Ajker Patrika

গেটকিপাররাই খুলে দিতেন পাচারের গেট

সৈয়দ ঋয়াদ, ঢাকা জয়নাল আবেদীন খান
আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১৯: ৪২
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের আমলে দেশের ব্যাংকগুলোয় নজিরবিহীন লুটপাট হয়েছে। অর্থ লোপাট ও পাচারের মূল হোতা হিসেবে নাম উঠে এসেছে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল ইসলাম মাসুদ, বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান এবং আলোচিত প্রশান্ত কুমার হালদারসহ (পি কে হালদার) সংঘবদ্ধ একটি চক্রের। আর এই চক্রকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করেছেন অর্থ পাচার ঠেকানোর গেটকিপারখ্যাত বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের (বিএফআইইউ) সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস ও বিএফআইইউয়ের কয়েকজন কর্মকর্তা। এই সংঘবদ্ধ চক্রের মাধ্যমে দেশ থেকে ২৪ হাজার কোটি ডলার বা ২৮ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে।

শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটি, দুদকের অনুসন্ধান এবং বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিভিন্ন বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিশেষ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।

এসব প্রতিবেদনের তথ্য পর্যালোচনায় উঠে আসে, এই চক্রকে ঋণের নামে অর্থ লোপাটে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফজলে কবির, আব্দুর রউফ তালুকদার, সাবেক ডেপুটি গভর্নর ও নীতি উপদেষ্টা আবু মো. নাছের, কাজী ছাইদুর রহমান। এ ছাড়া ইসলামী ব্যাংক পিএলসির এমডি মুহাম্মদ মনিরুল মওলা, সাবেক ডিএমডি মিফতাহ উদ্দীনসহ ডজনখানেক ব্যাংকের এমডি, ডিএমডিও পাচারের সঙ্গে যুক্ত।

দুদকের এক নথিতে বলা হয়, এনআরবি কমার্শিয়াল (এনআরবিসি) ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের তদন্তের দায়িত্ব বিএফআইইউতে পাঠানো হলে মাসুদ বিশ্বাস গুরুতর অনিয়মকে গোয়েন্দা প্রতিবেদন হিসেবে দেখাননি। বরং তিনি ক্ষমতার অপব্যবহার করে গোয়েন্দা প্রতিবেদনকে সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকে পাঠানোর অনুমতি দেন, যা পাচার এবং অনিয়মকে আশকারা দিয়েছে। একইভাবে মোটা অঙ্কের অর্থ নিয়ে রূপালী ব্যাংকের গ্রাহক ডলি কনস্ট্রাকশনকে একক গ্রাহক ঋণসীমা ভেঙে ৪০০ কোটি টাকার আর্থিক সুবিধা প্রদান, ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ব্যাংকটির চারটি শাখা থেকে অনিয়মের মাধ্যমে প্রায় ১ হাজার ৫০০ কোটি টাকা সরানোর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের দায়মুক্তির ব্যবস্থা করেন তিনি।

এদিকে শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সাদ মুসা গ্রুপ, সাজিদা ফাউন্ডেশন, পি কে হালদারসহ কয়েকটি গ্রুপের মাধ্যমে ২৪০ বিলিয়ন ডলার বা ২৪ হাজার কোটি ডলার বিভিন্ন দেশে পাচার হয়েছে। দেশীয় মুদ্রায় প্রায় ২৮ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা। গড় হিসাবে প্রতিবছর ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও আর্থিক খাতের গোয়েন্দা সংস্থা বিএফআইইউ অর্থ পাচার ঠেকাতে কোনো বাধা না দিয়ে বরং সহায়তা করেছে, যার দায় প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক খাতের এ দুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা এড়াতে পারে না।

দুদকের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, ব্র্যাক ব্যাংকের গ্রাহক সাজিদা ফাউন্ডেশন ২০২১ সালে ৮২ হাজার ৪১৬ ডলার বিদেশে পাচার করেছে। যমুনা ব্যাংকের ধানমন্ডি শাখার গ্রাহক শিরিন স্পিনিং মিলসের অনুকূলে কমপক্ষে ১০ কোটি ডলার রেমিট্যান্স প্রেরণের ক্ষেত্রে অনিয়ম অবৈধভাবে প্রভাব বিস্তার করেন মাসুদ বিশ্বাস। একইভাবে এনআরবিসি ব্যাংকের গ্রাহক টাইগার আইটির নামে ১ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টি প্রদানে প্রভাব বিস্তার করেন তিনি।

জানতে চাইলে বিএফআইইউর প্রথম প্রধান ও সাবেক ডেপুটি গভর্নর আবু হেনা মোহা. রাজী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘রাজনৈতিক ও ওপরমহলের চাপ ও বাধা ছিল। এটা করা যাবে না, ওটা ধরা যাবে না, সব দেখা যাবে না ইত্যাদি। এর ওপর আমাদের আইনি ও নীতিমালার দুর্বলতা ছিল, পলিসি দুর্বল ছিল। ইমপ্লিমেন্টেশনে দুর্বলতা ছিল। সেই দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ও প্রভাব খাটিয়ে যে অর্থ পাচার করা হচ্ছে, তা আমরা বুঝতে পারছিলাম। ব্যাংকারদের সাপোর্ট প্রয়োজন ছিল। একসময় অনেক ব্যাংকে এ জন্য জনবলও ছিল না। যার সুযোগ নিয়ে ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও পাচার হয়েছে।’

দুদকের অভিযোগে বলা হয়েছে, মাসুদ বিশ্বাস দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। স্কাই ক্যাপিটাল এয়ারলাইনসের বিমান কেনায় সন্দেহজনক অনিয়মের অভিযোগটি ঘুষের বিনিময়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে না পাঠিয়ে গুরুতর অপরাধ করেছেন। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান তমাল পারভেজ ব্যাংক থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা লুটপাটসহ আর্থিক অনিয়মের রিপোর্টকে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯-এর আওতায় গোয়েন্দা প্রতিবেদন হিসেবে না পাঠিয়ে সাধারণ পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন হিসেবে পাঠানোর অনুমতি দেন।

দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) ও মুখপাত্র মো. আক্তার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে গত ২ জানুয়ারি মাসুদ বিশ্বাসের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। আর গত ১৮ জানুয়ারি তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রতিটি অভিযোগের তদন্ত চলমান। অভিযোগগুলোর প্রমাণ পেলে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানায়, বিএফআইইউর সাবেক প্রধান মাসুদ বিশ্বাস, সাবেক গভর্নর ফজলে কবির, আব্দুর রউফ তালুকদার, ইসলামী ব্যাংকের বর্তমান এমডি মুহাম্মদ মনিরুল মওলা, ডিএমডি মিফতাহ উদ্দীন আহমেদ, আকিজ উদ্দিন আওয়ামী লীগ আমলে এস আলমের মালিকানাধীন ৫টি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে অর্থ সরাতে সহায়তা করে পাচারের পথ ঝামেলামুক্ত করেন। একই ভূমিকা ছিল অন্য ৫টি ব্যাংকের এমডি, ডিএমডি, অর্থ পাচার প্রতিরোধের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদেরও। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সময় বিএফআইইউর সাবেক ডেপুটি প্রধান, পরিচালক, অতিরিক্ত পরিচালক, যুগ্ম পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ-১, ২, বৈদেশিক মুদ্রানীতি বিভাগ, বৈদেশিক মুদ্রা ট্রেজারি বিভাগ, বৈদেশিক মুদ্রা পরিদর্শন বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংকের কয়েকজন সমন্বয়ক ও পর্যবেক্ষক, অফসাইট সুপারভিশন ও পরিদর্শন বিভাগের কর্মকর্তাদের ওপর প্রভাব খাটিয়ে ইচ্ছেমতো নীতিমালা করতেন এস আলম ও বেক্সিমকোর কর্ণধারের নেতৃত্বাধীন সংঘবদ্ধ চক্র। এমনকি অর্থ লুটের সহায়ক প্রজ্ঞাপনও করাতেন তাঁরা। ওই চক্রের ইশারায় গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান, ডেপুটি প্রধানসহ গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন, পদোন্নতিও হতো। আর ব্যাংকগুলো পরিদর্শন এস আলমের নির্দেশে বাইরে যাওয়ার সুযোগ ছিল না। কোনো কর্মকর্তা এস আলমের অনিয়ম ধরতে গেলে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হতো, দেখানো হতো চাকরিচ্যুতির ভয়। বাংলাদেশ ব্যাংকের চট্টগ্রাম অফিসের নির্বাহী পরিচালকদের দেওয়া হতো গাড়ি উপহার। এ ছাড়া কর্মকর্তাদের জন্য স্তরভেদে ছিল মূল্যবান উপঢৌকন।

অর্থনীতিবিদ ড. এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম বলেন, অবৈধ অর্থের উৎস বন্ধ না হলে অর্থ পাচার চলতেই থাকবে। বাংলাদেশে অবৈধ অর্থের উৎস বেশি। তাই তাঁরা তাঁদের অবৈধ অর্থ দেশে না রেখে বিদেশে পাচার করে দেন। যেহেতু এই টাকা অবৈধ, তাই তাঁদের পরিবারের কেউই নিরাপদ নন। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে বিভিন্ন কৌশলে তাঁরা অর্থ পাচার করে দেন।

২০১৬ সালের ১১ আগস্ট অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠক থেকে জানা গেছে, প্রতিবছর গড়ে ৫০০ কোটি টাকা করে পাচার হয়েছে। ওভার ইনভয়েস-আন্ডার ভয়েস করে টাকা পাচার হয়েছে। সেই পাচারের তথ্য জেনে নীরব ভূমিকা রেখেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান অর্থ পাচারের জন্য সরাসরি নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংক ও বিএফআইইউর কর্মকর্তাদের ভূমিকাকে দুষেছেন। আইনি দুর্বলতার চেয়ে তাঁদের দায় বেশি ছিল। তা পাচার ও অনিয়ম প্রতিরোধে ব্যবস্থা নিলে পাচার উল্লেখযোগ্য হারে কমত।

বেসরকারি ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি)-এর চেয়ারম্যান সেলিম আর এফ হোসেন সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে ব্যাংক খাতের দুর্দশার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তাদের দায়ী করে বলেন, খেলাপি হওয়া ঋণকে নিয়মিত দেখাতে পুনর্গঠন (রিস্ট্রাকচার), পুনঃ তফসিল (রিশিডিউল) করার সুযোগ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

হাদিকে হত্যা ও পরবর্তী সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান অ্যামনেস্টির

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১১: ০৯
হাদিকে হত্যা ও পরবর্তী সহিংসতার সুষ্ঠু তদন্ত ও ন্যায়বিচার নিশ্চিতের আহ্বান  অ্যামনেস্টির

ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদি হত্যাকাণ্ড এবং পরবর্তী সময়ে সংঘটিত সহিংসতার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। এসব ঘটনায় দ্রুত, পূর্ণাঙ্গ, স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

গতকাল শুক্রবার রাত ১২টা ২৬ মিনিটে এক্স হ্যান্ডলে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের সাউথ এশিয়া রিজিওনাল অফিসের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি পোস্টে এ আহ্বান জানানো হয়।

পোস্টটিতে মানবাধিকার সংস্থাটি বলেছে, হাদি হত্যাকাণ্ডের পরবর্তী সময়টিতে সহিংসতায় প্রথম আলো, ডেইলি স্টার ও ছায়ানট-এর কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে এবং নিউ এজ-এর সম্পাদক নুরুল কবির হয়রানির শিকার হয়েছেন।

এ ছাড়া ময়মনসিংহের ভালুকায় ধর্ম অবমাননার অভিযোগে হিন্দু পোশাকশ্রমিক দীপু চন্দ্র দাসকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনায়ও গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সংস্থাটি।

সহিংসতার তীব্র নিন্দা জানিয়ে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের পক্ষ থেকে বলা হয়, এসব কর্মকাণ্ডে মানুষ আহত হয়েছেন, সম্পদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং প্রাণহানির ঘটনাও ঘটেছে। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবিলম্বে এমন সহিংসতা ও হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের ন্যায্য বিচারের আওতায় আনতে হবে। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুদণ্ডের আশ্রয় না নিয়ে আইনসম্মত ও ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

শিল্পকলা একাডেমির সব অনুষ্ঠান স্থগিত

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সব অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী স্থগিত করা হয়েছে।

গতকাল শুক্রবার শিল্পকলা একাডেমির উপপরিচালক (প্রশাসন) পূর্ণলাক্ষ চাকমা স্বাক্ষরিত একটি স্মারকপত্রে বিষয়টি নির্দেশক্রমে জানানো হয়।

ঘোষণায় বলা হয়, রাষ্ট্রীয় শোক দিবস ও অনিবার্য কারণবশত বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সকল অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনী আজ ১৯ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে আজ শনিবার রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। গত বৃহস্পতিবার জাতির উদ্দেশে দেওয়া এক ভাষণে রাষ্ট্রীয় শোকের ঘোষণা দেন তিনি।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদি। নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি হাদির মাথায় লাগে।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ময়নাতদন্তের জন্য সোহরাওয়ার্দীর মর্গে হাদির মরদেহ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪১
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

ময়নাতদন্তের জন্য ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান বিন হাদির মরদেহ শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়েছে। আজ শনিবার সকাল ১০টার কিছু আগে তাঁর মরদেহ জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘর থেকে সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়।

এর আগে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় বিমান বাংলাদেশের ফ্লাইটে তাঁর কফিন দেশে পৌঁছানোর পর মরদেহ রাখা হয় জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে।

জাতীয় হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ চৌধুরী আজ সকালে আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওসমান হাদির মরদেহ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের মর্গে নেওয়া হয়েছে। এখন ময়নাতদন্ত চলছে। ময়নাতদন্ত শেষে তাঁর মরদেহ আবারও হৃদ্‌রোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে আনা হবে। এরপর দুপুরে জানাযার জন্য নেওয়া হবে।’

আজ দুপুর ২টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় হাদির নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ওসমান হাদির মৃত্যুতে রাষ্ট্রীয় শোক আজ

আজকের পত্রিকা ডেস্ক­
আপডেট : ২০ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০: ৪২
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত
শরিফ ওসমান হাদি। ছবি: সংগৃহীত

ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান বিন হাদির মৃত্যুতে আজ শনিবার (২০ ডিসেম্বর) রাষ্ট্রীয় শোক পালিত হবে। গত বৃহস্পতিবার (১৮ ডিসেম্বর) রাত পৌনে ১০টার দিকে সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। একই রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে আজ এক দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমি আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি অত্যন্ত হৃদয়বিদারক একটি সংবাদ নিয়ে। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের সম্মুখভাগের অকুতোভয় যোদ্ধা ও ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি আর আমাদের মাঝে নেই।’

প্রধান উপদেষ্টা আরও বলেন, ‘আমি তাঁর রুহের মাগফিরাত কামনা করছি এবং শোকসন্তপ্ত স্ত্রী, পরিবারের সদস্যবৃন্দ, স্বজন ও সহকর্মীদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। শহীদ ওসমান হাদির স্ত্রী ও একমাত্র সন্তানের দায়িত্ব সরকার গ্রহণ করবে।’

প্রধান উপদেষ্টার ঘোষণা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় শোক পালনে আজ দেশের সব সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারি-বেসরকারি ভবন এবং বিদেশে বাংলাদেশ মিশনগুলোতে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত থাকবে।

গতকাল শুক্রবার হাদির মরদেহ সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আনা হয়। তাঁর মরদেহ জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউটের হিমঘরে রাখা হয়েছে। আজ বেলা ২টায় জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের কবরের পাশে তাঁকে সমাহিত করা হবে।

জানাজায় অংশগ্রহণে আগ্রহীদের কোনো প্রকার ব্যাগ বা ভারি বস্তু বহন না করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং।

আরও বলা হয়েছে, এ সময় সংসদ ভবন ও এর আশপাশের এলাকায় ড্রোন ওড়ানো সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।

জুলাই অভ্যুত্থান ও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পরিচিতি পাওয়া শরিফ ওসমান বিন হাদি ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ঢাকা-৮ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন। নির্বাচন ও গণভোটের তফসিল ঘোষণার পরদিন শুক্রবার (১২ ডিসেম্বর) ঢাকার পুরানা পল্টনের বক্স কালভার্ট রোডে চলন্ত মোটরসাইকেল থেকে রিকশায় থাকা হাদিকে গুলি করা হয়। গুলিটি হাদির মাথায় লাগে।

গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে অস্ত্রোপচার শেষে রাতেই তাঁকে ঢাকার এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য গত সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) দুপুরে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে তাঁকে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বৃহস্পতিবার রাত পৌনে ১০টার দিকে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত