Ajker Patrika

এক যুগেও হয়নি শিশু আদালত

  • ২০১৩ সালের শিশু আইনে এই আদালতের কথা বলা হয়।
  • বিচার চলছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে।
  • মামলার চাপে বিলম্বিত হচ্ছে নিষ্পত্তি।
  • প্রতিষ্ঠার তাগিদ দিয়ে সুপ্রিম কোর্টের চিঠি।
এস এম নূর মোহাম্মদ, ঢাকা  
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

শিশুদের করা অপরাধের বিচারের জন্য প্রতিটি জেলায় শিশু আদালত নামে এক বা একাধিক আদালত থাকার বিধান করা হয়েছিল ২০১৩ সালের শিশু আইনে। তবে তখন থেকে এক যুগ কেটে গেলেও এই আদালত প্রতিষ্ঠা করেনি সরকার। এ কারণে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিজ দায়িত্বের অতিরিক্ত হিসেবে শিশু আদালতের দায়িত্ব পালন করছেন। এতে মামলা নিষ্পত্তি বিলম্বিত হচ্ছে।

সুপ্রিম কোর্টে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারা দেশে বিচারাধীন শিশুবিষয়ক মামলার সংখ্যা ৪২ হাজার ৫৬৯। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের ২০০৭ সালের ১২ মার্চের পত্র অনুযায়ী দেশে ম্যাজিস্ট্রেসি কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালিত হওয়ার জন্য বিচারক ও মামলার অনুপাত হওয়া উচিত ১: ৫৭৮। তবে বর্তমানে প্রতিটি জেলায় শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা করা হলেও বিচারক ও শিশুবিষয়ক মামলার অনুপাত হবে ১:৬৬৫। স্পষ্টতই বিচারক তথা আদালতের সংখ্যার তুলনায় মামলার সংখ্যা অনেক বেশি।

সম্প্রতি মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হয়ে একটি শিশুর মৃত্যুর ঘটনায় সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় ওঠে। এর বিচারকে কেন্দ্র করে অনেকে স্বতন্ত্র শিশু আদালতের বিষয়টি সামনে এনেছেন। এমন প্রেক্ষাপটে দেশের প্রতিটি জেলায় শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা করতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে আইন মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

এ নিয়ে জানতে চাইলে সুপ্রিম কোর্টের স্পেশাল অফিসার মোয়াজ্জেম হোসাইন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইনে শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার কথা বলা হলেও তা দীর্ঘ সময়ে বাস্তবায়িত হয়নি। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারকেরাই এই দায়িত্ব পালন করছেন। এতে করে তাঁদের ওপর বাড়তি চাপ পড়ছে। বিলম্বিত হচ্ছে মামলা নিষ্পত্তি। তবে প্রধান বিচারপতির নির্দেশে পৃথক শিশু আদালত প্রতিষ্ঠা করতে সুপ্রিম কোর্ট থেকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে শিশুদের অপরাধসংক্রান্ত অভিযোগগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি হবে।

১৩ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট থেকে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে চাইল্ড অ্যাক্ট, ১৯৭৪ রহিত করে শিশু আইন, ২০১৩ প্রণীত হয়। নতুন আইনটির ১৬(১) ধারা অনুযায়ী প্রতি জেলা সদরে শিশু আদালত নামে এক বা একাধিক আদালত থাকবে। কিন্তু আইনে থাকলেও এ পর্যন্ত দেশের কোনো জেলায় স্বতন্ত্র শিশু আদালত প্রতিষ্ঠিত হয়নি। শিশুদের মামলার দ্রুত ও সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করতে এই আদালত প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের তাগিদ দেওয়া হয় সুপ্রিম কোর্টের চিঠিতে।

বর্তমানে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক নিজের দায়িত্বের অতিরিক্ত কাজ হিসেবে শিশু আদালতের দায়িত্ব পালন করছেন। অথচ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালগুলো সংশ্লিষ্ট মামলার বিচারেই ভারাক্রান্ত। সুপ্রিম কোর্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের অধীনে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা ১ লাখ ৫১ হাজার ৩১৭টি। প্রসঙ্গত, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারককে বাড়তি দায়িত্ব হিসেবে মানব পাচার মামলার বিচারও করতে হচ্ছে।

শিশু আইন, ২০১৩-এর বিধান অনুযায়ী শিশু আদালতের কাঠামো প্রচলিত অন্যান্য আদালতের চেয়ে আলাদা। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিদ্যমান পরিবেশে শিশুদের বিচার করার সুযোগ নেই।

হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট মনজিল মোরসেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আইনেই বলা হয়েছে শিশু আদালত করার জন্য। মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করেনি, এটা তাদের ব্যর্থতা। আরও আগেই শিশু আদালত করা দরকার ছিল। অনেক কোর্টেই বিচারক নেই। যার কারণে মামলাজট বাড়ছে। তাই দ্রুত শিশু আদালতসহ অন্যান্য আদালতে বিচারক নিয়োগ করা উচিত।’

অন্তর্বর্তী সরকারের গঠন করা বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও শিশু অপরাধীদের বিচারের জন্য প্রতি জেলায় একটি স্বতন্ত্র শিশু আদালত প্রতিষ্ঠার সুপারিশ করা হয়েছে। জানতে চাইলে কমিশনের সদস্য ব্যারিস্টার তানিম হোসেইন শাওন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা পৃথক শিশু আদালত করার জন্য সুপারিশ করেছি; কারণ, এটি আইনেই বলা আছে। পৃথক শিশু আদালত না হলে আইনের উদ্দেশ্য ব্যাহত হবে। শিশুবান্ধব এই আদালতের পরিবেশ হবে প্রচলিত আদালতের চেয়ে ভিন্ন।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নতুন মেট্রো নয়, রুট বাড়ানোর চিন্তা

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

সরকারি টাকায় ব্যক্তিগত সড়ক কার্পেটিং বিচারপতি খিজির হায়াতের, প্রমাণ পেয়েছে দুদক

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত