Ajker Patrika

শিক্ষা বোর্ডের সনদ ও নম্বরপত্রের সম্মানীতে লুট শতকোটি টাকা

রাহুল শর্মা, ঢাকা
আপডেট : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৬: ০৭
শিক্ষা বোর্ডের সনদ ও নম্বরপত্রের সম্মানীতে লুট শতকোটি টাকা

মাধ্যমিক স্কুল সার্টিফিকেট (এসএসসি) ও উচ্চমাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষার নম্বরপত্র, মূল সনদ তৈরি ও পাঠানোতে এক অর্থবছরেই অতিরিক্ত ১২ কোটি টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এ হিসাবে গত ১০ বছরে তাঁদের পকেটে ঢুকেছে অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার বেশি।

বোর্ডের চেয়ারম্যান থেকে শুরু করে সব কর্মকর্তা-কর্মচারীই এই টাকার ভাগ পান। ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মূল সনদ ও নম্বরপত্রের সম্মানীর কাগজপত্রে এবং আজকের পত্রিকার অনুসন্ধানে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সম্মানীর ক্ষেত্রে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আদেশের তোয়াক্কা করা না হলেও বোর্ডগুলোর দাবি, আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি ও সংশ্লিষ্ট বোর্ডের অর্থ কমিটির অনুমোদন নিয়েই সম্মানী দেওয়া হচ্ছে।

দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ১৪ অক্টোবর অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ড. ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বিষয়টি এখনো আমার নজরে আসেনি। অনিয়ম হয়ে থাকলে অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

জানা যায়, প্রতিবছর এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় প্রত্যেক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে নম্বরপত্র ও মূল সনদের জন্য সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ১৫০ টাকা নেয়। এর মধ্যে মূল সনদের জন্য ১০০ ও নম্বরপত্রের জন্য ৫০ টাকা। তবে এসএসসি-এইচএসসির সমমান পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মূল সনদের জন্য ১২০ ও নম্বরপত্রের জন্য ৮০ টাকা নেয় । মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড নেয় যথাক্রমে ১০০ ও ৩৫ টাকা।

দেশের ১১টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সাধারণ শিক্ষা বোর্ড ৯টি। এগুলো হলো ঢাকা, রাজশাহী, চট্টগ্রাম, দিনাজপুর, সিলেট, যশোর, বরিশাল, কুমিল্লা ও ময়মনসিংহ শিক্ষা বোর্ড। বাকি দুটি বোর্ডের একটি কারিগরি শিক্ষা বোর্ড ও অন্যটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। ১১টি বোর্ডে কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ২০০৩ সালের ১১ নভেম্বর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অফিস আদেশে এসএসসি ও এইচএসসির প্রতি মূল সনদ লেখা, যাচাই, স্বাক্ষর ও পাঠানো বাবদ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সম্মানী ৬ টাকা এবং এসএসসির প্রতি নম্বরপত্র লেখা, যাচাই, স্বাক্ষর ও পাঠানো বাবদ সাড়ে ১২ টাকা ও এইচএসসির নম্বরপত্র প্রতি ২২ টাকা সম্মানী নির্ধারণ করা হয়।

তবে এই হার মানছে না বোর্ডগুলো। ২০২২-২৩ অর্থবছরের ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুই পরীক্ষার মূল সনদপ্রতি সম্মানী নিয়েছেন ৬৪ টাকা, যা মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত হারের চেয়ে সাড়ে ১০ গুণের বেশি। এসএসসির নম্বরপত্রপ্রতি নিয়েছেন ২২ টাকা (নির্ধারিত হারের প্রায় দ্বিগুণ) এবং এইচএসসির নম্বরপত্রপ্রতি ৩৭ টাকা (নির্ধারিত হারের দেড় গুণের বেশি)।

এই হিসাবে ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ১২ কোটি ১০ লাখ ১৪ হাজার ১৪০ টাকা ভাগাভাগি করে নিয়েছেন ৯টি সাধারণ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এর মধ্যে মূল সনদের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয় নির্ধারিত সম্মানীর অতিরিক্ত ৯ কোটি ৮ লাখ ১৭ হাজার ১১৯ টাকা এবং নম্বরপত্রের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ৩ কোটি ১ লাখ ৯৭ হাজার ২১ টাকা নিয়েছেন তাঁরা।

শিক্ষা বোর্ড সূত্র বলছে, মূল সনদ ও নম্বরপত্র তৈরির সম্মানীর টাকা বোর্ডের অফিস সহায়ক থেকে শুরু করে চেয়ারম্যান পর্যন্ত সবাই পান। বছর শেষে এ বাবদ একজন কর্মচারী-কর্মকর্তা ন্যূনতম ১ লাখ থেকে সর্বোচ্চ ৪ লাখ টাকা পান। এ জন্য বোর্ডের চাকরি লোভনীয় হিসেবে বিবেচিত হয়।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মূল সনদ ও নম্বরপত্রের ক্ষেত্রে বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রতিবছর অতিরিক্ত সম্মানী নেন ন্যূনতম ১০ কোটি টাকা। এই হিসাবে গত ১০ বছরে তাঁরা অতিরিক্ত ১০০ কোটি টাকার বেশি নিয়েছেন। লোপাট না হলে যা থাকত বোর্ডের তহবিলে।

২০২২-৩ অর্থবছরের সম্মানীর কাগজপত্রে দেখা গেছে, মূল সনদপত্রের ক্ষেত্রে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত সম্মানী নিয়েছেন ২৫ লাখ ৬৩ হাজার ৫৩১ টাকা, রাজশাহী বোর্ডে ১৪ লাখ ৭১ হাজার ১৩৬ টাকা, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১ কোটি ১৮ লাখ ৪২ হাজার ১৫০ টাকা, দিনাজপুর বোর্ডে ৭৬ লাখ ৫৩ হাজার ১২৯ টাকা, সিলেট বোর্ডে ১ কোটি ২৯ লাখ ৩৩ হাজার ৬৪৮ টাকা, যশোর বোর্ডে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৩১ হাজার ৯২২ টাকা, বরিশাল বোর্ডে ৭০ লাখ ৯৫ হাজার ৪৬৬ টাকা, কুমিল্লা বোর্ডে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৬ হাজার ৬১৭ টাকা ও ময়মনসিংহ বোর্ডে ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ৫২০ টাকা।

একই অর্থবছরে নম্বরপত্রের ক্ষেত্রে ঢাকা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অতিরিক্ত ৩০ লাখ ৫৩ টাকা, রাজশাহী বোর্ডের ৪৪ লাখ ৪৯ হাজার ১৮৩ টাকা, চট্টগ্রাম বোর্ডের ৩৪ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৮ টাকা, দিনাজপুর বোর্ডের ৩৩ লাখ ১৩ হাজার ৪১৫ টাকা, সিলেট বোর্ডের ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৩৬ টাকা, যশোর বোর্ডের ২৭ লাখ ৬৫ হাজার ১২৪ টাকা, বরিশাল বোর্ডের ১৮ লাখ ৬০ হাজার ৪৮৬ টাকা, কুমিল্লা বোর্ডের ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার ৫৬৯ টাকা এবং ময়মনসিংহ বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা সম্মানীর অতিরিক্ত ২৪ লাখ ৯৫ হাজার ৮৫৭ টাকা নেন।

কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও মূল সনদ ও নম্বরপত্রের ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত সম্মানীর চেয়ে বেশি অর্থ নেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

এসব বিষয়ে বক্তব্য জানতে মোবাইলে ফোন করা হলে অধিকাংশ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা মন্তব্য করতে অপারগতা জানান। তবে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক বোর্ডের চেয়ারম্যান বলেন, আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির অনুমোদন ও বোর্ডের অর্থ কমিটির অনুমোদন সাপেক্ষে তাঁরা মূল সনদ ও নম্বরপত্রের সম্মানী নির্ধারণ করেছেন এবং সে অনুযায়ী সবাই সম্মানী পাচ্ছেন।

আন্তশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার ১৪ অক্টোবর আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্দিষ্ট সম্মানীর বাইরে অর্থ নেওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হবে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা আজকের পত্রিকাকে বলেন, সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলো ১৯৬১ সালের দুটি অর্ডিন্যান্স অনুযায়ী চলছে। অর্ডিন্যান্সে অনেক ফাঁকফোকর ও অস্পষ্টতা থাকায় এর সুযোগ নিচ্ছেন বোর্ডগুলোর অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। তিনি বলেন, নানামুখী তৎপরতার কারণে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড আইন-২০২৩ আটকে গেছে। আইনটি হলে বোর্ডগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জবাবদিহির আওতায় আসবেন এবং বোর্ডে আর্থিক শৃঙ্খলা আসবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, সরকারি আদেশ লঙ্ঘন করে নির্ধারিত সম্মানীর অতিরিক্ত অর্থ নেওয়া অবশ্যই বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি। এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে জবাবদিহির আওতায় আনার এবং তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তির দাবি জানান তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

অর্থ মন্ত্রণালয়ের আশ্বাসে আন্দোলন প্রত্যাহার করলেন প্রাথমিক শিক্ষকেরা

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আজ সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শিক্ষকদের নেতা খায়রুন নাহার লিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সোমবার সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে কথা বলেন শিক্ষকদের নেতা খায়রুন নাহার লিপি। ছবি: আজকের পত্রিকা

একাদশ গ্রেডে বেতনের আশ্বাসে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকেরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছেন। আজ সোমবার (১০ নভেম্বর) সন্ধ্যায় সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা শেষে এ ঘোষণা দেন তাঁরা।

সভা শেষে আন্দোলনরত শিক্ষক সংগঠনগুলোর মোর্চা ‘প্রাথমিক শিক্ষক দাবি বাস্তবায়ন পরিষদের’ আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির (শাহিন-লিপি) সাধারণ সম্পাদক খায়রুন নাহার লিপি প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের একাদশ গ্রেডে বেতন দেওয়া হবে বলে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয় আমাদের আশ্বাস দিয়েছে, এমনটা কখনো দেয়নি। তাই আমরা আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে সব কর্মসূচি প্রত্যাহার করব। শহীদ মিনারে গিয়ে নেতারা আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেবেন। আগামীকাল থেকে আমরা ক্লাসে ফিরে যাব।’

গত শনিবার থেকে দশম গ্রেডের দাবিতে শিক্ষকেরা লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করছিলেন। আন্দোলনরত শিক্ষকদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে তাঁরা গতকাল রোববার থেকে কর্মবিরতি পালন করছেন। দশম গ্রেডে বেতন, চাকরির ১০ ও ১৬ বছরে উচ্চতর গ্রেড পাওয়া নিয়ে জটিলতা নিরসন এবং শতভাগ বিভাগীয় পদোন্নতির নিশ্চয়তা দেওয়ার দাবি জানাচ্ছিলেন তাঁরা।

তৃতীয় দিনের অবস্থান ও দ্বিতীয় দিনের কর্মবিরতি শেষে অর্থ এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সভা শেষে তাঁরা আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিলেন।

শিক্ষকদের ১০ ও ১৬ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেড প্রাপ্তির বিষয়ে জটিলতা প্রসঙ্গে অর্থসচিব বলেন, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে অর্থ বিভাগে একটি প্রস্তাব করলে অর্থ বিভাগ বিষয়টি পর্যালোচনা করবে। শিক্ষকদের শতভাগ পদোন্নতির বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের বিদ্যমান বিধিমালার আলোকে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় পদক্ষেপ নেবে।

এর আগে গতকাল রোববার সারা দেশে কর্মবিরতি ও শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পর সন্ধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের সঙ্গে আলোচনায় বসে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেই বৈঠকে আশানুরূপ সমাধান না এলেও প্রথমে কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেন শিক্ষকেরা। তবে গভীর রাতে ফের কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষক নেতারা।

এ ঘোষণার পর আজ দেশের প্রায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ ছিল। বাংলাদেশ প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির কোটালীপাড়া উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক ওলিউল্লাহ হাওলাদার বলেন, ‘আমরা উপজেলার সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ঐক্যবদ্ধ হয়ে আন্দোলন সফল করার জন্য শ্রেণিকক্ষে পাঠদান বিরতিতে রয়েছি।’ উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন ভক্ত বলেন, ঢাকার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করে কোটালীপাড়ায় সব প্রাথমিক বিদ্যালয়ে কর্মবিরতি করছেন শিক্ষকেরা। তবে তাঁরা বিদ্যালয়েই আছেন।

গাইবান্ধা সদর উপজেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সহকারী শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. ময়নুর রহমান মিলন জানান, প্রাথমিকের কেন্দ্রীয় শিক্ষক সংগঠনগুলোর ঘোষিত কর্মসূচি সফল করার জন্য গাইবান্ধায় সব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি চলছে। তিন দফা দাবি বাস্তবায়ন হলেই তাঁরা পুনরায় ক্লাসে ফিরবেন।

এই তিন দফা দাবিতে গত শনিবার সকাল থেকে শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষকেরা। ওই দিন বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তাঁরা ‘কলমবিরতি কর্মসূচি’ পালনে মিছিল নিয়ে শাহবাগের দিকে এগিয়ে যাওয়া শুরু করেন। বিকেল ৪টার দিকে শাহবাগ থানার সামনে তাঁদের আটকে দেয় পুলিশ। এ সময় পুলিশের সাউন্ড গ্রেনেড ও জলকামান, লাঠিপেটা, কাঁদানে গ্যাসে কর্মসূচি পণ্ড হয়ে যায় শিক্ষকদের। এ সময় দেড় শতাধিক শিক্ষক আহত হওয়ার পাশাপাশি পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে দাবি করেন শিক্ষক নেতারা। এরপর ওই দিন রাতেই শহীদ মিনারে অবস্থান কর্মসূচির পাশাপাশি দেশজুড়ে কর্মবিরতির হুঁশিয়ারি দেন তাঁরা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকে সংগীত শিক্ষক নিয়োগ বাতিলের বিধান কেন অবৈধ নয়—জানতে চেয়ে হাইকোর্টের রুল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে সহকারী শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া-সংক্রান্ত বিধান কেন আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। এ-সংক্রান্ত করা এক রিটের পরিপ্রেক্ষিতে আজ সোমবার বিচারপতি ফাহমিদা কাদের ও বিচারপতি মো. আসিফ হাসানের বেঞ্চ এই রুল জারি করেন।শিক্ষাসচিব, প্রাথমিক ও গণশিক্ষাসচিব এবং সরকারি কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।

গত ২৮ আগস্ট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালা, ২০২৫-এর প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ রাখা হয়েছিল। এর দুই মাসের মধ্যে ‘সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায়’ সংশোধন আনা হয়। সংশোধিত বিধিমালায় সংগীত ও শারীরিক শিক্ষা বিষয়ে শিক্ষক নিয়োগের সুযোগ বাদ দেওয়া হয়। সংশোধিত বিধিমালা গেজেটে ২ নভেম্বর প্রকাশ করে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।

পরে সংশোধিত ওই বিধিমালার গেজেটের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সারওয়াত সিরাজ শুক্লা। রিটের পক্ষে শুক্লা নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুহাম্মদ শফিকুর রহমান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বাজারে থাকা সব হ্যান্ডসেটের বৈধতা দিতে এনবিআরকে বিটিআরসির চিঠি

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

বাজারে থাকা অননুমোদিত সব মোবাইল হ্যান্ডসেটের বৈধতা দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। চিঠিতে মোবাইল ফোন সেট ও ফোন সেট উৎপাদনের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক এবং দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ভ্যাট কমানোর কথাও বলা হয়েছে।

৪ নভেম্বর বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আমিনুল হক স্বাক্ষরিত চিঠিটি এনবিআর চেয়ারম্যানকে পাঠানো হয়। একই চিঠি অর্থসচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছে।

আগামী ১৬ ডিসেম্বর থেকে দেশে ন্যাশনাল ইকুইপমেন্ট আইডেন্টিটি রেজিস্টার (এনইআইআর) কার্যকরের ঘোষণা দিয়েছে সরকার। এরই মধ্যে বিটিআরসির এমন পদক্ষেপের তথ্য সামনে এল। এনইআইআর কার্যকর হলে ১৬ ডিসেম্বর থেকে চালু হওয়া প্রতিটি হ্যান্ডসেট নিবন্ধিত হতে হবে। না হলে সেগুলো নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। চাইলেই একজনের সিম কার্ড আরেকজনের হ্যান্ডসেটে ব্যবহার করা যাবে না। তবে ১৬ ডিসেম্বরের আগপর্যন্ত নেটওয়ার্কে ব্যবহার হতে থাকা ফোনগুলো স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিবন্ধন হবে। বিটিআরসি চাইছে, ব্যবহার হতে থাকা ফোনগুলোর পাশাপাশি যেগুলো ইতিমধ্যে দেশের বাজারে প্রবেশ করেছে, সেগুলোকেও বৈধ করা হোক।

বিটিআরসির চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশের বাজারে দীর্ঘ সময় ধরে একটি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক স্মার্টফোন হ্যান্ডসেট অবৈধ পথে অনুপ্রবেশ ঘটেছে। এই খাতের সংশ্লিষ্টদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, দেশের বাজারে যে সংখ্যক অননুমোদিত হ্যান্ডসেট রয়েছে, তার একটি বিশাল অংশ আগামী ১৬ ডিসেম্বর এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে অবিক্রীত থেকে যাবে। পরবর্তী সময়ে এই হ্যান্ডসেটগুলো নেটওয়ার্কে ব্যবহারের সুযোগ থাকবে না। বিশাল আর্থিক লোকসান থেকে রক্ষা পেতে এই খাতের ব্যবসায়ীরা বিটিআরসিকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানিয়েছে। কারিগরি দিক বিবেচনায় অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলোর আইএমইআই (ইউনিক কোড, যা প্রতিটি মোবাইল ফোনকে শনাক্ত করতে ব্যবহৃত হয়) বিটিআরসির ডেটাবেইসে সংযুক্ত করার সুযোগ রয়েছে। অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলোর তথ্য বিটিআরসির ডেটাবেইসে সংযুক্ত হলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্কায়নের বিষয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের মতামতসহ সিদ্ধান্ত প্রয়োজন।

চিঠিতে মোবাইল ফোন ও ফোন উৎপাদনের যন্ত্রাংশের আমদানি শুল্ক এবং দেশে উৎপাদিত হ্যান্ডসেটের ভ্যাট কমানোর বিষয়ে বলা হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের ভ্যাট (মূল্য সংযোজন কর) বেশি। তাই মোবাইল হ্যান্ডসেটের দাম অন্যান্য দেশের তুলনায় বেশি। তাই এ ক্ষেত্রে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কার্যকরী ভূমিকার মাধ্যমে শুল্কহার যৌক্তিকভাবে পুনর্বিবেচনা করার সুযোগ রয়েছে।

চিঠিতে জানানো হয়, বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা মোবাইল ফোন হ্যান্ডসেটের আমদানি শুল্ক প্রায় ৫৮ দশমিক ৬ শতাংশ। এনইআইআর সিস্টেম চালু হলে দেশে অবৈধ পথে হ্যান্ডসেট আনা বন্ধ হবে। ফলে দেশে মোবাইলের উৎপাদন বাড়বে। একই সঙ্গে যেসব ব্র্যান্ডের বা মডেলের মোবাইল হ্যান্ডসেট দেশে উৎপাদন হয় না, সেগুলোর বৈধভাবে আমদানির পরিমাণ বাড়বে। তাই মোবাইল হ্যান্ডসেট আমদানির ক্ষেত্রে বর্তমানে প্রযোজ্য উচ্চ আমদানি শুল্ক কমিয়ে আনা প্রয়োজন বলে মনে করে কমিশন।

চিঠিতে বিটিআরসি বলেছে, ‘বাংলাদেশে মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং আমদানির ক্ষেত্রে প্রযোজ্য আমদানি শুল্ক এবং উৎপাদিত পণ্যের মূল্য সংযোজন কর কমানোর জন্য যদি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়, তবে তা এমনভাবে সমন্বয় করতে হবে যাতে দেশের অভ্যন্তরে স্থাপিত মোবাইল হ্যান্ডসেট শিল্প এবং এ খাতে কর্মরত সকলের স্বার্থ রক্ষা হয়।’

সার্বিক দিক বিবেচনায় তিনটি বিষয়ে এনবিআরকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশক্রমে অনুরোধ জানিয়েছে বিটিআরসি। এগুলো হলো ইতিমধ্যে দেশের অভ্যন্তরে প্রবেশ করা অননুমোদিত হ্যান্ডসেটগুলো বিটিআরসির ডেটাবেইসে সংযুক্ত করা হলে সে ক্ষেত্রে প্রযোজ্য শুল্কায়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত, দেশের অভ্যন্তরে কারখানায় মোবাইল হ্যান্ডসেট উৎপাদন এবং বিদেশ থেকে হ্যান্ডসেট আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক ও ভ্যাট কমানোর ব্যবস্থা এবং বিদেশ থেকে আমদানি করা ও দেশের অভ্যন্তরে তৈরি মোবাইল সেটের শুল্কের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধানের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া।

বিটিআরসির উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. জাকির হোসেন খান এনবিআরের চেয়ারম্যানকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে তিনি এ বিষয়ে এর বেশি কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সিইসির সঙ্গে বিজিবি মহাপরিচালকের বৈঠক

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
এএমএম নাসির উদ্দিন ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী । ছবি: সংগৃহীত
এএমএম নাসির উদ্দিন ও বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী । ছবি: সংগৃহীত

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) মহাপরিচালক (ডিজি) মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী।

আজ সোমবার সকালে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসির কার্যালয়ে ঘণ্টাখানেক বৈঠক করেন তিনি। এ সময় নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।

তবে কী বিষয় নিয়ে বিজিবি মহাপরিচালক সিইসির সঙ্গে বৈঠক করেন, সে বিষয়ে কিছু জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত