নির্বাচনের স্বার্থে বিএনপির এই চিন্তা বলে জানিয়েছে সূত্রটি।

সনদ নিয়ে বিএনপির ‘ইতিবাচক’ অবস্থানের কথা জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ গতকাল গণমাধ্যমকে বলেন, জুলাই সনদের অঙ্গীকার রাজনৈতিক সমঝোতার দলিল বিধায় তা সংবিধানের ওপরে স্থান পেতে পারে না। তবে আলোচনার মাধ্যমে সনদ বাস্তবায়নে আইনি, বৈধ এবং সাংবিধানিক উপায় খুঁজে বের করা সম্ভব বলে বিএনপি বিশ্বাস করে। জাতীয় ঐকমত্যের ভিত্তিতেই জুলাই সনদ স্বাক্ষর ও বাস্তবায়নেও আশাবাদী বিএনপি।

এর আগে গত মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে সনদের চূড়ান্ত খসড়ার সূচনা ও ২, ৩ এবং ৪ নম্বর দফা নিয়ে বিএনপির আপত্তির কথা জানান সালাহউদ্দিন আহমদ। তিনি তখন বলেন, ‘কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করা না হলেও তা সেখানে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া কিছু বিষয় সঠিকভাবে উপস্থাপন করা হয়নি।’ সালাহউদ্দিন বলেন, ‘জুলাই সনদে উত্থাপিত ৮৪ দফার মধ্যে যেসব দফায় সব রাজনৈতিক দল একমত হয়েছে, সেগুলোর বাস্তবায়ন কীভাবে হবে; যেসব বিষয়ে নোট অব ডিসেন্ট এসেছে, সেগুলোর সুরাহা কীভাবে হবে এবং সংবিধান সংস্কারবিষয়ক যেসব কথা এসেছে, তার বাস্তবায়ন কীভাবে হবে—এসবের নিষ্পত্তি জরুরি।’

জুলাই সনদের খসড়ায় বলা হয়েছে, বিদ্যমান সংবিধান বা অন্য কোনো আইনে ভিন্নতর কিছু থাকলে সে ক্ষেত্রে এই সনদের বিধান/প্রস্তাব/সুপারিশই প্রাধান্য পাবে। এ বিষয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কোনো সমঝোতা দলিল কি ‘সুপ্রা কনস্টিটিউশনাল ইনস্ট্রুমেন্ট’ (সংবিধানেরও ওপরের দলিল) হতে পারে?...যদি বলা হয়, এ দলিলের সবকিছুই সংবিধানের ওপরে প্রাধান্য পাবে, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য একটি খারাপ নজির সৃষ্টি হবে। পুরো জাতির জন্য একটি খারাপ নজির সৃষ্টি করা ঠিক হবে না।’

বিএনপির আরেকটি সূত্র বলছে, সনদের বিষয়ে আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না- এ বিষয়টিতেও দলটির আপত্তি আছে। সনদের ঐকমত্য হওয়া যেসব বিষয় সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে করতে হবে, তা নির্বাচিত জাতীয় সংসদের মাধ্যমে করার পক্ষে দলটি। অন্যগুলো আলোচনার মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে তারা।

অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামী বলেছে, সনদের খসড়ার কিছু বিষয়ে আপত্তি থাকলেও তারা এ নিয়ে আন্তরিক। সনদের আইনি ভিত্তি চায় জামায়াত। দুই-এক দিনের মধ্যেই খসড়ার বিষয়ে আনুষ্ঠানিক মতামত জমা দেবে দলটি।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘(জুলাই সনদ) ঝুলে গেলে তো দেশের অকল্যাণ হবে। কাজেই এটা বাস্তবায়ন করতেই হবে। ...সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে সরকারের আন্তরিকতা থাকলে আমরা মনে করি তারা একে আইনী ভিত্তি দেবে। না হলে জনগণই তাদের অধিকার আদায়ে সরকারকে বাধ্য করবে।’

এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক জাবেদ রাসিন বলেন, ‘বলা হয়েছে এই সরকার নির্বাচনের আগে বাস্তবায়নযোগ্য বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করবে। এখানে বাস্তবায়নযোগ্য বলতে কী বোঝানো হয়েছে তা স্পষ্ট না। আমাদের দাবি হচ্ছে পুরো সনদ বাস্তবায়ন করতে হবে। মৌলিক সংস্কারের বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা না হলে আমরা স্বাক্ষর করব না।’

মতামত জমা দেওয়ার পর এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এবি পাটি জানিয়েছে কমিশনে পাঠানো চূড়ান্ত মতামতে তারা জুলাই জাতীয় সনদের ভিত্তিতে আগামী নির্বাচনের দাবি জানিয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে এবি পার্টি বলেছে, পূর্ণাঙ্গ সমন্বিত খসড়া (সংশোধিত) প্রস্তাবের প্রারম্ভিক বক্তব্য এবং অনুচ্ছেদ ১-৪ এ তাদের মতামতের অনেকাংশ প্রতিফলিত হয়েছে। এবি পার্টি প্রাথমিক অবস্থান পরিবর্তন করে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার পক্ষে মত দিয়েছে। তবে তারা প্রস্তাব করেছে, উচ্চকক্ষে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) নির্বাচনের পদ্ধতি প্রয়োগ না হলে নিম্নকক্ষে প্রাথমিকভাবে ১০০ আসনে তা চালু করা যেতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে সংগীত ও শরীরচর্চা শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের যে ব্যাখ্যা দিল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের ব্যাখ্যা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়। অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না বিধায় এটি বাতিল করা হয়েছে মর্মে জানানো হয়।

আজ মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার ফেসবুক পেজ থেকে দেওয়া এক পোস্টে এমনটি জানানো হয়েছে।

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ প্রস্তাব বাতিলের বিষয়ে সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত বিভিন্ন প্রতিবেদন অন্তর্বর্তী সরকারের নজরে এসেছে।

সারা দেশের প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ২ হাজার ৫০০ ক্লাস্টারে সমসংখ্যক শরীরচর্চা ও সংগীত শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার প্রাথমিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সম্প্রতি সচিব কমিটির সুপারিশে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে।

সচিব কমিটি মনে করে, প্রকল্পটির পরিকল্পনায় ত্রুটি ছিল। এত অল্পসংখ্যক শিক্ষক নিয়োগ প্রাথমিক শিক্ষা পর্যায়ে কার্যকর কোনো সুফল বয়ে আনবে না এবং এতে বৈষম্যের সৃষ্টি হবে। সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের অধিকাংশেই প্রস্তাবিত নিয়োগ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ক্লাস্টারভিত্তিক নিয়োগ দেওয়া হলে একই শিক্ষককে ২০টির বেশি বিদ্যালয়ে যুগপৎভাবে দায়িত্ব পালন করতে হবে। এর ফলে তাঁর পক্ষে কর্মঘণ্টা ম্যানেজ করা সম্ভব হবে না বলে সচিব কমিটি মনে করে।

পরে অর্থের সংস্থান সাপেক্ষে সব স্কুলে এ রকম নতুন বিষয়ের শিক্ষকের পদ সৃজন ও সেসব পদে নিয়োগদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে বলে কমিটি অভিমত ব্যক্ত করেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত হাজারের বেশি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২২: ৪৯
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সারা দেশের অধস্তন আদালতের হাজারের বেশি বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তা পদোন্নতির জন্য প্যানেলভুক্ত হয়েছেন। সুপ্রিম কোর্টের একটি সূত্র আজকের পত্রিকাকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। আজ মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের সভাপতিত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের সব বিচারপতির অংশগ্রহণে ফুল কোর্ট সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় তাঁদের পদোন্নতির জন্য প্যানেলভুক্ত করা হয়।

সুপ্রিম কোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, পদোন্নতির জন্য প্যানেলে ছিলেন– অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ থেকে জেলা ও দায়রা জজ পদের জন্য ৩৪৫ জন, যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ পদে ২০৭ এবং সিনিয়র সহকারী জজ থেকে যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ পদে ৫৫১ জন। সব মিলিয়ে পদোন্নতির প্যানেলে ১ হাজার ১০৩ জন বিচারিক কর্মকর্তার নাম থাকলেও নানা কারণে বেশ কয়েকজনের নাম অনুমোদন হয়নি।

২০২৬ সালের সুপ্রিম কোর্টের ক্যালেন্ডারও ফুল কোর্ট সভায় অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছিল। তবে সরকারি ক্যালেন্ডার এখনো প্রকাশিত না হওয়ায় তা অনুমোদিত হয়নি।

সম্প্রতি ১ হাজার ১০৩ জন বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাকে পদোন্নতির প্যানেলভুক্ত করতে আইন মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাব পাঠানো হয়। পদোন্নতির প্যানেলে ছিল কয়েকজন বিতর্কিত বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তার নাম, যাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে অনুসন্ধান চলমান।

বিচারকদের পদোন্নতি যেভাবে হয়

সব মন্ত্রণালয়ে পদোন্নতির জন্য ডিপিসি (বিভাগীয় পদোন্নতি কমিটি) থাকে। ওই কমিটি পদোন্নতির প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে এক দিনেই প্যানেলের সবার পদোন্নতির জিও জারি করা হয়।

তবে বিচারকদের ক্ষেত্রে প্যানেল চূড়ান্ত করার পর তা সুপ্রিম কোর্টে পাঠানো হয়। বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিষয়টি সুপ্রিম কোর্টের ফুলকোর্ট সভায় ওঠে। সভায় অনুমোদন পাওয়ার পর তা আবার মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয় থেকে তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় হয়ে রাষ্ট্রপতির দপ্তরে যায়। রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিলে ওই প্যানেল আইন মন্ত্রণালয়ে সংরক্ষিত থাকে এবং পদ খালি হওয়ার পর সময়ে সময়ে জিও জারি করা হয়।

বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস বিধিমালা ২০০৭ অনুযায়ী, সিনিয়র সহকারী জজ পদে পদোন্নতির জন্য সহকারী জজদের এই পদে চার বছর দায়িত্ব পালনের শর্ত পূরণ করতে হয়। সিনিয়র সহকারী জজদের যুগ্ম জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর, যুগ্ম জেলা জজ থেকে অতিরিক্ত জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছর এবং অতিরিক্ত জেলা জজ থেকে জেলা জজ পদে পদোন্নতির জন্য দুই বছরের শর্ত পূরণ করতে হয়। তবে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের পদোন্নতির ক্ষেত্রে এই নিয়ম মানা হয় না। অনেকেই বছরের পর বছর প্যানেলভুক্ত হয়ে থাকেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ: নিজাম হাজারীর স্ত্রীর বিরুদ্ধে মামলার সিদ্ধান্ত

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ২১: ০২
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম। ছবি: সংগৃহীত
ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারী এবং তাঁর স্ত্রী নুরজাহান বেগম। ছবি: সংগৃহীত

ফেনী-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা নিজাম উদ্দিন হাজারীর স্ত্রী নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে ৪৫ কোটি টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ ও ৪৩ কোটি টাকার সন্দেহজনক লেনদেনের অভিযোগে মামলা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

আজ মঙ্গলবার দুদকের সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় বলে নিশ্চিত করেছেন সংস্থাটির মহাপরিচালক মো. আক্তার হোসেন।

দুদক মহাপরিচালক বলেন, অভিযুক্ত নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সন্দেহজনক লেনদেনের পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া গেছে। কমিশন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার অনুমোদন দিয়েছে।

দুদকের অভিযোগে বলা হয়, নুরজাহান বেগম দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে ৫৩ কোটি ৬৩ লাখ টাকার সম্পদের ঘোষণা দেন। তবে যাচাই-বাছাইয়ে দেখা যায়, তাঁর আয় ও পারিবারিক ব্যয়ের তুলনায় ৪৫ কোটি ৩৪ লাখ ১৩ হাজার ৮৫১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের প্রমাণ মেলে।

এ ছাড়া ২০১৯ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের আগস্ট পর্যন্ত নুরজাহান বেগমের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের একটি হিসাবে ৪৩ কোটি ৩১ লাখ ৪৭ হাজার ৮০৩ টাকার সন্দেহজনক লেনদেন শনাক্ত করেছে দুদক।

এ তথ্য আর্থিক গোয়েন্দা ইউনিট বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) থেকে প্রাপ্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে যাচাই করা হয়েছে।

দুদকের অনুসন্ধানসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, নিজাম উদ্দিন হাজারী ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে এর আগেও অবৈধ সম্পদ অর্জন, ফেনী ও ঢাকায় নামে-বেনামে জমি ও ভবন ক্রয় এবং বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে একাধিক তদন্ত চলছে।

সূত্রটি আরও জানায়, দুদকে পাঠানো সম্পদ বিবরণীতে ঘোষিত তথ্য ও বাস্তব সম্পদের মধ্যে বিশাল অমিল পাওয়া যায়। এর ধারাবাহিকতায় নুরজাহান বেগমের বিরুদ্ধে নতুন করে মামলা অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ফেনী-২ আসন থেকে টানা তিনবার আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন নিজাম উদ্দিন হাজারী। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতি, ক্ষমতার অপব্যবহার ও দখলদারত্বের অভিযোগ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ডেঙ্গুতে আরও ৪ জনের মৃত্যু

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দেশে গত ২৪ ঘণ্টায় ডেঙ্গু আক্রান্ত আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। আর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ১ হাজার ১০১ জন। সব মিলিয়ে এ বছর ডেঙ্গু নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৩ হাজার ৯২৩ জনে। তাদের মধ্যে ২৯২ জনের মৃত্যু হয়েছে মশাবাহিত এ রোগে।

আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ডেঙ্গুবিষয়ক হালনাগাদ করা তথ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলেছে, সর্বশেষ ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছে তিনজন।

এ ছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকায় একজন মারা গেছে। নতুন আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের হাসপাতালগুলোতে সর্বোচ্চ ২৪১ জন ভর্তি হয়েছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে ১৭৫ জন, রাজধানীর বাইরে ঢাকা বিভাগে ২০৮, বরিশালে ১৫১, খুলনায় ৫৯, চট্টগ্রামে ১২৫, রাজশাহীতে ৪৫, ময়মনসিংহে ৭৫, রংপুরে ১৯ ও সিলেটে তিনজন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।

গত অক্টোবর মাসে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে ২২ হাজার ৫২০ জন, যা এই বছরের এক মাসে সর্বোচ্চ। একই সময়ে ৮০ জন মারা গেছে, যা এ বছরে একক মাসের সর্বোচ্চ মৃত্যু।

এর আগে গত সেপ্টেম্বরে ১৫ হাজার ৮৬৬ জন ভর্তি হয়েছিল এবং ৭৬ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এ ছাড়া জানুয়ারিতে ১০ জন, ফেব্রুয়ারিতে তিন, এপ্রিলে সাত, মে মাসে তিন, জুনে ১৯, জুলাইয়ে ৪১ ও আগস্টে ৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। মার্চ মাসে কোনো মৃত্যু হয়নি।

চলতি মাসের চার দিনে ৪ হাজার ৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছে আর মারা গেছে ১৪ জন চিকিৎসাধীন রোগী।

দেশে ২০২৩ সালে সবচেয়ে বেশি ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। আর মারা গেছে ১ হাজার ৭০৫ জন।

২০২৪ সালে ১ লাখ ১ হাজার ২১১ জন, ২০২২ সালে ৬২ হাজার ৩৮২, ২০২১ সালে ২৮ হাজার ৪২৯, ২০২০ সালে ১ হাজার ৪০৫ এবং ২০১৯ সালে ১ লাখ ১ হাজার ৩৫৪ জন ডেঙ্গু রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

কাল মিষ্টি বিতরণে বারণ করেছিলেন, আজ মনোনয়ন স্থগিত—কে এই কামাল জামান

নীলফামারীতে হচ্ছে চীনা সরকারের উপহার ১০০০ শয্যার হাসপাতাল

‘তোমার জন্যই খুন করেছি’, স্ত্রীকে হত্যার পর প্রেমিকাকে সার্জনের বার্তা

প্রতীক পেল এনসিপি, বাসদ মার্ক্সবাদী ও আমজনগণ

ট্রাকের নিচে ঢুকে গেল অটোরিকশা, কলেজশিক্ষার্থীসহ নিহত ৬

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত