Ajker Patrika

‘ডোবার পথে’ টুনা ধরার প্রকল্প

  • দুটি জাহাজ কেনার কথা থাকলেও তা কেনা হয়নি।
  • জাহাজ কিনতে দুবার দরপত্র, ঠিকাদারের প্রতারণা।
  • ২০২০ সালের জুনে প্রকল্পটি নেয় মৎস্য অধিদপ্তর।
  • আগামী জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা।
  • ইতিমধ্যে মেয়াদ দুই বছর বাড়ানোর প্রস্তাব।
সাইফুল মাসুম, ঢাকা 
আপডেট : ১৪ মে ২০২৫, ০৭: ৫৬
‘ডোবার পথে’ টুনা ধরার প্রকল্প

জাহাজ কিনে গভীর সমুদ্র থেকে টুনা মাছ আহরণ করতে ২০২০ সালের জুনে পাইলট প্রকল্প নিয়েছিল মৎস্য অধিদপ্তর। একবার সময় বাড়ানোর পর আগামী জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। কিন্তু চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ৬ দশমিক ৮৫ শতাংশ। প্রকল্পের মেয়াদ আবার দুই বছর বাড়ানোর একটি প্রস্তাব খারিজ করে দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন। নতুন প্রস্তাবটিতে জাহাজ কেনার পরিবর্তে ভাড়া নেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।

আহরণের বাইরে থেকে যাওয়া গভীর সমুদ্রের টুনা ও এ জাতের অন্যান্য মাছ ধরার অভিজ্ঞতা অর্জন এবং টুনা মাছ আহরণে বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করা ছিল এ প্রকল্পের লক্ষ্য। এর আওতায় গভীর সমুদ্রে টুনা আহরণে সক্ষম তিনটি জাহাজ কেনার কথা ছিল। জাহাজ কিনতে ২১ কোটি টাকার এলসিও খোলা হয়েছিল। তবে প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, মৎস্য অধিদপ্তর ওই জাহাজ কিনতে ব্যর্থ হয়েছে। তা ছাড়া এ পর্যন্ত সমুদ্রে কোনো সমীক্ষাও পরিচালনা করা হয়নি। সব মিলিয়ে বলা যায়, প্রকল্পের মূল কাজগুলো বাস্তবায়ন করা হয়নি।

প্রকল্পের দপ্তর জানিয়েছে, প্রথমে এর মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের জুলাই থেকে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছিল ৬১ কোটি টাকা। পরে প্রস্তাব সংশোধন করে প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন করা হয়। এতে অর্থ বরাদ্দ ৫৫ কোটি টাকা করে তিনটির বদলে দুটি জাহাজ কেনার কথা বলা হয়। সেই জাহাজও কেনা হয়নি।

প্রকল্প পরিচালক ড. মো. জুবায়দুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতারণার কারণে আমরা জাহাজ কিনতে ব্যর্থ হয়েছি। দরপত্রে নতুন জাহাজ দেওয়ার কথা থাকলেও পুরোনো নিম্নমানের জাহাজ গছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছে তারা। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বাংলাদেশি এজেন্ট নানাভাবে হুমকি ও চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেছে।’

মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে, টুনা আহরণ প্রকল্পের আওতায় প্রথমে ২০২১ সালের মার্চে জাহাজ কেনার জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিনটি দরপত্র জমা পড়লেও কোনোটি মূল্যায়নযোগ্য না হওয়ায় একই বছর আগস্টে আবার দরপত্র আহ্বান করা হয়। দ্বিতীয় দরপত্রে সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠান ইউনি মেরিন প্রাইভেট লিমিটেডকে কাজ দেওয়া হয়। প্রতিষ্ঠানটির বাংলাদেশি এজেন্ট ছিল কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি লিয়াকত সিকদারের মালিকানাধীন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডি। তখন দুই বছর জাহাজ আমদানিতে সরকারের নিষেধাজ্ঞা থাকায় ক্রয়ের কাজ পিছিয়ে যায়। ২০২৪ সালের মে মাসে জাহাজ দেখতে চীন যায় মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও মৎস্য অধিদপ্তরের সাত সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। ওই দলে অন্যদের মধ্যে ছিলেন প্রকল্প পরিচালক জুবায়দুল আলম ও মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব আবু নঈম মুহাম্মদ আবদুছ ছবুর। প্রতিনিধিদলকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ১০ বছরের পুরোনো ইঞ্জিনের জাহাজ দেখায়। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা ওই জাহাজ নিতে আগ্রহী না হওয়ায় তৎকালীন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী আব্দুর রহমান নানাভাবে তাদের চাপ দেন। প্রকল্প পরিচালক জুবায়দুল আলম বলেন, ‘ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লোকজন অস্ত্রসহ এসে ভয় দেখিয়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তাঁদের প্রস্তাব অস্বীকার করেছি। পুরোনো, নিম্নমানের জাহাজ আনলে দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হতো। তা ছাড়া পরে অনিয়মের জন্য দুদকে আমার বিরুদ্ধে মামলা হতো।’

অভিযোগের বিষয়ে জানতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডির মালিক লিয়াকত সিকদারকে ফোন করা হলে তিনি পরে কথা বলবেন বলে লাইন কেটে দেন। পরে তিনি আর কল করেননি।

প্রকল্পের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. মো. আবদুর রউফ বলেন, ‘পরিকল্পনা কমিশনের মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে, টুনা প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হবে না। তবে আমরা মন্ত্রণালয়ের (মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ) মাধ্যমে প্রকল্পের কার্যক্রম সম্প্রসারণের (মেয়াদ) চেষ্টা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

সৌদি আরবের সঙ্গে ১৪২ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রির চুক্তি করে নিজের রেকর্ড ভাঙল যুক্তরাষ্ট্র

পুলিশ হত্যাকারী ফোর্স হতে পারে না: আইজিপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত