Ajker Patrika

জুলাই–আগস্ট হত্যাকাণ্ড: শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে সাক্ষী দিলেন আরও দুইজন

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

গত বছরের জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে সারা দেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে করা মামলায় বুধবার (৬ আগস্ট) আরও দুজন সাক্ষ্য দিয়েছেন। বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ তাঁদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।

বুধবার সাক্ষ্য দেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) সাবেক শিক্ষার্থী রিনা মুর্মু ও বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভির রংপুর প্রতিনিধি এ কে এম মঈনুল হক। জবানবন্দি শেষে তাঁদের জেরা করেন পলাতক শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। এই মামলার অপর আসামি ও রাজসাক্ষী পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনকে কারাগার থেকে ট্রাইব্যুনালে আনা হয়।

পরবর্তী সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ১৭ আগস্ট দিন ধার্য করা হয়েছে। এ নিয়ে এই মামলায় পাঁচজন সাক্ষ্য দিলেন। এর আগে ৩ ও ৪ আগস্ট সাক্ষ্য দেন যথাক্রমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত গাড়িচালক খোকন চন্দ্র বর্মণ, আহত ছাত্র আব্দুল্লাহ আল ইমরান ও পুলিশের গুলিতে চোখ হারানো পারভীন।

গতকাল ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম বেলা সাড়ে ১১টায় শুরু হয়ে সোয়া ৩টা পর্যন্ত চলে। মাঝে বেলা ১টা ১০ মিনিট থেকে ২টা পর্যন্ত বিরতি দেওয়া হয়। কার্যক্রমের শুরুতে বিচারকেরা এজলাসে বসলে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম বলেন, ৫ আগস্ট দেশ ফ্যাসিস্টমুক্ত হয়েছিল। তাই দিনটি সারা দেশে উৎসবমুখরভাবে পালিত হয়েছে।

গাজী এম এইচ তামিমের বক্তব্যের পর জবানবন্দি দেন বেরোবি থেকে গত বছর মাস্টার্স শেষ করা সাঁওতাল সম্প্রদায়ের রিনা মুর্মু। তিনি বলেন, গত বছর আন্দোলনের সময় তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মিত শিক্ষার্থী এবং আন্দোলনের প্রথম সারিতে ছিলেন। কোটা সংস্কারের যৌক্তিক দাবিতে দেশব্যাপী আন্দোলনের অংশ হিসেবে রংপুরেও ১ থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চলে। ১৪ জুলাই পুলিশি বাধা সত্ত্বেও তাঁরা জেলা প্রশাসকের কাছে স্মারকলিপি দেন। সেদিন সন্ধ্যার দিকে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনকারীদের রাজাকারের নাতিপুতি বলে সম্বোধন করলে এর প্রতিবাদে সারা দেশ ফুঁসে ওঠে। রংপুরেও প্রতিবাদে রাতে মেয়েরা হল থেকে বেরিয়ে প্রতিবাদ মিছিল করেন। ওই রাতেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগ আক্রমণ করে। এর প্রতিবাদে ১৫ জুলাই বিকেলে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে প্রতিবাদ সমাবেশ ছিল। তিনি যথাসময়ে সেখানে গিয়ে দেখেন, ছাত্রলীগ (বর্তমানে নিষিদ্ধঘোষিত) একই স্থানে পাল্টা কর্মসূচি দিয়েছে। সেখানে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, শামীম, বাবুলদের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা ছিলেন। তাঁদের হাতে রামদা, লাঠি, রডসহ দেশীয় অস্ত্র ছিল। এ কারণে তাঁরা একত্র হতে পারেননি। সরদারপাড়া থেকে একটি মিছিল আসার সময় হামলায় কয়েকজন আহত হন। এতে সমাবেশ হয়নি।

রিনা মুর্মু জবানবন্দিতে আরও বলেন, ১৬ জুলাই তাঁরা আন্দোলনের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেট এবং লালবাগে দুটি স্থান নির্ধারণ করেন। সকাল ১০টার দিকে জিলা স্কুলের সামনে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা একত্র হয়ে মিছিল নিয়ে প্রেসক্লাবে এলে তিনি যোগ দেন। তাঁরা মিছিল নিয়ে চারতলা মোড়ে যাওয়ার পথে পুলিশি বাধার মুখে পড়েন। সেখানে বেরোবি ও কারমাইকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাঁদের সঙ্গে যোগ দেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটে একত্র হন। আগে থেকে গেটে পুলিশ, ছাত্রলীগ ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের লোকজন অবস্থান করছিলেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে গেলে বাগ্বিতণ্ডার একপর্যায়ে হঠাৎ পুলিশ শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা ও কাঁদানে গ্যাসের শেল নিক্ষেপ করে। মিছিলে আরমান, ইমরান, আবু সাঈদ, সাবিনা ইয়াসমিন, রাইসুলসহ ৫-৬ হাজার শিক্ষার্থী ছিলেন। তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। তিনি ১ নম্বর গেটের বিপরীতে চায়ের দোকানে আশ্রয় নেন।

আবু সাঈদ প্রসঙ্গে রিনা মুর্মু বলেন, তাঁরা ছত্রভঙ্গ হয়ে গেলে আবু সাঈদকে পুলিশ ও ছাত্রলীগ লাঠি দিয়ে মারধর করে। আবু সাঈদ রাস্তার ডিভাইডারের একটু সামনে দুই হাত প্রসারিত করে দাঁড়ান। ১ নম্বর গেটে অবস্থানরত দুজন পুলিশ সদস্য আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে গুলি করেন। আবু সাঈদ পড়ে যান। সহযোদ্ধা আয়ান গিয়ে আবু সাঈদকে ওঠান। পরে আরও কয়েকজন গিয়ে তাঁকে পার্কের মোড়ের দিকে নিয়ে যান। পরে তিনি জানতে পারেন, যাঁরা গুলি করেছেন, তাঁরা আমির আলী ও সুজন চন্দ্র। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে তিনি জানতে পারেন, আবু সাঈদ মারা গেছেন।

রিনা এই হত্যাকাণ্ডের জন্য শেখ হাসিনা, বেরোবি প্রশাসন, যাঁরা সরাসরি গুলি করেছেন, রংপুর মহানগর পুলিশের দায়িত্বে যাঁরা ছিলেন এবং ছাত্রলীগকে দায়ী করে তাঁদের বিচার চান। জবানবন্দি শেষে তাঁকে জেরা করেন আইনজীবী আমির হোসেন।

এরপর জবানবন্দি দেন এ কে এম মঈনুল হক। তিনি বলেন, ১৬ জুলাই বেরোবির ১ নম্বর গেটের সামনে পার্কের মোড় এলাকায় পেশাগত দায়িত্ব পালন করছিলেন। রংপুর প্রেসক্লাব এলাকা থেকে শিক্ষার্থীদের একটি মিছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর গেটের সামনে গেলে পুলিশ, ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং সরকারি দলের সমর্থকেরা বাধা দেন। পুলিশের আশপাশে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ছিলেন। আন্দোলনকারীদের বিশ্ববিদ্যালয়ে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয় এবং একপর্যায়ে পুলিশ লাঠিপেটা শুরু করে। কাঁদানে গ্যাসের শেল, রাবার বুলেট ও শটগানের গুলিবর্ষণ করে পুলিশ। তখন এনটিভিতে বেলা ২টার খবর শুরু হলে তাঁকে লাইভে সম্পৃক্ত হতে বলা হয়। তিনি লাইভে যুক্ত হয়ে পরিস্থিতি তুলে ধরেন। ২টা ১৭ মিনিটের দিকে ১ নম্বর গেটের সামনে রোড ডিভাইডারের একটি ছোট কাটা অংশ দিয়ে এসে এক যুবক দুই হাত দুই দিকে প্রসারিত করে দাঁড়ান। সেখান থেকে মাত্র কয়েক গজ দূরত্বে থাকা পুলিশ তাঁকে লক্ষ্য করে গুলি করে। এই দৃশ্য এনটিভিতে সরাসরি সম্প্রচার চলছিল। পুলিশের গুলি যুবকের বুক ও পেটে লাগে। গুলিবিদ্ধ হয়ে তিনি কয়েক পা পিছিয়ে যান এবং বসে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তিনি আবার দাঁড়ানোর চেষ্টা করে রাস্তায় লুটিয়ে পড়েন। তাঁর কয়েকজন সঙ্গী তাঁকে তুলে পার্কের মোড়ের দিকে নিয়ে যান। তাঁকে যে পুলিশ সদস্যরা গুলি করছিলেন, তাঁদেরও লাইভে দেখানো হয়।

মঈনুল হক বলেন, পরে সহকর্মীদের মাধ্যমে জানতে পারেন, গুলিবিদ্ধ ওই যুবককে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সূত্র থেকে জানতে পারেন, তাঁর নাম আবু সাঈদ এবং তিনি বেরোবির ইংরেজি বিভাগের ১২ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। বেলা ৩টার দিকে আবু সাঈদের মৃত্যুর খবর জানেন।

মঈনুল হকের কাছে থাকা ওই ঘটনার ভিডিও ফুটেজ ট্রাইব্যুনালে দেখানো হয়। ফুটেজে আবু সাঈদকে গুলি করার পর নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

ত্রুটি রেখেই চালু করা হয় মেট্রোরেল, বিদেশি প্রতিষ্ঠান দিয়ে সেফটি অডিট হবে: ডিএমটিসিএল

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৪: ১৮
সোমবার সকালে উত্তরা মেট্রোরেল ডিপিতে মেট্রোর সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ।
সোমবার সকালে উত্তরা মেট্রোরেল ডিপিতে মেট্রোর সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ।

অনেকগুলো ত্রুটি রেখেই তাড়াহুড়া করে মেট্রোরেল চালু করা হয়েছিল। মেট্রোরেলের কোনো ‘সেফটি অডিট’ (নিরাপত্তা নিরীক্ষা) হয়নি। তাই ইউরোপীয় কোনো প্রতিষ্ঠান দিয়ে সেফটি অডিট করাবে সরকার।

আজ সোমবার সকালে উত্তরা মেট্রোরেল ডিপিতে মেট্রোর সমসাময়িক বিষয় নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ফারুক আহমেদ।

তিনি বলেন, ‘মেট্রোরেল প্রকল্পের নির্মাণকাজে কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। আর যেখানে দুর্ঘটনা (ফার্মগেটে বিয়ারিং প্যাড খুলে পড়ে পথচারীর মৃত্যু) ঘটেছিল সেই অংশে অনেক ত্রুটি আছে।’

দ্রুতই সেফটি অডিট করানো হবে জানিয়ে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘আমাদের কাছে ফ্রান্সের দুটি প্রতিষ্ঠান আবেদন করেছে। সেফটি অডিট করার জন্য আমরা খুব শিগগিরই টেন্ডার প্রক্রিয়ায় যাব।’

মেট্রোর বেয়ারিং প্যাড সম্পর্কে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘মেট্রোর বিয়ারিং প্যাড হঠাৎ করে পড়ে যায়নি। এটা হঠাৎ করে পড়ে যাওয়ার জিনিস না। যেহেতু এটা নিয়ে তদন্ত চলছে ফলে এ বিষয়ে আমি জাজমেন্টাল হতে চাই না। তবে যেটা হতে পারে সেটা বলতে পারি— ডিজাইন ফল্ট হতে পারে। যে জিনিসের ওপর বসানোর কথা বলা হয়েছিল, যা যা দেওয়ার কথা ছিল সেটা বসানো হয়নি। যে ডিজাইনে হওয়ার কথা ছিল সেটা হয়তো ঠিকাদার করেনি। যে পরামর্শককে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তারা হয়তো ঠিক করে জিনিসটা বুঝে নেয়নি। এই চারটা কারণে হতে পারে অথবা এর মধ্যে কোনো একটি কারণেও হতে পারে।’

ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘দোষ কিন্তু বিয়ারিংয়ের না। বিয়ারিং যে লাগিয়েছে, বাজেভাবে লাগানো হয়েছে কিনা, যার আসলে বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব ছিল সে বুঝে নিয়েছে কিনা—সেগুলো এখন আমাদের দেখতে হবে। আমরা বিদেশি পরামর্শক রেখেছি, বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব তাদের এবং পরামর্শকদের আমাদের বুঝিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব। আর ডিএমটিসিএল পরামর্শকের কাছ থেকে বুঝে নেবে। তখন এই কাজগুলো কিছুটা তাড়াহুড়া হয়েছে। কেন হয়েছে সেটার উত্তর তো আমি দিতে পারব না। যেখানে দুর্ঘটনা ঘটেছিল সেই অংশে অনেক ডিফেক্ট (ত্রুটি) আছে। ফলে সেটা এখনো আমরা বুঝে নিইনি।’

বিয়ারিং প্যাডের দুর্ঘটনার বিষয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘যেখানে বিয়ারিং প্যাড পড়ে গিয়েছিল ওই অংশের ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড আছে ২০২৫ সালের ২৯ জুন পর্যন্ত। কিন্তু আমরা এই ডিফেক্ট লায়াবিলিটি পিরিয়ড একসেপ্ট করিনি এখনো। কারণ এখনো অনেক মেজর ডিফেক্ট রয়ে গেছে। সেগুলো ঠিক না করা পর্যন্ত ডিফেক্ট লায়াবিলিটির নোটিফিকেশন পিরিয়ড একসেপ্ট করব না। এটা এখনো ডিফেক্ট লায়াবিলিটি নোটিফিকেশন পিরিয়ডে আছে। যত সমস্যা আছে এগুলো ঠিকাদারকে মেরামত করতে হবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘দুর্ঘটনার পর আমরা আবার সব পিলার পরিদর্শন করছি। আগেও যেসব স্থানে ত্রুটি শনাক্ত করে নোটিফিকেশন দেওয়া হয়েছিল, সেগুলোও পুনরায় যাচাই করা হচ্ছে। আমাদের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হলো—যেখানে ত্রুটি বা সমস্যা পাওয়া যাবে, সেখানে বিয়ারিং প্যাড অবশ্যই পরিবর্তন করা হবে।’

এমআরটি লাইন-৬ সম্পর্কে ডিএমটিসিএলের এমডি বলেন, ‘প্রকল্পটি চালুর আগে ন্যূনতম ৬ থেকে ৯ মাসের ট্রায়াল রান ও বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু আমরা সে সময়টি দিতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘তিন বছরে মেট্রো চালু হবে বা পাঁচ বছরে মেট্রো সম্পূর্ণ হবে—এ ধরনের ধারণা আসলে ভুল। কোনো মেট্রোর প্রথম সিভিল কন্ট্রাক্ট থেকে রাজস্ব অপারেশন শুরু করতে সাধারণত ছয় থেকে সাত বছর লাগে।’

মেট্রো প্রকল্প ব্যর্থ হয়নি—সরকার এই প্রকল্প সম্পন্ন করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ জানিয়ে ফারুক আহমেদ বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হলো, দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্ম যেন এই প্রকল্পের ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হয়। বিপুল অর্থ ব্যয়ে লাইন-১-এর কাজ করা হয়েছে, আর এর মান সবাই নিশ্চয়ই উপলব্ধি করেছেন। সরকারের উদ্দেশ্য হলো, একটি প্রতিযোগিতামূলক বাজার তৈরি করা, যাতে একাধিক প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে এবং কম খরচে উন্নতমানের মেট্রো নির্মাণ সম্ভব হয়। মেট্রো আমাদের করতেই হবে—তবে তা হবে স্মার্ট ফাইন্যান্সিংয়ের মাধ্যমে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

জুলাই সনদ বাস্তবায়ন

রাজনৈতিক দলগুলোকে এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে বলল সরকার

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৩: ৩৯
সোমবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং
সোমবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং

জুলাই সনদ বাস্তবায়নে রাজনৈতিক দলগুলোকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানানোর অনুরোধ করেছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে দলগুলোর পক্ষ থেকে দিকনির্দেশনা পেলে সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল।

আজ সোমবার জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নে গণভোট বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকের পর প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা জানান উপদেষ্টা।

সকাল ১০টার দিকে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে রাজধানীর তেজগাঁও কার্যালয়ে এ বৈঠক শুরু হয়।

আইন উপদেষ্টা বলেন, জুলাই জাতীয় সনদ বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে আলোচনা করে এক সপ্তাহের মধ্যে সরকারকে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত জানাতে অনুরোধ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আজ জাতীয় ঐক্যমত কমিশন কর্তৃক প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়। ’

আসিফ নজরুল বলেন, ‘উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এ ছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।’

তিনি বলেন, ‘এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে, তা নিয়ে ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরি ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।’

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদ বিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে (সম্ভব হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বর্তমান পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যে কোনো সুযোগ নাই সেটাও আমাদের সবার বিবেচনায় রাখা প্রয়োজন। ’

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয় বলে উল্লেখ করেন আইন উপদেষ্টা।

জুলাই সনদ বাস্তবায়নের আদেশ কবে জারি হতে পারে— এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলনে রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে। ওনাদের কিছু সময় দিতে চাই। যেসব বিষয় উল্লেখ করেছি সেগুলোতে ওনারা আলোচনা করে একমত হতে পারেন কিনা আমরা দেখি।’ দলগুলে একমত না হলে সরকার কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমরা অপেক্ষা করব, তারপর অবশ্যই সরকার সরকারের মতো অ্যাক্ট (পদক্ষেপ) নেবে।’

সরকার কি রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে নতি স্বীকার করেছে— এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘আমি বলেছিলাম চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে প্রধান উপদেষ্টার নেতৃত্বে উপদেষ্টা পরিষদ। এ সিদ্ধান্ত থেকে আমরা মোটেও সরে আসি নাই। সেক্ষেত্রে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে ঐক্যবদ্ধ সুপারিশ প্রত্যাশা করা ইতিবাচক হিসেবে দেখতে পারেন।’

রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার আয়োজন সরকার করে দেবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘সরকার আয়োজন করে বহু আলোচনা করেছে। সরকার আর কোনো আয়োজন করতে যাচ্ছে না। ফ্যাসিবাদ বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৫ বছর নিজেরা নিজেরা আলোচনা করে বহু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওনারা অত্যন্ত প্রতিকূল সময়ে একসঙ্গে আন্দোলন করেছেন, নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এখন ওনারা নিজ উদ্যোগে আলোচনা করে ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেবেন, এ প্রত্যাশা করছি। আমি কালকেই দেখলাম, একটি দলের পক্ষ থেকে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে—আমরা এটাকে স্বাগত জানাই।’

জুলাই জাতীয় সনদে রাজনৈতিক দলগুলোর আপত্তি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে আসিফ নজরুল বলেন, ‘এ প্রসঙ্গে আমাদের এখন কোনো মন্তব্য নেই। দলগুলো এ বিষয়ে একটা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত নেবেন বলে আশা করি। তাঁরা আলাপ-আলোচনা করলে আমাদের কাজটা সহজ হবে। তাঁরা ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারলে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

সাবেক মুখ্যসচিব কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
ড. কামাল সিদ্দিকী। ছবি: সংগৃহীত
ড. কামাল সিদ্দিকী। ছবি: সংগৃহীত

সাবেক মুখ্যসচিব ড. কামাল সিদ্দিকী মারা গেছেন। আজ সোমবার ভোরে গুলশানে নিজ বাসভবনে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। সকালে এক সরকারি তথ্য বিবরণীতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

আজ আছর নামাজের পর গুলশান আজাদ মসজিদে তাঁর নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

কামাল সিদ্দিকী ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তিনি ২০০৬ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুখ্যসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি জাতিসংঘের শিশু অধিকার কমিটির নির্বাচনের জন্য বাংলাদেশ কর্তৃক মনোনীত হন এবং ২০০৫ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন।

ড. কামাল সিদ্দিকী ২০০৬ সাল পর্যন্ত এনসাইক্লোপিডিয়া অব ফ্লোরা অ্যান্ড ফাউনা অব বাংলাদেশের প্রধান সম্পাদক ছিলেন। এটির প্রথম খণ্ড ২০০৮ সালে এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ থেকে প্রকাশিত হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

৪ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন সচিব

বিশেষ প্রতিনিধি, ঢাকা ­­
আপডেট : ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১০: ৪১
৪ মন্ত্রণালয় ও বিভাগে নতুন সচিব

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ এবং পরিকল্পনা বিভাগে নতুন সচিব নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

এর মধ্যে তিনজন অতিরিক্ত সচিবকে সচিব পদে পদোন্নতি এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত এক সচিবকে পদায়ন করে রোববার রাতে আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব ড. নুরুন্নাহার চৌধুরীকে সচিব পদোন্নতি দিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে পদায়ন করা হয়েছে।

অর্থ বিভাগে সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব বিলকিস জাহান রিমিকে পদোন্নতির পর বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শওকত রশীদ চৌধুরী পদোন্নতিকে সচিব পদোন্নতি দিয়ে পেয়ে পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

অন্যদিকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতারকে পরিকল্পনা বিভাগের সচিব পদে পদায়ন করা হয়েছে।

গত ৩ আগস্ট পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সংযুক্ত অতিরিক্ত সচিব এস এম শাকিল আখতারকে সচিব পদে পদোন্নতি দিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু ওই পদে যোগ দিতে পারেননি তিনি। এরপর তাঁকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত