বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক
কূটনৈতিক প্রতিবেদক, ঢাকা
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তাঁর এ সফরে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে একাত্তর প্রসঙ্গ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনাসহ অমীমাংসিত কয়েকটি বিষয় সমাধানের জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের দাবি, ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান আগেই হয়ে গেছে। যদিও এ দাবি মানতে নারাজ বাংলাদেশ। সরকার মনে করে, পাকিস্তানের উচিত ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন অপরাধগুলোর জন্য মাফ চাওয়া ও অন্য বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা।
গতকাল রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা চলে এ বৈঠক। দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উভয় পক্ষ একাত্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপর আলোচনার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৈঠকে নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকের পর ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসহাক দার বলেন, ‘অমীমাংসিত ইস্যু ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো নিষ্পত্তি হয়েছে। ওই সময় [সই হওয়া চুক্তিটি] দুই দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। এরপর ২০০০ সালের শুরুতে [পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট] জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এখানে এসে প্রকাশ্যে ও খোলামনে পুরো [পাকিস্তান] জাতির পক্ষে বিষয়টির সমাধান করেছেন।’
পাকিস্তানের মন্ত্রী বলেন, ‘পরিবারে ভাইদের মধ্যে কোনো বিষয় একবার মিটে গেলে সবার তা মেনে নেওয়া উচিত। ইসলাম, কোরআন ও নবী [হজরত] মুহাম্মদ (সা.) মন পরিষ্কার করে অগ্রসর হতে নসিহত করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আপনাদের মন পরিষ্কার করে সামনের দিকে এগোতে হবে। দুই দেশের জনগণের উন্নততর ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া উচিত।’
তবে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান হয়ে গেছে, ইসহাক দারের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই একমত নই।’
উপদেষ্টার দাবি, ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনায় তোলা হয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে দুই পক্ষ একমত হয়েছে।
তৌহিদ হোসেন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই যে হিসাবপত্র হোক এবং টাকাপয়সার বিষয়টি সমাধান হোক। আমরা চাই এখানে যে গণহত্যা হয়েছে, সেটির বিষয়ে তারা দুঃখপ্রকাশ করুক, মাফ চাক। আমরা চাই আটকে পড়া মানুষগুলোকে তারা ফেরত নিয়ে যাক।’
আলোচনায় ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করে তিনি বলেন, তিনটি বিষয়েই বাংলাদেশের অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নৃশংসতার জন্য যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক পাকিস্তানের ১৯৫ জন সৈনিক ও অন্যদের দেশটিতে ফেরত পাঠানো ও বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক মেরামতের বিষয়ে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে বলা হয়, পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের জনগণের কাছে ‘অতীতের অন্যায়’ ক্ষমা করে দিয়ে ভুলে যেতে অনুরোধ জানান। বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানও চেয়েছেন, বাংলাদেশের জনগণ ‘অতীত’ ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করুক। ‘বাংলাদেশের মানুষ জানে কী করে ক্ষমা করতে হয়’—শেখ মুজিবুর রহমানের এ উক্তিটি চুক্তিতে যুক্ত করা হয়। চুক্তিটি সইয়ের কিছুদিন আগে এক বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ চুক্তিতে সই করেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, উভয় পক্ষ ঠিক করেছে সম্পর্ক বহুমাত্রিক উপায়ে মসৃণভাবে এগিয়ে নিতে ১৯৭১ সালের বিষয়গুলো নিয়ে এমনভাবে কথা বলবে, যাতে এগুলো সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকের বিষয়ে গতকাল বিকেলে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা, [অভিন্ন পাকিস্তানের] সম্পদ ভাগাভাগি, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আসা বৈদেশিক সহায়তা ও আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলোর ত্বরিত সমাধান দরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আলোচনায় বাণিজ্য, সমুদ্র ও আকাশপথে যোগাযোগ বাড়ানো, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, কৃষি ও মৎস্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সার্কসহ আঞ্চলিক বিষয়গুলো জোরালোভাবে এসেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সহযোগিতা চেয়েছে।
ইসহাক দার বৈঠকে জানান, পাকিস্তান বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশের ৫০০ শিক্ষার্থীকে আগামী পাঁচ বছর বৃত্তি দেবে। এর এক-চতুর্থাংশ দেওয়া হবে চিকিৎসা খাতে পড়াশোনার জন্য। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে আহত ৪০ ব্যক্তির চিকিৎসা ও হকি খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়েও পাকিস্তান প্রস্তাব দিয়েছে।
বেইজিং, ইসলামাবাদ ও ঢাকার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি পাকিস্তান তুলেছে। বাংলাদেশ আরও কয়েকটি দেশকে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য পাকিস্তানকে পরামর্শ দিয়েছে।
ছয় চুক্তি, স্মারক সই
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর দুই দেশ ছয়টি দ্বিপক্ষীয় দলিল সই করে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দেশ সফরে কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি; দুই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি যৌথ কর্মকাঠামো (জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ) তৈরি; দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদ এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও পাকিস্তান সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়।
দলিলগুলো সইয়ের সময় স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও তথ্য উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী একই সময়ে কিন্তু পৃথকভাবে ঢাকা সফর করেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের মন্ত্রীকে বলেন, সার্ক সক্রিয় করা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সম্পর্ক জোরদার করা তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। তিনি দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইসহাক দার প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ফ্লাই জিন্নাহ আগামী অক্টোবরে পাকিস্তান থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু করবে। পিআইএ বেসরকারি খাতে যাওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট দেবে।
সরকারি পর্যায়ে বৈঠকের বাইরে ইসহাক দার গতকাল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে তাঁদের বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের আগ্রহে এ সফরগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ১৩ বছর পর পাকিস্তান থেকে উচ্চপর্যায়ের এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের প্রায় নিশ্চল সম্পর্কে আবার গতি আসতে পারে, এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। শেখ হাসিনার প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে দুই দেশের সম্পর্ক গতি হারায়।
দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদারে বাংলাদেশ সফরে এসেছেন পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার। তাঁর এ সফরে নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে একাত্তর প্রসঙ্গ। স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের দ্বারা সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধ ও গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনাসহ অমীমাংসিত কয়েকটি বিষয় সমাধানের জন্য দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ। তবে পাকিস্তানের দাবি, ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান আগেই হয়ে গেছে। যদিও এ দাবি মানতে নারাজ বাংলাদেশ। সরকার মনে করে, পাকিস্তানের উচিত ১৯৭১ সালের যুদ্ধকালীন অপরাধগুলোর জন্য মাফ চাওয়া ও অন্য বিষয়গুলো আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তি করা।
গতকাল রোববার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে বাংলাদেশ-পাকিস্তান পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সকাল ১০টায় শুরু হয়ে প্রায় ৩ ঘণ্টা চলে এ বৈঠক। দীর্ঘ ১৩ বছর পর অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে উভয় পক্ষ একাত্তরের সঙ্গে সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপর আলোচনার পাশাপাশি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করে। পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ইসহাক দার ও পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বৈঠকে নিজ নিজ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন।
বৈঠকের পর ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলো নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ইসহাক দার বলেন, ‘অমীমাংসিত ইস্যু ১৯৭৪ সালে প্রথমবারের মতো নিষ্পত্তি হয়েছে। ওই সময় [সই হওয়া চুক্তিটি] দুই দেশের জন্য একটি ঐতিহাসিক দলিল। এরপর ২০০০ সালের শুরুতে [পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রেসিডেন্ট] জেনারেল পারভেজ মোশাররফ এখানে এসে প্রকাশ্যে ও খোলামনে পুরো [পাকিস্তান] জাতির পক্ষে বিষয়টির সমাধান করেছেন।’
পাকিস্তানের মন্ত্রী বলেন, ‘পরিবারে ভাইদের মধ্যে কোনো বিষয় একবার মিটে গেলে সবার তা মেনে নেওয়া উচিত। ইসলাম, কোরআন ও নবী [হজরত] মুহাম্মদ (সা.) মন পরিষ্কার করে অগ্রসর হতে নসিহত করেছেন।’ তিনি বলেন, ‘আপনাদের মন পরিষ্কার করে সামনের দিকে এগোতে হবে। দুই দেশের জনগণের উন্নততর ভবিষ্যতের জন্য একসঙ্গে কাজ করে যাওয়া উচিত।’
তবে ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলোর সমাধান হয়ে গেছে, ইসহাক দারের এমন দাবি নাকচ করে দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করেন কি না—সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘অবশ্যই একমত নই।’
উপদেষ্টার দাবি, ১৯৭১ সালের অমীমাংসিত বিষয়গুলো আলোচনায় তোলা হয়েছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যেতে দুই পক্ষ একমত হয়েছে।
তৌহিদ হোসেন বিষয়টি ব্যাখ্যা করে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা চাই যে হিসাবপত্র হোক এবং টাকাপয়সার বিষয়টি সমাধান হোক। আমরা চাই এখানে যে গণহত্যা হয়েছে, সেটির বিষয়ে তারা দুঃখপ্রকাশ করুক, মাফ চাক। আমরা চাই আটকে পড়া মানুষগুলোকে তারা ফেরত নিয়ে যাক।’
আলোচনায় ‘গণহত্যা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে কি না এমন প্রশ্নে বিস্তারিত জানাতে অস্বীকার করে তিনি বলেন, তিনটি বিষয়েই বাংলাদেশের অবস্থান শক্তভাবে তুলে ধরা হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধের সময় নৃশংসতার জন্য যুদ্ধবন্দী হিসেবে আটক পাকিস্তানের ১৯৫ জন সৈনিক ও অন্যদের দেশটিতে ফেরত পাঠানো ও বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক মেরামতের বিষয়ে ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি সই হয়। চুক্তিতে বলা হয়, পাকিস্তানের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী জুলফিকার আলী ভুট্টো বাংলাদেশের জনগণের কাছে ‘অতীতের অন্যায়’ ক্ষমা করে দিয়ে ভুলে যেতে অনুরোধ জানান। বাংলাদেশের তদানীন্তন প্রধানমন্ত্রী শেখ মুজিবুর রহমানও চেয়েছেন, বাংলাদেশের জনগণ ‘অতীত’ ভুলে গিয়ে নতুন করে শুরু করুক। ‘বাংলাদেশের মানুষ জানে কী করে ক্ষমা করতে হয়’—শেখ মুজিবুর রহমানের এ উক্তিটি চুক্তিতে যুক্ত করা হয়। চুক্তিটি সইয়ের কিছুদিন আগে এক বক্তৃতায় তিনি এ মন্তব্য করেন। বাংলাদেশের তদানীন্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. কামাল হোসেন, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শরণ সিং ও পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী আজিজ আহমেদ চুক্তিতে সই করেন।
তৌহিদ হোসেন বলেন, উভয় পক্ষ ঠিক করেছে সম্পর্ক বহুমাত্রিক উপায়ে মসৃণভাবে এগিয়ে নিতে ১৯৭১ সালের বিষয়গুলো নিয়ে এমনভাবে কথা বলবে, যাতে এগুলো সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রে বাধা হয়ে না দাঁড়ায়।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বৈঠকের বিষয়ে গতকাল বিকেলে দেওয়া এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে—একটি দৃঢ় ভিত্তি তৈরি করে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে হলে ১৯৭১ সালের গণহত্যার জন্য আনুষ্ঠানিক ক্ষমাপ্রার্থনা, [অভিন্ন পাকিস্তানের] সম্পদ ভাগাভাগি, ১৯৭০ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য আসা বৈদেশিক সহায়তা ও আটকে পড়া পাকিস্তানিদের ফিরিয়ে নেওয়ার মতো বিষয়গুলোর ত্বরিত সমাধান দরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আলোচনায় বাণিজ্য, সমুদ্র ও আকাশপথে যোগাযোগ বাড়ানো, বস্ত্র, স্বাস্থ্য, তথ্যপ্রযুক্তি, জ্বালানি, কৃষি ও মৎস্য, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতা, সার্কসহ আঞ্চলিক বিষয়গুলো জোরালোভাবে এসেছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পাকিস্তানের সহযোগিতা চেয়েছে।
ইসহাক দার বৈঠকে জানান, পাকিস্তান বিভিন্ন ক্ষেত্রে উচ্চতর পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য বাংলাদেশের ৫০০ শিক্ষার্থীকে আগামী পাঁচ বছর বৃত্তি দেবে। এর এক-চতুর্থাংশ দেওয়া হবে চিকিৎসা খাতে পড়াশোনার জন্য। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে গণ-অভ্যুত্থানে আহত ৪০ ব্যক্তির চিকিৎসা ও হকি খেলোয়াড়দের প্রশিক্ষণ দেওয়ার বিষয়েও পাকিস্তান প্রস্তাব দিয়েছে।
বেইজিং, ইসলামাবাদ ও ঢাকার মধ্যে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা গড়ে তোলার বিষয়টি পাকিস্তান তুলেছে। বাংলাদেশ আরও কয়েকটি দেশকে যুক্ত করে ত্রিপক্ষীয় ব্যবস্থা সম্প্রসারণের জন্য পাকিস্তানকে পরামর্শ দিয়েছে।
ছয় চুক্তি, স্মারক সই
পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকের পর দুই দেশ ছয়টি দ্বিপক্ষীয় দলিল সই করে। এর মধ্যে রয়েছে দুই দেশ সফরে কূটনীতিক ও সরকারি কর্মকর্তাদের মধ্যে ভিসা অব্যাহতি চুক্তি; দুই বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একটি যৌথ কর্মকাঠামো (জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ) তৈরি; দুই দেশের ফরেন সার্ভিস একাডেমি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ও পাকিস্তানের ইনস্টিটিউট অব স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইসলামাবাদ এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা ও পাকিস্তান সংবাদ সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার বিষয়ে সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সহযোগিতার বিষয়ে একটি চুক্তি নবায়ন করা হয়।
দলিলগুলো সইয়ের সময় স্বরাষ্ট্র, বাণিজ্য ও তথ্য উপদেষ্টা এবং পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী জাম কামাল খান উপস্থিত ছিলেন। পাকিস্তানের বাণিজ্যমন্ত্রী একই সময়ে কিন্তু পৃথকভাবে ঢাকা সফর করেন।
পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গতকাল বিকেলে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে তাঁর সরকারি বাসভবন যমুনায় সাক্ষাৎ করেন। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এক বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, মুহাম্মদ ইউনূস পাকিস্তানের মন্ত্রীকে বলেন, সার্ক সক্রিয় করা ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সম্পর্ক জোরদার করা তাঁর সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার। তিনি দুই দেশের সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার করার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
ইসহাক দার প্রধান উপদেষ্টাকে বলেন, ফ্লাই জিন্নাহ আগামী অক্টোবরে পাকিস্তান থেকে ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট চালু করবে। পিআইএ বেসরকারি খাতে যাওয়ার পর ঢাকার সঙ্গে সরাসরি ফ্লাইট দেবে।
সরকারি পর্যায়ে বৈঠকের বাইরে ইসহাক দার গতকাল বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমানের সঙ্গে তাঁদের বাসভবনে গিয়ে সাক্ষাৎ করেন। তিনি শনিবার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের ঊর্ধ্বতন নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, পাকিস্তানের আগ্রহে এ সফরগুলো অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রায় ১৩ বছর পর পাকিস্তান থেকে উচ্চপর্যায়ের এই সফরের মাধ্যমে দুই দেশের প্রায় নিশ্চল সম্পর্কে আবার গতি আসতে পারে, এমনটি মনে করছেন বিশ্লেষকেরা। শেখ হাসিনার প্রায় ১৫ বছরের শাসনামলে দুই দেশের সম্পর্ক গতি হারায়।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নিপীড়নের শিকার হয়ে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট এবং পরের কয়েক মাসে অন্তত ৮ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। রোহিঙ্গাদের এই ঢলের আট বছর হলেও একজন রোহিঙ্গাকেও স্বদেশে প্রত্যাবাসন করা সম্ভব হয়নি।
৩ ঘণ্টা আগেএয়ার টিকিটের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধি ও প্রতারণা প্রতিরোধে গৃহীত পদক্ষেপের কার্যকারিতা যাচাই করতে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পরিদর্শন করেছেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। রোববার (২৪ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় তিনি বিমানবন্দরে উপস্থিত হয়ে যাত্রীদের সঙ
৩ ঘণ্টা আগেজুলাই সনদের আইনি বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে গণভোট অথবা বিশেষ সাংবিধানিক আদেশ (স্পেশাল কনস্টিটিউশনাল অর্ডার) গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। গণভোটের মাধ্যমে করতে চাইলে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সঙ্গে এই ভোটের আয়োজন করা যেতে পারে।
৫ ঘণ্টা আগেটিআইবি এক বিবৃতিতে বলেছে, মুখে সংস্কারের কথা বললেও কার্যত আধিপত্য, দখল ও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অব্যাহত থাকায় একটি গণতান্ত্রিক ‘নতুন বাংলাদেশ’ প্রতিষ্ঠার গণ-আকাঙ্ক্ষাকে রীতিমতো পদদলিত করা হচ্ছে। টিআইবি মনে করে, রাজনৈতিক দলগুলোর একাংশ দুর্বৃত্তায়নমুক্ত সুস্থ রাজনৈতিক বিকাশের পথে আত্মঘাতী প্রতিরোধ সৃষ্টি
৫ ঘণ্টা আগে