Ajker Patrika

বিতর্ক নিয়ে যা বললেন জেনারেল আজিজ

আপডেট : ২৫ ডিসেম্বর ২০২১, ২০: ০৭
বিতর্ক নিয়ে যা বললেন জেনারেল আজিজ

সদ্যবিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ বলেছেন, সেনাপ্রধান নিয়োগ দেওয়ার এখতিয়ার সরকারের। তাঁকে কোনো রাজনৈতিক বিবেচনায় এই পদে নিয়োগ দেওয়া হয়নি। 

ডয়চে ভেলে ‘খালেদ মুহিউদ্দিন জানতে চায়’ শীর্ষক ইউটিউব টকশোতে গত ২৪ ডিসেম্বর তিনি এ কথা বলেন। জার্মানভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দিনের সঙ্গে তাঁর এই আলাপচারিতায় উঠে আসে আলোচিত এই জেনারেল সম্পর্কিত নানা দিক। 

খালেদ মুহিউদ্দীন: যুক্তরাষ্ট্র কি আপনার ভিসা বাতিল করেছে? 

সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ: আমেরিকার কতগুলো আইনে বলা হয়েছে-কারও ভিসা যদি যুক্তরাষ্ট্র অথোরিটি বাতিল করে সেটি তাঁকে নোটিশ করতে হবে। আমাকে কি তারা জানিয়েছে? আমি যখন ভিসার জন্য আবেদন করেছিলাম তখন আমার স্থায়ী ঠিকানা, যোগাযোগ করার নম্বর, ই-মেইল ঠিকানা দেওয়া হয়েছে। অন্য দশজন সাধারণ মানুষের মতো আমি নই যে, আমাকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কি আমার ভিসা বাতিল করা হয়েছে? তা কিন্তু করা হয়নি। আমি বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিয়েছি, আমার ভিসা বাতিল করা হয়েছে এমন কিছু পাওয়া যায়নি। 

খালেদ মুহিউদ্দীন: আপনি এখন অবসর প্রস্তুতিমূলক ছুটিতে। ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী। কেউ কেউ বলেন আপনার কয়েক শ কোটি টাকা। 

জেনারেল আজিজ: শত শত কোটি টাকা তো দূরে থাক, সামান্য কিছু টাকার সূত্র দিয়ে দেন যা দিয়ে বাকি জীবনটা একটু স্বচ্ছন্দে কাটাতে পারি! মানুষ প্রমাণ ছাড়া অনেক কথা বলে, নিশ্চয়ই তার পেছনে কোনো অসৎ উদ্দেশ্য থাকে। এ ধরনের কথায় আমি খুব ব্যথিত হই। ৩৯ বছর সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেছি। যখনই সময় পাই আমার কোর্স মেটদের সঙ্গে গলফ খেলতে যাই। অনেক বন্ধু-বান্ধব আছে, তারা আসে, তাদের সঙ্গে সময় কাটাই। আমি পোস্ট ডক্টর করছি, সেটা নিয়ে সময় কাটাই। 

খালেদ মুহিউদ্দীন: আপনার যে ব্যক্তিগত সহকারী ছিলেন, যিনি একজন ওয়ারেন্ট অফিসার, তাঁকে কি দুর্নীতির দায়ে পদচ্যুত করা হয়েছে? 

জেনারেল আজিজ: আমি যখন অবসরে আসি, তারপরে শুনেছি। সিরিয়াস কিছু হলে তাঁকে সার্ভিস থেকে সরিয়ে দেওয়া হতো। সে ক্ষেত্রে অনেকেই জেল বা বরখাস্ত করে থাকে। কিন্তু তাঁকে নরমাল অবসরে পাঠানো হয়েছে। 

খালেদ মুহিউদ্দীন: রাজনৈতিক বিবেচনায় সেনাপ্রধান হয়েছেন-এ ধরনের কথা বলা হয়ে থাকে। বেশ কয়েকজন জ্যেষ্ঠ এবং যোগ্য কর্মকর্তাকে ডিঙিয়ে আপনাকে সেনাপ্রধান করা হয়েছে। 

জেনারেল আজিজ: সেনাপ্রধান নিয়োগ দেওয়া সরকারের এখতিয়ার। আমাকে যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তখন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে তিনজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল ছিলেন। এই তিনজন থেকে যে কোনো একজনকে সেনাপ্রধান করতে পারতেন। কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা বেশি ছিল। আমি বিজিবির মতো বাহিনী কমান্ড করেছি। সুতরাং অভিজ্ঞতা বিবেচনা করে আমাকে সেনাপ্রধান করা হয়েছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় নিয়োগ দেওয়া হয়নি। 

সদ্যবিদায়ী সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ

খালেদ মুহিউদ্দীন: আল-জাজিরার ডকুমেন্টারি ‘অল দ্য প্রাইম মিনিস্টার ম্যান’ প্রচার হওয়ার পরে আপনার চাকরি জীবনে কী প্রভাব পড়েছিল। আপনার ভাইয়েরা পিতা-মাতার নাম বদলে পাসপোর্ট করেছেন। সে ক্ষেত্রে সরাসরি আপনার সংশ্লিষ্টতা ছিল বা আপনার পদ-পদবির প্রভাব ব্যবহার করা হয়েছিল। 

জেনারেল আজিজ: সত্য মিথ্যা যাই থাক এ রকম প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ার পর বিরত হওয়াই স্বাভাবিক। প্রচার হওয়ার পরে আমি বিব্রত বোধ করছি। সে সময় আমি সরকারি নিমন্ত্রণে আমেরিকাতে ছিলাম। তবে আল-জাজিরার দাবি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। আমি সেনাপ্রধান থাকাকালীন আমার ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীর কোনো সরঞ্জাম কেনার কন্ট্রাক্ট দিয়েছি কি-না আমি সে ব্যাপারে চ্যালেঞ্জ করছি, কেউ এ ধরনের প্রমাণ দিক। যারা এসব কথা বলছে, সম্পূর্ণ মিথ্যা। বাংলাদেশের কত লক্ষ লক্ষ লোক দেশের বাইরে থাকে, তাঁরা কি তাদের সঠিক পরিচয় ব্যবহার করছেন? 

খালেদ মুহিউদ্দীন: ২০১৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের পক্ষে ফল নিয়ে আসার জন্য সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করার অভিযোগ রয়েছে। সেনাপ্রধান হিসেবে আপনি নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়ম করেছেন। 

জেনারেল আজিজ: সেনাবাহিনী একটি সুশৃঙ্খল বাহিনী। এখানে চেইন অব কমান্ড চলে। যখন কোনো নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে মোতায়েন করা হয়, তখন সবাই ইলেকশন কমিশনের আন্ডারে চলে যায়। একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন করার জন্য সবকিছু করতে পারে নির্বাচন কমিশন। সেখানে কার কী দায়িত্ব একেবারে স্পেসিফিক বলা আছে। আমাদের দায়িত্ব সম্পর্কে বলা আছে, সবগুলো জেলাতে যাব। প্রয়োজন হলে উপজেলাতে যাব। নির্বাচনে ম্যাজিস্ট্রেট বা যারা আছে, আমাদের নির্দেশ দিলে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা করার জন্য আমরা দ্রুতই সেখানে চলে যেতে পারি। সে সমস্ত জায়গায় আমরা অবস্থান নিয়ে থাকি। সেখানে চাইলেই সেনাবাহিনীর যা কিছু করার এখতিয়ার নেই। 

খালেদ মুহিউদ্দীন: ২০১৮ সালে নির্বাচন যখন শেষ হয়েছিল তখন আপনি বলেছিলেন, একটি অসাধারণ নির্বাচন দেখেছেন। বাংলাদেশ এত ভালো নির্বাচন আগে দেখেননি। এই বক্তব্যে এখনো কি স্ট্যান্ড করেন? 

জেনারেল আজিজ: ২০১৮ সালের নির্বাচন দেখেন এবং অন্যান্য সময়ের নির্বাচন দেখেন, কোন সময় বেশি ক্যাজুয়ালটি হয়েছে? ভোট কেমন হয়েছে সেটা দেখার দায়িত্ব আমার না। আমাদের দায়িত্ব আইন-শৃঙ্খলার সিচুয়েশন ঠিক রাখা। আমার যে বক্তব্যটা ছিল, সেটা নির্বাচন কমিশনের কথা ছিল। 

খালেদ মুহিউদ্দীন: একজন লেফটেন্যান্ট কর্নেল শহীদ, যিনি আপনার কোর্সমেট, পরবর্তীকালে তাঁর সঙ্গে আপনার ফোনালাপ ফাঁস হয়েছিল। 

জেনারেল আজিজ: আগামী জুনের ২৫ তারিখের পর থেকে আমার সম্পূর্ণ রিটায়ারমেন্ট শুরু হবে। তখন এসব প্রোপাগান্ডার বিষয়ে আমি ব্যবস্থা নেব। যে কোনো ব্যক্তির ৩০ মিনিটের একটি অডিও সফটওয়্যার দিয়ে যে কোনো কথা যদি ক্লোন করতে চান, সেটি করতে পারেন। 


Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মে. জে. ফজলুরের সেভেন সিস্টার্স দখলের মন্তব্য সমর্থন করে না সরকার: পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নিজের প্রস্রাব পান করে ‘আশিকি’ অভিনেত্রী অনু আগারওয়াল বললেন, ‘আহা অমৃত’

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা-ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

গায়ে কেরোসিন ঢেলে কলেজছাত্রীর আত্মহনন, পলাতক ইমাম গ্রেপ্তার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত