Ajker Patrika

মুক্তিযুদ্ধের ভাস্কর্যের অন্যতম স্রষ্টা হামিদুজ্জামান খান আর নেই

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ জুলাই ২০২৫, ১৬: ১৭
ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। ছবি: সংগৃহীত
ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান। ছবি: সংগৃহীত

‘জাগ্রতবাংলা’, ‘সংশপ্তক’, ‘বিজয় কেতন’ এবং ‘স্বাধীনতা চিরন্তন’-এর মতো বহু মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ভাস্কর্যের স্রষ্টা ভাস্কর হামিদুজ্জামান খান মারা গেছেন। আজ রোববার সকালে ৭৯ বছর বয়সে শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি।

ভাস্করের স্ত্রী চিত্রশিল্পী আইভি জামান গণমাধ্যমকে জানান, সকাল ১০টা ৭ মিনিটে ঢাকার মাদানী অ্যাডিনিউয়ের ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

ভাস্কর্যের পাশাপাশি হামিদুজ্জামান খান জলরং, তেলরং, অ্যাক্রিলিক এবং স্কেচ মাধ্যমে সমান দক্ষতার সঙ্গে কাজ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর তার ভাস্কর্যে পাখির বিষয়টি ছিল অত্যন্ত প্রিয়। ঢাকার বুকে ব্রোঞ্জ ও ইস্পাতের তৈরি বেশ কিছু পাখির ভাস্কর্য শিল্প জগতে তাঁর স্বাতন্ত্র্যের সাক্ষ্য বহন করে।

শারীরিক জটিলতা দেখা দেওয়ায় গত ১৫ জুলাই ভাস্কর হামিদুজ্জামান খানকে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এরপর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন। তিনি ডেঙ্গু ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন।

হামিদুজ্জামান খান ১৯৪৬ সালের ১৬ মার্চ কিশোরগঞ্জের সহস্রাম গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৬৭ সালে বাংলাদেশ কলেজ অব আর্টস অ্যান্ড ক্রাফটস (বর্তমান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) থেকে চারুকলায় স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। কর্মজীবনের শুরুতে তিনি জলরঙের চিত্রকর্মের জন্য খ্যাতি লাভ করেন, তবে পরবর্তীতে ভাস্কর্যে মনোনিবেশ করেন। ১৯৭০ সালে তিনি ঢাকা চারুকলার ভাস্কর্য বিভাগে শিক্ষক হিসেবে দেন।

১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনারা হামিদুজ্জামানকে আটক করলেও পরে তিনি মুক্তি পান। ২৭ মার্চ ঢাকার নিউমার্কেট এলাকায় তিনি অসংখ্য মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন। যুদ্ধের এই নৃশংসতা এবং মানুষের অভাবনীয় দুর্দশা তাঁকে প্রবলভাবে নাড়া দেয়। এই কারণে স্বাধীনতার পর প্রথম দুই দশকে তাঁর অধিকাংশ ভাস্কর্যের মূল বিষয় ছিল মুক্তিযুদ্ধ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘শান্তির পাখি’। ছবি: সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে ‘শান্তির পাখি’। ছবি: সংগৃহীত

১৯৭২ সালে তিনি ভাস্কর আবদুর রাজ্জাকের সঙ্গে যৌথভাবে ‘জাগ্রত চৌরঙ্গী’ নির্মাণে কাজ করেন। জয়দেবপুর চৌরাস্তায় অবস্থিত এটি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণায় নির্মিত প্রথম ভাস্কর্য হিসেবে পরিচিত।

হামিদুজ্জামান খানের উল্লেখযোগ্য ভাস্কর্য:

জাগ্রতবাংলা: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে সার কারখানায়।

সংশপ্তক: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে।

বিজয় কেতন: ঢাকা সেনানিবাসে।

ইউনিটি: মতিঝিলে বাংলাদেশ ব্যাংক ভবন প্রাঙ্গণে।

ফ্রিডম: কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট প্রাঙ্গণে।

স্বাধীনতা চিরন্তন: উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে।

মৃত্যুঞ্জয়ী: আগারগাঁওয়ে সরকারি কর্মকমিশন প্রাঙ্গণে।

এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম: মাদারীপুরে।

হামিদুজ্জামানের ভাস্কর্য সংশপ্তক। ছবি: সংগৃহীত
হামিদুজ্জামানের ভাস্কর্য সংশপ্তক। ছবি: সংগৃহীত

এ ছাড়া, তাঁর শিল্পী সত্তার আরেক রূপ ধরা দিয়েছে ইস্পাত ও ব্রোঞ্জে গড়া পাখির ভাস্কর্যে। আশির দশকে বঙ্গভবনের প্রবেশপথে ফোয়ারায় স্থাপিত তার ‘পাখি পরিবার’ ভাস্কর্যটি ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায়। গুলশানের ইউনাইটেড ভবনের প্রবেশপথে তার ‘পাখি’র বিমূর্ত উড়ান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে তার ‘শান্তির পাখি’ অন্য এক আকাঙ্ক্ষার কথা বলে।

বর্ণাঢ্য শিল্পী জীবনে হামিদুজ্জামান খান প্রায় ২০০ ভাস্কর্য নির্মাণ করেছেন এবং তাঁর ৪৭টি একক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হয়েছে। শিল্পকলায় অসামান্য অবদানের জন্য তিনি ২০০৬ সালে একুশে পদক লাভ করেন এবং ২০২২ সালে বাংলা একাডেমি ফেলো নির্বাচিত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

রাজধানীতে গুলিতে নিহত মামুন শীর্ষ সন্ত্রাসী ইমনের প্রধান সহযোগী

আসিফ ক্ষমা না চাইলে অ্যাকশনে যাওয়ার হুমকি ফুটবলারদের

গাজীপুরে রাস্তা আটকে চলাচল করা পুলিশ কমিশনার নাজমুল করিম বরখাস্ত

দিনদুপুরে রাজধানীতে হাসপাতালের সামনে এক ব্যক্তিকে গুলি করে হত্যা

উপদেষ্টা ফরিদা আখতারের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ